১৩ ফেব, ২০১৫

ভালোবাসার রাজপ্রাসাদে




সুলতান লিখতেন কবিতা । রাণী গাইতেন গান । কবিতা আর গানের মধ্যে দিয়ে ভালোবাসার এক গল্প শুনতে মধ্যপ্রদেশের মান্ডু যাওয়া আমাদের । এখনো মধ্যপ্রদেশের মালওয়ার চারণকবিরা গেয়ে থাকেন কবি এবং রাজপুত্র বাজ বাহাদুর আর তার হিন্দুরাণী রূপমতীর প্রণয় গাথা ।




হোসং শাহের আমলে মান্ডু তার অর্থ, প্রতিপত্তি এবং ঐশ্বর্যে খ্যাতি লাভ করে । অনেক হাত বদলের পর ১৫৫৪ সালে বাজ বাহাদুর ক্ষমতায় আসেন । বাজ বাহাদুর ছিলেন মান্ডুর শেষ স্বাধীন সুলতান । সঙ্গীতের প্রতি তার ছিল অকুন্ঠ ভালবাসা । কুমারী রূপমতী ছিল এক অতি সাধারণ হিন্দু রাজপুত ঘরের অসাধারণ রূপসী তনয়া । তার গলার স্বরে ছিল এক অনবদ্য মিষ্টতা যা আকৃষ্ট করেছিল বাজ বাহাদুরকে । একদিন শিকারে বেরিয়েছিলেন বাজবাহাদুর । বাগাল, রাখাল বন্ধুদের সাথে রূপমতী গান গেয়ে খেলে বেড়াচ্ছিলেন সেই বনে । সুলতান তাকে দেখে তার সাথে রাজপুরীতে যেতে বললেন এবং তাকে বিয়ে করবেন জানালেন । রূপমতী একটি ছোট্ট শর্তে সুলতানের রাজধানী মান্ডু যেতে রাজী হলেন । রূপমতী রাজার প্রাসাদ থেকে কেবলমাত্র নর্মদা নদীকে দর্শন জানাবার বাসনা জানালেন । বাজ বাহাদুর সম্মত হলেন । সুলতান তার হবু বেগম রূপমতীর জন্য পাহাড়ের ওপরে বানালেন এক ঐশ্বরীয় রাজপ্রাসাদ যার নাম রূপমতী প্যাভিলিয়ন এবং যার ওপর থেকে রূপোলী সূতোর এক চিলতে নর্মদাকে রোজ দর্শন করে রাণী তবে জলস্পর্শ করতেন । নর্মদা ঐ পথে এঁকে বেঁকে পশ্চিম অভিমুখে আরবসাগরে গিয়ে পড়েছে । রাণীর জন্য তৈরী হল পুণ্যতোয়া নর্মদার জলে রেওয়া কুন্ড । হিন্দু এবং মুসলিম উভয় রীতি মেনে বিবাহ সম্পন্ন হল তাদের কিন্তু পরিণতি সুখকর হলনা । মোঘল সম্রাট আকবর দিল্লী থেকে অধম খানকে মান্ডুতে পাঠালেন শুধুমাত্র মান্ডু দখল করতেই নয় রূপমতীকে ছিনিয়ে আনতে । বাজ বাহাদুরের ছোট্ট সেনাবাহিনী পারবে কেন সম্রাট আকবরের সেনাদের সাথে ? বাজ বাহাদুর ভয়ে চিতোরগড়ে পালিয়ে গেলেন রাণীকে একা ফেলে রেখে । রূপমতী সেই খবর পেয়ে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেন । কবিতা আর গানের মধ্যে দিয়ে ভালোবাসার এক রূপকথার ভয়ানক পরিসমাপ্তি ঘটল । এখনো রূপমতী প্যাভিলিয়নে হয়ত বা ঘুরে বেড়ায় রূপমতীর অতৃপ্ত আত্মা । চুপকথার চিলেকোঠায় চামচিকেরা আজো শুনতে পায় তার পায়ের নূপুরের শব্দ । দেওয়ালে প্রতিধ্বনিত হয় একটাই শব্দ যার নাম মেহবুবা । এখনো রাজপ্রাসাদের মধ্যে সেই ক্যানাল দিয়ে কলকল করে জল বয়ে চলেছে অবিরত । নর্মদাও রয়ে গেছে আগের মত শুধু রূপমতীই পারলেন না এই মহল ভোগ করতে । বাজ বাহাদুর রেওয়া কুন্ড নামে একটি জলাধার বানিয়েছিলেন তাঁর প্রিয়তমা পত্নী রূপমতীর জন্য । বাজবাহাদুরের প্রাসাদ এবং রূপমতী প্যাভিলিয়ন এর আফগান স্থাপত্য চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায়না। 
 

মান্ডু দেখা শেষ হল কিন্তু গাইডের বলা রূপমতী আর বাজ বাহাদুরের প্রেমের গল্প লেগে রয়ে গেল কানে । কিছুটা প্রতিধ্বনি, কিছুটা উদ্বায়ী আবেগ, কিছুটা এলোমেলো চিন্তার জটে সেই কাহিনী হোটেলে ফিরে এসে লিপিবদ্ধ করলাম ।