মহিষাসুর = মহিষ + অসুর
পুরাণে বর্ণিত আছে রম্ভাসুর ও গর্ভবতী এক মহিষীর মিলনে জন্ম হয়েছিল মহিষাসুরের । তার বৈশিষ্ট্য হল তার হাত-পা সব মানুষের মত কিন্তু মুখটি শিং সহ মহিষের মত । সে জন্মের পরেই স্বর্গরাজ্য লাভের আশায় তপস্যা শুরু করেছিল । বহুকাল কঠোর তপস্যার পর ভগবান ব্রহ্মা তুষ্ট হয়ে তাকে অমরত্ব ছাড়া যেকোনো বরদান করতে সম্মত হলেন । এই বরে দেবতা, যক্ষ, রক্ষ, গন্ধর্বাদি কেউই তাকে হত্যা করতে পারবেনা এবং কেবল কোনো অবলা নারীর হাতেই সে ধ্বংস হবে এরূপটিই চাইলেন মহিষাসুর । তাই তুমুল যুদ্ধের পর মা দুর্গাই একমাত্র পেরেছিলেন একে বধ করতে । মহিষ তমোগুণের প্রতীক । মহিষাসুর মহিষ থেকে জাত বলে সে ভয়ংকর এবং যুদ্ধে দুর্গার সত্ত্বগুণের দ্বারা সেই তমোগুণের বিনাশ হয় ।
সিংহারূঢ়া দেবী
দেবীর বাহন সিংহ । তাঁর পায়ের নীচে সিংহের অবস্থান । দুর্গা হলেন সমস্ত শুভ শক্তির কান্ডারী । আর এমন গুণকে ধারণ করে দেবীর মন । সিংহ মানুষের জৈবপ্রবৃত্তি তথা পশুভাবকে লালন করে । অরণ্যে ঘুরে শিকার সংহার করে । এহেন জৈব প্রবৃত্তির বিনাশ ঘটান মা দুর্গা । আর এরূপ পুরুষসিংহই মা’কে শুভ কার্যে বহন করে নিয়ে চলে । সে থাকে পায়ের নীচে অর্থাত দুর্গা হলেন জয়ী আর অশুভ সেই সংহার মনোবৃত্তি মায়ের পায়ের তলায় ধ্বংস হয় । সিংহরূপী মনকে বয়ে বেড়ান মা দুর্গা এবং অবশেষে তার পাশবিক স্বার্থপরতাকে গ্রাস করে তার শুভবুদ্ধির উদয় ঘটান ।
পেঁচা
লক্ষ্মীর বাহন নিশাচর পেঁচা । অন্ধকার যার আশ্রয় । লক্ষ্মী সৌভাগ্য-সমৃদ্ধির আলোর দিশা দেখান পেঁচাকে সাথে নিয়ে অর্থাত অন্ধকার ও আলোর মধ্য থেকে জীবজগত আলোর দিশা খুঁজে নেবে । কারণ জীবনে ঘাত-প্রতিঘাতের লড়াইতে সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্য উভয়ই থাকবে কিন্তু সব পরিস্থিতিতেই অবিচল থেকে আলোর পথ যাত্রী হয়ে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলতে হবে । জাগতিক সত্ত্ব ও তমগুণের মধ্য থেকে সত্ত্বটুকুকে বেছে নিতে হবে । তাই বলে তমকে বাদ দিলেও বাদ দেওয়া যাবে না তাই এই নিশাচর ।
রাজহাঁস
সরস্বতীর বাহন শ্বেত রাজহংস । সরস্বতী পুরাণে বর্ণিত গঙ্গার মত এক পুতঃসলিলা নদী । তাই সরস্বতীর সাথে রাজহংস অনুষঙ্গটি মনে করিয়ে দেয় নদীর জলপ্রসঙ্গকে । এবার রাজহংস জল ও দুধের মিশ্রণ থেকে সারটুকু অর্থাত কেবলমাত্র দুধটুকু গ্রহণ করে । তাই বিবেকমান জীবজগত সংসারের অসার বা অনিত্যকে সারটুকু গ্রহণ করার বারতাই বোধহয় ছড়ায় রাজহাঁস । আর সবকিছু সাদা রং বহন করে অমলিনতা যে শ্বেত রাজহংসের গায়ে কখনো অবিদ্যারূপ মলিনতা স্পর্শ করতে পারেনা ।
ইঁদুর
বিশালাকার গণপতির বাহন ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র মুষিক । এখানে গণেশ নেতা বা গণশক্তির প্রতীক । আর তার অনুপাতে অতি ক্ষুদ্র ইঁদুর জীবের ছোট ছোট কর্মফলের কর্তনকারী । অর্থাত অতি বৃহত শুভ কর্মের দ্বারা কৃত সুফল বিনষ্ট হয়ে যায় ছোট্ট কোনো মন্দ কর্মের দ্বারা । তাই ষড়রিপু বা কাম-ক্রোধ-লোভ-মোহ ইত্যাদির মত সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম কর্মফল বিনাশ করে ইঁদুর যাতে কিনা বৃহত সিদ্ধিলাভে বাধা না ঘটে ।
ময়ূর
কার্তিকের বাহন আমাদের জাতীয় পাখী আলস্যহীন ময়ূর । ময়ূর অত্যন্ত সজাগ এবং কর্মচঞ্চল পাখী । সৈনিক কার্তিকের সবগুণ গুলি সে বহন করে । মেঘ দেখলেও সে উত্ফুল্ল হয় এবং তার মত ধীর স্থির হয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে নিরলস লড়াই করে যাবেন সৈনিক কার্তিক । এবং লোকশিক্ষাও যোগাবে তার কর্মোদ্দীপনা ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন