১৭ অক্টো, ২০২৩

দীপান্বিতা


কার্তিক লক্ষ্মী দীপান্বিতা


বর্ধমান হল পশ্চিমবাংলার অন্যতম বিজনেস সেন্টার। মাড়োয়ারি, গুজরাটি সহ বহু রাজ্যের মানুষের বাস এখানে। সেই সঙ্গে যে বাঙালীরা এখানকার প্রাচীন বাসিন্দা তাদের সকলের সংস্কৃতি মিলেমিশে এক হয়ে গেছে এই জেলায় কার্তিকমাসের অমাবস্যা তিথিতে কালীপুজোর দিনে ঘটিদের হয় দীপাণ্বিতা লক্ষ্মী পুজো। অবাঙালী ব্যবসায়ীরা বলে দীপাণ্বিতা কালীপুজো।

দীপাবলী বা দেওয়ালির সঙ্গে আমরা পরিচিত। তবে দীপান্বিতা লক্ষ্মীপুজোর কথা অনেকেই জানিনা। রামায়ণ অনুসারে দীপাবলী হল রামের রাবণ বধ করে চৌদ্দ বছরের বনবাস শেষে অযোধ্যায় প্রত্যাবর্তন করা উপলক্ষে আলোক উৎসব। দীপাবলীর আলোকসজ্জা এবং শব্দবাজি সেই অধ্যায়কে সামনে রেখেই আজও সমাদৃত ।কোজাগরীর ঘোর কাটতে না কাটতেই কৃষ্ণা ত্রয়োদশীর পরদিনেই ভূতচতুর্দশী। শুক্লপক্ষে আকাশ আলো করা রূপোর থালার মত চাঁদ, হিম ঝরানো জ্যোত্স্না আর শারদীয়ার মনখারাপ। দিন পনেরো কাটতে না কাটতেই কৃষ্ণপক্ষের সূচনা। ভূত চতুর্দশীর প্রস্তুতি। পূর্ণিমার চাঁদ এখন ঘুমোতে গেছে। ঝুপসি অন্ধকার আকাশের গায়ে।আসন্ন দীপাবলীর আলোর রোশনাই আর আকাশছোঁয়া ঘরবাড়ির আলোয়, বাজির গন্ধকী গন্ধে ভরপুর বাতাস। হিমের পরশ, ঝিমধরা নেশাগ্রস্ত ... ঋতু বৈচিত্র্যময়তায়

কৃষ্ণা ত্রয়োদশীর দিন ধনতেরস অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দীপাবলি উৎসবের সূচনা হয়। কার্তিক মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে ভাইফোঁটা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই উৎসব শেষ হয়। নবরাত্রি উৎসব শেষ হওয়ার ১৮ দিন পর দীপাবলি শুরু হয়।
দীপাবলীর আগের দিন চতুর্দশীকে বলা হয়নরকা চতুর্দশী।দেবী কালী নাকি কার্তিকমাসের এই চতুর্দশীর রাতে ভয়ানক অত্যাচারী নরকাসুরকে বধ করেন।

চতুর্দশী পরের অমাবস্যা তিথি দীপাবলী উৎসবের দ্বিতীয় দিন শাক্ত ধর্মের অনুসারীগণ শক্তি দেবী কালীর পূজা করেন।
আলোকসজ্জার মাধ্যমে অন্ধকারের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণার দিন। সকল অজ্ঞতা তমোভাবকে দীপের আলোয় প্রজ্বলিত করার দিন। কেউ বলেন মহালয়ায় যমলোক ছেড়ে যে পিতৃপুরুষগণ মর্ত্যে এসেছিলেন, তাঁদের পথ প্রদর্শনার্থে দিন আলোকসজ্জা বাজি পোড়ানো হয়, দরজা-জানালায় মোম বাতি দেওয়া হয় কেউ বা জ্বালায় আকাশপ্রদীপ।

ধনাগমের জন্য মানুষ করে ধনতেরস লক্ষ্মী-গণেশের পুজো। মূল উদ্দেশ্য একটাই। শ্রীবৃদ্ধি আর উন্নতি।

পশ্চিমবাংলায় অনেকের রীতি কালীপুজোর বিকেলে দীপাণ্বিতা লক্ষ্মীপূজো করে অলক্ষ্মী বিদেয় করা সংসারের শ্রীবৃদ্ধির আশায় লক্ষী, নারায়ণ আর ধনপতি কুবেরের পুজো পিটুলি বাটা দিয়ে নিপুণ হাতে তৈরী হয় তিন পুতুল.... সিঁদুর দিয়ে পিটুলির তৈরী লালরঙের লক্ষ্মী, নীলের গুঁড়ো দিয়ে নীল নারায়ণ, আর অপরাজিতা পাতা বাটা দিয়ে সবুজ কুবের কলার পেটোতে সেই পুতুল তিনটিরই আসলে পূজো হয় ঐদিন আর একটি কলার পেটোতে মাথা থেকে আঁচড়ানো চুলের নুড়ি, একটু গোবর আর একটা ভাঙা মোমবাতি রেখে তৈরী হয় অলক্ষী চাটাই পিটিয়ে, মোমবাতি জ্বেলে অলক্ষীকে বাড়ির বাইরে বের করে পূজো করে, লক্ষী, নারায়ণ আর ধনপতি কুবেরকে শাঁখ বাজিয়ে বরণ করে প্রতিষ্ঠা করা হয়

চাটাই বাজাতে বাজাতে বলা হয়,

"অলক্ষ্মী বিদেয় হোক, ঘরের লক্ষ্মী ঘরেই থাক্" আসলে কুললক্ষ্মীর পুজো এই দীপাণ্বিতা

প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী কার্তিকমাসের কৃষ্ণা ত্রয়োদশীতেই সমুদ্র থেকে উঠে এসেছিলেন ধ্বন্বন্তরী। তাই এই তিথির নাম হল ধনতেরস। তাই এই দিনটিতে ধনের উপাসনা করতে হয়। আর তার ঠিক পরেপরেই লক্ষ্মীর পুজো করতে হয়। সমুদ্রের ক্ষীরসাগর থেকে উঠে এসেছিলেন মহালক্ষ্মী। সেদিন নাকি ছিল কার্তিক অমাবস্যা। তাই লক্ষ্মীকে বরণ করে স্বর্গে ফিরিয়ে নেওয়ার অনুষ্ঠানটিতে আলোকমালায় সুসজ্জিত করা হয়েছিল স্বর্গকে। এই দিনে ধন-সম্পদের দেবী লক্ষ্মী বরদাত্রী রূপে ভক্তের মনোস্কামনা পূর্ণ করেন।
দীপাণ্বিতা লক্ষ্মীপুজোর ব্রতকথায় আবারো উঠে আসে লক্ষ্মীর মাহাত্ম্য
এক রাজার পাঁচ মেয়ে। একদিন তিনি সকলকে ডেকে জিগেস করলেন, তারা কে কার ভাগ্যে খায়? কনিষ্ঠা কন্যাটি ছাড়া প্রত্যেকেই সমস্বরে জানাল, রাজার ভাগ্যে তারা খায়। কিন্তু কনিষ্ঠা বলল সে নিজের ভাগ্যে খায়। আর মা লক্ষ্মী তার সহায়। সেই কথা শুনে রাজা অগ্নিশর্মা। ঠিক করলেন পরদিন ভোরে উঠে যার মুখ দেখবেন তার সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দেবেন। পরদিন রাজবাড়ির সামনে দিয়ে এক বামুন তার পুত্রকে নিয়ে যাচ্ছিল। তাকে ডেকে তিনি ছোটমেয়ের বিয়ে দিলেন। পুত্র রাজার জামাই হল বলে বামুন একাধারে খুশি আবার মহাচিন্তিত। রাজকন্যা তো মহানন্দে শ্বশুরবাড়ি চলল। অভাবের সংসার। মেয়েটি শ্বশুরকে বলল, রাস্তায় যা দেখবেন সঙ্গে করে নিয়ে আসবেন। বামুন একদিন একটি মরা কেউটে দেখতে পেল। বৌমার কথামত সেটি ঘরে নিয়ে এনে মাচায় তুলে রাখল। এবার সে দেশের আরেক রাজার ছেলের অসুখ করেছে। রাজবৈদ্য বলেছে মরা কেউটের মাথা আনলে ওষুধ তৈরী করতে পারে। সেইমত রাজা ঢেঁড়া পেটালেন। যে মরা কেউটের মাথা এনে দিতে পারবে সে যা চাইবে তাই দেবেন
সেই শুনে রাজকন্যা তখুনি সেই মরা কেউটের মাথাটা রাজার কাছে পাঠিয়ে দিল। আর সেই সঙ্গে তার শ্বশুরকেও বলে দিল, রাজা কিছু দিতে চাইলে যেন তিনি না নেন শুধু রাজার কাছে তার অর্জি হল একটাই। কার্তিক অমাবস্যায় রাজার রাজত্বের কোনো গ্রামে কেউ যেন ঘরে আলো না জ্বালায়। রাজকন্যার শ্বশুর তা জানিয়ে ফিরে এলেন খালি হাতে। অবশেষে কার্তিক অমাবস্যার রাতে রাজকন্যা নিজের ঘরে খুব জাঁকজমকের সঙ্গে লক্ষ্মী পুজো করল।নিজের বাড়ির চৌহদ্দিতে আলো জ্বেলে রাখল। মা লক্ষ্মী দেখলেন ঘুটঘুটে অন্ধকারে কেবল তাঁর ব্রতীর ঘরেই আলো জ্বলছে। তাঁর কৃপায় বামুনের ঘরে আর কোনো অর্থাভাব ইল না। অবস্থা ভাল হতে বামুন পুকুর কাটালেন। পুকুর প্রতিষ্ঠার দিন নিমন্ত্রিতদের মধ্যে রাজকন্যার বাবা ভূতপূর্ব রাজাও উপস্থিত। তিনি জানালেন তাঁর দুরবস্থার কথা। নিজের অহমিকায় তাঁর সর্ব নাশ হয়েছে। তিনি আজ ভিখারী। মেয়ে জানাল, "বাবা তুমি লক্ষ্মীপুজো কর। তুমি সেদিন রেগে গিয়েছিলে আমার ওপর। আজ দেখলে তো মা লক্ষ্মীর কৃপাতেই আমার সব হয়েছে"

২৯ সেপ, ২০২৩

বীরভূমের শিবমন্দির











পশ্চিমবাংলার বীরভূম জেলা শিবক্ষেত্রের অন্যতম স্থান। এখানকার দ্বাদশ শিবমন্দির নিয়ে এই প্রবন্ধের অবতারণা। 
  • জুবুটিয়ার জপেশ্বর
 
প্রান্তিক থেকে লাভপুর হয়ে কীর্ণাহার থেকে অনতিদূরেই জুবুটিয়া গ্রাম গেছিলাম এবার পৌষে। এখানকার জপেশ্বর মন্দির অতি প্রাচীন। গৌড়ের রাজা শশাঙ্কের দেওয়ান চক্রধরের অম্লশূল নিরাময়ের কারণে এই শিব মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সেই কারণে স্থানীয় মানুষজন জপেশ্বরকে খুব জাগ্রত বলে মনে করে। প্রাচীন শিব মন্দিরের গায়ে টেরাকোটার ভাস্কর্য এখনো অমলিন। তবে কালের ঝড়ঝাপটায় এবং বিধ্বংসী যবন শত্রুর অত্যাচারে অনেকাংশেই ক্ষতিগ্রস্ত। ২০০২ সালে প্রধান মন্দিরটি ভেঙ্গে পড়ে যায়। তদানীন্তন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় নিজের গ্রাম মিরিটি কীর্ণাহারেই। তাঁর আনুকুল্যে মন্দিরটির নতুনভাবে সংস্কার হয়। মন্দিরটি বিশাল এলাকা জুড়ে। আর রয়েছে সংলগ্ন বিশাল ঘাট বাঁধানো পুকুর।

  • সাঁইথিয়ার কলেশ্বর
 
 
সাঁইথিয়া শহর থেকে ১২ মেইল দূরে কলেশ্বর গ্রামে অবস্থিত প্রায় ১১০ ফুট উঁচু কলেশ্বর বা কলেশনাথ শিব মন্দির। প্রাচীন মুনিদের সাধনা ক্ষেত্র ছিল এটি। অতীতের পার্বতীপুর। এখনকার কলেশ্বর গ্রামটি সাঁইথিয়ার ময়ূরেশ্বর থানার অন্তর্গত । অনাদিলিঙ্গ শিব কলেশ্বরনাথ অতি প্রাচীন। শিবের নামেই গ্রামের নাম। পর্বত নামে এক ঋষি দেবী পার্বতীর তপস্যায় রত ছিলেন। আবার কারো মতে ধানঘড়া গ্রামের কলেশ ঘোষ পুজো করে শিব কে তুষ্ট করেন। তাই অমন নাম। 
সপ্তদশ  শতকের শৈব রাজা  রামজীবন রায়চৌধুরী মন্দিরের নির্মাতা। কিন্তু সময়ের স্রোতে ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় এই মন্দিরের সংস্কার করেন দ্বারিকানাথ দেব তপস্বী। বর্তমানের প্রধান মন্দিরটি বিশাল নবরত্ন আকৃতির।  মুর্শিদাবাদের রাজা ধীরেন্দ্রনাথ রায়ের  আর্থিক সহায়তায় মন্দির নির্মাণ হয়। প্রায় দু'মন ওজনের অষ্ট ধাতুর পার্বতী মূর্তি তিনি দান করেন। মন্দিরের পাশে পার্বতী মন্দির এবং শিবমন্দিরের অভ্যন্তরে অষ্ট্ধাতুর দুর্গামূর্তি আছে। এখানকার প্রচলিত প্রবাদ আজো লোক মুখে ছড়ায়ঃ
কুমারী পাবিরে তুই মনের মত বর
হৃদি ভক্তি রেখে কলেশনাথের উপোস কর।
স্থানীয় কিংবদন্তী বলে প্রাচীনকালে জঙ্গলাকীর্ণ এই অঞ্চলে ভয়ানক অসুরের অত্যাচার ছিল। কলাসুরের দাপটে সবাই থরহরিকম্প। কলাসুরের সুন্দরী কন্যা কলাবতী কে পত্নীরূপে লাভ করার জন্য আরেক অত্যাচারী বিল্বাসুর ব্যাকুল হলে যুদ্ধ বাধে কলাসুরের সঙ্গে। অবশেষে শিব পার্বতীর বরে সেই যুদ্ধ থামে এবং বিল্বাসুর কলাবতীকে বিবাহ করেন। রাঢ় সংস্কৃতি বিশেষজ্ঞ ডাঃ অমলেন্দু মিত্রের মতে ইন্দোমঙ্গোলীয় কৌলিয় জাতির থেকে কলেশ্বর গ্রাম সৃষ্টি হয়। এই কৌলিয় মোঙ্গলীয় জাতি ভারতে প্রবেশ করার পর শৈবধর্ম গ্রহণ করে। তাই রাঢ়বাংলায় শিবমন্দিরের এত আধিক্য। আবার পণ্ডিত মাধবাচার্যের মতে মানুষের কার্য তিন প্রকারঃ বিদ্যা, কলা এবং পশু। পূর্বের যোগী সাধকগণ কলা সংস্পর্শ মুক্ত হওয়ার কারণে সাধনা করেছিলেন এই অঞ্চলে। শিব তাই এখানে কলেশ্বর। কলেশ্বরের শুকদেব মিত্রের "কলেশনাথ-কলেশ্বর' পুস্তকটিতে পাওয়া তথ্য অনুসারে অন্য্যন্য অঞ্চলের মত কলেশনাথের শিবলিঙ্গটিও জঙ্গলের মধ্যে থেকে কুড়িয়ে পাওয়া যায়। কেল্শ নামক এক গোয়ালার গোরুর দুধে স্নান করে তা আত্মপ্রকাশ করে। 
 
  • বক্রেশ্বর



বীরভূমের সতীপিঠ গুলির অন্যতম হল বক্রেশ্বর।
 
পানাগড়-মোরগ্রাম হাইওয়ের থেকে বেরিয়ে ঘুরে আসা যায় বক্রেশ্বরে যেখানে সতীর তৃতীয় নয়ন বা  'মন' পড়েছিল । বক্রেশ্বর নদীর ওপর "নীল-নির্জন' ড্যাম যা একটি ট্যুরিষ্ট স্পটও বটে । এই জলাধারটি বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুত কেন্দ্রের জল সরবরাহ করে ।
এবার আসি বক্রেশ্বরের মাহাত্ম্যে । ব্রহ্মাণ্ডপুরাণে এই তীর্থস্থানকে সিদ্ধপীঠ বলা হয়েছে। এবং পীঠমালা মহাতন্ত্রে এর স্পষ্ট উল্লেখ আছে। 

বক্রেশ্বরে মনঃ পাতু দেবী মহিষমর্দিনী ভৈরবো বক্রনাথস্ত নদীতত্র পাপহরা।।   

সুজাতা ও কহোর মুনির ছেলে সুব্রত। মায়ের গর্ভে থাকাকালীন সে শুনে শুনে বেদ শাস্ত্রে জ্ঞান লাভ করেছিল। একদিন সে তার পিতা কহোর মুনির বেদপাঠে ভুল ধরিয়ে দিলে অপমানিত মুনি ক্রোধবশত গর্ভস্থ পুত্র কে অভিশাপ দেন। পুত্রের অষ্টাঙ্গ বিকৃত হয়ে দেহে আটটি ভাঁজ পড়ে। এমন প্রতিবন্ধী ছেলের নাম হয় অষ্টাবক্র। 
আবার কারো মতে সত্যযুগে বৈকুন্ঠে আয়োজিত অযোনিসম্ভবা লক্ষ্মীদেবীর স্বয়ংবরা সভায় আমন্ত্রিত মহর্ষিদের সম্মুখে ইন্দ্রের দ্বারা সুব্রতমুনি অপমানিত হন। সুব্রতমুনির ক্রোধাগ্নি দমন হলেও তাঁর সেই ক্রোধ কবলিত দেহে আটটি ভয়ংকর ভাঁজ পড়ে যার জন্য তার নাম হয় অষ্টাবক্র মুনি । 
সেই যুগে জনক রাজার রাজসভায় আমন্ত্রিত হলেন শাস্ত্রজ্ঞ এই অষ্টাবক্র সুব্রত মুনি। রাজা বললেন জ্ঞান শোনালে পুরস্কৃত করবেন। সেখানে তাঁর পিতা কহোরও উপস্থিত। পিতা কে হারিয়ে দিলেন রাজার সভা পন্ডিত। কহোর মুনি নিযুক্ত হলেন সেবার কাজে। দ্বাদশ বর্ষীয় জ্ঞানী অষ্টাবক্র পিতার এহেন পরাজয়ে অপমানিত হলেন। বাবা কে মুক্ত করতে রাজার কাছে গিয়ে উপস্থিত সব পন্ডিতদের তর্কে পরাজিত করলেন। কহোর মুনি মুক্ত হলেন। খুশি হয়ে পিতা সন্তান কে বললেন " যে নদী সমান গতিতে বয়ে চলে তাঁকে বলে সমঙ্গ  নদী। সেই নদীর জলে স্নান করলে তোমার সকল অঙ্গ বিকৃতি দূর হবে।" পুত্র নদী খুঁজতে খুঁজতে হাজির হলেন ডিহি নামক স্থানে। এই ডিহি আজকের বক্রেশ্বর। 

আবার কারো মতে এই অষ্টাবক্র সুব্রত মুনি এখানকার জঙ্গলে  বহুদিন শিবলিঙ্গের সন্ধান পেয়ে  তপস্যা করার পর শিবের আশীর্বাদে মুক্তি পান । তাই এই বক্রেশ্বর শিব বা বক্রনাথ খুব জাগ্রত । বর্তমান মন্দির ৭০০ বছরের প্রাচীন। নির্মাতা রাজা নরসিংহ দেব।  প্রস্তরফলক থেকে জানা যায় যে রাজনগরের রাজার মন্ত্রী দর্পনারায়ণ সুলতানি আমলে ক্ষতিগ্রস্ত মন্দির কে  ১৭৬১ সালে আবার সংস্কার করেন। মন্দিরে পিতলের ধাতু মণ্ডিত শিলাই হলেন স্বয়ং অষ্টাবক্র মুনি। ঠিক পাশেই আরেকটি ছোটো শিলা হল বক্রনাথ শিবের। দেবী মন্দিরের গায়ে বটুক ভৈরবের অবস্থান। রয়েছে আরো ৫টি শিবলিঙ্গ। কুবেরেশ্বর, সিদ্ধেশ্বর, জ্যোতিরলিঙ্গেশ্বর, কালারুদ্রেশ্বর ও জম্ভশ্বর। রয়েছে দশটি উষ্ণ প্রস্রবণ আছে যাদের জল গড়ে ৬৫ থেকে ৬৬ডিগ্রি সেলসিয়াস । বক্রেশ্বরের মূল মন্দিরটি ঊড়িষ্যার প্রাচীন রেখাদেউল রীতি অনুসারে তৈরী । এই সতীপিঠের আরাধ্যা দেবী মহিষাসুরমর্দ্দিণি এবং পীঠাধীশ ভৈরব হলেন বক্রনাথ স্বয়ং ( মতান্তরে বটুক ভৈরব) । মূলমন্দিরের পশ্চিমাংশে একতলা দালানরীতির মন্দিরের মধ্যেই প্রস্তরবেদীর ওপরে অধিষ্ঠিতা দেবী । অষ্টধাতুর অসামান্যা এই অধুনা মূর্তিটি সাম্প্রতিককালের । পূর্বে পরপর দুবার দুটি ধাতব মূর্তি লুন্ঠিত হয়ে যায় । ঐ বেদীমূলের গহ্বরে সতীমায়ের শিলীভূত ভ্রূমধ্য স্থান বা ইন্দ্রিয় শ্রেষ্ঠ মন পতিত হয়েছিল দক্ষযজ্ঞের সময় । 
মন কোনো স্থুল  জাগতিক বস্তু বা অঙ্গস্বরূপ নয়। তাই পীঠমাহাত্ম্য অনুযায়ী দেবীর ভ্রূ যুগলের মধ্যিখানের অংশ পড়েছিল এখানে যাকে মন রূপে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রকৃতির অদ্ভুত খেয়ালে এখানকার পাশাপাশি দুটি কুণ্ডের একটিতে উষ্ণ এবং অন্যটিতে শীতল জল। মোট আটটি কুণ্ড আছে এখানে। ক্ষারকুণ্ড, ভৈরবকুণ্ড, অগ্নিকুণ্ড, সৌভাগ্যকুন্ড,  জীবিতকুণ্ড, ব্রহ্মাকুণ্ড, শ্বেতগঙ্গা এবং বৈতরণী। মহাতীর্থ বারাণসী যেমন বরুণা ও অসি নদীর দ্বারা বেষ্টিত তেমনি বক্রেশ্বরও পাপহরা ও বক্রেশ্বর নামে দুই পুণ্যতোয়া নদীর মাঝে।  

আপাত অনাড়ম্বর মহিষমর্দিনি মায়ের মন্দিরে দাঁড়ালে বেশ ছমছমে অনুভূতি হয় ।কত প্রাচীন এইসব মন্দির তা মন্দিরের চেহারা দেখলেই বোঝা যায় । বক্রেশ্বরের উষ্ণপ্রস্রবণে স্নানের ব্যাবস্থাও আছে । 
 

  • কাঞ্চীশ্বর
 
বোলপুরের প্রান্তিক থেকে কঙ্কালীতলা হল বীরভূমের পাঁচ সতীপিঠের অন্যতম। এই সতী পিঠের অন্য নাম কাঞ্চীপিঠ। উত্তরবাহিনী কোপাই নদী, শ্মশান আর কুন্ডটি সব মিলিয়ে বেশ সুন্দর জায়গা। প্রাচীন মন্দির টি সংস্কার হয়েছে নতুন রূপে। সেইসঙ্গে নতুন কলেবরে দেখতে পাই রুরু ভৈরবের মন্দিরটি। রুরু ভৈরব কঙ্কালী দেবীর পুরুষ। অষ্টাঙ্গ ভৈরবের অন্যতম। আমাদের দিকপাল। সর্বদা রক্ষা করেন। 

পীঠনির্নয়তন্ত্রে পাই  

কাঞ্চীদেশে চ কঙ্কালো ভৈরবো রুরু নামকঃ দেবতা দেবগর্ভাখ্যা 

অর্থাত কাঞ্চীদেশে দেবী দেবগর্ভার কঙ্কাল পতিত হয়েছিল।  এই দেবীর ভৈরবের নাম রুরু। 
মহাদেবের সবচাইতে ক্রোধিত রূপ নাকি এই রুরু ভৈরবের । ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর তাঁর অন্নদামঙ্গল কাব্যে এই সতী পিঠ কে কাঞ্চীপিঠ বলেছেন। 

কাঞ্চী দেশে পড়িল কাঁকালি অভিরাম।
বেদগর্ভা দেবতা ভৈরব রুরু নাম।।

দুয়ে মিলে ধরে নেওয়া যায় সতীর দেহত্যাগের  সময় বিষ্ণু চক্রে খণ্ডিত সতীর দেহাংশের কাঁখাল বা কোমরের অংশ কিম্বা কঙ্কাল পড়েছিল এই কুন্ডে। তাই একান্ন পীঠের একটি পীঠ এটি। কঙ্কালী মায়ের ভৈরব হলেন রুরু যার অপর নাম কাঞ্চীশ্বর।  স্বয়ংভূ লিঙ্গটি কালাপাহাড়ের অত্যাচারে বিনষ্ট । বর্তমানে গৌরীপট্টটি বর্তমান।
ইতিহাস বলছে রাজা রাজেন্দ্র চোল রাঢ়বঙ্গে রণশূর কে পরাজিত করে মহীপালের বিরুদ্ধে অভিযানের আগে কোপাই নদীর তীরে শিবির সন্নিবেশ করেছিলেন। তাই এই স্থানের নাম কাঞ্চীশ্বর।  

আমাদের চতুর্দিকে অবস্থান করেন দিকপাল অষ্টাঙ্গ ভৈরব যাঁরা আমাদের জগন্মাতার তন্ত্রধর্মের অতন্দ্র প্রহরী। এরা  আমাদের সীমান্ত প্রহরী। ভৈরবরা ভীতিজনক, কারণ তাঁরা শত্রুবিনাশক। ভৈরব শব্দের ব্যুৎপত্তি হল, যিনি ভীষণ রব করেন।
আমাদের পূর্বদিক রক্ষা করেন অসিতাঙ্গ ভৈরব ও রুরু ভৈরব। দক্ষিণ দিক রক্ষা করেন চণ্ড ভৈরব ও ক্রোধ ভৈরব। পশ্চিম দিকের প্রহরী হলেন উন্মত্ত ভৈরব এবং ভয়ঙ্কর ভৈরব। উত্তর দিকের প্রহরী হলেন কপাল ভৈরব এবং ভীষণ ভৈরব। এছাড়া মধ্যস্থল রক্ষায় আছেন সংহার ভৈরব।

  • নলহাটির যোগেশ  
নলহাটির ললাটেশ্বরী মন্দির একান্নপীঠের অন্যতম শক্তিপীঠ। নলহাটি স্টেশনের অনতিদূরেই একটি টিলার ঢালে এই পীঠস্থান। মন্দিরের পিছনে পাহাড় আর মন্দিরের সিঁড়ির মুখেই ললাটেশ্বরী দেবী কালিকা এবং ক্ষেত্রপাল ভৈরব যোগেশের অবস্থান। পীঠমালাতন্ত্রে বলে সতীর কনুইয়ের নিম্নভাগ বা নলা (সংস্কৃত শব্দ নলক থেকে উত্পত্তি) পড়েছিল এখানে। কেউ বলে ললাট আবার কারো মতে কন্ঠনালী পড়েছিল। 

নলহাট্যাং নলাপাতো যোগীশো ভৈরবস্তথা তত্র সা কালিকা দেবী সর্বসিদ্ধিপ্রদায়িকা ।। 

কারো মতে মন্দিরের প্রায় দু কিমি উত্তরপশ্চিমে হরিটোকা গ্রামের শিবলিঙ্গটিই আসল যোগেশ ভৈরবের। আবার ঐতিহাসিকদের মতে নিষাদরাজ্য ছিল পৌরাণিক নলের বাসভূমি। নলহাটির টিলাতে সীতার পদচিহ্ন এবং চুল্লীর পোড়া পাথর এখনো আছে। বনবাসকালে রামসীতা এই অঞ্চলের পাহাড়ে কিছুদিন বাস করেছিলেন বলে তাদের বিশ্বাস। এই নলহাটেশ্বরী মূলত নলদের মুখোস বা মুণ্ড পূজার অন্যতম কেন্দ্র ছিল। 
 

  • ফুল্লরাতলার বিশ্বেশ 
বোলপুর থেকে লাভপুরে নেমে যাওয়া যায় অথবা বোলপুর থেকে প্রান্তিক-কোপাইয়ের পথ ধরে ও যাওয়া যায়। মুসলমান যুগে লাভপুর এক প্রসিদ্ধ বাণিজ্য কেন্দ্র হয়ে ওঠে। ব্যবসায় প্রভূত লাভ হওয়ার কারণে এর নাম লাভপুর। সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাসস্থান। লাভপুর স্টেশনের উত্তরপুবে ফুল্লরাপীঠ। রাঙামাটীর পাথুরে টিলার ওপরে মায়ের মন্দির। নীচে প্রবাহিত উত্তরমুখী কোপাই নদী। 
পীঠনির্ণয়তন্ত্রে আছে
অট্টহাসেচোষ্ঠপাতো দেবী সা ফুল্লরা স্মৃতা বিশ্বেশভৈরবস্তত্র সর্বাভীষ্ট প্রদায়কঃ।।  

সতীর দেহত্যাগের পরে তাঁর খণ্ডিত ৫১ দেহাবশেষের ৫টি পড়েছিল আমাদের বীরভূমে। এর মধ্যে অন্যতম হল  ময়ূরাক্ষী নদীর সমতলে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মস্থান লাভপুর যার অনতিদূরেই ফুল্লরা বা সতীপীঠ অট্টহাস । এখানে সতীমায়ের অধর ওষ্ঠ পড়েছিল । মন্দিরের পাশে বিরাট পুকুর । অট্টহাসে দেবী ফুল্লরার ভৈরব হলেন বিশ্বেশ । এখানেও প্রবাহিত উত্তরমুখী কোপাই নদী।শ্রী শ্রী চন্ডীতে আছে অসুর নিধনের সময় দেবী দুর্গা অট্টহাসিতে আকাশ বাতাস ভরিয়ে দিয়েছিলেন। কথিত আছে রামচন্দ্র যখন দুর্গাপুজো করেছিলেন তখন হনুমান ১০৮টি নীলপদ্ম ফুল্লরার সংলগ্ন পুকুর থেকে সংগ্রহ করে দিয়েছিলেন রামচন্দ্রের পূজার জন্য । প্রতিবছর নাকি দুর্গাপুজোর আগে সেই জলাশয়ের উত্তর-পূর্ব দিক থেকে ভেসে আসে একটি অদ্ভুত শব্দ। যা শোনার পরই শুরু হয় দেবীর সন্ধিপুজো।  দেবীর অধরোষ্ঠ পড়েছিল সেই তীর্থের তেমন নাম অট্টহাস সেই অর্থে বেশ কাব্যিক বটে। কারো মতে বশিষ্ট মুনির পুত্র অট্টহাস ছিলেন এই সতীপীঠের প্রথম সাধক এবং তাঁর নামানুসারেই জায়গাটির তৎকালীন নাম ছিল অট্টহাস। কেউ বলে অট্টহাস এবং ফুল্লরাতলা ভিন্ন স্থান। কারো মতে দুটি  নাকি এক‌। দেবীর এখানে কোন বিগ্রহ নেই । মন্দিরের মধ্যে রয়েছে টকটকে লাল রঙের প্রকাণ্ড এক প্রস্তরখন্ড। সেই পাথরের সামনের ভাগটা ওষ্ঠাকৃতির। সেখানেই নিত্য পুজো হয়। এখানে দেবীর ভোগের অন্যতম পদ হল মাছের টক। 
  • নন্দীকেশ্বর 

বীরভূমের সাঁইথিয়ার অন্যতম নদী ময়ূরাক্ষীর তীরে এ জেলার অন্যতম সতীপীঠ নন্দীপুর।
পীঠনির্ণয় তন্ত্রে বলে 


হারপাতো নন্দিপুরে ভৈরব নন্দিকেশ্বরঃ
নন্দিনী সা মহাদেবী তত্র সিদ্ধিমাবাপ্নুয়াত।।  


এখানে মহাদেবী হলেন নন্দিনী বা নন্দিকেশরী এবং এর ভৈরব ক্ষেত্রপাল নন্দিশ্বর বা নন্দিকেশ্বর।  অতি সাধারণ মায়ের মন্দির দালান রীতিতে নির্মিত ছায়া ঘেরা বটগাছের নীচে এই মন্দির। দেবী এখানে মহাশক্তি দুর্গা ধ্যানে পূজিতা হন। প্রবেশপথের ডানদিকে পীঠভৈরব নন্দিশ্বরের অবস্থান একতলার দালান ঘরে।  দেবীর কন্ঠের অস্থি পড়েছিল এখানে। নিত্যভোগের আয়োজন এবং ধ্যানগম্ভীর পরিবেশে দাঁডালেই বেশ মাহাত্ম্য অনুভূত হয়।   


  • মল্লেশ্বর 
বাংলার বীরভূম । সীমানায় ঝাড়খন্ড। সেখানেই ময়ূরাক্ষী নদী। কাছেই  মল্লারপুর গ্রাম। মহাদেবের নাম মল্লেশ্বর। বীরভূমের অন্যতম শিব ভূমি। 
"বীরভূমৌ সিদ্ধিনাথ রাঢ়ে চ তারকেশ্বর" এটি হল মল্লেশ্বর  শিবের মন্ত্র। সঙ্গে দ্বাদশ শতাব্দীর সিদ্ধেশ্বরী শিলা মূর্তি। মল্লেশ্বরের শিবগঞ্জের মন্দির-পল্লি তে ঢুকলেই এখনো মহাভারতের গল্প জীবন্ত হয়ে ওঠে। 
চারিদিকে প্রাচীর দিয়ে ঘেরা এক বিরাট চৌহদ্দির মধ্যে মল্লেশ্বর শিব মন্দির ছাড়াও রয়েছে লাইন করে একের পর এক সব প্রাচীন  মন্দির। বেশিরভাগই ছোটো ও বাংলার চারচালা রীতিতে তৈরি। উত্তর দিকে দোতলা প্রধান তোরণদ্বারের ওপর নহবতখানা। আগে বোধহয় সানাই বাজত। শিববাড়ির ভেতরের মন্দিরগুলির গায়ে টেরাকোটার নানা অলংকরণ। অজস্র দেবদেবীর মূর্তি। এখনও অক্ষত। এই শিবপল্লি দ্বাদশ শতাব্দীর। 
সিঁদুরে লেপা সেই পাথরের সিদ্ধেশ্বরী দেবীর মুখমণ্ডলে এখনও উজ্জ্বল হয়ে আছে ত্রিনয়ন। সব শক্তি পীঠে  যেমন থাকে একজন পুরুষ আর একজন প্রকৃতি। তেমনি এখানে এই সিদ্ধেশ্বরী দেবী বুঝি মল্লেশ্বর শিবের শক্তিস্বরূপা। 

মল্লারপুরের ঘন জঙ্গলে এক মেষপালকের অসামান্য সুন্দরী মেয়ে পদ্মিনীর সঙ্গে স্থানীয় এক  সাধুর বিয়ে হয়। তাদের সন্তান মল্লনাথ। সবই জনশ্রুতি । একদিন গভীর বনের মধ্যে গোরু চরাতে গিয়ে মল্লনাথ চমকে ওঠে। একটি দলছুট গরু বটগাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে দুধ দিচ্ছে আপনা আপনি। প্রকান্ড সেই ঝুরি নামা প্রাচীন বট এখনো আছে।  কয়েক দিন পরপর একই জিনিষ দেখে মল্লনাথ তার সেই সন্ন্যাসী বাবা কে নিয়ে সেখানে উপস্থিত হতেই তার বাবা বলল গ্রামের আরও লোকজন নিয়ে জায়গাটা খুঁড়তে। মাটি খুঁড়তে খুঁড়তে উদ্ধার হল ঘড়া ঘড়া গুপ্তধন। মাটি খুঁড়তে খুঁড়তে তার কিছুপরেই কোদাল আর পাথরের ঘর্ষণে বিশাল শব্দ। হঠাত আগুন জ্বলে উঠতেই সবাই চমকে উঠল। মল্লনাথ নাকি দৈববাণী শুনতে পেয়েছিল তখনি। মাটির নীচে ছিল মহাভারতের রাজা জয়দ্রথের পূজিত শিব বাবা সিদ্ধিনাথ। বাবা সিদ্ধিনাথই এখানকার এই মল্লেশ্বর শিব। পাথরের শিলায় এখনও সেই কোদালের ক্ষতচিহ্ন আছে। আর সেই গুপ্তধনের মালিক হয়েছিল মল্লনাথ যার নামেই এই জায়গার নাম মল্লারপুর। 
মহারাজ মল্লনাথ সিংহই এই জনপদের উন্নয়ন করে রাজধানী নির্মাণ করান এবং শিব মন্দিরের সংস্কার করেন, তাই জনপদের নাম মল্লারপুর এবং শিবের নাম 'মল্লেশ্বর' হয়েছে।
পাশেই ফতেপুর গ্রামে অনেক প্রাচীন কালে এক জনজাতির বাস ছিল। এই দেখো না পড়ে। মল্লনাথের জন্মের কথা সব লেখা আছে পাথরে। 
মোট ২৩টা মন্দির এই শিব পল্লী তে। একটি মন্দিরে সিদ্ধেশ্বরী মূর্তি বাকি সব শিব মন্দির।
এই গ্রামের পুবদিকের জঙ্গলে গেলে শিবপাহাড়ি নামে এক পাহাড় আছে। পাণ্ডবরা বনবাসকালে যখন কাম্যক বনে বাস করছিলেন তখন মাতা কুন্তী এই শিব পুজো করতেন। দুর্যোধনের বোন দুঃশলার স্বামী রাজা জয়দ্রথ গিয়েছিলেন দ্রৌপদীকে হরণ করতে। ভীমের হাতে অপমানিত হয়ে জয়দ্রথ তখন কঠোর তপস্যা শুরু করেন।সিদ্ধিনাথ শিব শেষ পর্যন্ত জয়দ্রথের তপস্যায় তুষ্ট হয়ে তাঁকে বর দেন এবং বর পান এমনি যে কেউ তাঁকে কোনোদিনও যুদ্ধে হারাতে পারবে না। 

  • মদনেশ্বর  (কোটাসুর, সাঁইথিয়া)