৩০ মে, ২০১১

জয় ইউনিকোডের জয়!


দেশ জুড়ে পরিবর্তনের হাওয়া । পালাবদলের দিনে গ্লোবালাইজেশনের ঝোড়ো হাওয়াও বাঙালীর তনুমন প্রাণ জুড়ে। একদিকে শপিংমল কালচার তো অন্যদিকে মাল্টিপ্লেক্স টেম্পটেশন । মোটাফ্রেমের চশমা থেকে স্লিক ফ্রেম , সৌখিন রিমলেশ থেকে রেসিলেন্স এবং অবশেষে কনট্যাক্টস । কে জানে থ্রিডি চশমাও বুঝি পরতে হতে পারে অদূর ভবিষ্যতে । শোনা যাচ্ছে থ্রিডি টেলিভিশনও আসবে ঘরে ঘরে । টুডি কম্পিউটার গেম ছিল বছর পনের আগে । এখন তো কচিকাঁচারাও থ্রিডি গেম দাপিয়ে খেলছে । নিজের অবতারের আইডেন্টিটিতে রীতিমত দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এ গেম সাইট থেকে ও গেম সাইট । ইন্টারনেটের কৃপায় শুধু গেমদুনিয়াই নয় বিশ্ব আজ হাতের মুঠোয় । পশ্চিমবাংলায় শুধু রাজনৈতিক পরিবর্তনই হয়নি এবছর । দেরীতে কম্পিউটার এরাজ্যে প্রবেশ করেছে বটে কিন্তু শিল্প-সাহিত্য-কলার সনাতন পীঠস্থান কলকাতা তথা সারা পশ্চিমবাংলা আজ সাহিত্যচর্চায়, বাঙালীর আড্ডায় হেসে খলখল গেয়ে কলকল তালে তাল দিয়ে চলেছে আন্তর্জালে । প্রিন্ট থেকে টেলিমিডিয়া ও সেখান থেকে ডিজিটাল মিডিয়াতেও বাঙালির এখন সদা বিচরণ । বঙ্গবধূদের দ্বিপ্রাহরিক আড্ডা একসময় ছিল গঙ্গার ঘাটে । সেখান থেকে গঙ্গাজল পাতানো, স‌ই পাতানো, তাসখেলারও পালাবদল হয়েছে বিস্তর । কিটিপার্টি হয়েছে অবসোলিট । বঙ্গবধূর উত্তরণ হয়েছে আন্তর্জালের ডিজিটাল আইডেনটিটিতে । ঢুকে পড়েছে তথাকথিত গেঁয়ো বঙ্গ বধূ কাম জননী আজ যন্ত্রজালের নেট-গন্ডী পেরিয়ে বিশ্বের দরবারে । এক ঘেয়েমির হেঁশেল তাত থেকে মেলাঙ্কলির দুপুরগুলো আছড়ে পড়েছে নেট-অবকাশে ।
খোলা হাওয়ায় মুক্তি হয়েছে তার আলোয় আলোয়, আন্তর্জালে । ব্লগঘরে সন্ধ্যেপ্রদীপ জ্বালে সে এখন । বাঙালী সাবালকেরা যেমন বেকারত্বের মুক্তি পেয়েছে বিপিওর বাতায়নে । ঠিক তেমনি চিরাচরিত রোয়াকের আড্ডাও এখন পূর্ণতা পেয়েছে অর্কুটের কমিউনিটিতে, ফেসবুকের সবুজ ফুটকি জানলায় । অর্কুট বারান্দা থেকে ফেসবুক অলিন্দ, ব্লগের উঠোন থেকে ট্যুইটারে ঘুলঘুলি সর্বত্র বঙ কানেকশান বিরাজমান । রবীন্দ্রচর্চা ইউটিউবে । নজরুল ও অতুলপ্রসাদ ও বাদ নন । কে জানে কোন দিন হয়ত বা ইউটিউব জলসা চলবে সারারাত ব্যাপী । ওপর থেকে বাঙলার ভাষাবিদ সাহিত্যিকরা আশীর্বাদ স্বরূপ চিতকার করে বলছেন "জয় ইউনিকোডের জয়!" "জয় বাংলাভাষার জয়"! 
 ভাষার মেলবন্ধনের যোগসূত্রে আন্তর্জালে দুই বাংলা মিলে মেশে একাকার হয়ে গেছে । দুইবাংলার ভৌগোলিক সীমারেখা উধাও হয়ে গেছে বন্ধুতার আবেশে । অবাধ প্রবেশ এর ওর ব্লগঘরে, আনলিমিটেড ব্লগবাজি ব্লগের ডেরায় । নেই কোনো ছাড়পত্রের মানামানি, আছে প্রবেশের অধিকার ব্লগবন্ধু হয়ে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং এর হাত ধরে । ইউনিকোডের আওতায় বাঙালীর ব্লগাড্ডা তর্ক, গপ্পো সবকিছু ছড়িয়ে পড়েছে দেশ থেকে দেশান্তরে । যৌথ পরিবার ভেঙে অণু পরিবার হয়ে যে বাঙালী একদিন একা হয়ে গেছিল আজ সোশ্যালনেটে সেই সামাজিকতা এখন তাকে পেয়ে বসেছে । একাকীত্ব ঘুচেছে । ব্লগঘর সাজিয়ে গুছিয়ে ব্লগ মিতেনীর জন্য বংকানেকশন ঝালিয়ে নিচ্ছে তারা আন্তর্জালে । ভাতের হাঁড়ি নামিয়ে স‌ইয়ের জন্য জিটকের সবুজ বাতিঘর জ্বেলে বসে আছে । নতুন প্রজন্ম বলছে :
আমপাতা জোড়াজোড়া ব্লগবাজিতে জাগবি তোরা । 
ওরে ব্লগার সরে দাঁড়া, মাতছে অর্কুট, ফেসবুক পাড়া । 
সারাদুপুর রকবাজি ভুলে ব্লগবাজিতে আর সারাপাড়া দলবাজিতে নয়, ব্লগবন্ধুদের টুইটুইটুইতে মেতে উঠেছে । ঝালেঝোলে অম্বলে বাঙালি সার্চ করছে হেল্থ-e ফুড। ব্লগকিচেন মাতছে সেই রসনায় । ব্লগার ডাক্তারবাবু ফেসবুকে স্টেট্যাস আপডেট করছেন হেলথ-e-টিপস্‌ এ । বং জ্যোতিষী জিটকে ক্লায়েন্টের e-কুষ্ঠির কাউনসেলিং করছেন । কালেকালে কতই হল বাঙালীব্লগার হল !!!

১৬ মে, ২০১১

ভোটপূজো শেষে

ভোটপূজোরই পরেপরে 
বৃষ্টি হবে তুমুল জোরে,
বেসামাল রাস্তাঘাটে 
বানভাসি কালীঘাটে..
গ্রামের ছেলে স্কুল যাবে কি?
স্কুলে গেলে বেঞ্চ পাবে কি ?  
বৃত্তি-পরীক্ষা পাশ  হবেকি ?
জলজমা পথ রদ হবেকি ?
জল-বাতি-পথ সুখ হবে কি ?
হাসপাতালে বেড পাবকি ? 
পবঙ্গে জব পাবকি?
কথারকথা কাজ হবেকি?
বেঘোরে প্রাণ যাবে নাতো ?
জয়েন্ট দিয়ে বাইরে নাতো?
সিলিকনময় সল্টলেকতো ? 
চাষও হবে, বাসও হবে,
শিল্প হবে, গল্প হবে 
তবেই হবে, গর্ব হবে
মনের সুখে বাঁচা হবে  !

১৫ মে, ২০১১

নতুন যুগের ভোরে

ভোটের উত্তেজনার পারদ তখন তুঙ্গে; ফ্রাইডে দ্য থার্টিন্থ , ২০১১ সালের মে মাসের গ্রীষ্মও তখন চরমে । পশ্চিমবঙ্গের পরিবর্তনের সুনামির পূর্বাভাস পাওয়া গেছে । ভোটপূজো শেষ। শুরু কাউন্টডাউন । আগের দিন কোলাহলমুখর কোলকাতা ছেড়ে রবীন্দ্র সরোবরে সূর্যাস্ত হব হব করছে । দু একটা পাখি নিজের মনে গান গেয়ে কুলায় ফিরছে । লেকের আকাশে লাল ফাগের শেষরেশটুকুনি ধীরে ধীরে নিয়ে চলে গেল সেদিনের সূয্যিটা । শুধু কৃষ্ণচূড়ার কুচোকুচো কমলার ফুলঝুরি আর হলদে বাঁদরলাটির ঝুলনমেলা তখন আকাশে আর লেকের জমা জলের গা ঘেঁষে সবুজ সবুজ কচুরিপানার ফাঁকে ফাঁকে দু একটা বেগনিরঙের ফুল যেন অনেক অনেক কাজের ফাঁকে একটু অবকাশ । লেকের ওপারে লম্বালম্বা সাউথসিটির দিক থেকে কুচোকুচো মিছরির মত সাদা আলোর চিকচিকে আভিজাত্য আর লেকের জলে রোয়িংক্লাবের গতিশীল দুএকটা স্কাল । এই ছিল সেই বিকেলে । আমরা হেঁটে চলেছিলাম লেকের জলের ধার দিয়ে , একটু ঠান্ডা হাওয়া মেখে সেই ঘামেভেজা বোশেখের গ্রীষ্মে । লেকের জলে বহুদিনের জমে থাকা শ্যাওলায় জলের বহমানতা কিছুটা হলেও রূদ্ধ ছিল সে বিকেলে । বাঁধানো সিমেন্টের চেয়ারে কত ভালোবাসা-বাসি চলছে তখন.. কলেজ ফিরতি পথে ঊনিশ-কুড়ির বানভাসি সন্ধ্যে নিয়ে, অফিস ফেরত মোনোটোনাস বান্ধবীর প্রতিশ্রুতি রাখায় ।
কেউ খুলে দিয়েছে ল্যাপটপ খোলা আকাশের নীচে । তার গানভাসি সাঁঝ তখন । আইপড কানে দিয়ে একমনে হেঁটে চরকিপাক খাচ্ছে কেউ । বেঞ্চেবসা ছেলেমেয়েগুলির জোড়ায় জোড়ায় একমন একপ্রাণ । গরমে নেই প্রেমের হেলদোল । পরিবর্তনের দোলাচলে প্রেমের বিরাম নেই । নেই সান্ধ্য অভিসারের বিরতি । অন্ধকার যত ঘন হয় প্রেম হয় ঘনিষ্ঠ ।
টিন-প্রেমের পরবে আহুতিপর্ব চলছে । ভালোবাসা ভাসছে লেকের জলে, ভালোবাসা উড়ছে লেকের হাওয়ায় । লেকের মধ্যিখানের একফালি আইল্যান্ডটিকে সেই মূহুর্ত্তে মনে হল সবুজদ্বীপের রাজার রাজধানী । আমি দাঁড়িয়ে আছি সেই সবুজদ্বীপে । সব অন্ধকারের ঘোর কেটে যাচ্ছিল। অন্ধকারের পরতগুলো ছিঁড়েখুঁড়ে আলো ঠিকরে আসছিল সেই দ্বীপের মধ্যে থেকে । দ্বীপের নাম টিয়ারং ... একটা ছবি হয়েছিল । মনে হচ্ছিল সেই সবুজদ্বীপকে এই নামটি দিলে বেশ হয় । একঝাঁক সবুজ টিয়া উড়ে ঐ আইল্যান্ডের ঝোপেঝাড়ে লুকিয়ে পড়ল ।আমার মনে হল জেগে উঠলাম রবীন্দ্রসরোবরের উপকূলে ।
নতুন বছরে আমাদের মেঘ সোনারতরীতে উঠেছিল " বাতিঘর এক সবুজ" নিয়ে । আমার হাঁটতে হাঁটতে কেবল মনে হতে লাগল ফেসবুকের সেই সবুজ ফুটকির কথা চুঁইয়ে পড়ছে সবুজ আলো সেই ছোট্ট ফুটকি দিয়ে । একে একে হাতবাড়িয়ে সক্কলের বাতিঘর তখন সবুজ আলোর ফোঁটায় দৃশ্যমান হল । মেঘের সাথে রোদ্দুর, বৃষ্টি অভ্র, আবীর, শুভ্র , শুভ সকলেই তখন মাত করছে ফেসবুকের আড্ডাঘর । আমিও সেই জনস্রোতে সামিল হয়েছিলাম । আড্ডাঘরে তখন সবুজ গন্ধ, নতুন গন্ধ । আমার একবার মনে পড়ে গেল পাঞ্জাবের সবুজ বিপ্লবের কথা । ভয় হ'ল একবার । পরেই মনটা বলে উঠল " হৈ হৈ বিপ্লব ? হোক !বাংলার সবুজ, বাংলার পথঘাট ভরুক সবুজ আনন্দের জোয়ারে । হুজুগে নয় । রবিঠাকুরকে মনে পড়ে গেল " আমি রূপে তোমায় ভোলাব না, ভালোবাসায় ভোলাব " ভোলাব স্বচ্ছতার আবীরে, সবুজে নয় । সন্ত্রাসের শিবিরে নয়, শান্তির আবহে । সুনামি হয়ে শিল্প আসুক! আয়লার ঝোড়ো হাওয়া উড়িয়ে নিয়ে চলে যাক বন্ধ্যা, নঞর্থক রাজ্যনীতিকে। বাংলা তুমি আবার এসো গো ফিরে ধান সিঁড়িটির তীরে এই বাংলায় ।
রবীন্দ্র সরোবরের লাগোয়া নজরুল মঞ্চে তখন কোনো এক বিদ্যামন্দিরের ছেলেমেয়েরা রবিপ্রণাম জানাচ্ছে " বাজে বাজে রম্য বীণা বাজে..." পরদিন অর্থাত ফ্রাইডে দ্য থার্টিন্থের প্রভাতফেরীর রিহার্সাল মনে হল !!!

৮ মে, ২০১১

"রবীন্দ্রসঙ্গীতে বাউলের প্রভাব"


 "রবীন্দ্রসঙ্গীতে বাউলের প্রভাব" এই প্রবন্ধটি  রবীন্দ্রনাথের জন্ম সার্ধশতবর্ষে   আটল্যান্টার "অঞ্জলি" ম্যাগাজিনে  (৭ইমে ২০১১) প্রকাশিত হয়েছে ।

৪ মে, ২০১১

জগন্নাথ বসুর "বেতারের কথকতা এবং"( আনন্দ পাবলিশার্স)


 জগন্নাথ বসুর "বেতারের কথকতা এবং"  ব‌ইটি পড়ে যারপরনাই ঋদ্ধ হলাম । বর্তমানের বাচিক শিল্পী জগন্নাথ বসুর অতীতের   কর্মজগত এবং তাঁর অভিজ্ঞতা, সহকর্মীদের সাথে সম্পর্ক আর সর্বোপরি আকাশবাণী ও দূরদর্শনের অনেক না জানা কথা উঠে এসেছে তাঁর লেখায় ।  ব‌ইটি  উতসর্গ   করেছেন তাঁর সহধর্মিণী শ্রীমতী ঊর্মিমালা বসুকে আর সেখানেও সেই মঞ্চে শ্রুতিনাটকের খুনসুটি অনুভূত হয় " না দেখলে র‌ইতে নারি , দেখলে কাটাকাটি এহেন....." গৌরচন্দ্রিকায় লেখনীর সাবলীলতা মুগ্ধ করে । তারপর সাদাকালোয়, লেখকের সংগ্রহের দুষ্প্রাপ্য সব  পুরোণোদিনের  ছবিগুলি  নিজের সংগ্রহে থেকে গেল এই ভেবে মনে হয় ব‌ইটির মূল্য মাত্র ১৫০টাকা কেন? তারপর শুরু হয় বেত্তান্ত । আকাশবাণী কেমন করে আকাশবাণী হয়ে উঠেছিল এবং বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র, পঙ্কজ কুমার মল্লিক এবং বাণীকুমারের মহিষাসুরমর্দিণি এই প্রোডাকশানটি কেমন ভাবে তৈরী হয়েছিল তা জানার সুপ্ত ইচ্ছে আমাকে এতদিনে তৃপ্তি দিল । কারণ আমি নিজেও এই প্রোডাকশানটির অন্ধ ভক্ত ।এই তিনজন প্রবাদপ্রতিম মানুষের জন্য তিনি উজাড় করে দিয়েছেন তাঁর শ্রদ্ধার ঝুলি আর এনারা যে কতবড় মানুষ হয়েও ভর্তি করতে পারেন নি তাঁদের প্রাপ্ত মর্যাদা  বারবার তাঁর লেখার মাধ্যমে উঠে আসে ।জানতে পারি পঙ্কজ মল্লিকের বেতারজগত থেকে অপসারণের  কাহিনী আর  স্বনামধন্য রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী সুচিত্রা মিত্রের  সেই শূন্যস্থানে স্থলাভিষেক । মহানায়ক উত্তমকুমারের মহালয়া তৈরী এবং সেখানে আবার বীরেন্দ্রকৃষ্ণের মহিষাসুরমর্দিণির জয়লাভ উঠে এসেছে । বীরেন্দ্রকৃষ্ণের উত্তমকুমারের প্রতি স্নেহ বিন্দুমাত্র ক্ষুণ্ণ না করে রোমান্টিক নায়কের সংলাপে  অজানা কথা "হাফনোটের" ব্যঞ্জনা আমাকে ভাবিয়ে তুলল ।
বেতার-নাটকের নেপথ্যের  কুশীলবেরা   কেমন করে তৈরী হয়েছিলেন এবং প্রতিনিয়ত তাদের সাথে ওঠাবসার সাথে নিজের স্মৃতির পাতা থেকে অজানা সব তথ্যের অবতারণা পাঠকমনকে আনন্দ দেয় । একজায়গায় উনি লিখেছেন " শ্রুতি এদেশের আদিমতম শিল্প" অর্থাত বেদপাঠ । আর সেই শ্রুতিশিল্পকে ভালবেসে সেই চারাগাছটিকে এতদিন ধরে লালন করে চলেছেন তাঁরা দুজনে তা তো আমরা দেখতে পাই বাচিক শিল্পী জগন্নাথ-ঊর্মিমালার শ্রুতিনাটকে ।  উঠে এসেছে সত্যজিত রায়ের সাথে আলাপচারিতার মাধ্যমে সঙ্গে তাঁর নাটকের প্রোডাকশান নিয়ে ওঠাবসা ও কতকিছু গবেষণার গল্প ।   মঞ্চ বা বেতারে সহশিল্পীদের অগ্রণী ভূমিকার কথা জানতে পারি আমরা "শব্দের দোকানি" অংশে।  এই মানুষগুলিকে নিয়ে কেউ কখনো কিছু লিখেছেন বলে আমি তো জানিনা ।  আর আছে নেপথ্যের প্রম্পটারদের কথা যারা না হলে নাটক মঞ্চস্থ হয় না অথচ তারা থেকে যান অধরা হয়ে । " দর্শক্ঃ দেবাঃ ন জানন্তি" পড়ে হাসতে হাসতে পেট ফেটে যায় । কারণ আমিও আম দর্শকের আসনে বসি । মঞ্চে গান করে থাকলেও নাটক? নৈব নৈব চ !  জগন্নাথদার  দর্শকের শ্রেণীবিভাগ এবং সিটে বসে তাদের আচরণ পড়ে মনে হল তিনি স্টেজে বসে সব কিছু লক্ষ্য করেন এবং অমন মনোজ্ঞ শ্রুতিনাটকও করেন !  "অন্যদেশে, বিদেশে"  বিভাগটি পড়ে মনটা ভারি হয়ে যায় । সরকারী ব্যুরোক্রেসির যাঁতাকলে তাঁদের মত মানুষেরাও যে আজীবন পিষ্ট হয়েছেন ভাবলে খারাপ লাগে । বেতার থেকে দূরদর্শনে এসে তাঁর অভিজ্ঞতার কথা আর নিজের সাথে প্রতিনিয়ত সংঘাতের কাহিনী পাঠকের আসনে বসে পড়ে চলেছি আমরা কিন্তু তিনি স্বয়ং কেমন করে সেই দুস্তর পথ অতিক্রম করেছেন তা বোঝা যায় । সম্পূর্ণ ব‌ইটিতে তাঁর আনন্দের মূহুর্ত হয়ত আছে পর্দার নেপথ্যে কিন্তু কর্মক্ষেত্রে খ্যাতনামা মানুষদের সঙ্গে তাঁর   সম্পর্কের টানাপোড়েন আছে প্রকটভাবে ।    সবশেষে একটাই কথা বলতে ইচ্ছে হয় , জগন্নাথ বসু কিন্তু অনেকের সম্বন্ধে অনেক কথা বলেছেন কিন্তু কোনো বিবাদের সুরে নয় , অপমানের ভাষায় নয় ঘৃণার শব্দে নয় । তাঁর লেখার মধ্যে রয়েছে সুপ্ত অভিযোগ, প্রচ্ছন্ন অভিমান আর আমলাতন্ত্রের ওপর বিতৃষ্ণা । 
যাইহোক গদ্যকার জগন্নাথ বসুকে শুভেচ্ছা এমন একটি ব‌ই লেখার জন্য ।আমরা ছোটবেলায় রেডিওতে বাবা মায়েদের নাটক শুনতে দেখেছি কিন্তু আমরা তো টেলিভিশনের যুগের টিনএজারদের দলে ছিলাম । তাই নাটক্, বেতার এবং দূরদর্শন কি এবং কেন সে সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারলাম । ধন্যবাদ আমার বন্ধু মৌসুমী গুপ্তকে যে আমাকে এই বইটির কথা বলেছিল  আর একটি টিভি চ্যানেলের লাইভ টকশোতে জগন্নাথদাকে কথা দিয়েছিলাম ব‌ইটি পড়ে কেমন লাগে তা অবশ্যই জানাব,  তাই এই রিভিউ লেখা ।    আর এর পরের ভাগ আছে " বেতারের গ্রীণরুম" এ। সেটির অপেক্ষায় আছি । ভাগ্যি নেট ছিল এই খড়গপুরে তাই তো বাড়ি বসে বসে ফ্লিপকার্টে অর্ডার দিয়ে দু দিনে ব‌ই এসে গেল হাতে । আবার সাথে  কমিশান আর ফ্রি হোম ডেলিভারি । পরের ব‌ইটি আউট অফ মার্কেট.. এত বিক্রি হয়েছে বলে । ক'দিন বাদে হাতে পাব বলেছে তারা ।