পাঞ্চলাইন হরণের স্বর্ণযুগে এই লাইনটা ধার না করে থাকতে পারলাম না। নিজের ইচ্ছেতে যতবার শুনেছি, তার চেয়ে ঢের বেশিবার অন্যের ঠেলায় শুনতে হয়েছে – সৌজন্যে কলার টিউন। কিন্তু এই লাইনটা রচনার প্রশংসা না করে পারছি না। এত নম্র ভদ্র আর্তির মোড়কে বেশ কড়া একটা মুখঝামটা লুকিয়ে আছে – ‘নিজের চরকায় তেল দাও’।
রোজকার জীবনে এই লাইনটার প্রাসঙ্গিকতা অপরিসীম। অফিসের কোনো বড় কর্তা যখনই দলগত সংহতি জাতীয় বক্তব্য রাখেন, কেন জানি না মনের ব্যাকগ্রাউন্ডে এই লাইনটা গমগমিয়ে বাজতে থাকে। নববর্ষ বা বিজয়ার পরে কিছু অপ্রয়োজনীয় আত্মীয়ের সাথে খেজুরে আলাপচারিতাতেও এই লাইনটা বেশ জ্বলজ্বলে। যখন অফিসফেরৎ ট্রেনে জানলার ধারের আলতো তন্দ্রাটা কোনো হঠাৎ দেখা হয়ে যাওয়া বকবকে পরিচিতর অত্যাচারে বিপন্ন হত, এই লাইনটাই যেন অসহায় ভাবে হাতড়ে বেড়াতাম। সেই সময় না থাকুক, আজ তো আছে। সেই সমস্ত মানুষ যারা তাদের না-চাওয়া মতামতের ঝুড়ি নিয়ে সময়ে-অসময়ে বিব্রত করে বেরায়, তাদের মতুয়া নিষ্পেষণের বিরুদ্ধে আমার আজকের হাতিয়ার – ‘আমাকে আমার মতন থাকতে দাও’।
নিজেদের অলস সময়কে অন্যের জীবনের বিরক্তিতে রূপান্তরিত করা কিছু মানুষের জন্মগত প্রতিভা। এই প্রতিভারা পাটিল হলে হয়ত রাষ্ট্রপতি হতে পারত, কিন্তু বাতিল হওয়ায় এরা আজ মূর্তিমান ত্রাস। বিশেষত আমার মতন ‘হ্যাপিলি সিঙ্গল’ শ্রেণীর গোবেচারাদের জীবন আজ এদের দয়ায় বিপন্ন। অবিবাহিত জীবনের প্রতিটি মুহূর্তের বিন্দুমাত্র ত্রুটি আবিষ্কার করতে না পারলেও, তাদের অস্তিত্ত্বে এদের ঘোর অস্বস্তি। ভাগ্যদেবীর বিরূপতায় এদের সম্মুখীন হওয়ার চেয়ে বাঘের গলায় মালা পড়ানো বোধহয় অপেক্ষাকৃত সহজ কাজ। ঈশ্বরের দয়ায় আজ এদের ভাইরাল আক্রমণের বিরুদ্ধে আমার প্রতিষেধক – ‘আমাকে আমার মতন থাকতে দাও’, সঙ্গে মহীনের ঘোড়াগুলি থেকে ছোট্ট নোট, ‘কখনও কি দেখেছ নিজেদের দিকে তাকিয়ে?’
অনির্বাণ রায়
পেশা সফটওয়ার
নেশা খেলাধূলো, গানবাজনা ও লেখালেখি
[ ১ম পাতায় ফেরত ]
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন