৩০ জুন, ২০১৬

বিয়ের পদ্য

    এই হল শ্রীমান অনিন্দ্য(বাপ্টু)  এবং তার নবপরিণীতা বধূ ঐশিকা । তাদের মধ্যিখানে উঁকি দিচ্ছে বাপ্টুর ভাই বান্টি (অরিজিত) । তারা ক্লাবের সূত্রে এবং তারাটিভির জনপ্রিয় অনুষ্ঠান "আজ সকালের আমন্ত্রণে" মাধ্যমেই আমাদের আলাপ অনিন্দ্য, অরিজিতের মা ছন্দা নন্দীর সাথে।  সেই ২০০৮ থেকে আমরা একসূত্রে জড়িয়ে আছি। আর এই যোগসূত্রের মধ্যমণিরা হলেন সঞ্চালিকাত্রয় মৈত্রেয়ী, মল্লিকা এবং রিণি। সেই সাথে আরো কিছু বন্ধুও রয়েছে এই ঘটনাবহুল কর্মকান্ডে। সে এক সময় ছিল যখন নিজের কবিতা অন দ্যা স্পট লিখে ফেলে টিভির এই লাইভ কল শোতে শোনাতাম। সে ছিল এক নেশা। তারপরেই বন্ধুদের এসেমেস বৃষ্টি হত ফোনে। সেইদিন আজ গিয়ে পৌঁছল এক ঘটনায়। আমি ছন্দার ছেলের বিয়েতে তাদের নিয়ে লিখলাম এক বিয়ের পদ্য। ছন্দা সেই শিল্পসৃষ্টিকে সম্মান করে ছাপিয়ে তা প্রতিটি নিমন্ত্রিতদের হাতে দিল। এ আমার পরম সৌভাগ্য।
 পাত্রপাত্রী উভয়েই প্রেসিডেন্সীতে একসাথে জিওলজির স্টুডেন্ট ছিল।এখন ঐশী একটি ব্যাঙ্কে চাকরী করে আর অনিন্দ্য কর্পোরেট হাউসে। তাই সেইকথা মাথায় রেখে ওদের নিয়ে এই মজা করা। ছন্দা নন্দীর আদি শ্বশুরবাড়ি হল বড়বাজারে শিবঠাকুর লেনে। প্রতিবছর যে বাড়িতে মহা সমারোহে অন্নপূর্ণা পুজো হয়। তাই অন্নপূর্ণা-মহাদেবের আশীর্বাদ নিয়ে এই লেখার শুরু।  



।। শ্রী শ্রী অন্নপূর্ণা মাতা সহায়, ভাল হউক,শুভ হউক অনিন্দ্য-ঐশিকার জয়।।

*********************

।। গহনকুসুম কুঞ্জ মাঝে অনুপমাতে বাদ্যি বাজে। কিসের বাজনা, কিসের বোল? ভিআইপি রোডে বাজল ঢোল
আও আও সজনীবৃন্দা, ছেলের বিবাহে নন্দী ছন্দা । এহেন বিয়ের জিওলজি নিয়ে বন্ধু ইন্দিরা বন্দিছে ।।

**************

    একদিন বাপ্টু আসিয়া মা'র কানে কহিল, কে যেন আমার বুকে ছুরিটি গুঁজিল...

একদিন রাতে আমি স্বপন দেখিনু, দেবী অন্নপূর্ণা এসে আমারে কহিনু
চেয়ে দেখি ঠোকাঠুকি টেকটনিক প্লেটে, এক কন্যা আসিয়াছে অনুপমার গেটে

    কে তুমি? কে তুমি মম অঙ্গনে? দাঁড়ালে একাকী! নহ মাতা, নহ বিবাহিতা, পরিষ্কার দৃষ্টি আমার, সবে ছানি কাটিয়াছি।

কেউ ন‌য়, সাধারণী শুধু সহপাঠিনী
দেবী প্রেরিত, উপযুক্ত, আধুনিকা নন্দিনী।
মা! ভূতত্ত্ব পড়তে গিয়ে একেই খুঁজে এনেছি....
মাটীর নীচে কোথায় আকর, কোথায় খনি, কোথায় পাথর?
সেই খুঁজতে গিয়ে আমি তাকেই খুঁজে পেয়েছি।
শোনো শোনো,
মাটী খুঁড়েই কষ্ট করে (তার) ঘাড় ধরে টেনে এনেছি।

পাত্র অনিন্দ্য বাপ্টু নন্দীবংশ খ্যাত, অন্নপূর্ণার আশীর্বাদে সুচাকুরীই ব্রত।
পাত্রী ঐশিকা হল দাস বংশ জাত, প্রেসিডেন্সীর সহপাঠী ব্যাঙ্কে কর্মরত ।।
পড়তে পড়তে ভূতত্ত্বে কত যে গোলমাল, টেকটনিক প্লেট ওঠাপড়ায় সব‌ই বেসামাল।
দুজনেরি প্রথম প্রেম ভূতত্ত্ব বলে কথা, দ্বিতীয়তঃ ওলটপালট বিগড়ে গেল মাথা।
ঘন ঘন ফিল্ড ট্রিপ, গাঢ় প্রেমরস, ভূকম্পনে উথালপাথাল, বেজায় নামযশ।।

    বলতে পারো পাত্রপাত্রী কখন নামল ধ্বস? কখনি বা বন্যা এসে ভাসিয়ে দিল ঘর?
।। পাত্র গেল মুম্বাইতে, ধানবাদে পাত্রী, রইল রিমোটকন্ট্রোলে অন্নপূর্ণা সহযাত্রী
ঝালিয়ে নেওয়া চ্যাটবাক্স, বদলে ছিল ঘাঁটি। তবুও এ প্রেম অনিন্দ্যসুন্দর এক্কেবারে খাঁটি
ভাগ্যি ছিল হোয়াটস্যাপ আর হৃদয়পুরের গল্প! তাইতো সে প্রেম পূর্ণতায় দুষ্টুমিষ্টি অল্প।।

    শিবঠাকুর লেনের আপনদেশে, ছাঁদনাতলায় অবশেষে 

    *****************
    শুনল শুনল বালিকা, ঐ যে আসিল ঐশিকা...

।। একজন সেই খুঁজতে গেল অয়েল-ন্যাচারাল গ্যাস, অন্যে সামলায় তখন রাশিরাশি ক্যাশ
অন্নপূর্ণার মন্ত্রবলে কাছাকাছি তারা, ছন্দার ঘর আলো করে বাঁধছে জুটি কারা?
ভজ নিতাই গৌর রাধেশ্যাম ! তেলখনি আর ব্যাঙ্ক ভুলে হানিমুনই ধরাধাম।।

    ।। ওলো তোরা দেখে যা গো, বিরহের একি জ্বালা দেখে যা গো!
নিতাই নন্দী ওকালতি ছেড়ে প্লেনের টিকিট কাটিতেছেন
ছেলেবউ মধুচন্দ্রিমায়, তাই তেনারাও প্ল্যান ফাঁদিতেছেন।।


ঐশী শোনো, লাইফ জমাও ! পরে কোনো সময় মাসীদের রেঁধে খাওয়াও!
ঘরে তোমার লক্ষণ দেবর বান্টি অরিজিত । কিছুদিনেই বাবলি আসিবে, জানিও নিশ্চিত!
সজনি সজনি ঐশি আইল, বাপ্টুর চোখে চোখটি রাখিল
মধুর মিলনে সাক্ষী থাকিল মায়ের সজনী মাসীরা।
আজি এ আষাঢ়ে সমবেত স্বরে, মৌসুমী, বর্ণালী, ইন্দিরা।।

************************

।। আমাদের প্রিয় ছন্দাদি, শ্বশ্রূমাতা হৈলেন।
অনিন্দ্য-ঐশিকার হাতে সংসার সঁপিলেন।
এক্ষণে ফোনে ফোনে সাড়া পাইব নিশ্চিত
ফ্রিকোয়েন্টলি ফোনের ধারে পাইব কিঞ্চিত!
অনুষ্ঠানে ফোনাফুনি শিখিয়া ল‌ইও ঐশী
এও জানিবে একটি শিল্প, কিছু কমবেশী
মোরা খলবলে রোজ ঝলমলে ভোরে কলকল করে হাসি
মোরা ঝলমলে শাড়ি পরিপাটি তাজা নীলপর্দায় আসি ।
মোরা কেশ এলাইয়া, গান শুনাইয়া তোমাদের কথা শুনি
মোরা ঘুম ভাঙানিয়া, সুখ জাগানিয়া ধূমায়িত চায়ে ভাসি !
মল্লিকা-মৈত্রেয়ী-রিণি সঞ্চালিকা ত্রয়ী
শুভেচ্ছায় রৈলাম জেনো পাত্রপাত্রী উভয়েই ।।

**** মৈত্রেয়ী, মল্লিকা, রিণি, বর্ণালী, শিল্পা, শর্মিলা, মৌসুমী ও ইন্দিরা ****

২৭ জুন, ২০১৬

পঞ্চমের সপ্তসুরে

 ইথার তরংগে তখন ভেসে যেত আমার ইহকাল, পরকাল। আমিই যেন তার অনুরাধা, মোনালিসা কিম্বা রুবি রায়। আজ আবার মনে মনে নি:শব্দ স্মৃতি তরপণ।।
আজ সকাল থেকে সেই সুর বাজছে মনের ভেতর। তুমি ছিলে তাই। রোদজ্বলা দুপুর আমার সুর তুলেছিল নূপুরে...কেমন যেন হয়ে যেত আশপাশ। বদল হত দৃশ্যপট। আমি পৌঁছে যেতাম সুরের ভেলায় ভেসে সব পেয়েছির দেশে। তোমার সঙ্গে দেখা না হলে সুরালোকের দেশটা আমার দেখা হতনা!


একটা কেমন স্তব্ধতা !
অন্ধকারে হাতড়ে মরি, শিল্পী তোমার শূণ্যতা
আকাশ ভরা তারার মাঝে, নায়ক তোমার পূর্ণতা ।
রাতের গায়ে দিন ঢলে যায়, গড়িয়ে চলে সময়টা
আনন্দের এই জীবন সফর, ব্যস্ত ইঁদুর-দৌড়টা ।
সাঁঝসবেরে, নীল আকাশে ভোকাট্টা সেই ঘুড়িটা
কেমন জানি হাতড়ে মরি, সুপারস্টারের শূণ্যতা !

জীবন? সে তো অনেক দিল, কমিয়ে দিল আয়ুটা
শিল্পী ! তুমি ঘুমিয়ে থেকো, কাটাও সুখের স্বর্গটা !
আকাশ যেন ঝলসে গেল, বদলে গেল দৃশ্যটা
একটা তারা খস্‌ল পড়ে, থম্‌‌কে গেল শহরটা !
কোথায় যেন হারিয়ে গেল, জ্বলজ্বলে সেই তারাটা
দম্‌কা বাতাস উড়িয়ে দিল, শুটিং স্টারের ফুলকিটা !
শূণ্য ঘরে, একা আমি থম্‌‌কে ঘড়ির কাঁটাটা
হঠাত ! যেন একলা ঘরে শিল্পী তোমার স্তব্ধতা !
অকালে চলে গেছিলেন তিনি । লিখেছিলাম তাঁকে নিয়ে এই কবিতাটা। আজ আদরের নৌকার আমন্ত্রণে সেই রাহুলদেব বর্মণের জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য জানালাম নিঃশব্দ এই স্মৃতিতর্পণের মধ্যে দিয়ে।
আমার ভালোবাসার গান ভাসতে ভাসতে চলত স্টাডিরুমের সংলগ্ন একফালি বারান্দা দিয়ে।তখন আমার সুইট টিন পেরোচ্ছে লাফিয়ে লাফিয়ে । ভালোবাসার প্রথম কদমফুল ফুটতে দেখছি আনাচেকানাচে। আর তখন নতুন দূরদর্শন এসেছে ড্র‌ইংরুমের সুখি গৃহকোণে। সেখানে গুরুগম্ভীর সংবাদ পরিবেশনের ফাঁকে ফাঁকে সাদায় কালোয় রবীন্দ্রসংগীত। আর মায়ের শোবার ঘরে ঢাউস রেডিওতে মায়ের বরাদ্দ নাটক আর আমাদের জন্য রোব্বারের গল্পদাদুর আসর । শনিবার স্কুল হাফছুটি হত। উইকএন্ডের সূচনালগ্নে জোরকদমে ট্রানসিষ্টর রেডিওতে প্রথম চিনতে শেখা আমার রাহুলদেব বর্মণকে বা গানবাঙালির পঞ্চমদা কে ।
ভোরের আলোর পর্দা সরিয়ে, কচি রোদ্দুর গায়ে মেখে গান চলত আমার কৈশোরে । একটু থামত আবার ফিরে আসত । স্কুলব্যাগ গোছানোর ফাঁকে ফাঁকে আশপাশের বাড়ির থেকে কানে আসত আধুনিক গান।আমি তখন ক্ল্যাসিকাল গানের তালিম নিচ্ছি আর গীতবিতানের স্রোতে ভাসছি। অতএব আধুনিক গানের চর্চা? নো ওয়ে! অথচ বাবা-মা দিব্য গাইছেন তুমি আর আমি শুধু জীবনের খেলাঘর অথবা আজ দুজনার দুটি পথ ওগো দুটি দিকে গেছে বেঁকে। কিন্তু আমার গানের ওপর যত্ত ট্যাক্স বসানো! গীতবিতানের জানলা খুলে আবার ভাসত আমার গান । ভালোবাসার গান । ক্রমে শুক্রবারের সন্ধ্যের অন্ধকারের পরত ছিঁড়েখুঁড়ে ভালোলাগার গান এসে পড়ত শনিবারের গানভাসি দুপুরবেলায়, শ্রাবন্তী মজুমদারের মনের মত গান, মনে রাখার কথা অনুষ্ঠানে। রাহুলদেবের গান বাজত সেখানে অনেক। এই ভাবে আমার স্বপ্নপথে ভালোবাসার গান এসেছিল সেদিন । আর কেন জানিনা অঙ্কখাতা হাতে আমি রাহুলদেব বর্মণের গান শুনতাম। কেমন এক ফ্যান্টাসিময়তা! কোনোদিন ঐ অনুষ্ঠানে ওনার গান না শুনতে পেলে মুড অফ হয়ে যেত । ঠিক যেন প্রেমিক পুরুষের সাথে দেখা হয়েও হলনা টাইপ আমার মনের অবস্থা তখন।
একটু আফশোস ছিল একদিন । সেই অপূর্ণতা নিয়ে রাতে ঘুমিয়ে এই স্বপ্ন দেখেছিলাম ভালোবাসার গান নিয়ে ।

তারপর ধড়মড়িয়ে উঠে দেখি গান আমার মনখারাপের উঠোন পেরিয়ে, স্বপ্নপথ বেয়ে সোজা আবার আমার পাশে লাইভ । বিয়ের পরদিন শ্বশুরবাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে আমার স্বামী দেখালেন, ঐ দ্যাখো ওয়েডারবার্ণ রোডের ঐ বাড়িটায় তোমার রাহুলদেব এক সময় রেগুলার এক বন্ধুর বাড়িতে আসতেন। চোখ চকমক করে উঠল। আমার ভাসুরের সাথে তীর্থপতি ইন্স্টিটিউশানে পড়তেন তিনি। আর পিসি শাশুড়ি বললেন, পঞ্চমকে তো আমরা কত্ত দেখেছি। পড়াশোনা একদম করতনা। বিকেল হলেই ছেলেরা ইনক্লুডিং আমার ভাসুর ঐ আড্ডাবাড়ির সামনে গিয়ে চীতকার করে ডাক দিতেন রাহুলদেবকে নিয়ে খেলতে যাবার জন্য। ভাবলাম, ইস্‌ এই বাড়িতে আরো আগে কেন আসিনি।

আমার মন তখনো আকুপাঁকু রোদজ্বলা দুপুরে.. ইস্‌ ! যদি আমার পায়ের নূপুরের সুর তুলতে পারতাম তার জন্য! ঠিক তেমন ভাবসাব আমার। এখনো রঙীন পর্দায় গানছবিতে রাহুলের সেই সৃষ্টির জন্য পথ চেয়ে থাকি। ইয়াদো কি বরাত মুখে মুখে ফিরেছিল আমার ছোটবেলায়। তখন হিন্দী বুঝতাম কম। সেই ১৯৭৬ সালে রাহুল শোলের সেই বিখ্যাত মেহেবুবা মেহেবুবা গানটি গেয়ে বেষ্ট পুরুষ কন্ঠের এওয়ার্ডটি পেলেন। এই গানটি বুঝি নিজের জন্যেই বানিয়েছিলেন তিনি আর কিংবদন্তী হয়ে র‌ইলেন। গান বানানোর সেই অদ্ভূত সমীকরণ আজো অধরা নতুন প্রজন্মের সঙ্গীত পরিচালকদের কাছে। প্রতিনিয়ত চ্যানেল সার্ফিং হঠাত করে হয়ত ধরা দেয়, মনে করিয়ে দেয় সনম তেরী কসমের টাইটেল ট্র্যাক.. "কিতনে ভি তু করলে সিতম্‌'..১৯৮২ সালে মুক্তি পাওয়া ছবি। আর আমার বেথুন কলেজে ফার্স্ট ইয়ার। সেবছরেই শীতে আমরা অজন্তা-ইলোরা গেছিলাম । বম্বে থেকে টানা বাসে পাহাড়ি পথে সেই গান সারা রাস্তা বেজেছিল। আর সিনেমাতেও কামল হাসানের সেই বাসেই গানদুষ্টুমি। পশ্চিমঘাট পর্বতমালার সবুজে নীলে আমার কবিতা তখন পঞ্চমময়তায় ভরা। তারপর ১৯৮৪ তে মাসুম। অনুপ ঘোষাল, আরতি মুখার্জি গাইলেন হিন্দী ছবিতে পঞ্চমের সুরে সেই অনবদ্য গান। আরো কত স্মৃতি আছে এমন। হেমা মালিনী-রাজেশ খান্নার মেহবুবা দেখতে গেছিলাম জ্যাঠামশাইয়ের বাড়ি গিয়ে, দিদিরা নিয়ে গেছিল, মেনকা সিনেমা হলে। সেই আমার জ্ঞানত প্রেমের হিন্দী ছবি দেখা। আমি তখন ক্লাস সেভেন। প্রচন্ড বকুনি জুটল বাড়ি ফিরে। পঞ্চম যেন হারিয়ে গেল কিছুদিনের জন্যে আমার জীবন থেকে।
তারপর শোলে, হাম কিসিসে কম নহি, কিনারা... সব সুপার ডুপার ফিট ফর্মুলা, হিট পঞ্চম। আবার নতুন করে পেলাম 1942 এ লাভ স্টোরিতে। কিন্তু হারালাম সেই ক্ষণেই আমার ভালোবাসার গানের মানুষকে, যিনি প্রকৃত বুঝতেন গানের কেমিষ্ট্রিকে। হিন্দীছবির সাথে গান মেশানোর এলগরিদমটা তদ্দিনে তাঁর রফ্ত হয়ে গেছে। কিন্তু ফুরিয়ে গেল জীবনটা। সাফল্যের শিখরে উঠেই হারিয়ে যাওয়া আমার পঞ্চমের।

ফিরে এসো অনুরাধা শুনে মনে হত আমাকেই যেন বলছেন উনি। "যেতে যেতে পথে হল দেরী'র সুরে যখন আঁধি ছবিতে "তেরে বিনা জিন্দেগী সে কোয়ি' গানটি তৈরী হল তখন আমি যেন পাগল প্রায়। কিছুদিন পড়াশুনো ভুলে রেডিও খুলছি কেবলি। কোথায় পাব তারে? তখন এত গান শোনা যেতনা, এখন যেমন ইউটিউব, সিডি সব কিছুর কৃপায় কোনো গান‌ই অধরা নেই কারোর কাছে। আর আমাদের বুঝি সেইজন্যেই গানশোনার কান এবং অদ্ভূত এক ভালোলাগা তৈরী হয়ে গেছিল। কি আকুতি সেই প্রেমিক কন্ঠে তা আজো বসে ভাবি। অনেক রিমেক হচ্ছে, হয়েছে। ডিস্কোথেকে ওনার ট্র্যাকগুলো রিমিক্সিং হয়ে বাজতে দেখি।

মনে মনে হাসি, ভাবি সেই লাইনটা, 'আমি গিয়ে দেখি, তুমি নেই একি'.......থাকলে তিনি হয়ত খুশিই হতেন মনে মনে বলি, 'চলে যে গেছো তুমি, দাঁড়িয়ে থেকে থেকে ওগো, চলে গেছো, চলে গেছো, বুকে কাঁটা লয়ে, ব্যথা তবু সয়ে....'..... বেঁচে আছি তোমার হয়ে পঞ্চম। গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার যেন উজাড় করে কথা লিখেছিলেন সেদিন আর পঞ্চম তাঁর উদাত্ত কন্ঠে গেয়ে গেয়ে সুর করেছিলেন বুঝি! অবাক হ‌ই এই কথা-সুরের অভিনব মেলবন্ধন দেখে। সত্যি সত্যি তিনি দেবশিশুর মত নেমে এসেছিলেন সুরলোক থেকে । নয়ত এ সৃষ্টি কি আর হত?

কতজন তো গাইলেন মনে পড়ে রুবি রায় এতগুলো বছরে। কিন্তু সেই শুরুটার আবেগ? আর প্রতি ছত্রে ছত্রে দেখেছি বা ডেকেছির 'ছি' অক্ষরটা? এমন করে কেউ গেয়েছেন বলে আমার মনে হয়না। অথবা সে কথা কি কোনোদিনো ভাবতের 'তে' অক্ষরটার অনুরণন?
আমি কি আর দীপজ্বলা সন্ধ্যায়, আমার হৃদয়ের জানলায় বসে বসে শুনতে পাবো সেই পঞ্চমের সপ্তসুর? পাখি সে তো আসেনি আর আসবেওনা কোনোদিন।

১৮ জুন, ২০১৬

মনসুন সোনাটা

 ওয়েব ম্যাগাজিন সেমিনার 
সম্প্রতি  আনন্দবাজার পত্রিকায় একটি  sms poll এ দেখছিলাম জানতে চাওয়া হয়েছে "বাংলা কি বেকার ভাষা?" এই উক্তির পক্ষ একেবারেই না নিয়ে বলতে চাই বাংলা আজ বেকার ভাষা হলে সেই ভাষাকে কেন্দ্র করে অনেক মানুষের রুজিরোজগার এবং তাও আবার ঐ পত্রিকাকে ঘিরে । এমন জনপ্রিয় একটি সংবাদপত্রের ট্যাগলাইন হোল "পড়তে হয় নয়ত পিছিয়ে পড়তে হয়" ।  এই দৈনিক পত্রিকাটি বাংলাভাষায় বলেই হয়ত এতটা জনপ্রিয় এবং তার সুষ্ঠু সম্পাদনাকে ঘিরে আজ কোলকাতা সহ পশ্চিমবাংলার অনেক মানুষই সাকার ।  তাই বুঝি সুদীর্ঘ ৯০টা বছর পার করেও তার পাঠককুল সাতেও থাকেন, পাঁচেও থাকেন । আবার নয় নয় করে তার পাঠক সংখ্যা ৯লাখে পৌঁছায় ।  তবুও অবাক হ‌ই যখন বাংলাকে বেকার ভাষা বলে ভোট নিতে চান দেখে । হয়ত বা আমার ভুল এই ভাষাকে কেন্দ্র করে এই বেকারত্বকে ঘিরে । কিম্বা হয়ত পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারত তথা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাভাষার গুরুত্ব যাচাই করার জন্য এই ভোট । সে যাই হোক কিছুদিনের মধ্যেই দেখি সেই ভোটের ফল প্রকাশিত । আকাশতলে অনিলে জলে, দিকে দিগন্তলে ৮৮ শতাংশ মানুষ এই বাংলাভাষাকে ভালোবেসে "ভালোভাষা" বলে জানিয়েছেন । 
এই ভোটাভুটির মাঝামাঝি কোলকাতায় আয়োজিত হল এক আলোচনাচক্র । ইন্টারনেটে বাংলাভাষার প্রসার, প্রচারকে ঘিরে নেটসাহিত্যের অগণিত পাঠক, লেখক ও সম্পাদকদের আনুকুল্যে । যার নাম "ওয়েব ম্যাগাজিন সেমিনার"  । বাংলাভাষায় সাহিত্য রচনা করতে ভালোবাসেন অনেকেই । এবং এই ভাষাকে কেন্দ্র করে সম্পাদিত হয় অনেক অনেক ই-পত্রিকা বা ওয়েব ম্যাগাজিন ।   আর বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির রমরমায় বাঙালীর ঘরে ঘরে ট্যাবলেট বা স্মার্টফোনের অধিক্যে সেই সাহিত্য এখন এককথায় হাতের মুঠোয় ।  তাই এরূপ একটি সেমিনারের প্রয়োজনীয়তা এই মূহুর্তে খুব জরুরী ছিল । সৃষ্টি, ইচ্ছামতী এবং ওকোলকাতা এই তিনটি ওয়েব পত্রিকা এবং ব্লগজিনের  আতিথেয়তায় আমিও হাজির ছিলাম গত ১২ই অগাস্ট ২০১৩ বাংলা একাডেমীর জীবনানন্দ সভাঘরের ঐ আলোচনাচক্রে ।   
-->
ব্লগ লেখা শুরু করি ২০০৮ এর গোড়ার দিকে । ততদিনে বাংলা লেখার সফটওয়ার ও ইউনিকোডের জয়জয়াকার । এরপর সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট ও ব্লগার বন্ধুদের সাথে ঘনিষ্ঠতায় ব্লগের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে । সোনারতরী ছিল আমার নিজের ব্লগ ।
অর্কুটময় দুনিয়ায় তখন বন্ধুদের সাহিত্যরস উপচে পড়ছে দেখে ভাবতাম এগুলি আমার ব্লগে একত্রে রাখলে তো মন্দ হয়না ।
কবি তো বলেইছেন "সেই সত্য যা রচিবে তুমি' ....সেই ভাবনা নিয়ে বেশ কয়েকজন বন্ধুকে বাংলা লেখা শিখিয়েও ফেলেছিলাম অনলাইন । কিন্তু ব্লগ খুলতে তারা নারাজ অথচ নিজের লেখা নেট-সাহিত্যে দেখতে খুব উদগ্রীব । সেই ভাবনা নিয়ে সোনারতরী থেকে প্রথম আত্মপ্রকাশ হয় "অর্কুট আগমনী পাঁচালী'
সেটাই ব্লগ থেকে আমার সম্পাদনায় ওয়েবম্যাগের জন্মলগ্ন, ২০১০ সালে পুজোতে । জনপ্রিয়তা দেখে ২০১১ তে "দোলছুট" ও ১লা বৈশাখে "পয়লা সাহিত্য পার্বণ" প্রকাশিত হল ।
তখুনি মেটামরফোসিস। ছিল রুমাল, হল বেড়াল । সোনারতরী র‌ইল আমার লেখার জন্য কিন্তু প্যাপিরাসের জন্ম হল ২০১১ পুজোতে । এইভাবে ব্লগ-বৈতরণী পার হতে গিয়ে কত লেখকের লেখায় সমৃদ্ধ হল প্যাপিরাস । পরিচিতি বাড়তে থাকল ।
গুণমানের উত্কর্ষতার কথা চিন্তা করে বছরে দুটি উত্সব সংখ্যা বের করি আমরা । পুজোসংখ্যাটি একটু বিস্তারিত হয়,একগুচ্ছ গল্প, কবিতা, ভ্রমণকাহিনী, নিবন্ধ ও হোমমেকারের হেঁশেলের রেসিপি দিয়ে । আর ২০১২ থেকে শুরু হল একটি আলোচনাচক্র বা ফোরাম যার নাম "চক্রবৈঠক"। সমাজের বিভিন্ন পেশার মানুষের কাছ থেকে কোনো বিষয়ের ওপর মতামত সংগ্রহ করে সেটিকে প্যাপিরাসের পাতায় উপস্থাপিত করা হয় । ধারাবাহিক স্মৃতিচারণা থাকে একটি বিভাগে । ধরণীর পথেপথে নামে ভ্রমণের পাতা থাকে একটি । কখনো অণুগল্প থাকে ডজন খানেক অথবা নির্দ্দিষ্ট থিমে ছোটগল্প স্থান পায় ।

আমাদের ওয়েবম্যাগাজিনের ঠিকানা হল papyrus.sonartoree.com
আপনারা পড়ুন ও পড়ান সকলকে আর আপনাদের সুচিন্তিত মতামতের অপেক্ষায় র‌ইলাম ।


ক্যান-আনসার
 ক্যান-আনসার নামক একটি ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করেছিলাম স্বেচ্ছায় । আমাদের এক পুরোণো বন্ধু  অয়ন চৌধুরী এই গ্রুপের হোতা এবং প্রধান কর্ণধার । এবছর ছিল ক্যান-আনসারের প্রথম বর্ষপূর্তি ।  পাটুলীর কাছে কেন্দুয়া শান্তিসংঘ ক্লাব ও ক্যান আনসারের উদ্যোগে ১৫ই আগষ্ট ২০১৩ তে  আমরা হাজির হয়েছিলাম ঐ দিন সন্ধ্যায় । প্রচন্ড বৃষ্টি হওয়া সত্ত্বেও প্রচুর মানুষ হাজির হয়েছিলেন ঐ আলোচনা চক্রে । অনেক নামী অঙ্কোলজিষ্ট, বৈজ্ঞানিক, চিত্রশিল্পী, এবং কোলকাতার নাট্যমঞ্চের বেশ কয়েকজন মানুষ উপস্থিত হয়ে ওনাদের এই মারণ ব্যাধি নিয়ে সুচিন্তিত মতামত রেখেছিলেন ।   অভিনেতা চন্দন সেন, বাদশা মৈত্র, অনিন্দ্য এবং ডাঃ গৌতম মুখোপাধ্যায়, ডাঃ টিঙ্কু আচার্য কোলকাতায় এই রোগটির ভবিষ্যত এবং সুযোগ সুবিধা নিয়ে আলোচনা করলেন । ছিল একটি প্যানেল ডিসকাশান । আমি আমন্ত্রিত হয়েছিলাম উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশনের জন্য । শুভাপ্রসাদ নন্দী মজুমদার এবং তাঁর সুযোগ্যা কন্যা ডানা, অমিতাভ চৌধুরী এবং শ্যামল চৌধুরী সংগীত পরিবেশন করেন । শুভাপ্রসাদের কন্ঠে শুধু তোমার বাণী নয় গো হে এবং ডানার কন্ঠে ও আমার দেশের মাটী, অমিতাভর কন্ঠে  মাগো ভাবনা কেন, শ্যামল চৌধুরীর কন্ঠে সার্থক জন্ম আমার সত্যি সত্যি প্রশংসনীয় ।  সকলেই বললেন কর্কট রোগাক্রান্ত মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে, তাদের পাশে থাকতে এবং তাদের সঙ্গ দিতে । ডাক্তারবাবুরা আলোচনা করলেন কি করা উচিত, কোথায় সর্বাগ্রে যাওয়া উচিত এই নিয়ে । কোলকাতায় এরূপ আলোচনাচক্র হওয়া খুব জরুরী । কারণ কোলকাতার চিকিত্সার ওপর আস্থা না রেখে বহু মানুষ পাড়ি দেন ভিন রাজ্যে । আমার প্রশ্ন তাহলে কি ভিনরাজ্যে এই রোগ নিয়ে সচেতনতা  আরো বেশী এবং চিকিত্সক এবং সহকারীরা কি আরো বেশী কম্পিটেণ্ট না কি কোলকাতার মানুষজনরা এই রোগ কে নিয়ে অহেতুক ত্রাসে ভোগেন ?  এমন অনুষ্ঠান আরো হোক । তবেই হবে এই রোগকে দমন করার মত সাহস । রোগ তো মানুষের শরীরে দিনক্ষণ তিথি না মেনেই বাসা বাঁধে কিন্তু আমরা কি পারিনা দিনক্ষণ তারিখ মেনে প্রতি মাসে গুগল হ্যাঙ আউটের মাধ্যমে এরূপ আলোচনা চক্রে যোগ দিতে? ক্যান আনসার ভাবো এবং ভাবাও সকলকে । তাহলে দেশের গন্ডী পেরিয়ে আমরা আন্তর্জাতিক আলোচনা চক্র তৈরী করতে পারি । অনেক তথ্যের আদানপ্রদানে রোগটি সম্পর্কে আরো সচেতন হতে পারি । মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারি । 
অলীক সুখ 
শিবপ্রসাদ-নন্দিতা জুটির হ্যাট্রিক ! দেখেছি এদের আগের ছবিদুটিঃ ইচ্ছে ও মুক্তধারা । খুব বাস্তববাদী কাজ করেন এরা । আর নতুন রকমেরো ।  আমার পছন্দের লেখিকা সুচিত্রা ভট্টাচার্যের কাহিনী। পছন্দের অভিনেতা দেবশঙ্কর হালদারকে নায়করূপে প্রথম দেখা। আর সোহিনীকে নতুন করে কিছু বলার নেই । চন্দ্রবিন্দুর অনিন্দ্যকে আরো একবার Hats off! দারুন লিরিকস আর দারুন সুর। আর জয় সরকারের অনবদ্য সঙ্গীত আয়োজন ।পুরোটাই পাওয়ার সুখ । আমার কাছে যা মোটেও অলীক নয় ।
সব মিলিয়ে রোবাবরের বিকেল + প্রিয়া সিনেমা + অলীক সুখ = টোট্যালি পয়সা উশুল ছবি । সাথে বোনাস হল বিশ্বনাথ + নন্দিতা + শিবপ্রসাদের সাথে প্রিয়ার সিঁড়িতে করমর্দন !!!
এই হল কলকাতার মানুষজনের অলীক সুখ । বাঙালী বেশ আছি আমরা বেঁচে বরতে ...কি বল ? বাইরে বেরিয়ে দেখি একজন ব্যাগ ভর্তি আচার নিয়ে চেঁচাচ্ছে " ও মা একটা প্যাকেট আচার নিয়েই দেখুন না ! ওদিকে ন্যানোর কারখানা হলে সে সিঙ্গুরে গিয়ে সেই আচারের ব্যাগ পুরোটাই হয়ত বিক্রি করে আসতে পারত । অন্যথায় যারা আচার তৈরী করা শেখালো তারা সেই আচারের বিশ্বব্যাপী মার্কেটিং করে আজ ক্রোড়পতি। আজ তারাই এই শহরটাকে গ্রাস করে ফেলল । তাই তো ন্যানো ওদের দেশে ।আমাদের অলীকসুখ আছে বাবা। আমরা এই নিয়ে দিব্য আছি বেঁচে । আমাদেরই বা সুখ কম কিসের?
ভামের ফলাহার
রোজ‌ই দেখছি ফলের ঝুড়ি ক্রমশঃই নিম্নগামী । আজ দুটো আপেল, কাল একটা পেয়ারা । কাল রাত্তিরে হাতেনাতে । কে বলেছে ভীড়ভাড়াক্কার মহানগরে "ভাম" নামক জীবটি লুপ্তপ্রায়? সাততলার ছাদ দিয়ে ঢুকে মনের আনন্দে সে একটা মস্ত পাকাপেঁপে প্রায় আধখানা খেয়ে বামাল সমেত গ্রেফতার । বেচারা পাকা পেঁপের আধখানা খেয়ে ফেলেছিল ভাগ্যিস! বাকীটা বাথরুমের পাশে রেখে আমাকে দেখেই পত্রপাঠ জানলা দিয়ে ইয়া মোটা সুললিত ল্যাজ গুটিয়ে পালিয়ে পথ পায়না! রেশমী তার দাড়ি চকচকে পশমী গা, ধূসর সোনালী আভা ফুটে বেরুচ্ছে। শহুরে ভামের ব্যাপারই আলাদা । আবার হানা রাতদুটোতে । শব্দ পেয়েও উঠিনি । বারান্দার কোলাপ্সিবল গেট দিয়ে ঢুকে আবার একটা আপেল সিঁড়িতে, আরেকটা ধোপদুরস্ত টেবল-লিনেনে ছত্রাকার করেছে !
 "খাবিতো খা, না খাবিতো যাঃ" ....তাই বলে ঈদের বাজারে মাগ্যির ফল নিয়ে নষ্ট করবি! প্রফেট মহম্মদ ঈদের দিনে পাঠিয়েছিলেন এই দেবদূতটিকে । একে না কি খট্টাশ বলে । নিশাচর হয় এরা ! যাক্‌ আমার ঈদের নামাজ পড়াতো জানা নেই । জীবে প্রেম করে যেই জন সেই জন সেবিছে ঈশ্বর! ইংরেজী নাম Large Indian Civet Cat.
  

মনসুন মোমেন্টস-২

   ভেজা টাওয়েলটা আবার বিছানার ওপর রেখেছিস? ….সরি মা! তুমি তো আছো তাই।
দাদাই বলল, পরের বারে এসে হয়ত আমার সাথে আর দেখাই হবেনা তোর।.... ধুস্! দাদাই! কি যে বলো! 
দিদা বলল, আর কি পরের বার তোকে নিজের হাতে মাংস রেঁধে খাওয়াতে পারব? ….ঠিক পারবে দিদা। 
ঠাম্মা বলল, কি রে আরেকবার আজ দেশপ্রিয় পার্ক খেলনার দোকানে যাবি নাকি? হট-হুইলসের গাড়ি কিনতে? ….এখন আর অত ছোট্ট গাড়িতে হবেনা ঠাম্মা। রিয়েল মডেল চাই ফর্মুলা ওয়ান কারের।  

.....আইনক্সের সেই মুভিটা? মানিস্কোয়ারের সেই আইসক্রিমটা? গড়িয়াহাটের মোড়ের সেই রোলকর্ণার? মনে পড়ছে কি তোমার বলো? বলো? চুপ করে আছো কেনো মা? নিউমার্কেট যাবে যে বলেছিলে? সেই কত কত ফেক ঘড়ি ছিল ! পার্কস্ট্রীটের চেলো কাবাবটা খাওয়ানো হলনা তোমাকে আজো! প্রিয়ার কাছে সেই দুপুরগুলো? তুমি ফুটপাথী মোমো খেতে দিতেনা, বলতে বানিয়ে দেবো। মায়ের কেবিনের চপ আজো খাওয়া হলনা আমাদের্! এখনো ফুটপাথে বিরিয়ানির হাঁড়িগুলো বসানো থাকে মা? কি উগ্র গন্ধ বেরোয় আশপাশ থেকে। 

তোমাদের ধর্মের সংজ্ঞাটা আজো ক্লিয়ার না আমার কাছে। জানো মা ? আজ আমাদের দেশে এত রেপ হয় কেন?
এই তোমাদের মত অর্থডক্স যারা সংস্কারের বশে হাত ধুয়ে পুজো করো, পুজোর ফুল মাথায় ঠেকাও তাদের জন্য। মেয়েদের জন্যে যারা একটুও ভাবোনা তাদের জন্যে।  ঠাম্মা-দিদাই তো বলে ফুলো লুচিগুলো আমার পাতে দিতে। আর তোমরা সব মিয়োনো, ন্যাতন্যাতে, পোড়াগুলো নাও নিজেদের পাতে। ছেলেদের উচ্চাসনে বসিয়ে কি লাভ মা? সমান করতে শিখলেনা আজো? আমের আঁটিটা তুমি‌ই কেন খাবে? বাবার পাতে কেন দেবেনা মা? মেয়েদের এত নীচু করে রেখে আসার মাশুল দাও এবার। 
….
মা, আবার তুমি আজ সেই চিকেনটা বানিয়েছো? জিও! বেশী রুটি করেছ তো ?   
মা, জিনসের এই বাটনটা  একটু সেলাই করে দিও প্লিজ! কতবার বললাম এই নিয়ে!
ঘুম থেকে উঠবনা, ব্যাস্! আজ রোববার! আজ দেরী করব‌ই।
মা, রান্নার মাসী আসেনিতো কি? আজ তাহলে রান্না কোরোনা। কাবাব খেতে যাব চলো। প্লিজ মা, কাবাব এন্ড বিয়ার !!!
ফাটাফাটি হয়েছিল কালরাতের  পুডিংটা। আবার বানিও। ওজন বাড়ছে বাড়ুক, নো চাপ! চিল, চিল! কুল, কুল!
….
এই উইকএন্ডে তবে শান্তিনিকেতন ফাইনাল তো ?... ইয়েস!
মা শুনেছো? ইউটিউবে শানের রবীন্দ্রসংগীত! হোয়াট এন ইম্প্রোভাইজেশান! কর্ডগুলো ফলো করলে? এই নেক্সট উইকেন্ডে কিন্তু উইকেন্ডার কলকাতায়। ফসিলস থাকছে। যাবে তুমি?
নজরুল মঞ্চে ইন্দ্রায়ুধের বাবা তেজেন্দ্র নারায়ণ আছেন, সাথে জাকির হোসেনের তবলা। যাবে তো ? 
ঐ দ্যাখো মা, আমার সেন্ট জেভিয়ার্সের বন্ধু কবীর তোমার তারা মিউজিকে পারফর্ম করছে!
….
মা, রান্নার মাসীরো তো ছুটির দরকার আছে? সপ্তায় সাতদিন তোমার ছেলে যদি কাজ করত?
চিনি-দুধ না দিয়ে ঐ অখাদ্য চা যে তোমরা কি করে খাও?  
আমার ডিমের পোচে "মোলগরিচ" মাস্ট কিন্তু!    
….
 বিয়েবাড়ি থেকে ফিরে বাড়ির মেয়েরা বলাবলি করছিলাম "বৌ কিন্তু বেশ ময়লা। রং টা আমাদের বাড়ির মতো নয়" ব্যস! ঝাড় খেলাম সক্কলে ছেলের কাছে।
আচ্ছা মা গায়ের "কমপ্লেকশান"টা কি  মেয়েটার দোষ? গায়ের ওপরে কি কোনো ট্যাগ লাগানো থাকে? "ফর্সা", "কালো" এইসব? তোমরা কতবড়ো হিপোক্রিট বলো! মাকালীর পুজো করো আবার কালো বৌ বাড়িতে এলে ক্রিটিসাইজ করো! 
….
অবশেষে ভরে গেল তার স্ট্রলি ব্যাগ। মামা-মামীর আদরে উপচে পড়া সেই হাসিটা ডোরবেল শুনে দৌড়ে গিয়ে রিসিভ করতেই থাকল সুদূর ব্যাঙ্গালোর থেকে পাঠানো  একের পর এক গিফ্ট...পারকার পেন, টাই, লেদার ওয়ালেট, ফার্ষ্টট্র্যাক ঘড়ি ....মায়ের চুপিচুপি ওয়েষ্টসাইডে গিয়ে  কিনে আনা পুজোর জামা, টিশার্ট- ব্লু জিন্স, মোজা, রুমাল, ভেস্ট, ড্রয়ার, ট্র্যাকস্যুটস, মেডিসিন, আর বাবার  ওয়ালেটে পড়ে থাকা কিছু খুচরো ডলার নোটস। ঠাকুমা, দাদু-দিদারা আলমারী ঘেঁটে আরো কয়েকটা ছোট নোট।
…..
মামাদাদুর ওভারকোর্টটাই নেব আমি। ড্রাই ক্লিন করিয়ে দাও। ওটা উইসকনসিন থেকে এবার ফিলি যাবে আমার সাথে।  তনুমা লাস্ট-ইয়ার  পুজোতে যে ব্লু শার্টটা দিয়েছিল? আর সেই ফুলস্লিভ রেড গেঞ্জীটা? দিয়েছো তো মা? 
….
ঠাম্মা, আজ বাজারে তপসে মাছ পেলে নাকি?  মৌরলাটা পেলেও এনো প্লিজ!
দিদা, তোমার সব লুচিগুলো গোল হয় কি করে? 
দাদাই,  তুমি তো কানে শুনতে পাবেনা, বরং আবার বলো সেকেন্ড ওয়ার্ল্ড ওয়ারের গল্পগুলো। 
কাজের মেয়ে বলে, ও বৌদি, খুব ভালো করে উজালা দিয়ে দিলাম গেঞ্জীগুলোতে....ওখানে বেচারার কি হবে কে জানে?
রান্নার মাসী বললে, ও দিদি? ওকে সহজে চিকেন স্ট্যু-টা শিখিয়ে দি চলো।
বাবু, কিচেনে ঢোকার আগে হাতটা ওয়াশ করে নিস। কুকিং রেঞ্জে হাত দেবার আগে গ্লাভস পরে নিস।  কি যে করবি তুই একা একা!  বাবু, ওখানে একটা মিক্সার-গ্রাইন্ডার কিনে নিস কিন্তু। মাসী নেই যে শিলে তোর মাংসের মশলা বেটে দেবে। 
দ্যাখ, এমনি করে স্ক্রেপার নিয়ে আলু ছাড়িয়ে, চপিং বোর্ডে রেখে তারপর ছুরি দিয়ে.....ব্যাস, ব্যাস! আর বলতে হবেনা মা, তোমার রান্নার ব‌ইটাতে এসব আছে তো ?
আমি বললাম, ধুস্! সেখানে তো শুধুই রেসিপি! এগুলো আস্তে আস্তে শিখে যাবি দেখিস!দেখিস বাবা হাতটা কেটে ফেলিসনি যেন! তুই যা ধড়পড়ে!  
আর তোমার সেই প্রেসারকুকারে ফেমাস চিকেন বিরিয়ানির রেসিপি? ওটাতো লাইফসেভার, মামু বলেছিল ফার্গোতে পৌঁছেই। 

সত্যি খুব ইজিরে ওটা। সকালবেলা কলেজ যাবার আগে চিকেনটা মশলাপাতি দিয়ে ম্যারিনেট করে, ইয়োগার্টে ভিজিয়ে ফ্রিজে রেখে দিবি।  সন্ধ্যেবেলা ঘরে এসেই প্রেসারকুকারে রিফাইন্ড তেলে গরমমশলা, আলু, পেঁয়াজটা বাসমতী চালের সাথে ভেজে নিয়ে চিকেনটা দিয়েই একটা সিটি ব্যাস! আর্সেনালের ম্যাচ আর আর্সেলানের বিরিয়ানি জমে দৈ এক্কেরে! ও হ্যাঁ, জলটা দিবি ডাবল অফ রাইসের একটু কম।
মা আমার দ্বারা এত্তসব হবেনা। ঠিক হবে দেখিস! একদিন বানিয়ে দু দিন খাবি। আর খিচুড়ি, ফ্যানেভাতে, ডাল সেদ্ধ, ওমলেট, আলুভাজা তো এতবার শেখালাম।