সুজনেষু সব ব্রতীরা
আমি আজ জেগেই থাকব সারাটা রাত। যতক্ষণ না পূর্ণিমার চাঁদ ডুবে যায় আকাশের মধ্যে। যতক্ষণ না আমার চোখের পাতা ক্লান্ত হয়। যতক্ষণ না আমি তার দেখা পাই। কেউ ঘুমিওনা আজ রাতে। ঘুমিয়ে পড়লেই আমার শব্দ শুনতে পাবে। কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে আমি চুপিচুপি বলব "জাগদেরহো"! আমার ঘুম নেই চোখে। আর আমিও ঘুমোতে দেবনা কারোকে। শারদপূর্ণিমা আমার যে ভীষণ প্রিয়। আশ্বিন-কার্তিকের এই পূর্ণিমার সময় বর্ষা ঋতু ফিরে যায় একবছরের মত। মৌসুমীবায়ু বিদায় নেয়। শস্যশ্যামলা মাটিতে নতুন আউস ধানের গন্ধ ওঠে। তোমাদের ঘরে ঘরে পরব আর আমি তখন কোজাগরী। আমার তখন কৌমুদী-উত্সব। চাঁদের আলোয় তখন আমার রাত পরিক্রমার শুরু। আমি কোজাগরী হয়ে দেখব কে আমাকে চায়। কে আমার পালন করে। কে আমাকে বেঁধে রাখে আজীবন।
জানো ? আমরা দুই যমজ বোন। লক্ষ্মী আর অলক্ষ্মী। আমার সব সোজাসাপটা, সাধাসিধে । আমার ধীরস্থির চলনবলন। আমি শান্তশিষ্ট, বেশী আওয়াজ আমার নাপসন্দ। বেশী খাওয়া দেখলেই আমার বমি আসে। আমি মিষ্টি, দুধের খাবার পছন্দ করি। আর আমার বোন অলক্ষ্মীর সব উল্টো। সে যেমন কলহপ্রিয়া তেমনি কোলাহল প্রিয়া। সে বড্ড বেশী খায় আর যতসব টক, ঝাল আর বিদঘুটে সব খাবার তার পছন্দের। সে যেমনি বাচাল তেমনি চঞ্চল।
আমাকে ছাড়তে নাছোড় সে। আমারো খুঁতখুঁতানি থাকে তাকে নিয়ে । নিজের সংস্কারটা শুদ্ধ রাখতে চাই যে! ওর সঙ্গদোষে যদি আমি খারাপ হয়ে যাই! ভয় হয়।
অলক্ষ্মী যেমনি হোক, আমার আশেপাশেই থাকে। বোন তো! ফেলতে পারিনা, গিলতেও পারিনা তাকে। তবে আমার দাপটে সে একটু হলেও চাপে থাকে সর্বদা। সাধারণ মানুষ বিষ্ণুর অবতারত্ব নিয়ে কতকিছু বলে কিন্তু আমি মেয়ে বলে আমার কথা কেউ বলেনা। আমি ত্রেতায় রামের সহধর্মিণী সীতা, দ্বাপরে কৃষ্ণের পত্নী রুক্মিনী। পুরাণে বলে সমুদ্রমন্থনের সময় ক্ষীরসাগর থেকে পদ্মফুল হাতে আমি উঠে এসেছিলাম। তাই আমার অপর নাম পদ্মা। আমি আবার নাকি পদ্মফুলে বসি তাই আমার নাম কমলা। আমি বিষ্ণুর প্রেমিকা তাই আমার নাম বিষ্ণুপ্রিয়া। এমন সব কত আদরের, আহ্লাদের নাম আমার ।
সমুদ্রমন্থনের সময় উঠে এসেছিলাম তাই কেউ আমায় বলে সমুদ্রকন্যা। কেউ আবার ডাকে ভূদেবী অর্থাত সারা পৃথিবীর, সমগ্র প্রকৃতির পালনকর্ত্রী নাকি আমি।
ঐ দ্যাখো সকলেই বলে "বিশ্বরূপস্য ভার্য্যাসি পদ্মে পদ্মালয়ে শুভে সর্বতো পাহি মাং দেবী মহালক্ষ্মী নমোহস্তুতে"
তবুও দেখো আমার না আছে পিতামাতা। না আছে স্বামীসন্তানের সুখ। তাই তো আমি সেই দুঃখ ভুলে গিয়ে জগতের পালন করতে তোমাদের ধনদৌলত আগলাতে সর্বদা ব্যস্ত থাকি। আমার আর কে আছে তোমরা ছাড়া! আর কোজাগরীর দিনে মানে বছরের ঐ একটি বিশেষ পূর্ণিমা তিথিতে আমার কাজ হল ঘুরে ঘুরে দেখা কোথায় নষ্ট হল ধান, কার গৃহে অলক্ষ্মী বাস করল, কে খেতে পেয়েও রাখতে পারলনা আর কে তিলতিল করে সঞ্চয় করে ঘরে আনল লক্ষ্মী।
উজ্জয়িনীর এক ধার্মিক রাজা তাঁর প্রজাপালনের জন্য খুব সুখে কাল যাপন করতেন। একবার তিনি ঢেঁড়া পিটিয়ে জানিয়ে দিলেন যে তাঁর রাজ্যের হাটে কোনো অবিক্রিত জিনিষ যেন না পাড়ে থাকে। দিনের শেষে তিনিই সেই জিনিষটি কিনে নেবেন দোকানীর কাছ থেকে। রটে গেল খবর। জানা গেল এক কামারের কাছে এক ভয়ানক চেহারার বিশ্রী নারীমূর্তি পড়ে রয়েছে। কামারকে জিগেস করতেই সে বলল, মহারাজ এটি নাকি অলক্ষ্মী মূর্তি তাই কেউ কিনতে চাইছেনা। মহারাজ বললেন, তিনি যখন কথা দিয়েছেন তখন সেটি কিনে নিয়েই বাড়ি ফিরবেন। নয়ত অধার্মিক রাজা হিসেবে তাঁকে রাজ্যের মানুষ চিনে যাবে। রাজা অগত্যা সেই লোহার মূর্তিটি কিনে এনে নিজের ঠাকুরবাড়িতে তাকে আশ্রয় দিলেন। মাঝরাতে নিজের রাজপুরীর মধ্যে মেয়েলি কান্নার কন্ঠস্বর শুনে রাজা দেখতে পেলেন এক ক্রন্দনরতা নারীমূর্তিকে। রাজা তাকে জিগেস করলেন" তুমি কাঁদছো কেন মা?" সেই নারী বললে," মহারাজ, আমি আপনার রাজলক্ষ্মী, আজ আপনার বাড়ি থেকে চলে যাচ্ছি" রাজা বললেন, কেন মা? আমি কি অন্যায় করেছি? জানতে পারি? " সেই নারীমূর্তি বললে," আপনি রাজবাড়িতে অলক্ষ্মীকে ঠাঁই দিয়েছেন। অতএব আমি আর এখানে থাকতে পারবনা। " এই বলে অন্তর্হিতা হলেন। আবার কিছুপরে রাজা দেখলেন আরেক সুন্দরী, সুশীলা নারী প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। সে হল ভাগ্যলক্ষ্মী। তার কিছুপরেই যশোলক্ষ্মী, কুললক্ষ্মী, সকলেই একে একে রাজপুরী থেকে বিদায় নিল। রাজার সেরাতে ঘুম এলনা। এবং সকলেরি বিদায় নেবার কারণ হল সেই অলক্ষ্মীমূর্তিটি যেটি রাজা কিনে এনেছিলেন।
এভাবেই তাঁর দিন কাটে।
তবুও শিল্পীর হাতে বানানো সেই অলক্ষ্মীমূর্তিটি ফেলে দিতে রাজার মন চায়না। শিল্পীতো আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে তৈরী করেছে তাকে।
শিল্পীর শিল্পীসত্তায় আঘাত করতে মন চায়না রাজার। তাই প্রাসাদ থেকে একটু দূরেই সরিয়ে রাখেন তাঁকে কিন্তু ফেলতে পারেন না। ক্রমে তিনি দরিদ্র হতে থাকলেন। ধন, মান, যশ, সাফল্য ভাগ্য তাঁকে ছেড়ে চলে যায়। একদিন রাজা দেখতে পেলেন ধর্মরাজ তাঁকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে। রাজা তখন নিরূপায় হয়ে ভাবলেন এটা মেনে নেওয়া যায়না। ধর্ম তাঁকে ত্যাগ করলে তিনিতো অধার্মিক রাজা রূপে পরিগণিত হবেন। রাজা তখন ধর্মকে পুরো ব্যাপারটা বুঝিয়ে বললেন।
ধর্মরাজা রাজার যুক্তি শুনে খুব খুশি হলেন। ধর্মরজের কথায় আশ্বিনমাসের পূর্ণিমায় রাণীকে কোজাগরী ব্রত পালন করতে বললেন । রাণী সারারাত জেগে বসে রইলেন। আর নিষ্ঠাভরে লক্ষ্মীর পুজো করে রাজা সব ফিরে পেলেন। আবার আগের মত তাঁর রাজবাড়ি ভরে উঠল জাঁকজমকে, ধনসম্পত্তিতে।
এইগল্পটা শুনে তোমরা বলবেতো নিজের ঢাক নিজে পেটালাম? আসলে কি জানো? আমি তো চাই তোমাদের ঘরে আটকে থাকতে। তোমাদের ভালোর জন্যে অর্থ, যশ, প্রতিপত্তি সব দিয়ে তোমাদের ধনী করতে। কিন্তু তাই বলে অলক্ষ্মীর জন্যে সত্যকে, অধর্মকে তো আর মেনে নিতে পারিনা। ঐ রাজার চরিত্রের সবচেয়ে বড়ো গুণ হল তিনি সত্ এবং ধার্মিক। আর তাইতো ধর্মরাজা সবকিছু ফিরিয়ে দিলেন রাজাকে। অলক্ষ্মীর প্রতিও অবিচার করেননি রাজা আর শিল্পীর প্রতি তো নয়ই।
আমার জীবনের কত গল্পের কথা আর বলি তোমাদের? নারায়ণের পাশে আজীবন সদা সুহাসিনী লক্ষ্মীকে দেখে তোমরা ভাবো এই দম্পতির কত সুখ! আদর্শ স্বামীস্ত্রী ইত্যাদি ইত্যাদি। তাহলে শোনো আমার সপত্নীর সাথে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের গল্প। কত ঝড় বয়ে গেলে একটা মেয়ে লক্ষ্মীমেয়েতে পরিণত হয় দ্যাখো তোমরা!
কত অসহনীয় টানাপোড়েন একজন নারীকে লক্ষ্মী করে তোলে!
পুরাণের আরেকটি গল্পের মতে সরস্বতী, লক্ষ্মী এবং গঙ্গা ছিলেন বিষ্ণুর তিন পত্নী । বিষ্ণু কিন্তু গঙ্গার প্রতি একটু বেশিমাত্রায় আসক্ত ছিলেন । নম্রস্বভাবের লক্ষ্মী এই ঘটনায় মনে মনে খুব দুখঃ পেতেন কিন্তু কিছু প্রকাশ করতেন না । সরস্বতী কিন্তু বিষ্ণুর এই অতিরিক্ত গঙ্গাপ্রেমকে প্রশ্রয় না দিয়ে অশান্ত এবং রুষ্ট হয়ে উঠেছিলেন । একদিন তার মাথায় একটা বুদ্ধি এল । প্রচন্ড উগ্রমূর্তি ধরলেন তিনি । গঙ্গার মুখোমুখি হলেন । লক্ষ্মী একটি ভয়ানক কলহের পূর্বাভাস পেয়ে সরস্বতী ও গঙ্গার মধ্যিখানে এসে দাঁড়ালেন । সরস্বতী লক্ষ্মীকে অভিশাপ দিয়ে একটি গাছে পরিণত করলেন । লক্ষ্মী আবার সেই অভিশাপে প্রচন্ড আঘাত পেয়ে সরস্বতীকে নদীতে রূপান্তরিত করলেন । সরস্বতী নিজেও তখন উগ্রচন্ডা । নিজে নদীতে পরিণত হয়েছেন বলে গঙ্গাকেও নদী হতে অভিশাপ দিলেন । ইতিমধ্যে বিষ্ণু সেইখানে হাজির হলেন । এতসব ঝগড়া বিবাদ দেখে ও শুনে স্থির করলেন সরস্বতী ও গঙ্গার সাথে আর নয় । এখন থেকে তিনি কেবলমাত্র লক্ষ্মীর সাথেই ঘর করবেন । সরস্বতীকে ব্রহ্মার হাতে এবং গঙ্গাকে শিবের হাতে সমর্পণ করে বিষ্ণু হলেন লক্ষ্মীর প্রিয় পতিদেবতা । আর সরস্বতী ও গঙ্গার ওপর এরূপ অন্যায় শাস্তির জন্য লক্ষ্মী মনে মনে ব্যথিত হলেন আবার বিষ্ণুকে একান্ত নিজের স্বামীরূপে বরণ করে আনন্দিতও হলেন । বিষ্ণুকে শান্ত হতে বললেন এবং তাদের দুজনের আশীর্বাদে লক্ষ্মী ও গঙ্গা মর্ত্যের ওপর দিয়ে নিজ নিজ গতিপথে বইতে লাগল । স্বর্গে তাদের দুজনার একটি করে শাখা বিষ্ণুর হাত ধরে রইল।
তবে যাই বলো সেই বৈদিকযুগ থেকে আমি স্বীকৃতি পেয়ে আসছি সৌভাগ্য ও ঋদ্ধিদায়িনী দেবী রূপে। আমি যখন শুভদায়িনী তখন কল্যাণী বা পুণ্যলক্ষ্মী আর অশুভদায়িনী যখন তখন আমি অলক্ষ্মী।
কেউ বলেন আমি মাদুর্গার কন্যা । কেউ বলেন আমি মায়ের অন্য একটি রূপ । মহাদেব নিজের দেহ থেকে সৃষ্টি করেছিলেন ঊমাকে এবং ঊমা পরে সৃষ্টি করেন লক্ষ্মী, সরস্বতী, দুর্গা এবং কালীকে । শ্রী শ্রী চন্ডীতে দুর্গাদেবীকেই মহালক্ষ্মী রূপে আখ্যা দেওয়া হয় । বাঙালী কল্পনাপ্রবণ জাতি । সপরিবারে মা দুর্গাকে না দেখলে তাদের যে মন ভরেনা । তাই তো দুই শক্তি লক্ষ্মী ও সরস্বতীকে দুপাশে আমরা দেখি এবং মহানন্দে বরণ করি । লক্ষ্মীদেবী হলেন বিষ্ণুপ্রিয়া বা নারায়ণী যিনি সৌভাগ্য, ঐশ্বর্য্য এবং সমৃদ্ধির প্রতীক আর সরস্বতী হলেন বাগদেবী, বিদ্যা-বুদ্ধির অধিষ্ঠাত্রী, জ্ঞানদায়িনী। অর্থাত এই দুই নারীশক্তি সকল শুভ, সৃজনশীল, গঠনমূলক ক্রিয়াকলাপের উত্স । তাই শুভ শক্তির প্রতীকও বটে ।
আমার বাহন পেঁচা। তাই বলে ঐটুকুনি পেঁচার ওপরে আমি বসে থাকি আর সে আমাকে নিয়ে উড়ুক আর কি! এসব বাহন তত্ত্ব মনগড়া।
লক্ষ্মীর বাহন নিশাচর পেঁচা । অন্ধকার যার আশ্রয় । লক্ষ্মী সৌভাগ্য-সমৃদ্ধির আলোর দিশা দেখান পেঁচাকে সাথে নিয়ে অর্থাত অন্ধকার ও আলোর মধ্য থেকে জীবজগত আলোর দিশা খুঁজে নেবে । কারণ জীবনে ঘাত-প্রতিঘাতের লড়াইতে সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্য উভয়ই থাকবে কিন্তু সব পরিস্থিতিতেই অবিচল থেকে আলোর পথ যাত্রী হয়ে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলতে হবে । জাগতিক সত্ত্ব ও তমগুণের মধ্য থেকে সত্ত্বটুকুকে বেছে নিতে হবে । তাই বলে তমকে বাদ দিলেও বাদ দেওয়া যাবে না তাই এই নিশাচর ।
এত জ্ঞান দিলাম চিঠিতে কিন্তু কেউ কি জানবে আমার কথা?
ইতি
আমি কোজাগরী
২৪ অক্টো, ২০১৮
১৫ অক্টো, ২০১৮
কাউন্টডাউনঃ৬- এক মেয়ের এত নাম???
নামদুর্গা
অদ্রিজা মাদুর্গার আরেক নাম । অদ্রি অর্থাত পর্বত হিমালয়ের কন্যা বলে তাঁকে এই নামে ভূষিত করা হয় ।
দুর্গা শব্দটির অর্থে আসা যাক ।
দুর্গা = দুর্গ + আ = দ্+উ+র্+গ্ +আ
দ এর অর্থ দৈত্যনাশ
উ এর অর্থ বিঘ্ননাশ
র এর অর্থ রোগনাশ
গ এর অর্থ পাপনাশ এবং
আ এর অর্থ ভয় ও শত্রুবিনাশ ।
দুর্গ শব্দের অর্থ দৈত্য, বাধাবিঘ্ন, দুঃখশোক, নরকযন্ত্রণা, রোগব্যাধি… এহেন নানাবিধ অশুভকিছু আর “আ” অর্থটি বাংলাভাষায় নাশ করা বা বধ করা বোঝায় । সেই কারণে দুর্গা শব্দের অর্থ দাঁড়ায় জীবের জীবন থেকে যা কিছু অশুভ শক্তির বিনাশ কারী দেবী শক্তি । নিজের নাম প্রসঙ্গে দেবী বলেছেন চন্ডীতে
“তত্রৈব চ বধিষ্যামি দুর্গমাখ্যং মহাসুরং
দুর্গা দেবীতি বিখ্যাতং তন্মে নাম ভবিষ্যতি” ।।
কিন্তু দুর্গা নাম এল কিভাবে? পুরাকালে দুর্গম নামক এক অত্যাচারী অসুর দেবতাদের পরাজিত করে বেদ শাস্ত্রকে হরণ করে । তার উদ্দেশ্য ছিল জীবজগতে ধর্মের বিনাশ ঘটানো । সমাজে এমন বিশৃঙ্খলা দেখে দেবতারা সমবেত ভাবে মহামায়ার শরণাপন্ন হন । কোনো অসুর যাতে ভবিষ্যতে এমন অনিষ্ট সাধন না করতে পারে তাই দেবী দেবতাদের আরাধনায় তুষ্ট হয়ে সমগ্র “বেদ”কে স্বীয় দেহে ধারণ করেন । বেদময়ী দেবীকে দেবগণ “দুর্গা” নামে ভূষিত করেন । দেবী পুরাণ মতে দুর্গা নাম স্মরণ করলেই ত্রিতাপ দুঃখ, জ্বালা যন্ত্রণা মুক্ত হয় এবং এরূপে তিনি জীবের কল্যাণদায়িনী, রোগ-শোক বিনাশিনী রূপে জীবকে অশুভ শক্তির হাত থেকে উদ্ধার করেন । অথবা বলতে পারি মহাশক্তিকে লাভ করার দুর্গম পথকে যিনি সুগম করে দেন তিনিই দুর্গা ।
শিবঘরণী, শিবসোহাগীনি দুর্গা হিমালয় পর্বতের কন্যা বলে তাঁর এক নাম পার্বতী। তিনি বিশ্বচরাচরের অন্নদায়িনী তাই অন্নপূর্ণা, সে বিষয়ে কোনো দ্বিমত নেই। স্যার ফ্রেজার তাঁর Adonis গ্রন্থে প্রাচ্যের এক বৃষভবাহন দেবতা ও সিংহবাহিনীদেবীর উল্লেখ করেছেন। তিনি শিব বা দুর্গার নাম উল্লেখ করেননি কিন্তু তারাই যে আদতে আমাদের হর-গৌরী তা একেবারে সুস্পষ্ট। A short history of religion গ্রন্থে কেলেট সাহেব মুক্তকন্ঠে প্রকাশ করেছেন শস্যাধিষ্ঠাত্রী দেবতা সর্বপ্রথম প্রাচ্যেই বিকাশ লাভ করেছিলেন। তাঁর বইতে বোনদিয়া (Bona Dea) নামক এক দেবীর উল্লেখ পাওয়া যায় যিনি a deity of fertility বলে প্রচলিত এবং এই বোনদিয়া আমাদের সুন্দরবনের বনদুর্গা বা বনবিবি যিনি আমাদের শাকম্ভরী দুর্গা সে কথা বুঝে নিতে আমাদের অসুবিধা হয়না । এই শাকম্ভরী হল মাদুর্গার অনেকগুলি নামের মধ্যে অন্যতম।
শরতঋতুতে আবাহন হয় বলে দেবীর আরেক নাম শারদীয়া। এছাড়া মহিষাসুরমর্দিণী, কাত্যায়নী, শিবাণী, ভবানী, আদ্যাশক্তি, চন্ডী এইসব নামগুলি বাংলাদেশেই প্রচলিত। নেপালে দেবী নবরাত্র, কাশ্মীরে অম্বা, গুর্জরে হিঙ্গলা বা রুদ্রাণী, কনৌজে কল্যাণী, দাক্ষিণাত্যে অম্বিকা , মিথিলায় ঊমা নামে তিনি পূজিতা । এছাড়া বাংলাদেশের সুজলা সুফলা শস্যশ্যামলা মাটির বুকে শক্তির আরাধ্যারূপে পূজিতা দেবী শীতলা, মনসা, বাশুলি, ষষ্ঠী, মঙ্গলচন্ডী সকলেই মা দুর্গার অংশ বিশেষ। শ্রীশ্রীচন্ডীর একাদশ অধ্যায়ে আছে অনাবৃষ্টির সঙ্কটে পৃথিবী যখন দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ে তখন ঋষিদের স্তবে তুষ্ট হয়ে শক্তিময়ী দেবী নিজের দেহ থেকে উত্পন্ন শাকসব্জীর দ্বারা বিশ্ববাসীর প্রতিপালনে সচেষ্ট হন। সেই শাক ভক্ষণ করে মানুষ প্রাণ ফিরে পায়। ইনিই দেবী শাকম্ভরী। যতদিন না পর্যন্ত বৃষ্টি হয় ততদিন সমগ্র বিশ্বের মানুষকে দেবী নয়রকম শাক খাইয়ে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। তাই এই শাকম্ভরী ই শতাক্ষী, দুর্গা, ঊমা, গৌরী, সতী, চন্ডী, কালিকেশা ও পার্বতী নামে বিদিতা। রাজস্থানের কাছে আজমীরে শাকম্ভরী তীর্থে এই কাহিনী বর্ণিত আছে। শ্যামল সবুজবর্ণ শাকসব্জীর রঙে ভূষিতা বলেই দেবী শাকম্ভরী নীলোত্পল বর্ণা। পশ্চিমবাংলার কাটোয়া থেকে আট মাইল দূরে মঙ্গলকোট থানার অন্তর্গত মাজিগ্রামে শাকম্ভরী দেবীর পুজো হয়।
সতী, পার্বতী, ঊমা এবং গৌরী দুর্গার এই চারটি রূপ হল শিবের পত্নী রূপ। তাই শিবাণী, রুদ্রাণী, অদ্রিজা, এই নামগুলি হল আমাদের মনগড়া এবং বাংলাসহিত্যের অভিধানে বর্ণিত মাদুর্গার নামান্তর মাত্র। দক্ষযজ্ঞের প্রলয়ের কারণে দক্ষকন্যা সতীর অপর নাম দাক্ষায়নী। এবার বেদের সপ্তমাতৃকায় আসি। দুর্গার এই সপ্তমাতৃকার নামগুলি হল ব্রহ্মাণী, মাহেশ্বরী, বৈষ্ণবী ইন্দ্রাণী বা ঐন্দ্রী বা কৌমারী, নারসিংহী, বারাহী এবং চন্ডী । এই মহাশক্তিময়ী দেবীরা অগ্নিরূপী শিবের বা সূর্যের সঙ্গে সম্পর্কিত। শ্রী শ্রী চন্ডীতে দেবীকবচে একাদশ মাতৃকার উল্লেখ আছে। এই একাদশ মাতৃকা পূর্বে উল্লিখিত নবদুর্গা ও সপ্তদুর্গার সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত ।
ঘুরেফিরে সব রূপগুলিতেই সর্বকালে চামুন্ডা শবাসনা, বারাহী মহিষারূঢ়া, ইন্দ্রাণী গজাসনা, বৈষ্ণবী গরুড়াসনা ও মহাবীর্যা নারসিংহী, মহাবলা শিবদূতি, বৃষাঢ়া মাহেশ্বরী, শিখিবাহনা কৌমারী , পদ্মাসনা লক্ষ্মী, বৃষবাহনা ঈশ্বরী, হংসারূঢ়া ব্রাহ্মী এবং এঁরা সকলেই একাদশ মাতৃকার বৈচিত্রময়ী রূপ। দুর্গার এই নামগুলি ছাড়াও শ্রীশ্রীচন্ডীতে মহালক্ষ্মী, মহামায়া, মহাবিদ্যা, মহাবাণী, ভারতী, বাক্ সরস্বতী, আর্যা, ব্রাহ্মী, কামধেনু, বেদগর্ভা, ধীশ্বরী, সুরেশ্বরী, দেবেশী, অশোকা, বিপদতারিণী, শতাক্ষী প্রভৃতি অগণিত নামের উল্লেখ আছে। এছাড়া দুর্গাপূজার পর বিজয়াদশমীতে এ অপরাজিতা পূজা হয় সেই অপরাজিতা এবং দুর্গা এক ও অভিন্ন। এই অপরাজিতা দেবী দুর্গার চৌষট্টি যোগিনীদের মধ্যে অন্যতমা। এমনকি জগদ্ধাত্রী পুজোতেও নবশক্তির অর্চনারপর দেবতাদের পুজোর মধ্যেও “অপরাজিতায়ৈঃ” মন্ত্রে দেবীপূজা করা হয়। মত্স্যপুরাণে এই অপরাজিতাকে মায়ানুচরী বলা হয়েছে। বামনপুরাণে ইনি গৌতম মুনি ও অহল্যার চারকন্যা জয়া, বিজয়া, জয়ন্তী ও অপরাজিতা। সেখানে আবার এই চারভগ্নী শিবজায়া সতীর সহচরী সখী রূপে অভিহিত। দেবী অপরাজিতা প্রণাম মন্ত্রে রুদ্রলতা নাম পাওয়া যায়। তাই তিনিই যে শিবসঙ্গিনী দুর্গা সে বিষয়ে কোনো দ্বিমত নেই ।
দেবীপুরাণে দেবীর আরো নানাবিধ নামের উল্লেখ আছে। দেবী দুর্গার সন্ধিপূজায় দেবীর চামুন্ডারূপের পূজা হয়। দেবর্ষি নারদ সেখানে দেবীকে অর্চণা করছেন নিম্নলিখিত নাম ধরে। দুর্গা, শাকম্ভরী, গৌরী ছাড়াও বিন্ধ্যবাসিনী, কাত্যায়নী, কৌষিকী, কৈটবেশ্বরী, মহাদেবী, মহাশ্বেতা, মহেশ্বরী, ত্রিদশবন্দিনী, ঈশানী, ভবানী, ভূতভবানী, জ্যেষ্ঠ্যা, ব্রহ্মবাদিনী, অপর্ণা, কপালা, সুবর্ণা, গায়ত্রী, সাবিত্রী, ত্রিশূলিনী, ত্রিনয়না, ত্রিপদা, ত্রিগুণাত্মিকা, শ্রদ্ধা, স্বাহা, সর্বজ্ঞা, সর্বতোভদ্রা, সর্বোতক্ষী, সর্বভূতাদিমধ্যান্তা, সর্বলোকেশস্বরূপা, কামরূপিণী, যাদবী, যোগীন্দ্রা, বৈষ্ণবী, অরূপা, ভদ্রকালী, স্কন্দমাতা, শ্রুতি, স্মৃতি, কালরাত্রি, মহারাত্রি, কপালিনী, চামুন্ডা, চন্দ্রিকা, চন্ডী, চন্ডমুন্ডবিনাশিনী, রুদ্রাণী, পার্বতী, ইন্দ্রাণী, দাক্ষায়নী, নারী, নারায়নী, শুম্ভ-নিশুম্ভ দলনী, মহিষাসুরমর্দিণী, সহস্রলোচনা, ধীরা, রেবতী, সিংহবাহিনী, বিশ্ববতী, বেদমাতা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, মায়াবতী, ভোগাবতী, সতী, সত্যবতী, ভীমা, উগ্রা, ধূম্রা, অম্বিকা, ত্রম্ব্যকপ্রিয়া, জটা, বিজয়া, অজিতা, অপরাজিতা, পাপনাশিনী প্রভৃতি । মহিষাসুরমর্দিণী দুর্গার সবচেয়ে রুদ্ররূপ যেখানে তিনি একাধারে দনুজদলনী আবার অন্যদিকে কল্যানী এবং বরাভয়দায়িনী। তিনি ঘোরা আবার প্রসন্না। আসলে বিশ্বমাতা মা দুর্গা এই সকল রূপের সমষ্টি মূর্তি। একই দেবী দুর্গা আবার কামেশ্বরী ও ভদ্রকালী। উভয়েই শাক্তদেবী, এক ও অভিন্না। দশমহাবিদ্যা কালীর দশটি রূপ কিন্তু তত্ত্বগত ও আদর্শগত দিক থেকে এক ও অদ্বিতীয়। কালী, তারা, ষোড়শী, ভুবনেশ্বরী, ভৈরবী, ছিন্নমস্তা, ধূমাবতী, বগলা, মাতঙ্গী, কমলা এই দশটি রূপ কিন্তু একাধারে কালী অন্যধারে দুর্গাকে বর্ণিত করে।
এছাড়া শ্রীশ্রী চন্ডীতে নবদুর্গার নয়টি নামের উল্লেখ আছে। এই নয়টি নাম হল
শৈলপুত্রী, ব্রহ্মচারিণী, চন্দ্রঘন্টা, কুষ্মান্ডা, স্কন্দমাতা,কাত্যায়নী, কালরাত্রি, মহাগৌরী ও সিদ্ধিদাত্রী ।
মহাষষ্ঠীর বোধন আবার কি?
সীতাহরণের পর রামচন্দ্র বানরসেনাদের সাহায্যে সেতুবন্ধ করে লঙ্কায় হাজির হলেন । ব্রহ্মা তখন রামকে আদেশ করলেন অপরাজিতা দুর্গার পুজো করে জগতের উদ্ধারে নেমে পড়তে । সমগ্র রাক্ষসকুলকে ধ্বংস না করতে পারলে যে ধরিত্রীর নিস্তার নেই । তাই কৃষ্ণপক্ষেই নিদ্রিতা দেবীকে অকালে জাগ্রত করে অকালে অর্থাত শরতকালে (পূর্বে বসন্তকালে শুক্লপক্ষে দেবলোক জাগ্রত অবস্থায় পুজো হত) কাজে নেমে পড়েছিলেন রামচন্দ্র স্বয়ং । তাই তো অকাল বোধন । ব্রহ্মার পরামর্শে দেবী দুর্গার দশভুজা মূর্তি মাটি দিয়ে গড়ে ব্রহ্মা স্বয়ং বিল্ব বৃক্ষমূলে সিংহবাহিনী সেই দেবীর বোধন করেছিলেন । সেই দিনটিই ছিল শুক্লপক্ষের মহাষষ্ঠী ।
রামচন্দ্র স্তব করলেন :
নমস্তে ত্রিজগদ্বন্দ্যে সংগ্রামে জয়দায়িনী
প্রসীদ বিজয়ং দেহি কাত্যায়নি নমোহস্তুতে ।।
পূজা শুরু হল । পিতামহ ব্রহ্মা রামচন্দ্রের সাথে বললেন
“হে দেবী! যত দিন না পর্যন্ত রাবণ বধ হয়, রাক্ষসকুল ধ্বংস না হয় আমাদের পূজা গ্রহণ করে তুষ্ট হোন ”
মিথিলার কবি বিদ্যাপতির দুর্গাভক্তিতরঙ্গিণী গ্রন্থে ষষ্ঠীতে মায়ের বোধনের উল্লেখ আছেঃ ষষ্ঠ্যাং বিল্বতরৌ বোধঃ সায়ংসন্ধ্যাসুকারয়েত্। বসন্তকালের দুর্গাপুজোয় বোধনের প্রয়োজন হয়না কারণ দেবতারা ঐ সময় জাগ্রত থাকেন। সমগ্র দেবকুলকে শরতকালে জাগানোর উদ্দেশ্যেই এই বোধন। বোধনের অর্থ হল জাগরণ। কালিকাপুরাণে পাওয়া যায় এই বোধন নিয়ে...
"বোধয়েদ্বিল্ব্শাখায়াং ষষ্ঠ্যাং দেবীফুলেষু চ"
১৪ অক্টো, ২০১৮
কাউন্টডাউন-৩ : নবরাত্রি
ত্রেতাযুগে শ্রীরামচন্দ্র শারদীয়া দুর্গাপূজার প্রচলন করেন । রাবণবধ ও সীতাউদ্ধারের জন্য রামচন্দ্র দুর্গতিনাশিনী দুর্গার অকালবোধন করে নবরাত্র ব্রত পালন করেছিলেন। নবরাত্র ব্রত আশ্বিনের শুক্লা প্রতিপদ থেকে নবমী পর্যন্ত । মা দুর্গা এই সময় অর্থাত আশ্বিনের শুক্লা প্রতিপদ তিথি থেকে নবমী অবধি মোট ন’দিন নয়টি রূপ ধারণ করেন। পিতামহ ব্রহ্মা দেবীর এই নয়টি রূপের নামকরণ করেছিলেন। নয়টি নামের নয়টি বৈচিত্রময় রূপভেদ। এঁরা প্রত্যেকেই দেবীর নয়টি কায়াব্যূহ মূর্তি। নবদুর্গা নামে এঁরা বিশেষ পরিচিত। শ্রীশ্রী চন্ডীতে এই নয়টি নামের উল্লেখ আছে। নবদুর্গার এই নয়টি নাম হল
- শৈলপুত্রী ( পর্বতের কন্যা)
- ব্রহ্মচারিণী (যিনি ব্রহ্মাকে স্বয়ং জ্ঞান দান করেন, ভক্তকেও ইনি ব্রহ্মপ্রাপ্তি করান )
- চন্দ্রঘন্টা ( দেবীদুর্গার মহিষাসুর বধের জন্য দেবরাজ ইন্দ্রের প্রদত্ত ঘন্টা যার মধ্যে গজরাজ ঐরাবতের মহাশক্তি নিহিত ছিল, চন্দ্রের চেয়েও লাবণ্যবতী ইনি )
- কুষ্মান্ডা ( উষ্মার অর্থ তাপ । দুর্বিষহ ত্রিতাপ হল কুষ্মা। আর যিনি এই ত্রিতাপ নিজের উদরে বা অন্ডে ধারণ করেন অর্থাৎ সমগ্র সংসার ভক্ষণ করেন ইনি )
- স্কন্দমাতা ( দেব সেনাপতি কার্তিকেয় বা স্কন্দের মা )
- কাত্যায়নী ( কাত্যায়ন ঋষির আশ্রমে দেবকার্যের জন্য আবির্ভূতা ইনি বৃন্দাবনে দেবী গোপবালা রূপে পূজিতা। ব্রজের গোপবালারা এই কাত্যায়নীর কাছে প্রার্থণা করেছিলেন নন্দের নন্দন শ্রীকৃষ্ণকে পতিরূপে পাওয়ার জন্য তাই ব্রজের দুর্গার নাম কাত্যায়নী )
- কালরাত্রি ( ঋগ্বেদের রাত্রিসুক্তে পরমাত্মাই রাত্রিদেবী। মহাপ্রলয়কালে এই রাত্রিরূপিণী মাতার কোলেই বিলয় হয় বিশ্বের।অনন্ত মহাকাশে নৃত্যরত কালভৈরবের দেহ থেকেই আবির্ভূতা ইনি দেবী যোগনিদ্রা মহাকালিকা বা কালরাত্রি নামে আখ্যাত )
- মহাগৌরী (তিনি সন্তানবত্সলা, শিবসোহাগিনী, বিদ্যুদ্বর্ণা মা দুর্গার প্রসন্ন মূর্তি) এবং
- সিদ্ধিদাত্রী ( অপরূপ লাবণ্যময়ী চতুর্ভুজা, ত্রিনয়নী, প্রাতঃসূর্যের মত রঞ্জিতা যোগমায়া মাহেশ্বরী ইনি সকল কাজে সিদ্ধি প্রদান করেন )
প্রথমং শৈলপুত্রীতি দ্বিতীয়ং ব্রহ্মচারিণী।
তৃতীয়ং চন্দ্রঘন্টেতি কুষ্মান্ডেতি চতুর্থকম্।।
পঞ্চমং স্কন্দমাতেতি ষষ্ঠং কাত্যায়নী তথা।
সপ্তমং কালরাত্রীতি মহাগৌরীতি চাষ্টমম্।।
নবমং সিদ্ধিদাত্রী চ নবদুর্গা প্রকীর্তিতাঃ।
উক্তোন্যেতানি নামানি ব্রহ্মনৈবমহাত্মানা।।
তৃতীয়ং চন্দ্রঘন্টেতি কুষ্মান্ডেতি চতুর্থকম্।।
পঞ্চমং স্কন্দমাতেতি ষষ্ঠং কাত্যায়নী তথা।
সপ্তমং কালরাত্রীতি মহাগৌরীতি চাষ্টমম্।।
নবমং সিদ্ধিদাত্রী চ নবদুর্গা প্রকীর্তিতাঃ।
উক্তোন্যেতানি নামানি ব্রহ্মনৈবমহাত্মানা।।
শ্রীশ্রীচন্ডীতেই প্রথম মহিষাসুরমর্দ্দিণী মাদুর্গার নয়টি রূপের বর্ণনা ও মহিমা প্রকাশিত।
মহালয়ার সাথেসাথে কৃষ্ণপক্ষের অবসান হয়। দেবীপক্ষের সূচনা হয়। পরদিন অর্থাত শুক্লপক্ষের প্রতিপদ থেকে নবমী পর্যন্ত ন'টি রাত্রি অবধি মাদুর্গার নয়টি রূপের পুজো চলে। শরতকালীন এই নবরাত্রি উত্সবকে বলা হয় শারদ নবরাত্রি। মূলত এটি শক্তির আরাধনা। নবরাত্রির পরদিন বিজয়াদশমীর সাথে সাথে এই শক্তিপূজার সমাপন হয়।
১২ অক্টো, ২০১৮
কাউন্টডাউন-২ : বলি মায়ের আশেপাশে একগন্ডা পশুপাখী কেন??
মহিষাসুর = মহিষ + অসুর
পুরাণে বর্ণিত আছে রম্ভাসুর ও গর্ভবতী এক মহিষীর মিলনে জন্ম হয়েছিল মহিষাসুরের । তার বৈশিষ্ট্য হল তার হাত-পা সব মানুষের মত কিন্তু মুখটি শিং সহ মহিষের মত । সে জন্মের পরেই স্বর্গরাজ্য লাভের আশায় তপস্যা শুরু করেছিল । বহুকাল কঠোর তপস্যার পর ভগবান ব্রহ্মা তুষ্ট হয়ে তাকে অমরত্ব ছাড়া যেকোনো বরদান করতে সম্মত হলেন । এই বরে দেবতা, যক্ষ, রক্ষ, গন্ধর্বাদি কেউই তাকে হত্যা করতে পারবেনা এবং কেবল কোনো অবলা নারীর হাতেই সে ধ্বংস হবে এরূপটিই চাইলেন মহিষাসুর । তাই তুমুল যুদ্ধের পর মা দুর্গাই একমাত্র পেরেছিলেন একে বধ করতে । মহিষ তমোগুণের প্রতীক । মহিষাসুর মহিষ থেকে জাত বলে সে ভয়ংকর এবং যুদ্ধে দুর্গার সত্ত্বগুণের দ্বারা সেই তমোগুণের বিনাশ হয় ।
সিংহারূঢ়া দেবী
দেবীর বাহন সিংহ । তাঁর পায়ের নীচে সিংহের অবস্থান । দুর্গা হলেন সমস্ত শুভ শক্তির কান্ডারী । আর এমন গুণকে ধারণ করে দেবীর মন । সিংহ মানুষের জৈবপ্রবৃত্তি তথা পশুভাবকে লালন করে । অরণ্যে ঘুরে শিকার সংহার করে । এহেন জৈব প্রবৃত্তির বিনাশ ঘটান মা দুর্গা । আর এরূপ পুরুষসিংহই মা’কে শুভ কার্যে বহন করে নিয়ে চলে । সে থাকে পায়ের নীচে অর্থাত দুর্গা হলেন জয়ী আর অশুভ সেই সংহার মনোবৃত্তি মায়ের পায়ের তলায় ধ্বংস হয় । সিংহরূপী মনকে বয়ে বেড়ান মা দুর্গা এবং অবশেষে তার পাশবিক স্বার্থপরতাকে গ্রাস করে তার শুভবুদ্ধির উদয় ঘটান ।
পেঁচা
লক্ষ্মীর বাহন নিশাচর পেঁচা । অন্ধকার যার আশ্রয় । লক্ষ্মী সৌভাগ্য-সমৃদ্ধির আলোর দিশা দেখান পেঁচাকে সাথে নিয়ে অর্থাত অন্ধকার ও আলোর মধ্য থেকে জীবজগত আলোর দিশা খুঁজে নেবে । কারণ জীবনে ঘাত-প্রতিঘাতের লড়াইতে সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্য উভয়ই থাকবে কিন্তু সব পরিস্থিতিতেই অবিচল থেকে আলোর পথ যাত্রী হয়ে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলতে হবে । জাগতিক সত্ত্ব ও তমগুণের মধ্য থেকে সত্ত্বটুকুকে বেছে নিতে হবে । তাই বলে তমকে বাদ দিলেও বাদ দেওয়া যাবে না তাই এই নিশাচর ।
রাজহাঁস
সরস্বতীর বাহন শ্বেত রাজহংস । সরস্বতী পুরাণে বর্ণিত গঙ্গার মত এক পুতঃসলিলা নদী । তাই সরস্বতীর সাথে রাজহংস অনুষঙ্গটি মনে করিয়ে দেয় নদীর জলপ্রসঙ্গকে । এবার রাজহংস জল ও দুধের মিশ্রণ থেকে সারটুকু অর্থাত কেবলমাত্র দুধটুকু গ্রহণ করে । তাই বিবেকমান জীবজগত সংসারের অসার বা অনিত্যকে সারটুকু গ্রহণ করার বারতাই বোধহয় ছড়ায় রাজহাঁস । আর সবকিছু সাদা রং বহন করে অমলিনতা যে শ্বেত রাজহংসের গায়ে কখনো অবিদ্যারূপ মলিনতা স্পর্শ করতে পারেনা ।
ইঁদুর
বিশালাকার গণপতির বাহন ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র মুষিক । এখানে গণেশ নেতা বা গণশক্তির প্রতীক । আর তার অনুপাতে অতি ক্ষুদ্র ইঁদুর জীবের ছোট ছোট কর্মফলের কর্তনকারী । অর্থাত অতি বৃহত শুভ কর্মের দ্বারা কৃত সুফল বিনষ্ট হয়ে যায় ছোট্ট কোনো মন্দ কর্মের দ্বারা । তাই ষড়রিপু বা কাম-ক্রোধ-লোভ-মোহ ইত্যাদির মত সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম কর্মফল বিনাশ করে ইঁদুর যাতে কিনা বৃহত সিদ্ধিলাভে বাধা না ঘটে ।
ময়ূর
কার্তিকের বাহন আমাদের জাতীয় পাখী আলস্যহীন ময়ূর । ময়ূর অত্যন্ত সজাগ এবং কর্মচঞ্চল পাখী । সৈনিক কার্তিকের সবগুণ গুলি সে বহন করে । মেঘ দেখলেও সে উত্ফুল্ল হয় এবং তার মত ধীর স্থির হয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে নিরলস লড়াই করে যাবেন সৈনিক কার্তিক । এবং লোকশিক্ষাও যোগাবে তার কর্মোদ্দীপনা ।
কাউন্টডাউন- ১ : তা সদলবলে কেন গো মা? একা এলেই বা কি ক্ষতি?
তোমাদের কি মত???
এরা কেউ মায়ের পেটের ছেলেমেয়ে নয়। এরা যে কি করে সব উড়ে এসে জুড়ে বসল দুর্গার পরিবারের সাথে! মাদুর্গা কি সকলকে ঠাঁই দেন এভাবেই? নাকি নিজের সুবিধার্থে? মনে মনে ভাবি, এই কি তবে আমাদের সংস্কার?
মহিষাসুরমর্দিণী দুর্গাপূজার সূত্রপাত ঘটে গুপ্তযুগে । বাঙালী কল্পনাপ্রবণ জাতি । সপরিবারে মা দুর্গাকে না দেখলে তাদের যে মন ভরেনা । তাই তো দুই শক্তি লক্ষ্মী ও সরস্বতীকে দুপাশে আমরা দেখি এবং মহানন্দে বরণ করি । গণেশ, কার্তিক, লক্ষ্মী, সরস্বতী সকলেই তো অন্যসময়ে আসেন একবার করে তাহলে মায়ের সাথে কেন তাদের আসা চাই-ই??? অথচ দুর্গাপুজোর সময় চালচিত্রের মাথায় ছোট্ট করে লুকিয়ে থাকেন মহাদেব। উনি কি তবে নাটের গুরু?
কার্তিক না হয় দেবসেনাপতি। সে তরুণ সদৃশ, সুকুমার, শক্তিধর এবং সর্বসৈন্যের পুরোভাগে অবস্থান করে । তাই মাদুর্গার যুদ্ধযাত্রায় এমন শৌর্যবীর্য সম্পন্ন পুত্র সঙ্গী না হয়ে যায় কোথায় ! অসুরের সাথে যুদ্ধের সময় তাকে মায়ের খুব প্রয়োজন।
গণেশ না হয় ত্রিকাল জ্ঞানী, সিদ্ধিদাতা, বিঘ্নেশ অর্থাত সকল বাধা বিঘ্ন নাশ কারী । যুদ্ধের মত ভয়ানক পরিস্থিতিতে তাঁর স্মরণ অবশ্য কর্তব্য কিন্তু বাকীরা? অর্থাত লক্ষ্মী-সরস্বতী? তাঁদের কি ভূমিকা এই দুর্গাপুজোতে?
কেউ বলেন এঁরা মায়ের অন্য দুটি রূপ। শ্রী শ্রী চন্ডীতে দুর্গাদেবীকেই মহালক্ষ্মী ও মহাসরস্বতী রূপে আখ্যা দেওয়া হয় । লক্ষ্মীদেবী হলেন বিষ্ণুপ্রিয়া বা নারায়ণী যিনি সৌভাগ্য, ঐশ্বর্য্য এবং সমৃদ্ধির প্রতীক আর সরস্বতী হলেন বাগদেবী, বিদ্যা-বুদ্ধির অধিষ্ঠাত্রী, জ্ঞানদায়িনী। অর্থাত এই দুই নারীশক্তি সকল শুভ, সৃজনশীল, গঠনমূলক ক্রিয়াকলাপের উত্স । তাই শুভ শক্তির প্রতীকও বটে ।
এরা কেউ মায়ের পেটের ছেলেমেয়ে নয়। এরা যে কি করে সব উড়ে এসে জুড়ে বসল দুর্গার পরিবারের সাথে! মাদুর্গা কি সকলকে ঠাঁই দেন এভাবেই? নাকি নিজের সুবিধার্থে? মনে মনে ভাবি, এই কি তবে আমাদের সংস্কার?
মহিষাসুরমর্দিণী দুর্গাপূজার সূত্রপাত ঘটে গুপ্তযুগে । বাঙালী কল্পনাপ্রবণ জাতি । সপরিবারে মা দুর্গাকে না দেখলে তাদের যে মন ভরেনা । তাই তো দুই শক্তি লক্ষ্মী ও সরস্বতীকে দুপাশে আমরা দেখি এবং মহানন্দে বরণ করি । গণেশ, কার্তিক, লক্ষ্মী, সরস্বতী সকলেই তো অন্যসময়ে আসেন একবার করে তাহলে মায়ের সাথে কেন তাদের আসা চাই-ই??? অথচ দুর্গাপুজোর সময় চালচিত্রের মাথায় ছোট্ট করে লুকিয়ে থাকেন মহাদেব। উনি কি তবে নাটের গুরু?
কার্তিক না হয় দেবসেনাপতি। সে তরুণ সদৃশ, সুকুমার, শক্তিধর এবং সর্বসৈন্যের পুরোভাগে অবস্থান করে । তাই মাদুর্গার যুদ্ধযাত্রায় এমন শৌর্যবীর্য সম্পন্ন পুত্র সঙ্গী না হয়ে যায় কোথায় ! অসুরের সাথে যুদ্ধের সময় তাকে মায়ের খুব প্রয়োজন।
গণেশ না হয় ত্রিকাল জ্ঞানী, সিদ্ধিদাতা, বিঘ্নেশ অর্থাত সকল বাধা বিঘ্ন নাশ কারী । যুদ্ধের মত ভয়ানক পরিস্থিতিতে তাঁর স্মরণ অবশ্য কর্তব্য কিন্তু বাকীরা? অর্থাত লক্ষ্মী-সরস্বতী? তাঁদের কি ভূমিকা এই দুর্গাপুজোতে?
কেউ বলেন এঁরা মায়ের অন্য দুটি রূপ। শ্রী শ্রী চন্ডীতে দুর্গাদেবীকেই মহালক্ষ্মী ও মহাসরস্বতী রূপে আখ্যা দেওয়া হয় । লক্ষ্মীদেবী হলেন বিষ্ণুপ্রিয়া বা নারায়ণী যিনি সৌভাগ্য, ঐশ্বর্য্য এবং সমৃদ্ধির প্রতীক আর সরস্বতী হলেন বাগদেবী, বিদ্যা-বুদ্ধির অধিষ্ঠাত্রী, জ্ঞানদায়িনী। অর্থাত এই দুই নারীশক্তি সকল শুভ, সৃজনশীল, গঠনমূলক ক্রিয়াকলাপের উত্স । তাই শুভ শক্তির প্রতীকও বটে ।
১১ অক্টো, ২০১৮
কাউন্টডাউন-৪ঃ সায়ুধায়ৈ
- কে এই মহিষাসুর? কিভাবেই বা তার জন্ম?
মহিষাসুরমর্দ্দিণি দুর্গা বৃত্তান্তের খলনায়ক হলেন অপরাজেয় দোর্দ্দন্ডপ্রতাপ মহিষাসুর।
বরাহপুরাণের মতে বিপ্রচিত্তি নামক দৈত্যের মাহিষ্মতী নামে একটি মেয়ে ছিল। ছোট মেয়ে খেলার ছলে সিন্ধুদীপ নামে এক তপস্যারত ঋষির সামনে গিয়ে মহিষীর বেশে তাকে ভয় দেখাতে লাগল। ঋষির তপস্যাতো লাটে উঠল। ক্রুদ্ধ ঋষি ছোট মেয়েটিকে তখন “তাহলে মহিষীই হয়ে যাও” বলে অভিশাপ দিলেন। সেই মহিষীরূপী মাহিষ্মতীর গর্ভে যে পুত্রসন্তান হল তার নাম মহিষাসুর।
কালিকাপুরাণে বলে মহিষাসুর হল রম্ভাসুরের পুত্র। প্রবল ক্ষমতাশালী রম্ভাসুর মহানন্দে এক সুন্দর মহিষীকে বিবাহ করে। বিবাহ করে ফেরার পথে আর এক অসুরের দ্বারা রম্ভাসুর নিহত হয় আর তার নবপরিণীতা স্ত্রী কিছুদিন পর জন্ম দেয় মহিষাসুরের। যে কিনা মহাদেবের আরাধনা করে দেবীর সাযুজ্যলাভের বর লাভ করে। কঠোর তপস্যার দ্বারা ব্রহ্মার কাছ থেকে অমরত্ব পায় । ব্রহ্মা যেমন মহিসাসুরকে অমরত্ব দিলেন তেমনি বললেন একমাত্র নারীশক্তির দ্বারাই এই মহিষাসুর বধ হবে।
একের পর এক বরলাভের পর এই মহিষাসুরের দাপট ক্রমশঃ বাড়তেই থাকে।
পুরাণ আর শাস্ত্রের পাতায় আমরা দেখি আবির্ভূতা হতে এক অসামান্যা নারীর যিনি একহাতে বরাভয় অন্যহাতে তুলে নেন অস্ত্র। দশপ্রহরেণ সেই দেবীশক্তির হাতে পরাজিত হন মহিষাসুর। এবার দেখা যাক এই দেবীশক্তির রহস্যের পেছনে কোন্ ঘটনা ছিল।
- মেধাঋষির মুখে মহামায়ার উত্পত্তি সমূহ আখ্যান : কিসের বলে মাদুর্গার এত শক্তি?
মহিষাসুর তখন অসুরগণের রাজা। দেবতাদের বলে অমরত্ব লাভ করে তার বিশাল প্রতিপত্তি। অত্যাচারী মহিষাসুর তখন দেবতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে ঠিক করেছে । স্বর্গ তার পাখির চোখ। যেনতেনপ্রকারেণ দেবতাদের পরাজিত করে স্বর্গরাজ্য তার দখলে আনতেই হবে। একশো বছর ধরে যুদ্ধ করে স্বর্গরাজ্য নিজের করায়ত্বে আনল সে। দেবসেনাবাহিনী পরাজিত হল আর মহিষাসুর হল স্বর্গের রাজা। দেবতাগণ একত্র হয়ে বিষ্ণু ও মহাদেবকে সঙ্গে নিয়ে প্রজাপিতা ব্রহ্মার শরণাপন্ন হল। একজন অসুরের কাছে তাঁরা কি করে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন সব কাহিনী জানালেন ব্রহ্মাকে। দেবতাদের মুখে মহিষাসুরের দ্বারা এমন লাঞ্ছনার ঘটনা শুনে ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহাদেব যারপরনাই ক্রুদ্ধ হলেন। তাঁদের মুখমন্ডল থেকে এক মহাতেজ নির্গত হল। হিমালয় অঞ্চলে ঋষি কাত্যায়ণের আশ্রমে সেই মহাতেজ থেকে জন্ম নিল এক দেবী। আশ্বিনমাসের কৃষ্ণা চতুর্দশীতে তাঁর আবির্ভাব হল আর ঋষি কাত্যায়ণের আশ্রমে জন্ম বলে তাঁর নাম হল কাত্যায়ণি। এই দেবীর শরীরের এক একটি অংশ এক একজন দেবতার তেজে তেজোপ্রাপ্ত হল।
শিবের তেজে দেবীর মুখ, যমের তেজে কেশপাশ, বিষ্ণুর তেজে বাহুসমূহ, চন্দ্রের তেজে কুচযুগ, ইন্দ্রের তেজে শরীরের মধ্যভাগ, বরুণের তেজে জঙ্ঘা ও উরুদ্বয়, পৃথিবীর তেজে নিতম্ব, ব্রহ্মার তেজে পদযুগল, সূর্যের তেজে পায়ের অঙ্গুলিসমূহ, এবং কুবেরের তেজে তৈরী হল উন্নত নাসিকা। অষ্টাবসুর তেজে তার হাতের আঙুল তৈরী হল। দক্ষাদি প্রজাপতিগণের তেজে তাঁর দন্তসকল এবং বহ্নির তেজে দেবীর ত্রিনয়ন সৃষ্টি হল। সন্ধ্যাদেবীদ্বয়ের তেজে ভ্রূযুগল ও বায়ুর তেজে উত্পন্ন হল কর্ণদ্বয় । দেবী এরূপে তেজসম্ভূতা হলেন কিন্তু মহিষাসুরকে বধ করবার জন্য তো তেজই যথেষ্ট নয়। তাই সকল দেবতারা এই দেবীকে অসুর বধের জন্য নানাবিধ দিব্যাস্ত্র যোগাতে লাগলেন।
- কোন্ কোন্ দেবতারা মাদুর্গাকে কি কি অস্ত্র দিয়ে মা'কে "সায়ুধা"(আয়ুধ-অস্ত্র) করলেন?
- মহাদেব তাঁর স্বীয় শূল থেকে সৃষ্ট একটি ত্রিশূল দিলেন ।
- বিষ্ণু তাঁর সুদর্শণ চক্র থেকে সৃষ্ট চক্র দিলেন।
- বরুণ দিলেন শঙ্খ ও নিজের পাশ থেকে তৈরী করে আর একটি পাশ।
- অগ্নিদেব দিলেন শক্তি।
- পবনদেবতা দিলেন একটি ধনুক ও দুটি বাণপূর্ণ তূণীর ।
- দেবরাজ ইন্দ্র দিলেন বজ্র ও ঐরাবত নামক স্বর্গের হাতির গলদেশের ঘন্টা থেকে ঘন্টা তৈরী করে দিলেন ঘন্টান্তর।
- মৃত্যুরাজ যম দিলেন কালদন্ড।
- প্রজাপতি ব্রহ্মা দিলেন একটি রুদ্রাক্ষের মালা ও কমন্ডলু।
- দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা দিলেন কুঠার ও নানাপ্রকার অস্ত্র ও অভেদ্য কবচ।
- সূর্যদেব দেবীর লোমকূপে তাঁর তেজরাশি সমর্পণ করলেন।
- কালের দেবতা দিলেন একটি উজ্জ্বল ধাতব ঢালও প্রদীপ্ত খড়্গ।
- ক্ষীরসমুদ্র দিলেন পদ্মের মালা, হাতে দিলেন পদ্মফুল এবং নানাবিধ অলঙ্কার যেমন, মুক্তামালা, দিব্যচূড়ামণি, কর্ণকুন্ডল, হাতের বলয়, ললাটভূষণ, বাজু, নির্মল নূপুর, অত্যুত্তম কন্ঠহার ও সমস্ত অঙ্গুলিতে শ্রেষ্ঠ অঙ্গুরীয়।
- হিমালয় দিলেন দেবীর বাহন সিংহকে।
- কুবের দিলেন একটি সুরাপূর্ণ পানপাত্র।
- নাগরাজ বাসুকি দিলেন একটি মহামণিশোভিত নাগহার।
এইরূপে দিব্য আয়ুধে দশভুজা দেবীমূর্তি সজ্জিত হয়ে উঠলেন। এবং প্রস্তুত হলেন সেই মহাসংগ্রামের জন্য।
যেহেতু ব্রহ্মার বরে মহিষাসুর দেবাসুর-দানবের অবধ্য হলেও স্ত্রীবদ্ধ হবে তাই বুঝি ঋষি কাত্যায়ণ সকল দেবতার তেজ এবং ক্রোধানলের শক্তি ও দিগন্তব্যাপী সংহত তেজ দিয়ে তৈরী করলেন এই কাত্যায়ণীকে।
গভীর গর্জণে আকাশবাতাস ধ্বনিত হল। দেবীর সিংহনাদে দশদিশি কম্পিত হল। পৃথিবী ও পর্বতসকল বিচলিত হল। দেবগণ সানন্দে সিংহবাহিনী দেবীর জয়ধ্বনি দিলেন। মুণিগণ দেবীর স্তব শুরু করলেন। অসুরগণ ত্রিলোকবাসী দেবতাদের উদ্দেশ্যে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ধেয়ে এল। যুদ্ধ শুরু হল প্রবল।
বিন্ধ্যপর্বতে এই তিলোত্তমা দেবী মহামায়া বা কাত্যায়ণি সসৈন্যে অগ্রসর হয়ে অচিরেই বধ করলেন মহিষাসুর নামক দোর্দ্দন্ডপ্রতাপ ঐ দৈত্যটিকে। আর এই মহিষাসুরকে বধ করে দেবীর অপর নাম হল মহিসাসুরমর্দ্দিণি ।
৯ অক্টো, ২০১৮
পুজোসহিত্য ২০১৮
উপন্যাস- কালকাহিনী - পুরুলিয়া দর্পণ
বড় গল্প- পঞ্চকন্যা এবং - যুগশংখ শারদীয়া
ছোটগল্প- সহজ লতা - মাতৃশক্তি শারদীয়া
সুহাগ রাত - রবিবার শারদীয়া
ঠিক-ভুল - মালিনী
ছায়াশরীরি - পূর্বভারত
নষ্টরূপ - তারুণ্য পুজোসংখ্যা
লেডিজ রাইটিং টেবিল - শারদীয়া প্রবাহ
দেখা - নিউজ ক্যাফে বাংলা
স্বপ্ন - কলকাতা ২৪x৭
নিবন্ধ- চালচিত্র কথা - চিন্ময়ী (বাংলাদেশ)
অণুগল্প দুটি- হীরের নাকছাবি, দইমাছ - ত্রিধারা শারদসংকলন
ঠাকুরগড়া - প্রথম আলো
ভ্রমণঃ কৈলাস পর্বত ও মানস সরোবর- ভ্রমণ শারদীয়া
স্যুইটজারল্যান্ডে - যুগসাগ্নিক শারদীয়া
মোনালিসা, হাঞ্চব্যাক ও ক্যাবারের শহরে - মউল
ফিলি ডায়েরী- শব্দের মিছিল উত্সব সংখ্যা
বিভ্রম কাহিনী- শারদ অর্ঘ্য (মহুয়া প্রকাশনী)
কিশোর গল্পঃ তিব্বতী কিংবদন্তী অনুসারেঃ ইচ্ছামতী, ম্যাজিক ল্যাম্প
ছোটগল্প কন্যাশ্রী- দোয়েল পত্রিকা
স্মৃতিচারণা- একপর্ণিকা
বড় গল্প- পঞ্চকন্যা এবং - যুগশংখ শারদীয়া
ছোটগল্প- সহজ লতা - মাতৃশক্তি শারদীয়া
সুহাগ রাত - রবিবার শারদীয়া
ঠিক-ভুল - মালিনী
ছায়াশরীরি - পূর্বভারত
নষ্টরূপ - তারুণ্য পুজোসংখ্যা
লেডিজ রাইটিং টেবিল - শারদীয়া প্রবাহ
দেখা - নিউজ ক্যাফে বাংলা
স্বপ্ন - কলকাতা ২৪x৭
নিবন্ধ- চালচিত্র কথা - চিন্ময়ী (বাংলাদেশ)
অণুগল্প দুটি- হীরের নাকছাবি, দইমাছ - ত্রিধারা শারদসংকলন
ঠাকুরগড়া - প্রথম আলো
ভ্রমণঃ কৈলাস পর্বত ও মানস সরোবর- ভ্রমণ শারদীয়া
স্যুইটজারল্যান্ডে - যুগসাগ্নিক শারদীয়া
মোনালিসা, হাঞ্চব্যাক ও ক্যাবারের শহরে - মউল
ফিলি ডায়েরী- শব্দের মিছিল উত্সব সংখ্যা
বিভ্রম কাহিনী- শারদ অর্ঘ্য (মহুয়া প্রকাশনী)
কিশোর গল্পঃ তিব্বতী কিংবদন্তী অনুসারেঃ ইচ্ছামতী, ম্যাজিক ল্যাম্প
ছোটগল্প কন্যাশ্রী- দোয়েল পত্রিকা
স্মৃতিচারণা- একপর্ণিকা
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)