১৯ ডিসে, ২০১৯
২০ নভে, ২০১৯
মোচা নামচা
ভোর ভোর হাঁটতে গিয়ে ১০টাকার এক বান্ডিল ধবধবে দুধসাদা বকফুল কিম্বা সদ্য কমল মুকুলদল উন্মোচিত কুমড়োফুল কিনে ফেলতে পারলে গিন্নীমায়ের সেদিন দুপুরের মেন্যু করতে মোটেও অসুবিধে হয়না। বাড়ি এসেই কাজের মাসীকে সমানুপাতে বেসন, চালের গুঁড়ো মিশিয়ে নিতে বলে।
- মনে করে এক টুসকি লংকাগুঁড়ো, আধ চামচ হলুদ, নুন, দু'চামচ পোস্ত আর একটু কালোজিরে ছড়িয়ে বেশ করে ফর্ক দিয়ে ঘেঁটে ফ্রিজে রেখে দিও কিন্তু। যা রাঁধো বাপু আজকাল! পোলাও, কালিয়া, মুর্গি, মাটন বাদ দিয়ে পিঁয়াজ, ধনেপাতা দিয়ে পাতলা মুসূরডাল চাপাও তো দেখি।
এদিকে গিন্নীমা টিভিতে গান শুনতে শুনতে একে একে মোচার খোলস ছাড়াতে ছাড়াতে একবার বাটার টোস্টে কামড় আর একবার লাল চায়ে চুমুক দেন। মোচার খোলস ছাড়াতে গেলেই মনে পড়ে নিজের জীবনের কথা। একটা করে মেরুন খোলা যেন নিজের জীবনের অভিজ্ঞতার কথা মনে করায়। ছোটবেলায় মানুষ চিনতে পারেনা কেউ। বড় হতে হতে মেরুন খোলায় হালকা হলুদ রঙের ছোঁয়া ধরতে শুরু করে। বুদ্ধি আর বয়স সমানুপাতে চলে।
- কি গো বৌদি? সব খোলা ফেলে দিলে আর পড়ে রইল কি?
-আহ! দিচ্ছি বাপু। একটু রোসো দিকিনি। গান শুনতে দাও।আমি জানি হলুদ অংশ ফেলতে নেই।
ভেতর থেকে শুধুই পুষ্টিতে ঠাসা হলদে মোচাটুকুনি বেরিয়ে আসে। জীবনের সারাত্সার যেন। অভিজ্ঞতার পারদ চড়তে চড়তে নধরকান্তি মোচার এডিবল পার্টটুকুনি মনে করিয়ে দেয় জীবনের কথা। পরমহংসের কথা। সারটুকুনি নিয়ে অসারটুকুনি ফেলে দেয় সেই প্রজাতির হাঁসেরা। কত বুদ্ধি তাদের।
-দাও বৌদি, আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে কিন্তু
- আমি তো তবু ছাড়িয়ে দিচ্ছি, কোন্ বাড়ির বৌদিরা ছাড়িয়ে দেয় বলতো?
- তা ঠিক বৌদি। তবে এবার ছোট ছোট কলাগুলো দাও এদিকে। ওগুলোতেই সময় লাগে বেশি।
- দিচ্ছি বাবা। আমি অনেকটা কাজ সেরে রেখেছি তোমার। ন্যানো কলাদের প্ল্যাসটিকের জ্যাকেট ফেলে দিয়েছি। তুমি কেবল ওদের ভেতর থেকে কাঠির মত গর্ভদন্ডটা ফেলে দাও। হাতের তেলোয় রাখো। যেমন আমায় রেখেছে এবাড়ির লোকজন আর আমি রেখেছি তোমাকে। একসঙ্গে চাপ দিয়ে টেনে বের করে ফেল। তাড়াতাড়ি হবে। কতবার বলব? একটা একটা করে বের করলে সময় বেশি লাগে।
মোচার পরত খুলতে খুলতে জীবনের গল্পেরা ভীড় করে গিন্নীমায়ের ঘাড়ে।
ছোট্ট ছোট্ট ন্যানো কলাগুলো যেন জীবনের প্রতি মুহূর্তের ছোট ছোট কর্মফল, তাইনা? ওদের আর গর্ভাধান হলনা এজন্মে। খসেও গেলনা বাকী জীবনটা। ঝরেও পড়েও মরতে পারত গাছের নীচে, মায়ের কোলে। মোচার পরতে পরতে কেউ যেন চেপে গলা টিপে ওদের বিকাশ টা রুখে দিল জন্মের মত। অ্যাবরশান করে দিল ন্যাচারালি। অত ফুল কি হাবে ফুটে? অত কি হবে জন্মের? ঘেটি ধরে আবারো জাঁতা কলে পিষতে হবে তাকেও। জীবন যুদ্ধ সবার জন্য নয়।
- আজ নিশ্চয়ই গল্প ফাঁদছ তুমি!
- ঠিক ধরেছ, এই না হলে তুমি!
- মনে করে এক টুসকি লংকাগুঁড়ো, আধ চামচ হলুদ, নুন, দু'চামচ পোস্ত আর একটু কালোজিরে ছড়িয়ে বেশ করে ফর্ক দিয়ে ঘেঁটে ফ্রিজে রেখে দিও কিন্তু। যা রাঁধো বাপু আজকাল! পোলাও, কালিয়া, মুর্গি, মাটন বাদ দিয়ে পিঁয়াজ, ধনেপাতা দিয়ে পাতলা মুসূরডাল চাপাও তো দেখি।
এদিকে গিন্নীমা টিভিতে গান শুনতে শুনতে একে একে মোচার খোলস ছাড়াতে ছাড়াতে একবার বাটার টোস্টে কামড় আর একবার লাল চায়ে চুমুক দেন। মোচার খোলস ছাড়াতে গেলেই মনে পড়ে নিজের জীবনের কথা। একটা করে মেরুন খোলা যেন নিজের জীবনের অভিজ্ঞতার কথা মনে করায়। ছোটবেলায় মানুষ চিনতে পারেনা কেউ। বড় হতে হতে মেরুন খোলায় হালকা হলুদ রঙের ছোঁয়া ধরতে শুরু করে। বুদ্ধি আর বয়স সমানুপাতে চলে।
- কি গো বৌদি? সব খোলা ফেলে দিলে আর পড়ে রইল কি?
-আহ! দিচ্ছি বাপু। একটু রোসো দিকিনি। গান শুনতে দাও।আমি জানি হলুদ অংশ ফেলতে নেই।
ভেতর থেকে শুধুই পুষ্টিতে ঠাসা হলদে মোচাটুকুনি বেরিয়ে আসে। জীবনের সারাত্সার যেন। অভিজ্ঞতার পারদ চড়তে চড়তে নধরকান্তি মোচার এডিবল পার্টটুকুনি মনে করিয়ে দেয় জীবনের কথা। পরমহংসের কথা। সারটুকুনি নিয়ে অসারটুকুনি ফেলে দেয় সেই প্রজাতির হাঁসেরা। কত বুদ্ধি তাদের।
-দাও বৌদি, আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে কিন্তু
- আমি তো তবু ছাড়িয়ে দিচ্ছি, কোন্ বাড়ির বৌদিরা ছাড়িয়ে দেয় বলতো?
- তা ঠিক বৌদি। তবে এবার ছোট ছোট কলাগুলো দাও এদিকে। ওগুলোতেই সময় লাগে বেশি।
- দিচ্ছি বাবা। আমি অনেকটা কাজ সেরে রেখেছি তোমার। ন্যানো কলাদের প্ল্যাসটিকের জ্যাকেট ফেলে দিয়েছি। তুমি কেবল ওদের ভেতর থেকে কাঠির মত গর্ভদন্ডটা ফেলে দাও। হাতের তেলোয় রাখো। যেমন আমায় রেখেছে এবাড়ির লোকজন আর আমি রেখেছি তোমাকে। একসঙ্গে চাপ দিয়ে টেনে বের করে ফেল। তাড়াতাড়ি হবে। কতবার বলব? একটা একটা করে বের করলে সময় বেশি লাগে।
মোচার পরত খুলতে খুলতে জীবনের গল্পেরা ভীড় করে গিন্নীমায়ের ঘাড়ে।
ছোট্ট ছোট্ট ন্যানো কলাগুলো যেন জীবনের প্রতি মুহূর্তের ছোট ছোট কর্মফল, তাইনা? ওদের আর গর্ভাধান হলনা এজন্মে। খসেও গেলনা বাকী জীবনটা। ঝরেও পড়েও মরতে পারত গাছের নীচে, মায়ের কোলে। মোচার পরতে পরতে কেউ যেন চেপে গলা টিপে ওদের বিকাশ টা রুখে দিল জন্মের মত। অ্যাবরশান করে দিল ন্যাচারালি। অত ফুল কি হাবে ফুটে? অত কি হবে জন্মের? ঘেটি ধরে আবারো জাঁতা কলে পিষতে হবে তাকেও। জীবন যুদ্ধ সবার জন্য নয়।
- আজ নিশ্চয়ই গল্প ফাঁদছ তুমি!
- ঠিক ধরেছ, এই না হলে তুমি!
১৭ নভে, ২০১৯
নবনীতা দেবসেনের সঙ্গে কিছু মূহুর্ত
নবনীতাদির সঙ্গে এবছর পয়লাবৈশাখের আগে কৌশিক গুড়িয়া সম্পাদিত, বহরমপুর থেকে প্রকাশিত রবিবার পত্রিকার বিশেষসংখ্যার জন্য জানতে চেয়েছিলাম তাঁর ছোটবেলার নতুন বছরের স্মৃতি নিয়ে। বলেছিলেন, হোয়াটস্যাপে লিখে জানাবেন সময়মত। দিয়েওছিলেন দু একদিনেই। সেটাই আমার প্রাপ্তি।
সাহিত্যিক নবনীতা দেব সেনের ছোটবেলায় পয়লা বৈশাখ কাটত শান্তিনিকেতনের বর্ষবরণের উত্সবে।
"তখন বিদ্যালয়ের ছুটি হয়ে যেত বলে রবীন্দ্র জন্মোত্সব পয়লা বৈশাখেই উদ্যাপিত হতে দেখেছি। মা, বাবা ওখানেই যেতেন পয়লা বৈশাখে। আমার নতুন জামা, জুতো হত। আমার ভালো লাগত মাটির বড় জালা ভরা ঠাণ্ডা শরবত দেখে।সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল নন্দলাল বসুর স্ত্রীর শালপাতায় ফুল সেলাই করে অপূর্ব গয়না বানানো। নতুন বছর উপলক্ষে আনন্দনাড়ুও হত। উপাসনা ঘরে প্রার্থণা হত। নতুন বছরের অনেক গান থাকত। এইসব ভালোলাগা গুলো জড়িয়ে থেকে গেল আজো আমার সঙ্গে। আমার হৃদয়ে মাখামাখি হয়ে। কত গান, কত স্বাধীনতা, ছোটদের সঙ্গে ইচ্ছেমত ঘুরে বেড়ানোর আনন্দ। মা কোনোদিনো আটকাতেন না আমাকে। সব মিলিয়ে খুব রঙ্গিন এখনো সেইসব স্মৃতি"
১৪ নভে, ২০১৯
১ নভে, ২০১৯
ছট পুজো ভার্সেস যমপুকুর ব্রত
আজ
আমার ঘর থেকে দেখতে পাচ্ছি
পন্ডিতিয়া পুকুর টি। আসন্ন
ছট পুজোর সুবিধার্থে বানিয়ে
দিলেন আমাদের সবার প্রিয় দেবা
দা। যিনি সারাবছর ধরে প্রচুর
সমাজ কল্যাণ মূলক কাজ করেন।
আমি তার সাক্ষী আছি। আজ এই
দীঘি ভরা জল করে টলমল দেখে
অনেক কিছু মিল খুঁজে পেলাম
আমাদের বাঙালীর ব্রতর সঙ্গে
তাই এই লেখা।
কার্তিকমাসের
শুক্লা ষষ্ঠীতে ছটপুজো সূর্যের
পুজো হলেও মূলতঃ এটি গঙ্গাদেবী
বা মা অন্নপূর্ণার পুজো।
আন্নপূর্ণা দুর্গার আরাধনা
শুক্লাষষ্ঠীতেই হয় তাই বুঝি
ষষ্ঠ>ষট>
ছট কথাটি
প্রচলিত। কারো মতে ছট্ অর্থাৎ
ছটা বা সূর্যরশ্মির পুজো ।
কারো মতে সূর্যের দুই স্ত্রী
ঊষা এবং প্রত্যুষা কে স্মরণ
করা হয়। স্থান-কাল-পাত্র
ভেদে আবারো সেই নারীশক্তির
আরাধনা। এবং মা ষষ্ঠীর সঙ্গে
মিল খুঁজে পাওয়া।এবার বাংলার
বারোমেসে ষষ্ঠী নিয়ে একটি বড়
কাজ করতে গিয়ে দেখলাম ছট মাঈ
অর্থাত এটিও আমাদের ষষ্ঠীদেবীর
মত, বিহারের
ব্রত। কি অদ্ভূত মিল!
শুক্লপক্ষের
ষষ্ঠী তিথিতেই তিনি আরাধ্যা
আমাদের সব ষষ্ঠীর মতোই। আবার
সূর্যের দুই স্ত্রী'র
উদ্দেশ্যে প্রণতি জানানো
দেখে মনে পড়ে যায় আমাদের আসন্ন
কৃষি উত্সব নবান্ন বা হেমন্ত
লক্ষ্মীর কথা। বিদেশেও হবে
থ্যাংকসগিভিং অর্থাত কৃষিদেবতা
সারাবছর ধরে ভরে দেন মনুষ্য
জীবনযাপনের খোরাকি। বিনিময়ে
আমরা কিই বা দিতে পারি তাঁকে?
তাই "অনেক
দিয়েছ নাথ" এই
বলে স্মরণ করে কৃষকরা,
বরণডালা
সাজিয়ে নিবেদন করে। আমাদের
ইতুপুজোও কিছুটা তেমনি। তবে
গত যে ভ্রাতৃদ্বিতীয়া থেকে
আগামীকাল ষষ্ঠীর দিনে বহু
প্রাচীন যমপুকুর ব্রতের অদ্ভূত
এক সংযোগ পাওয়া যায়। যমের বোন
যমী ভাইয়ের মঙ্গলকামনায়
ভাইফোঁটা দিয়েছিলেন। সেই
সূত্র ধরেই যমের জন্য পুকুর
কাটিয়ে এই কার্তিকেই হয় যম
পুকুর ব্রত।
ভ্রাতৃদ্বিতীয়া
হল যমরাজের পুজো । অবিভক্ত
বাংলার গ্রামে গ্রামে পালিত
হত যম পুজো। মেয়েরা পড়ত যমপুকুর
ব্রতকথা। আজও আছে ব্রতকথার
বইতে। গোটা কার্তিক মাস ধরেই
আত্মা বা মৃত্যুর সঙ্গে
সম্পর্কিত নানা পার্বন হয়।
শুধু আমাদের ই নয় বিদেশেও অল
সোলস ডে বা হ্যালোউইনের অনুরূপ।
কার্তিক অমাবস্যায় শ্মশানে
বিচরণকারী দেবী কালীর পুজো,
আগের দিন
‘ভূত চতুর্দশী’ এবং কার্তিক
মাসেই আমাদের মৃত পূর্বপুরুষদের
আত্মাদের পথ চেনানোর উদ্দেশ্যে
বাড়ির ছাদে ‘আকাশপ্রদীপ'
জ্বালার
চল । ঘটিবাড়িতে কালীপুজোর
প্রদোষে ‘অলক্ষ্মী’ বিদায়
করে দীপান্বিতা লক্ষ্মীর
পুজো হয়। সেই ভাবনাও আসলে
ভুত-প্রেত-অশরীরী
আত্মা জাতীয় ‘অলক্ষ্মী’ বা
নেগেটিভ শক্তি ঘর থেকে বিদায়ের
রীতি হয়ত।
এই
কালীপুজোর পরদিন থেকেই গ্রাম
বাংলায় শুরু হয় ‘যমপুকুর
ব্রত’। বিহারেও ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার
চার দিন পর পালিত হয় ছট
পুজো।সূর্যাস্ত থেকে সূর্যোদয়
অব্ধি সূর্যকে দেখে ছটমাঈয়ের
ব্রত পালন শুরু করে ব্রতীরা।কারও
মতে সূর্যের পুত্রই হলেন যম।
গ্রাম বাংলার কুমারীরা এইসময়
পালন করে যম পুকুর ব্রত ।কি
অদ্ভুত এই মিল!
গবেষিকা
রীতা ঘোষের মতে বাড়ির উঠোনে
এক হাত পরিমান চৌকো পুকুর কেটে
বা চিত্র এঁকে তার চারদিকে
চারটি ঘাট বানিয়ে, দক্ষিণ
দিকে যমকে বসিয়ে ব্রত পালিত
হয়। যমের সঙ্গে থাকেন যমরানি
এবং যমের মাসী। অন্য ঘাটগুলিতে
(উত্তরে)
থাকেন
জেলে-জেলেনী,
(পুর্বে)
ধোপা-ধোপানী,
শাকওয়ালা-ওয়ালী,
পশ্চিমে
কাক, বক,
হাঙ্গর ও
কচ্ছপ। নানা জীবজন্তু রেখে
‘বৈতরণী’ পার করার মত কঠিন
কাজের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
পুকুরে রাখা হয় বা আঁকা হয়
কলমি, হিংচে,
কচু,
ও হলুদ
গাছের চারা। তারপর পুকুরে জল
ঢেলে ব্রত শেষ করার আগে মন্ত্র
বা ছড়া পড়া হয় --
“শুষনি-কলমি
ল-ল
করে
রাজার
ব্যাটা পক্ষী মারে
মারণ
পক্ষী শুকায় বিল,
সোনার
কৌটা রূপার খিল
খিল
খুলতে লাগলো ছড়
আমার
বাপ-ভাই
হোক লক্ষেশ্বর।“
বাপ-ভাই
কে লক্ষেশ্বর করার কামনা করার
পর শেষে বলেন – “লক্ষ লক্ষ
দিলে বর/ ধনে
পুত্রে বাড়ুক ঘর।“ অর্থাৎ,
কেবল ধনী
করাই নয়, যমের
কাছে সন্তান-সন্ততিও
কামনা করেন তারা। আর এখানেই
যম কেবল মৃত্যুর দেবতা না থেকে
হয়ে যান জীবনের দেবতা – যিনি
না চাইলে কারও মৃত্যু হবে না।
আজকের
খবরের কাগজে আমাদের Panditia
Pond সহ শহরে
আরো বেশ কিছু পুকুর কাটানো
দেখে মনে পড়ে গেল কতকিছু।
বাংলার ব্রতে পরিবেশের কারণে
উদ্যোগী হতেন তখনকার মানুষ।
পুকুর বোঁজানো তো দূর অস্ত
বৃষ্টির আশায় বৈশাখে পুণ্যিপুকুর
ব্রত, ভাদ্রে
চাপড়া ষষ্ঠীতেও সেই পুকুর
খাটানোর গল্প আবার কার্তিকেও
যমপুকুর ব্রত। প্রচুর জল ঢেলে
ছটপুজোর জন্য পুকুর খোঁড়া
হয়েছে। এগুলি অস্থায়ী। সেটাই
দুঃখের। এত খরচাপাতি করে যখন
করাই হল তখন পুকুরগুলি থাক
না। আরো গভীর করে খুঁড়ে দেওয়া
হোক। গঙ্গার ধারে পুকুরে জলের
অভাব হবেনা।
১৩ অক্টো, ২০১৯
কে তবে আসল লক্ষ্মী?
আমি
বাংলার আদি অনন্ত সংস্কৃতি
অর্থাত বারব্রত,
পুজোআচ্চ্চা,
স্ত্রী
আচার কে মান্যতা দিয়ে থাকি
বলে সবাই ভাবে আমি বুঝি খুব
পুজোআচ্চা করি। বিশ্বাস করুন
আমি হিপোক্রিসির ঊর্দ্ধে।
আমার যেগুলি মনে হয় ন্যায়সঙ্গত
সেটুকুনিই পালন করি। আমার
কাছে সনাতন ধর্মের সংজ্ঞাটা
অন্যরকম। বারেবারে আমার লেখায়
পুরাণ, পুজো,
বারব্রত
উঠে আসে তাই। এগুলি জানতে ভালো
লাগে। মানুষকে জানাতে ভালো
লাগে। তাই বলে আমি দীক্ষা,
গুরু
মানা কিম্বা নাক টিপে জপতপের
ঘোর বিরোধী।
সক্কাল
সক্কাল বন্ধুরা ফোন করে বলছে,
" কি
গো? আজ
তোমার বাড়ির লক্ষ্মীপুজোয়
যেতে বললে না?"
আমি তো
অবাক! আমাদের
ঘটিবাড়িতে কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো
হয়না। আমার বাবার বাড়িতে খুলনা
কানেকশন থাকায় চিঁড়েমুড়কি,
তালের
ফোপল দিয়ে মা ছবিতে মালা দেন।
ব্যাস ঐ টুকুনিই। কিন্তু
শ্বশুরবাড়িতে আমার আধুনিকা
শাশুড়িমাতার লক্ষ্মীপুজো
নৈব নৈব চ। বরং সরস্বতী পুজোর
নেমকম্মোটুকুনি আমিই চালু
করেছি। কারণ সরস্বতীর হাত
ধরেই আমাদের গৃহে লক্ষ্মীর
আগমন।প্রতি বেস্পতিবারে
আমপল্লব দিয়ে,
ক্যাঁঠালি
কলা, সিঁদুর
স্বস্তিকা এঁকে ঘট পাতার
রেওয়াজ আমাদের বাড়িতে নেই।
তবে কেউ ভালোবেসে খিচুড়ি ভোগ
খাওয়ালে নাচতে নাচতে যাই।
অঞ্জলি দেবার স্কোপ থাকলে
ভরপেটেই পূর্ণচাঁদের মায়ায়
নিজেকে উজাড় করে দিতে খারাপ
লাগেনা বৈকি।
তবে
আজ মাংসের ঝোল ভাত খেয়ে গুমনামীর
প্ল্যান। রাতে লাইভ হব। নব্য
পাঁচালি পড়ব। কানে ঢোকাতে
হবেনা? এত
কষ্ট করে গুরুচন্ডালী আমাদের
নব্য লক্ষ্মীর পাঁচা৯ প্রকাশ
করেছেন । সেখানে আমরা কবি
সাহিত্যিকরা সবাই বেশ প্রতিবাদী
হয়ে নবীকরণ করেছি মান্ধাতা
আমলের সেই মানসিকতার। পদে
পদে যেখানে মেয়েরাই আবহমান
কাল ধরে দুলে দুলে পড়ে সে
পাঁচালি তার বদল হওয়া দরকার
সেই তাগিদেই লেখা এই পাঁচালী।
মেয়েরাই মেয়েদের বিপদ ডেকে
আনে। মেয়েরা না বুঝে পুরুষতান্ত্রিক
লেখকদের জোর করে চাপিয়ে দেওয়া
বটতলার এই পাঁচালিটি পড়ে।
স্বামীজি কে মনে পড়ে?
বলেছিলেন,
অশিক্ষা,
কুশিক্ষা
আর নারীজাতির বিকাশ না হলে
এসমাজের উন্নতি সম্ভব নয়।
তাই এ আমাদের সমাজ সচেতনতার
এক প্রয়াস।
আমাদের
বাড়িতে কালীপুজোর দিনে লক্ষ্মীর
সঙ্গে অলক্ষ্মীর পুজো হতে
দেখেছি। অলক্ষ্মীর পুজো করে
তবেই লক্ষ্মীর পুজোয় হাত দেবার
রীতি। খুব ভালো কিন্তু এক আসনে
নয় কেন? বাড়ির
বাইরে, খোলা
নর্দমার ধারে কলার পেটোতে
পিটুলির তৈরী অলক্ষ্মী গড়ে
এক খাবলা সিঁদুর দিয়ে মাথা
আঁচড়ে চুলের নুড়ি আর গোবরের
ওপর ভাঙা মোমবাতি জ্বেলে তাকে
নামকোয়াস্তে দুটুকরো ফল,
বাতাসা
দিয়ে পুরুত যেন বিদেয় করতে
পারলেই বাঁচে। লক্ষ্মীর পুজোয়
শাঁখ ছাড়া কিছুই বাজেনা কিন্তু
অলক্ষ্মী বিদেয় কালে চাটাই
পেটানো হয় আর বলা হয় অলক্ষ্মী
দূর হ', ঘরের
লক্ষ্মী ঘরেই থাক। এই বলে
অলক্ষ্মীকে ত্যাগ দিয়ে লক্ষ্মীর
প্রধান পুজোয় সামিল হতেন সবাই।
সেখানে মহা ধুম। ষোড়শ উপচার।
আমার খুব কষ্ট হত সেই অলক্ষ্মীর
বিদেয় বেলায়। ভাবতাম সমাজে,
ঘরে ঘরে
এমন কত মেয়েরাই অনাদরে কাল
কাটায়। অছ্যুত,
নীচু,
ঝিমাগী,
পাগলী,
ডাইনি,
বাঁজা
আর বিধবা এরা কি তবে সবাই একঘরে?
অলক্ষ্মীর
দলে? কেন
এমন হবে? কেউ
উত্তর দিতে পারত না বিশ্বাস
করুন। আমার মতে সবাই তো আমরা
কন্যাশ্রী। শ্রী শব্দের অর্থ
লক্ষ্মী। তার সঙ্গে বাচ্ছা
হল কি না হল বা স্বামী মারা
গেল কি না গেল জাতপাঁত কি হল
এসব কেন দেখব?
সধবাই
কেন সিঁদুর খেলবে?
বিধবারা
কেন সিঁদুর দেবেনা?
টিপ পরবে
না? মাছ
খাবেনা, লাল
পরবে না এসব দোলাচলে জর্জরিত
হতে হতে এই অবধি এসেছি।
এবার
আসি আজকের যুগে দাঁড়িয়ে
অলক্ষ্মীর সত্যি ডেফিনিশনে।
আচ্ছা
বলুন তো আজকের সমাজে যে মেয়েগুলো
বিয়ের পরে শ্বশুরবাড়িতে পান
থেকে চুন খসলে মিথ্যে ৪৯৮ এর
মিস ইউজ করে?
ফাঁসিয়ে
দেয় শ্বশুরবাড়ির প্রত্যেককে?
ভেঙে
ফেলে সংসার আর আইনের কারসাজিতে
টাকা আদায় করে বিয়ের বন্ধনে
রণে ভঙ্গ দেয় তারা কেমন লক্ষ্মী?
শাশুড়িমা
বা নিজের মা'কে
যারা "জ্যান্তে
দেয় না দানাপানি,
মরার পরে
ছানাচিনি"
টাইপ হয়ে
বৃষোতসর্গ করে শ্রাদ্ধশান্তি
করে? ত্সেসব
লক্ষ্মীরা ঘরের কুল-অলক্ষ্মী।
"রাণু
মন্ডলের মেয়ের মত"
যারা
জীবনে নিজের মা বা শাশুড়ি কে
একথালা ভাত বেড়ে দেয় না কিন্তু
মা বা শাশুড়ির সোশ্যাল স্ট্যেটাস
বাড়লে কিম্বা পোস্টাল কেভিপি
কিম্বা এনএনসি ওথবা ব্যাঙ্ক
এফডি ম্যাচিওর করলেই মায়ের
কথা যাদের মনে পড়ে সেইসব
অজ্ঞাতকুলশীল অলক্ষ্মীদের
মাথায় পড়ুক বাজ!
আবার
উল্টোটাও সত্যি। সমাজ সংসারে
সেইসব শাশুড়ি বা ননদরা ?
যারা
নববিবাহিত বধূটির প্রতি
অত্যাচার করে তাদের বাধ্য
করে ঘর ছাড়তে?
কিম্বা
পণ না দিলে তাদের পুড়িয়ে মারে
দেবযানী বণিকের মত?
তাদের
প্রকৃতপক্ষেই অলক্ষ্মীর আসনে
বসাই আমি।
আনাচেকানাচে
সত্যি রেপকেসের ফাঁকেফাঁকে
যেসব মেয়েরা মিথ্যে ধর্ষণের
অভিযোগ এনে গ্রামেগঞ্জে
unnecessary হ্যারাস
করে পুরুষকে?
সেগুলোর
কথা ভাবব না আজ?
সেই
মেয়েগুলো কি লক্ষ্মীমেয়ে?
আর
সারাজীবন কপাল ঢেলে সিঁদুর
পরে, লক্ষ্মীর
ঘট পেতে দুলে দুলে পাঁচালী
পড়া সেই মেয়েগুলো?
যারা ঘরে
শান্তশিষ্ট স্বামীনামক
গৃহপালিতের চোখে ধুলো দিয়ে
পরকীয়ায় লিপ্ত হয়ে স্বামীর
প্রতি বেইমানি করে?
ওপরে
সাজানো সংসার আর নীচে পরকীয়ার
কেত্তন গায়?
নিজের
স্বার্থসিদ্ধির আশায়?
এরাও মা
লক্ষ্মী? যে
মেয়েগুলো "মি
টু" বদনাম
দিয়ে আপিসের বসের কাছ থেকে
বিশাল অঙ্কের টাকা দাবী করে
চাকরী থেকে ইস্তফা দেয়?
সেই
মেয়েরাও লক্ষ্মী ?
আর ওপরে
শান্তশিষ্ট ল্যাজবিশিষ্ট
সেই রমণী? যার
পরণে লাল পাড় শাড়ি,
কপালে
সিঁদুর,
লক্ষ্মীপুজো
করে সে গদগদভাসি। ঘরের লক্ষ্মী
শ্বাশুড়িমা কে বৃদ্ধাশ্রমে
পাঠিয়ে অথবা সপরিবারে বেড়াতে
চলে যায় শাশুড়িমা কে একটি ঘরে
জল, বিস্কুট
দিয়ে তালা বন্ধ করে রেখে?
সে ও মা
লক্ষ্মী তো?
আর
গ্রামেগঞ্জের মেয়েরা তো আজকাল
শহরের এককাঠি ওপরে । ৪৯৮ বাদ
দিন। বিয়ের একবছরের মধ্যে
বাচ্ছা পেটে না এলে নীরিহ
গোবেচারা বরটিকে "
ধ্বজভঙ্গ"
বলে
ফাঁসিয়ে লক্ষটাকা দাবী করে
বসে। শুধু বাপেরবাড়ির মা
লক্ষ্মীটির প্ররোচনায়?
এরাও মা
লক্ষ্মী কি?
আর
সর্বোপরি যে মেয়েগুলো শ্বশুরবাড়ির
প্ররোচনায় বোকার মত নিজের
পেটের কন্যাভ্রূণটিকে চুপুচুপি
ওষুধ খেয়ে ন্যাকড়া জড়িয়ে বনের
মধ্যে বা নর্দমায় ফেলে আসে?
সেই
মেয়েগুলো কেমন লক্ষ্মী?
এদের
নিজেদের কোনো সম্বিত নেই?
কোনো
বুদ্ধিশুদ্ধি নেই?
এযুগে
দাঁড়িয়ে এই সব ধরণের অলক্ষ্মীদের
আজ বুদ্ধি লোপ পেয়েছে। তাই
মা লক্ষ্মীর কাছে এইসব অলক্ষ্মীদের
শুভবুদ্ধির জন্য প্রার্থনা
করছি।
২ অক্টো, ২০১৯
পুজো এলো
মহানগরের চাদ্দিকে সাজোসাজো রব। এই এত আলো এত আকাশ তবুও যেন মনখারাপের রিন্রিন্ আমার বুকের মধ্যে আজো। অলিগলি, রাজপথ, খিড়কি থেকে সিংহদুয়ার মাতৃবন্দনায় সর্বত্র মাতৃপূজার ধুম। আমার মায়ের মনে কিসের দুঃখ যেন। ছেলেমেয়ে কেউ থাকবেনা কাছে। আমারো সেই এক অবস্থা। অবিশ্যি অভ্যেস হয়ে গেছে। মানুষের মন আর শরীর যা সইবে তাই-ই সয়ে যায়। দশবছর ছেলে থাকেনা কাছে। তবুও তিথি নির্ঘন্ট মেনে পুজো এসে কড়া নাড়বেই মনের দুয়ারে। এমনি নিয়ম সংসারের। কতবার ভেবেছি সে পুজোয় এলে গেয়ে উঠব সেই পুরাতনীখানা?
"কানে কানে কি কথা কয় বল দেখি সই, কানু এল পরবাসে আনন্দে থই থই"
"কানে কানে কি কথা কয় বল দেখি সই, কানু এল পরবাসে আনন্দে থই থই"
না গাইতে পারিনা। আগমনীর রিহার্সাল, পত্রিকা সম্পাদনা, নিজের বিস্তর লেখালেখির চাপে ভুলেই থাকি। নিজেকে নিয়েই মেতে থাকি।
মনের মধ্যে কে যেন বারেবারে বলে ওঠে "পুজোটা কাটলে বাঁচি"
মনের মধ্যে কে যেন বারেবারে বলে ওঠে "পুজোটা কাটলে বাঁচি"
পাড়ায় মাইক বেজে উঠলে বুকের মধ্যে সেই মাদলের দ্রিমি দ্রিমি। ছোটোবেলার নস্ট্যালজিয়া। কোন্ বছরের কোন্ গান। এলপি রেকর্ড, শারদ অর্ঘ্য, এস্প্ল্যানেডের সিম্ফনি থেকে। পুজোর নতুন গানের ডালি। রঙীন ছবি শিল্পীদের্, লিরিক্স এর বই। মায়ের গান তোলা আর আমার সেই সুরে সুর মেলানো। আধুনিক গাইবিনা একদম এখন। গলা খারাপ হয়ে যাবে।
আমার দুই বিনুনীর টিন পেরুতে থাকে। হঠাত করেই সিনেমার হিট গানে গুনগুন। রেডিওর অনুরোধের আসরে কান পাতা। পাড়ার মন্ডপে আজো ভেসে আসছে সেইসব গান। "দীপ ছিল, শিখা ছিল অথবা কফোঁটা চোখের জল ফেলেছ যে তুমি...."
কোথা থেকে যেন ভেসে আসছে লতা মঙ্গেশকরের সেবার পুজোর ফিট ফর্ম্যুলা, প্রিয়তম কি লিখি তোমায়? অথবা আজ নয় গুণ গুণ গুঞ্জন প্রেমে। নাহ্! আমার ফ্রিল দেওয়া ফ্রক, দুইবিনুনীর টিনে তেমন প্রেমে পড়ার স্মৃতি নেই। কিন্তু সেই প্রেমে না পড়ার দুঃখ ছিল। মা দুগ্গা কে নিয়ে মেতে থাকত সেই রাইকিশোরী। নিউমার্কেটের ফ্রকের ঝুলে আর ফুচকা গিলে। গানে গানে আর পড়ায় পড়ায়। আজ সেই কষ্টটা অন্যভাবে ধরা দেয় মরশুমের প্রথম শারদীয় ঢাকটা বেজে উঠলেই। একরাশ মনখারাপ আছড়ে পড়ে আমার ধনেখালি ডুরে শাড়ির ভাঁজে ভাঁজে। ছোটছোট অনুভূতির খাঁজে খাঁজে।
আমার দুই বিনুনীর টিন পেরুতে থাকে। হঠাত করেই সিনেমার হিট গানে গুনগুন। রেডিওর অনুরোধের আসরে কান পাতা। পাড়ার মন্ডপে আজো ভেসে আসছে সেইসব গান। "দীপ ছিল, শিখা ছিল অথবা কফোঁটা চোখের জল ফেলেছ যে তুমি...."
কোথা থেকে যেন ভেসে আসছে লতা মঙ্গেশকরের সেবার পুজোর ফিট ফর্ম্যুলা, প্রিয়তম কি লিখি তোমায়? অথবা আজ নয় গুণ গুণ গুঞ্জন প্রেমে। নাহ্! আমার ফ্রিল দেওয়া ফ্রক, দুইবিনুনীর টিনে তেমন প্রেমে পড়ার স্মৃতি নেই। কিন্তু সেই প্রেমে না পড়ার দুঃখ ছিল। মা দুগ্গা কে নিয়ে মেতে থাকত সেই রাইকিশোরী। নিউমার্কেটের ফ্রকের ঝুলে আর ফুচকা গিলে। গানে গানে আর পড়ায় পড়ায়। আজ সেই কষ্টটা অন্যভাবে ধরা দেয় মরশুমের প্রথম শারদীয় ঢাকটা বেজে উঠলেই। একরাশ মনখারাপ আছড়ে পড়ে আমার ধনেখালি ডুরে শাড়ির ভাঁজে ভাঁজে। ছোটছোট অনুভূতির খাঁজে খাঁজে।
২৭ সেপ, ২০১৯
মহালয়া অমাবস্যা
ছবিঃ দেবযানী সাধু |
ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়
মৃত পূর্বপুরুষের সন্তুষ্টি এবং তৃপ্তির জন্য জীবিত বংশধরের জলদানকেই বলে তর্পণ।
তর্পণ শব্দটি এসেছে ত্রুপ থেকে যার অর্থ হল তৃপ্তি। আশ্বিনমাসের কৃষ্ণপক্ষ এবং শুক্লপক্ষের সন্ধিক্ষণে মহালয়া অমাবস্যা তিথিটির গুরুত্ব আমাদের শাস্ত্রে বিপুল। পিতৃপক্ষের অবসানে দেবীপক্ষের সূচনালগ্ন ঘোষিত হয় মহালয়ার পরেই। আশ্বিনের কৃষ্ণপক্ষের একপক্ষকাল ধরে পিতৃপুরুষের তর্পণ করা হয়। মহালয়ার দিনে হয় মহাতর্পণ। মহালয়া অমাবস্যার অপর নাম সর্বপিতৃ অমাবস্যা। এই অমাবস্যায় চন্দ্রের মহান লয় বা ক্ষয় হয় এবং প্রতিপদ থেকে আবার চন্দ্রকলার বৃদ্ধি হতে শুরু করে শুক্লপক্ষের সূচনায়।
আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠীর দিনে শুরু হয় দুর্গা পুজো । এর আগের মহালয়া অমাবস্যার দিন পিতৃপক্ষের সমাপ্তি ও প্রতিপদ থেকে দেবীপক্ষের শুরু । হিন্দুধর্মের বিশ্বাস অনুসারে পিতৃলোক থেকে আমাদের পূর্বপুরুষের আত্মা তখন অবতরণ করেন স্বর্গ থেকে মর্ত্যে । অর্থাত আমাদের আশেপাশে তাঁরা বিরাজ করেন । তাই আমরা এই একপক্ষকাল তাঁদের তুষ্ট করি তর্পণের মাধ্যমে ।
মহালয়া শব্দটি স্ত্রীলিঙ্গ। অমাবস্যা শব্দের বিশেষণ। এর অর্থ মহান আলয় বা আশ্রয়। শরতকাল পড়ে সূর্যের দক্ষিণায়নের আওতায়। দেবতাগণ তখন নিদ্রিত থাকেন স্বর্গলোকে। তাই দক্ষিণায়ন হল পিতৃযান মার্গ। আর উত্তরায়ণের সময় দেবতারা জাগ্রত থাকেন। তাই তখন দেবযান মার্গ।
মৃত্যুর পর জীবের পারলৌকিক জীবনগতির দুটি পথের কথা বলা আছে শাস্ত্রে। দেবযান বা উত্তরমার্গ ও পিতৃযান বা দক্ষিণমার্গ।
দেবযান মার্গে গমন করলে মানুষের আর জন্ম হয়না। ব্রহ্মলোক প্রাপ্তি হয় । আর পিতৃযান মার্গে গমন করলে পুনরায় তার মর্ত্যলোকে ফিরে আসতে হয়। ঠিক যেমন মহাভারতের ভীষ্ম কুরুক্ষেত্রে শরশয্যা গ্রহণ করেও প্রাণত্যাগ করার জন্য উত্তরায়ণ আসা অবধি অপেক্ষা করেছিলেন।
মহালয়া অমাবস্যায় পিতৃশ্রাদ্ধ করে, তিলতর্পণাদি কৃত্য করে প্রিয়জনের আত্মাদের যমলোক থেকে পিতৃযানলোকে মহা-আলয়ে পাঠানো হয়। পূর্বপুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধা আর তাঁদের স্বর্গলাভের উদ্দেশ্যেই এই তর্পণ ।
মহাভারতে দেখা যায় কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পর অগণিত ব্যক্তির মৃত্যু হলে তাঁদের মৃত আত্মার উদ্দেশ্যে শান্তি-অর্ঘ্য বা স্মৃতিতর্পণ করার মত কেউ রইলনা বেঁচে। তাই বুঝি আমাদের মর্ত্যলোকে এখনো মানুষ তার প্রিয়মানুষের স্মৃতিতর্পণের আগে মহাভারতের পিতামহ ভীষ্মতর্পণ করে।
ওঁ ভীষ্ম শান্তনবো বীরঃ সত্যবাদী জিতেন্দ্রিয়ঃ
আভিরদ্ভিরবাপ্নোতু পুত্রপৌত্রে চিতাং ক্রিয়াম্।।
মহাভারতে বর্ণিত আছে সূর্যপুত্র কর্ণ কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে মৃত্যুবরণ করে স্বর্গে গমন করেন কিন্তু সেখানে তাঁকে খাদ্য হিসাবে দেওয়া হয়েছিল সোনাদানা । কর্ণ তখন দেবরাজ ইন্দ্রকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে দেবরাজ বলেন ‘ দাতাকর্ণ ! তুমি জীবদ্দশায় অনেক দানধ্যান করেছ কিন্তু কোনওদিন তোমার পিতৃপুরুষকে তাঁদের স্মৃতিতে কোনও খাদ্যদ্রব্য উৎসর্গ করনি । সেজন্য তোমার প্রতি এই বিধান’
কর্ণ তখন বলেন – ‘দেবরাজ‚ পূর্বপুরুষদের বিষয়ে আমি অবগত ছিলাম না । জন্মের পরেই আমার মা আমাকে ত্যাগ করেছিলেন । যাই হোক এখন আমাকে মর্ত্যে ফিরে গিয়ে প্রায়শ্চিত্ত করে সেই পিতৃকার্য করার সুযোগ দিন’ ।
ইন্দ্র সেই প্রার্থনা পূরণ করে সায় দিলে কর্ণ এক পক্ষকালের জন্য মর্ত্যে আসেন ও প্রতিপদ থেকে মহালয়া পর্যন্ত কালে পিতৃকার্য করেন । তাঁদের জল এবং খাদ্য দান করে তৃপ্ত করেন। তাই মহালয়াতে সমাপ্ত পক্ষকে পিতৃপক্ষ বলা হয়। কর্ণের মতোই আজও মর্ত্যলোকের মানুষদের দ্বারা মহালয়ার দিনে পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে তর্পণ করে প্রণতি জানানো হয়। পিতৃপক্ষে তর্পণাদি শ্রাদ্ধ করে দেবতা ও ব্রাহ্মণদের খাদ্যদ্রব্যাদি উৎসর্গ করা হয় । প্রকৃতপক্ষে এটি পিতৃপুরুষের ঋণস্বীকার ছাড়া আর কিছু নয় ।
ময়া দত্তেন তোয়েন তৃপ্যান্ত ভুবনত্রয়মম্
আব্রহ্ম স্তম্ভ পর্যন্তং জগত্ তৃপ্যতু
সারা বাংলার সমস্ত নদীর তীরে মহালয়ার দিন দেখা যায় তর্পণরত ব্যক্তিদের ভীড়। আবার রামায়ণে রামসীতার বনবাসকালে দশরথের মৃত্যু সংবাদে মন্দাকিনীর তীরে তাঁদের তর্পণ করার কথাও পাওয়া যায়।
মহালয়ার পরদিন মা দুর্গা স্বর্গলোক থেকে অবতরণ করেণ মর্ত্যলোকে এবং পিতৃপক্ষের অবসান হয়ে দেবীপক্ষের শুভ সূচনা হয় তখনি । কিংবদন্তী অনুসারে রামচন্দ্র রাবণ বধ করার জন্য দুর্গাপুজো করবেন স্থির করেন । কিন্তু তখন দেবলোক ঘুমন্ত ছিল । ঘুমন্ত দেবলোককে জাগ্রত করার উদ্দেশ্যে অকালবোধন করেছিলেন । সেইকারণে রামেশ্বরে তিনি পিতৃতর্পণ করেছিলেন। তাই সেই অর্থে এই সময়ে প্রতিবছর দুর্গাপুজোর ঠিক আগেই আমরা স্বর্গলোকে আমাদের পিতৃপুরুষদেরও জাগ্রত করি ।
তর্পণ করতে লাগে গঙ্গার জল, তুলসীপাতা এবং কালো তিল। তিল ব্যাবহারের কারণ হল তর্পণের সময় যাতে নেতিবাচক কোনো আসুরিক শক্তি পূর্বপুরুষের আত্মাকে কষ্ট না দিয়ে বিপত্তির সৃষ্টি করতে না পারে। শ্রাদ্ধকারিতেও তাই কালো তিলের ব্যাবহার। আত্মার তৃপ্তিই কাম্য। তাঁরা যাতে কোনোভাবে কষ্ট না পান।
আশ্বিনমাসে সূর্য তুলারাশিতে প্রবেশ করে। হিন্দুশাস্ত্রে বলা হয়, মরণোত্তর আত্মারা তখন পিতৃলোক ছেড়ে যার যার উত্তরসুরী আত্মীয়ের ঘরে বাস করেন। কেউ কেউ বিশ্বাস করেন তাঁদের এই বসবাসের ডিউরেশান ঠিক একমাস, যতক্ষণ না পর্যন্ত সূর্য আবার তুলারাশি থেকে বৃশ্চিকে প্রবেশ করে। ঠিক মহালয়ার অমাবস্যার একমাস পরে আসে ভূত চতুর্দশীর অমবস্যা। কার্তিকমাসে বাড়ির ছাদে ছাদে আকাশপ্রদীপ জ্বালানো হয়। আত্মারা যাতে নিজ নিজ গৃহ থেকে আবারো পথ চিনে স্বর্গলোকে পৌঁছতে পারেন সেই কারণে এই পথনির্দেশিকা ।
মহালয়ার অমাবস্যা তিথিতে দেবদেবীরা জাগ্রত হ'ন এবং মাদুর্গার মৃন্ময়ী মূর্তিতে ঐ দিন চক্ষুদান করা হয় ।
মহালয়ার দিনে পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে তর্পণ করে দেবতা ও ব্রাহ্মণদের উদ্দেশ্যে খাদ্যদ্রব্যাদি উৎসর্গ করা প্রকৃতপক্ষে পিতৃপুরুষের ঋণস্বীকার ছাড়া আর কিছুই নয় ।
ভারতকোষ গ্রন্থে চিন্তাহরণ চক্রবর্তী মহালয়াকে ‘পিতৃপুরুষের উৎসবের আধার’ বলেছেন। লয় প্রাপ্তি অর্থাত চন্দ্রের লয় হয় এই অমাবস্যা তিথিতে আর দর্শণশাস্ত্র মতে আমাদের পঞ্চইন্দ্রিয়ের সূক্ষাতিসূক্ষ্ম অনুভূতিগুলি অর্থাত পরমাত্মার রূপ-রস-গন্ধ-স্পর্শ-শব্দ এই মহতাদির লয় হয় । তাঁরা তৃপ্ত হন তর্পণের দ্বারা । জাগতিক অনুভূতিগুলি থেকে মুক্ত হয়ে আত্মারা পরমানন্দে ফিরে যান স্বর্গলোকে। পিতৃপুরুষেরা নাকি এই সময়ে পরলোক থেকে ইহলোকে আসেন জল ও পিণ্ডলাভের আশায়। শাস্ত্রজ্ঞের অভিমতে, প্রয়াত পিতৃপুরুষদের জল-পিণ্ড প্রদান করে তাঁদের ‘তৃপ্ত’ করার উদ্দেশ্যেই এই তর্পণ ।
পণ্ডিত সতীনাথ পঞ্চতীর্থের মতে মহালয়ায় যে তর্পণ করা হয়, তা শুধুই পিতৃপুরুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। দেব তর্পণ, ঋষি তর্পণ, দিব্য-পিতৃ তর্পণ ইত্যাদির সঙ্গে থাকে রাম ও লক্ষ্মণ তর্পণ এবং জগতে সকল প্রয়াতকে জলদানের মাধ্যমে তৃপ্ত করার কথা বলা আছে। এমনকি জন্ম-জন্মান্তরে যাঁদের আত্মীয়-বন্ধু কেউ কোথাও নেই এরূপ সকল প্রয়াতকে জলদান করে তাঁদের আত্মার তৃপ্তি সাধন করা যায়।
প্রথমে তাম্রপাত্রে কৃষ্ণ তিল এবং অন্য আরেকটি তাম্রকুন্ডে তর্পণের জল ফেলতে থাকে ব্রতী । মন্ত্রোচ্চারণের দ্বারা প্রথমে সে তার জল নিয়ে পৌঁছে যায় দেবলোকে...ওঁ ব্রহ্মা, ওঁ বিষ্ণু, ওঁ রুদ্র, ওঁ প্রজাপতিস্তৃপত্যাম্। তারপর ঋষিলোকে সপ্ত ঋষিকে প্রণতি পূর্বক তর্পণের দ্বারা তৃপ্ত করে।
দেবলোক, ঋষিলোকের পর "এতত্ সতিলোগঙ্গোদকং ওঁ যমায় নমঃ' ...এই বলে মন্ত্রোচ্চারণ করে যমতর্পণ । এবার মহাভারতের সত্যবাদী জিতেন্দ্রিয় ভীষ্ম পিতামহের তর্পণ, রামতর্পণ এবং সবশেষে স্বর্গত আত্মীয় পরিজনের নামে জলদান করার রীতিএই তর্পণে।
৯ সেপ, ২০১৯
বাংলার বারোমেসে নারীপুজো
প্রাচীন পিতৃতান্ত্রিক সমাজে মেয়েদের বারব্রত পালনে স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছিল দেবীরা। মেয়েরা মেয়েদেরই পুজো বেশী করত।
মানুষের জীবনযাত্রার এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠেছিল বিভিন্ন পৌরাণিক এবং লৌকিক দেবীর পুজো। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জীবনযাপনের প্রতিনিয়তঃ অনিশ্চয়তা, খাদ্যাভাব, কৃষিকাজ, সন্তানধারণ, পালন, রোগব্যাধির হাত থেকে রক্ষে পাওয়া আর সর্বোপরি অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের চিন্তায় মানুষ শরণাপন্ন হত বারব্রতর। লোকসমাজে মানুষের জীবনধারণের অনিশ্চয়তা থেকেই একসময় জন্ম নিয়েছিল তাদের প্রকট ধর্মভীরুতা। বাংলার অগণিত পালপার্বণে দেবীদের পাল্লাই বেশী। যেন মাতৃস্বরূপা দেবীই নারীশক্তির মূর্ত প্রতীক রূপে সকলের মঙ্গলকামনায় বিরাজমানা। সেই সমাজে শিশুদের ধারণ, পালন এবং রক্ষায় মা দুর্গা স্বরূপিণী ষষ্ঠীদেবীর মাহাত্ম্য প্রচলিত হয়। তিনি বৈদিক দেবী নন। তবে বাংলার লোকসংস্কৃতির ধারাটি বজায় রাখতে লোকসমাজে বহুল প্রচলিত ষষ্ঠীর ব্রতকথাগুলি আজো মানুষের কথা বলে। পিতৃতান্ত্রিক সমাজের কথা, লিঙ্গবৈষম্যের কথা জানায়। তার ফাঁকে দেবীরা নিজেদের মাহাত্ম্য প্রচার করে সমাজে স্থায়ী আসন পেতে নেন।
আদিম মাতৃপুজোর একটি বিশেষ অংশ হল ষষ্ঠীপূজা। মূলতঃ প্রজনন শক্তির দেবীরূপে ষষ্ঠী প্রাধান্য পেতে থাকেন। জনসমাজে প্রতিমাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠীতিথিতে দেবীর পুজো চালু হয়।
পুরাণ বা অভিধান যে ব্যাখ্যাই দিক না কেন শিশুর রক্ষয়িত্রী এবং পালনকর্ত্রী ষষ্টীদেবী আজো নাকি সন্তান জন্মের পর নবজাতকের মাথার শিয়রে এসে শিশুর ভাগ্যলিপি লিখে দিয়ে যান। সন্তান ভূমিষ্ঠ হবার ছ'দিনের মাথায় তাই এখনো অনেক স্থানে নবজাতকের আঁতুড়ঘরে সূতিকাষষ্ঠী বা পুকুরপাড়ে ঘাটষষ্ঠী অর্চিত হয়। কেউ বলেন ষেঠেরা বা ষাটষষ্ঠী। ছ'দিনের পরে ও একুশদিনের মাথায় হয় শুদ্ধ ষষ্ঠী বা ষষ্ঠীপুজো বা একুশ্যাও ।
এছাড়াও বারোমাসের প্রতিটি শুক্লা ষষ্ঠী তিথিতে হয় মা ষষ্ঠীর আবাহন।
• বৈশাখে গ্রীষ্মের দাবদাহে ফুটিফাটা বাংলার মাঠঘাটে মা মঙ্গলচন্ডীর পুজো হয় বর্ষার আশায়। কৃষিপ্রধান বাংলার শস্যভান্ডারটিও ফুলে ফেঁপে উঠবে । অন্যদিকে এই সময়টা রোগভোগের প্রকোপও নিদারুণ। তাই সংসারে যাতে সেই প্রাদুর্ভাব না হয় তার খেয়াল ও রাখেন গৃহকর্ত্রী। ঘরে ঘরে এই শীতলা, ষষ্ঠী, চন্ডীর প্রতিমাসে পুজো তো আর কিছুই নয়। মা দুর্গা বা কালীর শরণ নেওয়া।
জাপানীভাষায় এই দেবীর নাম “চনষ্টী”। এই চনষ্টী শব্দটি সংস্কৃত শব্দ চন্ডীর অনুরূপ। সুকুমার সেনের মতে চন্ডী শব্দটি এসেছে চান্ডী থেকে। চান্ডী একজন অনার্যা দেবী, যিনি ওঁরাও, বীর, হোড়দের দ্বারা পূজিতা।চন্ডীমঙ্গলে আমরা ওরাঁও উপজাতিদের দ্বারা পূজিতা দেবীদুর্গার এই চান্ডী রূপটিই পাই। বাংলার সুজলা সুফলা শস্যশ্যামলা মাটির বুকে শক্তির আরাধ্যারূপে পূজিতা চণ্ডীর সঙ্গে শীতলা, মনসা, বাশুলির পুজো হয় ।
• জৈষ্ঠ্যমাসের শুক্লপক্ষের অরণ্যষষ্ঠী বা জামাইষষ্ঠীর দিনটিতে বিন্ধ্যবাসিনী পূজিতা হন।
আদিতে বনদেবী ছিলেন অরণ্যের অধিষ্ঠাত্রী। জ্যৈষ্ঠের প্রখর তাপে জ্বলে পুড়ে খাক মাটি, বন জঙ্গল। বৃষ্টির কামনায়,পর্যাপ্ত শস্য ফলনের আশায় বনে গিয়ে গান গেয়ে আর পুজো দিয়ে বনদেবীকে সন্তুষ্ট করা ছিল প্রাচীন পন্থা। তার ঠিক পরেই নারী আর কৃষি সমার্থক হয়ে উঠল। অরণ্যের দেবীও তো নারীর মত একপ্রকার প্রজননের দেবী। একে জামাই ষষ্ঠী বলার কারণটি মহাভারতের আমলের। অর্জুনের অজ্ঞাতবাসে মণিপুরের রাজকন্যা চিত্রাঙ্গদার সঙ্গে গান্ধর্বমতে অরণ্যের মধ্যে জ্যৈষ্ঠের এই ষষ্ঠীতে তাঁদের বিয়ে হয়। মণিপুরবাসী সেই নতুন জামাতাকে নানা রকম ব্যঞ্জনে আপ্যায়ন করে বরণ করেন । তাই তেমন এলাহি আপ্যায়ন এখনও জামাইষষ্ঠীর অঙ্গ।
• আষাঢ়মাসে শনি-মঙ্গলবারে মহা ধুম করে চালু বিপদতারিণীর পুজো। যা কর্দমষষ্ঠী বলে পরিচিত।
• শ্রাবণমাসের শুক্লপক্ষের তিথিতে ধুমধাম করে হয় লোটনষষ্ঠী বা লুণ্ঠন ষষ্ঠীর পুজো। সন্তানদের অকালমৃত্যু রোধে এই ব্রত পালিত হয় সন্তানের কল্যাণে। প্রত্যেক ষষ্ঠীই আসলে মা দুর্গার পুজো। মায়ের এক অঙ্গে বহু রূপ।
শ্রাবণমাসে শুধুই কি শিবের পুজো হবে? তাই বুঝি মা দুর্গা এগিয়ে আসেন নিজের পুজো নিতে। ষষ্ঠী রূপিণী হয়ে, পুরুষ তান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে এ যেন তাঁর নীরব প্রতিবাদ । আবার শ্রাবণসংক্রান্তিতে হয় অরন্ধন। হিন্দুমুসলমান নির্বিশেষে কারো ঘরে উনুন জ্বলে না তখন। জলে জঙ্গলে সাপখোপেদের সঙ্গে যাদের অহোরাত্র ওঠাবসা মনসার ভাসান গীত তারাই গায় । সাপেদের দেবী মা মনসার পুজো এটাই। মা মনসা তুষ্ট হলে তবেই সাপেরা উত্পাত করবেনা। এই তাদের বিশ্বাস। সেখানেও মাতৃতন্ত্রের জয়।
• ভাদ্রমাসে, দুর্গাপুজোর ঠিক এক মাস আগে শুক্লাষষ্ঠী তিথিতে হয় চাপড়াষষ্ঠীর ব্রত। সন্তানের ধনলাভের কামনায় এই ব্রত । ভাদ্রে ওঠা নতুন ধানে ভাদ্র লক্ষ্মীর পাশাপাশি এই চাপড়া ষষ্ঠীর পুজো এখনো সমাদৃত। রাঢ় বাংলায় ভাদ্রমাসের প্রথমদিন থেকে ভাদু পূজা আরম্ভ হয় । পয়লা ভাদ্র কুমারী মেয়েরা গ্রামের কোন বাড়ীর কুলুঙ্গী বা প্রকোষ্ঠ পরিষ্কার করে ভাদু প্রতিষ্ঠা করে । একটি পাত্রে ফুল রেখে ভাদুর বিমূর্ত রূপ কল্পনা করে সমবেত কন্ঠে ভাদু গীত গায় । ভাদু লক্ষ্মী আঞ্চলিক লৌকিক দেবী। ভাদ্র সংক্রান্তির সাত দিন আগে ভাদুর মূর্তি ঘরে এনে সংক্রান্তির সকালে দলবদ্ধভাবে ভাদু মূর্তির বিসর্জন দেয়। ঘরে ঘরে হয় ভাদু পরব। কন্যাভ্রূণ হত্যার যুগে ভাদু কন্যাশ্রীটিকেও ঘরের মেয়ে রূপে পুজো করা হয়। এও শিক্ষামূলক পদক্ষেপ আজকের যুগে। আবারো ভাদ্র সংক্রান্তিতে মনসার পুজো হয়। দক্ষিণবঙ্গে বলে রান্নাপুজো।
• আশ্বিনের দুর্গাষষ্ঠী বা বোধন ষষ্ঠীর লোকগাথা বলে, স্বয়ং মা দুর্গা নিজের সন্তানকামনার্থেই এই ষষ্ঠী ব্রত পালন করেছিলেন । নিজের গর্ভজাত পুত্র নেই বলে মা দুর্গার আক্ষেপ ছিল । ষষ্ঠীদেবীর পুজো করে মা দুর্গার গর্ভে শিবের ঔরসে গণেশ এসেছিল।
• কার্তিকমাসের শুক্লা ষষ্ঠীতে ছটপুজো সূর্যের পুজো হলেও মূলতঃ এটি গঙ্গাদেবীর পুজো। দুর্গার আরাধনা শুক্লাষষ্ঠীতেই হয় তাই বুঝি ষষ্ঠ>ষট> ছট কথাটি প্রচলিত। কারো মতে ছট্ অর্থাৎ ছটা বা সূর্যরশ্মির পুজো । কারো মতে সূর্যের দুই স্ত্রী ঊষা এবং প্রত্যুষা কে স্মরণ করা হয়। স্থান-কাল-পাত্র ভেদে আবারো সেই নারীশক্তির আরাধনা।
• অঘ্রাণ মাসের শুক্লপক্ষের মঙ্গলবারে কুলুই চন্ডীর ব্রত, রবিবারে ইতুপুজো আর বৃহস্পতিবারে হেমন্ত লক্ষ্মীর পুজো হয় । আসলে যিনি কুলুই চণ্ডী, তিনিই ইতু তিনিই ষষ্ঠী রূপিণী মা দুর্গা, তিনিই হেমন্ত লক্ষ্মী। বারেবারে স্মরণ মনন তাঁরই। লোকশিক্ষার মোড়কে নতুন নতুন গাথার জন্ম হয়। ইতু কৃষি দেবী। আমাদের কৃষিপ্রধান দেশে ইতুপুজো দুর্গাপুজোর নবপত্রিকার মত । অঘ্রাণে সদ্য ওঠা নতুন ধানের উৎসবে মেতে ওঠার আরেক অর্থ হল হেমন্ত লক্ষ্মীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন।
• পৌষমাসে রাঢ়বঙ্গে টুসু পুজোর ধুম । ঘরের কন্যাশ্রী আদরের টুসুমণি লৌকিক দেবী। । আবার পৌষ মাসে নতুন ধানের গন্ধে পৌষসংক্রান্তিতে একদিকে টুসু পরব অন্যদিকে পিঠে পার্বণের ঘটায় পৌষলক্ষ্মীর জন্য নতুন শস্যের বরণডালা সাজানো। দেবীর প্রতি কৃতজ্ঞতাজ্ঞাপন। ধানের তুষ হল টুসুপুজোর প্রধান উপাচার। তাই বুঝি এই দেবীর নাম তুষু বা টুসু।
• মাঘ মাসের শ্রী পঞ্চমীর পরদিন হয় গোটা ষষ্ঠী বা শীতল ষষ্ঠীর অরন্ধন । আগের দিন রাঁধা হবে গোটাসেদ্ধ আর পান্তা ভাত। পরদিন খাওয়া হবে। তোলা থাকে শিলনোড়া ! শিলকে হলুদ জলে স্নান করিয়ে তেল হলুদ ছোপানো ঠান্ডা কাপড় পরিয়ে জোড়া শিম, জোড়া মটরশুঁটি রেখে তার কোলে রাখো তার সন্তান সম নোড়াটি। শীতলা বাংলার জনপ্রিয় লৌকিক দেবী। বসন্তরোগের দেবী হিসেবে তিনি ব্যাপকভাবে পূজিতা । শীতল বা বাসি নৈবেদ্যাদি শীতলার পছন্দের। তিনি রোগ-তাপ দূর করে শান্তি স্থাপন করেন । বাংলাদেশে শক্তির আরাধ্যারূপে পূজিতা দেবী শীতলা, ষষ্ঠী, সকলেই মা দুর্গার অংশ বিশেষ।
• ফাল্গুন মাসে নীলের ব্রত কিন্তু তা ষষ্ঠী কারণ ষষ্ঠীর সঙ্গে সন্তান লাভ এবং সন্তানের কল্যাণ কামনার অনুষঙ্গ জড়িত । নীল কথাটি নীলকন্ঠ মহাদেবের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে। এ যেন দেবীর আকুতি। আমার সন্তানের কল্যাণ করো হে নীলকণ্ঠ, সব বিষ কণ্ঠে নিয়ে নিয়ে তাদের অমৃত দাও! আর মাদুর্গার বার্ষিক পুজোর ভীড়ে শিবঠকুরের ব্র্যান্ডভ্যালু যাতে অক্ষুণ্ণ থাকে । মানে আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে পড়ে নিজের নামের পাশে ষষ্ঠী জুড়ে দিলেন পুরুষতান্ত্রিক সমাজের কর্তাব্যাক্তিরা? যেন সন্তানের মঙ্গলার্থে শুধু মা ষষ্ঠীই নয় শিবও আছেন কিন্তু, একথা ভুলে যেও না হে ব্রতী!
• চৈত্রমাসে বাসন্তী পুজোয় অশোক ষষ্ঠীও শরতকালের মা দুর্গার পুজোর অনুরূপ । যমদংষ্ট্রা শরত ও বসন্ত এই দুই ঋতুতে মানুষ দুরারোগ্য ব্যাধি ভোগ করে মৃত্যুমুখে পতিত হয়। ঋতু পরিবর্তনের হাওয়া লাগে। ফলে রোগের প্রকোপ বাড়ে। দুর্গা দুর্গতিনাশিনী তাই আবির্ভূতা হন এই দুই সময়েই । মা দুর্গা তখন অশোকা অর্থাৎ শোক রহিতা, বসন্তের দেবী বাসন্তী।
উত্তরবঙ্গের রাজবংশীদের কাছে প্রিয় তিস্তানদী এক বয়স্ক শুভ্র বসনা রমণী যার কেশ শুভ্র, হাতে লাঠি । প্রকৃতির খামখেয়ালিপনা থেকে বাঁচতেই সেখানে হয় তিস্তাবুড়ির পুজো। রাজবংশীদের মতে, এই পুজো শুধু নদীকে তুষ্ট করে না যারা এই পুজোয় অংশ নেয় তাদের পারিবারিক বিবাদও মেটে।
কোথাও এই দেবী তিস্তাবুড়ি, কোথাও বা মেছেনি । চৈত্র ও বৈশাখ মাসে গ্রামে ঘুরে ঘুরে মহিলারা প্রচার করেন দেবী তিস্তার মাহাত্ম্য মেছেনি গানের মধ্য দিয়ে-
আবার আশ্বিনে তিস্তা ও জলঢাকা পাড়ের গ্রাম মাতে প্রাচুর্যের দেবী ভাণ্ডানীর আরাধনায়। দুর্গা পুজোর রেশ কাটতে না কাটতেই উত্তরবঙ্গের গ্রামবাংলায় ফের বোধনের সুর বেজে ওঠে। দেবী দুর্গার অপর রূপ দেবী ভান্ডানিকে উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ বনাঞ্চলের বনবাসীরা পুজো করে ‘বনদুর্গা রূপে’।
কোচবিহারেও পশ্চিমবাংলার আর পাঁচটি জেলার মত সন্তান পালনের দেবী হিসেবে রাজবংশীরা যে ষষ্ঠীর ব্রত করেন তার নাম ষাইটোল বা সাইটাল।
সাইটোল হল শোলা দিয়ে বানানো মা ষষ্ঠীর লৌকিক রূপ।
ষাইটোল ওদের ভাষায় ষষ্ঠী। ষষ্ঠী থেকেই সাইটোল বা ষাইটোর শব্দের উত্পত্তি।
উত্তরবঙ্গের ষাইটোল দেবীর পাশাপাশি দক্ষিণবঙ্গের সুন্দরবনে বনবিবিও কিন্তু মা দুর্গার অংশ বিশেষ। সুন্দরবনাঞ্চলে মধু সংগ্রাহক, কাঠুরে, মৎসজীবীদের দেবী বনবিবি, বনদেবী বা ব্যাঘ্রদেবী একই সঙ্গে হিন্দু ধর্মের দেবী ও কিছু বনবাসী মুসলমানদের পীরানি। সুন্দরবনের ‘গার্ডিয়ান স্পিরিট’ বা রক্ষাকারী শক্তি, অভিভাবক ।
সুন্দরবন অঞ্চলের লোকায়ত এই দেবী হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে পূজিত হন। বনবিবি বনদুর্গা, বনচণ্ডী, বনষষ্ঠী বা বিশালাক্ষী। বাংলাতে ইসলামের প্রভাবে তিনি বনবিবি ।
স্থানীয় মানুষ বনে প্রবেশের আগে বনবিবির পূজা করে। সুর করে গান গেয়ে বনদেবীর কাছে প্রার্থনা করে ।
সুন্দরবন অঞ্চলে এই বনবিবি ছাড়াও ষষ্ঠীঠাকরুণ, কলেরার হাত থেকে বাঁচার জন্য ওলাইচন্ডী বা ওলাবিবি, জ্বরজারির মহামারী রোধে শীতলা বা জ্বরাসুর, সাপের হাত থেকে বাঁচার জন্য মনসাপুজো করা হয়।
আনাচেকানাচে দেবীপুজোর সঙ্গে বাংলার ব্রতকথায় দেবীপূজার প্রবল প্রচার দেখে দেবীদের পাল্লাই ভারী মনে হয় । আজকের নারীবাদের ধ্বজা উড়িয়ে যখন আমরা একটা ভয়ানক হুজুগে মেতেছি তখন মনে হয়, এ আর নতুন কি? আমাদের বারোমাসের তেরোপার্বণে সবপুজোই তো প্রায় নারীদের উত্সর্গ করে। লোকসাহিত্যের আঙিনায় কান পাতলে শুনি চন্ডীমঙ্গল, মনসামঙ্গল, শীতলামঙ্গল, বাশুলী মঙ্গল বা অন্নদামঙ্গলের কাহিনীর ছত্রে ছত্রে দেবীমাহাত্ম্যের বর্ণনা।
অর্থাত দেবী প্রসন্না হলে মানুষকে মুক্তিলাভের জন্য অভীষ্ট বর প্রদান করেন।
প্রতিমুহূর্তেই ব্রতপালনের দ্বারা স্মরণ এবং মনন হয় নারীশক্তির। মূলতঃ তিনি মাতৃ রূপিণী শক্তি। পুরুষের তথা সমাজের চালিকা এবং দাহিকা শক্তি। বাকীটা কিংবদন্তী। লোকমুখে প্রচলিত। লোকগাথায় সমাদৃত ।
মূল পেপার টি প্রকাশিত হয়েছে বই আকারে। কিছুটা দেওয়া হল এখানে।
১৬ জুন, ২০১৯
কিশোর গল্প সংকলন "চিন্তামণির থটশপ" নিয়ে রিভিউ
১৩ জুন সাপ্তাহিক বর্তমান- এ ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়-এর কিশোর গল্প সংকলন 'চিন্তামণির থটশপ'-এর আলোচনা
বইটির প্রাপ্তিস্থান - ধানসিড়ি বই (কলেজস্ট্রিট), ধানসিড়ি বইঘর (সিঁথি),
এছাড়াও দে বূক স্টোর, ধ্যানবিন্দু, দে'জ (কলেজস্ট্রিট)
রিড ইন ( সন্তোষপুর), সংকলন (কৃষ্ণনগর), বিশ্বাস বুক স্টল (বহরমপুর), পুনশ্চ (মালদা)
অনলাইন থেকে সংগ্রহের লিংক :
রিড বেঙ্গলি বুকস - https:// readbengalibooks.com/ index.php/ chintamonir-thoughtshop.htm l
ফ্লিপকার্ট - https://www.flipkart.com/ chintamonir-thoughtshop/p/ itmfefv2nzwb6qdd?pid=978938 6612908&lid=LSTBOK97893866 12908NM5RNV&marketplace=FL IPKART&srno=s_1_1&otracker =search&otracker1=search&f m=SEARCH&iid=1331a2b2-0332 -4c00-a8e3-bacbeb1ddf30.97 89386612908.SEARCH&ppt=sp& ppn=sp&ssid=7hudacj33kskkc 401560570949636&qH=c715c96 a16095bda
বইচই - https://www.boichoi.com/ chintamonir_thoughtshop
— with Indira Mukhopadhyay.বইটির প্রাপ্তিস্থান - ধানসিড়ি বই (কলেজস্ট্রিট), ধানসিড়ি বইঘর (সিঁথি),
এছাড়াও দে বূক স্টোর, ধ্যানবিন্দু, দে'জ (কলেজস্ট্রিট)
রিড ইন ( সন্তোষপুর), সংকলন (কৃষ্ণনগর), বিশ্বাস বুক স্টল (বহরমপুর), পুনশ্চ (মালদা)
অনলাইন থেকে সংগ্রহের লিংক :
রিড বেঙ্গলি বুকস - https://
ফ্লিপকার্ট - https://www.flipkart.com/
বইচই - https://www.boichoi.com/
৭ জুন, ২০১৯
২০ এপ্রি, ২০১৯
যতসব !!!
একেই ভোটের বাজারে চ্যানেলে চ্যানেলে ঘটি গরম, প্রোমোটাররাজের কৃপায় বাড়ির গরম, ব্যাঙ্কের ইএমআই এর শাইনিং বিজ্ঞাপনের দৌলতে ক্রমবর্ধমান গাড়ির গরম, নিয়মিত অরণ্যমেধ যজ্ঞে আহুতি দিতে দিতে আর ছোটবড়,কুট্টি, আন্না পুকুর বুজিয়ে পরিবেশের দ্রুত গরমায়ন। সবমিলিয়ে পরিবেশের বেজায় দম্ভ। বড় গরম দেখায়। উঠতি কবি, লেখকদের আরো দেমাক। সেই গরমে পা পড়েনা তাদের। তারপরে আমাদের কারণে অকারণে সবার মাথা গরম। গরম লেগে ছেলেপুলের গা গরম । মধ্যবয়সী মায়েদের মেনোপজের কারণে যখন তখন হটফ্লাশ। কাজের চাপে গরমে ক্লান্ত পথেঘাটের মানুষদের গরম গরম বক্তিমে। আর সেই সঙ্গে শাইনিং ইন্ডিয়ার মাহাত্ম্যে দেশের সম্মিলিত ফ্রিজ এবং এসিগুলোর দ্বারা পরিত্যক্ত গরম গ্যাসের গরম। আর কত বলব মশাই? এই গরমে ফুটি ফাটছে, মা রাগছে, মাটি ফাটছে। মানুষ রাগে ফেটে পড়ছে। পুরোটাই তাপ নিঃসারক বিক্রিয়া মশাই। মানে এক্সো থার্মিক রিএকশান। উঁহু! অত কালবোশেখি নয় আর। পেয়ে পেয়ে বড্ড নোলা বেড়েছে না? বিষ্টি অত্ত সস্তা নয়। একি বিগবাজারের বুধবারের সস্তে পে সস্তা পেয়েছ? নিজেরা জলীয় বাস্পের গুস্টির তুষ্টি করেছে এখন চেল্লাচ্ছে। ঠিক আত্মঘাতী বাঙালীর জাত। নিজের পায়ে কুড়ুল মারছে আর এখনও বলে চলেছে সব দোষ এর, ওর। আমাদের পুকুরভরা মাছ, গোয়ালভরা গোরু, মরাইভরা ধান ছিল। তো?
নিজের গুষ্টি হিংলিশ মিডিয়ামে পড়েছে বাবু। তোমরা ইংলিশ লিখতে, বলতে পারোনা তো? আর ইস্কুলে ইংরেজির টিচার পাচ্ছে না তো?
রক্ত দিয়ে রোখা অটোমেশন বাবুরা আজ ঠান্ডা ঘরে ল্যাপটপ খুলে ফেসবুকিং এ ব্যস্ত, দেখতে পাওনা? বাড়িতে সবাই তাদের কম্প্যু লিটারেট। তো?
নিজেরা চুপিচুপি ভেলোরে গিয়ে চিকিস্যা করে আসে, ভরসা নেই বাংলার ওপর। তো?
অন্য রাজ্যে যখন ছেলেমেয়েগুলো পড়তে পালালো তখন ব্যাঙের ছাতার মত ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ হল। সেখান থেকে পাশ করে ব্রিজ বানাচ্ছে। আর ভাংছে। তো?
পুজো হচ্ছে। উৎসব হচ্ছে। মেলা হচ্ছে। উন্নয়ন হচ্ছে। তো?
তো আমার ছেলেটা ফিরে এসে কোথায় চাকরি পাবে বলে দেবে কেউ? নাকি আবার বলবে তো?
এই দেখুন আবার মাথাটা গরমে জ্বলে উঠল।তার চেয়ে এই ভালো।
মিডিয়া গরম গরম খবর দিক আপনাদের। শ্রাবস্তীর তিন বার বিয়ের কিম্বা প্রিয়াংকার বিয়ে ভাঙার। এইসব গসিপে কারোর গরম লাগেনা।
নিজের গুষ্টি হিংলিশ মিডিয়ামে পড়েছে বাবু। তোমরা ইংলিশ লিখতে, বলতে পারোনা তো? আর ইস্কুলে ইংরেজির টিচার পাচ্ছে না তো?
রক্ত দিয়ে রোখা অটোমেশন বাবুরা আজ ঠান্ডা ঘরে ল্যাপটপ খুলে ফেসবুকিং এ ব্যস্ত, দেখতে পাওনা? বাড়িতে সবাই তাদের কম্প্যু লিটারেট। তো?
নিজেরা চুপিচুপি ভেলোরে গিয়ে চিকিস্যা করে আসে, ভরসা নেই বাংলার ওপর। তো?
অন্য রাজ্যে যখন ছেলেমেয়েগুলো পড়তে পালালো তখন ব্যাঙের ছাতার মত ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ হল। সেখান থেকে পাশ করে ব্রিজ বানাচ্ছে। আর ভাংছে। তো?
পুজো হচ্ছে। উৎসব হচ্ছে। মেলা হচ্ছে। উন্নয়ন হচ্ছে। তো?
তো আমার ছেলেটা ফিরে এসে কোথায় চাকরি পাবে বলে দেবে কেউ? নাকি আবার বলবে তো?
এই দেখুন আবার মাথাটা গরমে জ্বলে উঠল।তার চেয়ে এই ভালো।
মিডিয়া গরম গরম খবর দিক আপনাদের। শ্রাবস্তীর তিন বার বিয়ের কিম্বা প্রিয়াংকার বিয়ে ভাঙার। এইসব গসিপে কারোর গরম লাগেনা।
১১ এপ্রি, ২০১৯
দুর্গা চৈতালী
আজ অশোক ষষ্ঠী। চৈত্রমাসের দুর্গা পুজোর শুরু। হিন্দুদের এই পুজো চলে পাঁচ দিন। খ্রীষ্টানদের ইস্টার শুরু হয় মন্ডি থার্সডে তে। শেষ হয় ইস্টার মানডে' র দিন। ঠিক পাঁচদিন। পাশ্চাত্যের ইস্তারা দেবী আর প্রাচ্যের দুর্গায় যেন বড্ড মিল। আমাদের অশোকা-বাসন্তী-চৈতালী দুর্গাপুজোর ষষ্ঠীর দিন ৬টি করে অশোক ফুলের কুঁড়ি কলা বা দৈ সহযোগে গিলতে হয়। অশোকফুলের ওষধি গুণ মেয়েদের রোগের অব্যর্থ। তাই বাত্সরিক টীকাকরণ বলে মনে হয় আমার। অশোক অষ্টমী পরশু। সেদিন অন্নপূর্ণা পুজো, দুর্গাষ্টমী।আবার ওষধির সেকেন্ড ডোজ। সেদিন ৮টি অশোক ফুলের কুঁড়ি আবার খেতে হবে। আমার বাপু বিশ্বাসে মিলায় বস্তু। আর বাকীটা সন্তানের মঙ্গলার্থে। আর কিছুই করিনা। পয়সা তুলে রাখি সম্বচ্ছরিক কৌটোয়। সেই দুর্গাষ্টমীতে পুজো দিই। তবে আজ শরীরের কিছুটা হলেও ডিটক্সিং। তরমুজ, বেলের পানা, ফল, নারকেল, দুধ, কলা দিয়ে সাবুমাখা দিয়ে লাঞ্চ। রাতে অবিশ্যি রেঁধেছি ছোলা, নারকেল কুচি, পটল, কুমড়ো, আলু দিয়ে কুমড়োর ছক্কা। এক টুসকি হিং দিয়েছি। বাকীটা পরে ভাবা যাবে। লুচি না পরোটা খুব একটা খাই না। তবে আজ খেতেই হবে। পোড়া খেতে নেই। সেখানেও বিশ্বাসে মিলায় বস্তু। তর্ক করিনা। কারণ টা ব্যাক্তিগত।
বাকীটা এইখানে...
https://sahityo.life24.in/probondho-durga-choitali/
বাকীটা এইখানে...
https://sahityo.life24.in/probondho-durga-choitali/
২৪ মার্চ, ২০১৯
১৭ জানু, ২০১৯
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)