১০ আগ, ২০২১

ভাঙা আয়না / ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়

  



ভাঙা আয়না  

ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় 

(১)

সল্টলেকের বহুতল অফিসবিল্ডিং টা অনেক কষ্ট করে মনে পড়েও পড়ে না তন্ময়ের। বিশাল লম্বা কাচের দেওয়ালের পাশেই ছিল তার ডেস্ক। পূর্ব শহরতলীর বেশ সুন্দর স্কাইভিউ পেত সেখান থেকে। কাজের ফাঁকে চোখের আরাম হত নীল-সবুজের মাখামাখি দেখে। 

তন্ময়ের জীবনটা ওলটপালট হয়ে আছে এখন। সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের এক কেবিনের মধ্যে সে । কখনও বিছানায় বসে থাকে হাঁটু মুড়ে অথবা শুয়ে। ঘর অন্ধকারই বেশী ভালো লাগে তার। উল্টোদিকের দেয়ালের ওপর কোথাও থেকে একটা  তির্যক আলোর রেখা উঁকি মারে। তন্ময়ের আলো ভালো লাগেনা। তার চোখ  আলোর দিকে নয়। নিজের হাতের আঙ্গুলগুলো বারবার এক দুই তিন করে গুনছে আর হিসেব ভুল হয়ে যাচ্ছে। একবার সামনের দিকে গোনে তো আরেকবার উল্টোদিক থেকে। তন্ময়ের বয়স তিরিশের কমই তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে আন্দাজ করা মুস্কিল। খোঁচা খোঁচা দাড়িতে ঢাকা মুখ, উসকোখুসকো চুল। পরনে স্ট্রাইপড নীল শার্ট আর নীল পাজামা। হাসপাতালের  রুগীদের ড্রেসকোড যেমন হয় আর কি। 

দুহাতের দশটি আঙ্গুল বারবার এক দুই তিন করে গুণেই চলেছে তন্ময় আর হিসেবে কেবলই ভুল হয়ে যাচ্ছে। হাতের নখ বেড়েছে বেশ। দেখতে পায়না তন্ময় সেসব। 

মাঝেমাঝে নিজের মনেই বকে চলে অসংলগ্ন সংলাপ। গোনাতে খেই হারিয়ে গেলেই মনে পড়ে পুরনো কথা। আবছা স্মৃতি অফিসের। সেই নীল-সবুজ দৃশ্যপট। ল্যাপটপের কিবোর্ডে ঝড় তোলা সেই শব্দ। আবার হারিয়ে যায় সব। এর মধ্যেই সেই দেওয়ালের ওপর অস্বস্তিকর আলোর রেখা। তা বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই  ক্ষীণ হতে থাকে প্রতিদিন। একইভাবে। একইসময়ে। সে হুঁশ নেই তন্ময়ের। ঘড়ির সঙ্গে অনেকদিন কোনও সম্পর্ক নেই তার। 

কেউ যেন কেবিনের দরজা খোলে। সেই শব্দে চেয়ে দেখে তন্ময়। একজন মধ্যবয়স্কা নার্স এগিয়ে আসেন। তাঁর বুকে স্টিলের পাতে ইংরেজীতে নাম লেখা "অলকা"। পড়তে পারল তন্ময়। কিন্তু তাঁকে দেখেও না দেখার ভান করে। নিজের মনে আঙুল গোনায় ব্যাস্ত হয়ে পড়ে। অলকার চোখে পড়ে তন্ময়ের হাতের নখগুলো। ভাবেন, কেটে দিতে হবে বুঝিয়ে সুঝিয়ে। 

অলকার খুব পছন্দের কর্মস্থল এই সুপারস্পেশ্যালিটি হাসপাতালের মানসিক নিরাময় কেন্দ্রটি। 

তন্ময় কে মৃদু স্বরে ডাকলেন নাম ধরে। নাহ! কোনও ইচ্ছেই নেই সাড়া দেবার। এবার আরও কাছে গিয়ে তার মাথার চুলে হাত দিলেন অলকা। 


তন্ময় তাঁর মুখের দিকে চেয়ে রইল কিছুক্ষণ। 

অলকা বললেন, খেতে যাবে আমার সঙ্গে? অনেক বেলা হল তো। 

তন্ময় বুঝে উঠতে পারেনা, কোথায় যেতে হবে তাকে। কেনই বা খেতে হবে? খিদে তো পায়নি তার। 

অলকা বললেন, না কি এখানেই খাবার দিতে বলব? 

তন্ময় ভাবে, এখানে? খাটের ওপরে বসে রোজ খায় সে? মনে করতে পারেনা। 

অলকা বললেন, কি খেতে ইচ্ছে করছে বল আমাকে। 

তন্ময় বলে সেই বিস্কিট টা? যেটা অফিসে খেতাম রোজ। একটা কৌটোয় রাখা থাকত আমাদের ডেস্কের পাশে। 

অলকা বললেন, কি বিস্কিট? ক্রিম দেওয়া? চকোলেট না কি নোনতা ক্র্যাকার? 

তন্ময় বলল, না, না মোটা মোটা। 

অলকা বললেন, বুঝেছি। কুকিজ? 

তন্ময় বলল, তুমি কি করে জানলে? 

আমাকে সব জানতে হয়। বুঝেছ? আমারও ঘরে তোমার বয়সী একজন ছিল  কিনা। তারও পছন্দ ছিল এইসব। বলে হাসিমুখে তন্ময়ের অবাধ্য  চুলগুলো ঘেঁটে মাথার ওপর পাতিয়ে দিলেন। তন্ময়ের আবছা মনে পড়ল মায়ের কথা। এমন করেই দিত তার মা। 

অলকার ব্যাগে সবসময় একটা করে কালোজিরে দেওয়া বেকারী বিস্কিটের প্যাকেট রাখা থাকে। মনে পড়তেই সেটি এনে তন্ময়ের হাতে ধরিয়ে দিলেন তিনি। খাবে নাকি তন্ময়? 

খুব খুশিতে তন্ময় হাত বাড়িয়ে দিল। আপাতত আঙুল গোনার থেকে নিষ্কৃতি পেল ছেলেটা। মনে মনে ভাবেন অলকা। কি গুণে চলে সে অবিরাম? সেদিন দুপুরে তন্ময়ের মুখোমুখি সেই ঘরেই বসে লাঞ্চ সারলেন দুজনেই। তন্ময়ের চোখেমুখে বেশ পরিতৃপ্তির চিহ্ন দেখলেন অলকা। 

ভাবলেন, কোথা থেকে কি হয়ে যায়! এই ছেলের আজ কত আনন্দে থাকার কথা। কী  ই বা এমন বয়স তার। মেদিনীপুরের গ্রামের ছেলে। বাবা, মায়ের সঙ্গে বড় হয়ে পড়াশুনো করে মোটের ওপর কলকাতায় একটা ভালোই চাকরি জুটিয়েছিল।এই কদিনেই তাঁর বেশ মায়া পড়ে গেছে ছেলেটার ওপর। 

 

অলকা ভালোই বোঝেন যৌবনে পদার্পণ করা ছেলেপুলের মনস্তত্ত্ব। খুব সেন্সটিভ ইস্যু এসব পেশেন্ট কে ডিল করা। 

(২) 

এখানে ভর্তি হবার দিনেই তন্ময়ের বাবা দিয়ে গেছেন একটা ডায়েরি। সেটির ওপর অলকা কে নজর দিতে বলেছেন ডাক্তারবাবু। কাজের ফাঁকে সময় পেলেই অলকা চোখ রাখছেন ডায়েরির পাতায়। 


অলকার চোখের সামনে সেই ডায়েরী খানা খোলা । একের পর এক পাতা উলটে চলেন তিনি । স্তম্ভিত হয়ে যান আর ভাবেন জগতে এত সৃষ্টিশীল মানুষের মধ্যে এই ছেলেটিও তো নাম করতে পারত । কী অপূর্ব হাতের লেখা! কী অপূর্ব কবিতা লেখে । দু-এক লাইনের ফাঁকে ফাঁকে নীল পেন দিয়ে আবার ছোট্ট ছোট্ট ছবিও তার হাতের । অলকার ঘুম পালিয়ে গেল । 

কোথাও লেখা, 

আমি কেমন জানি ফুরিয়ে আসছি মা। কেন এমন হল আমার? 

এতো ডায়েরীর শেষের দিকের লেখা । এবার অলকা পাতা উল্টে সামনের দিকে আসেন।

 

একটা পাতায় লেখাঃ

উফ্‌ ! আর পারছিনা সহ্য করতে। মা, ওদের তুমি ঢুকতে দিওনা বাড়িতে । ওরা তুলসীগাছের কাছে দাঁড়িয়ে আছে এখনো । ওরা কী সংযুক্তা কে নিয়ে এল মা? 


আরেকটা পাতায় লেখাঃ

আমার মনে হচ্চে জ্বর এসেছে, এই দ্যাখো দ্যাখো আমার গায়ে হাত দিয়ে, হ্যাঁগো, আমি সত্যি বলছি । আলোটা নিভিয়ে দাও মা । সংযুক্তা এলে আমায় জানিও প্লিজ মা। আই বেগ অফ ইউ। 


অলকা আবারো পাতা উলটে চলেন । একটা পাতায় গিয়ে চোখ আটকে গেল তাঁর । 

বিশ্বাস করো তুমি, আমি মিথ্যে বলছিনা । তোমাকে সত্যি সত্যিই খুব ভালোবেসেছিলাম সংযুক্তা । আমাকে ভুল বুঝোনা। প্লিজ, সংযুক্তা প্লিজ। 


এতসব অসংলগ্ন টুকরো চিঠির ভীড়ে অলকার মাথায় একটাই কথা বারবার ঘুরছে তখন । ভাবতে লাগলেন তন্ময়ের এখানে আসার কারণ ।


আরও আগের কথা... 

পড়ে ফেলে নিজের মত করে ভাবতে বসলেন অলকা। 

তখন তার শেষের দিকের স্কুলবেলা । উচ্চমাধ্যমিকের বিজ্ঞান শাখা । যারপরনেই পড়ার চাপ । মধ্যবিত্ত পরিবারের একরত্তি শিবরাত্তিরের সলতে । তার ওপরেই যত আশা তার মা বাপের । ছেলেটাও খুব উজ্জ্বল । চোখে মুখে বুদ্ধিদীপ্ততার ছাপ । ক্লাসে ফার্স্ট সেকেন্ড না হোক ওপরের দিকেই আছে সে । কিন্তু আজকের বাজারে অমন ওপরের দিকে থেকেও কত স্বপ্ন হারিয়ে যায় । হতে চাইলেই হওয়া যায়না অনেক কিছু । তন্ময় মোটামুটি ঠিক করেই ফেলেছিল জেনারেল স্ট্রিমে কিছু একটা অনার্স নিয়ে ভর্তি হবে ভালো একটা । এখনো তো কোলকাতার কলেজের ছেলেরাও কলার তুলে ঘুরে বেড়ানোর ক্ষমতা রাখেরে বাবা ! বাবা তাকে টিউটরও দিয়েছিলেন প্রতিটি বিষয়ে । এজন্য বাবার কাছে খুব লজ্জিত । খেতে বসে এক একদিন বাবা পড়াশুনোর কথা জানতে চাইলে সে কেমন আড়ষ্ট হয়ে ওঠে । সে ভাবে, বাবা উদয় অস্ত পরিশ্রম করছেন । সারাটাদিন হাড়ভাঙা পরিশ্রম সেরে বাবার মুখে একটু হাসি ফোটাতে পারলেই সে কৃতার্থ । কোন্‌দিন আবার বাবা ছেলের জন্য ধর্মতলার মোড় থেকে একটা ছাতা নিয়ে আসেন । কোনোদিন তাঁর হাতে থাকে ঘিয়ের পান্তুয়া । কোনোদিন আবার চারটে বড় বড় ইম্পোর্টেড আপেল নিয়ে ছেলের মা'কে বলেন টিফিন দিতে। বিজ্ঞান নিয়ে পড়ছে তন্ময়, প্র্যাকটিকাল করতে হয় দাঁড়িয়ে দাঁডিয়ে । এইভাবে চলতে থাকে তন্ময়ের  যুদ্ধ তার লক্ষ্য নিয়ে আর তার বাবার চাকরী সামাল দিতে দিতে ।

আজ ডাঃ সেনের ফোন এসেছিল অলকার কাছে। পেশেন্ট তন্ময়ের আপডেটস  জানতে। অলকা ডায়েরীর পাতার তন্ময়ের সঙ্গে সেদিনের তন্ময় কে মেলাতে চান । তন্ময়ের চোখে অদ্ভুত এক শূন্যতা। ঘোলাটে চাহনি। যেন পৃথিবী থেকে তার সব পাওয়া ফুরিয়ে গিয়েছে, আর কিছুই নেই বাকি। আজ অবধি তন্ময় একটি কথাও বলেনি। অলকা ডায়েরীর পাতা উল্টে আবার ফিরে যান  তার স্কুলের সেই দিনগুলিতে।

ডায়েরীর পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে চোখে পড়ে... 

" যদি আমি কোনো কিছুতেই না পাই তবে আমার কি হবে? বাবা, মা আমার জন্যে এত চেষ্টা করে চলেছে ।

বন্ধুরা তো বলেই দিয়েছে একবার না পাই আবার বসব জয়েন্টে। 

সেবন্তী তো বলেই দিয়েছে কিছু না পেলে বাংলায় অনার্স পড়বে ।

কিন্তু আমি যদি সায়েন্স সাবজেক্টে ভালো ফল না করি তাহলে তো অনার্সও পড়তে পারব না "

পরের পাতাতে আবার বিষাদের লেশমাত্র নেই। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডার টুকটাক। পকেটমানি বাঁচিয়ে আধখানা এগরোলের হিসেব দেখে হাসি পায় অলকার। 

যার অর্থ হল, বন্ধুদের আওতায় যখন থাকে তখন নিজেকে বেশ কম্পোজড লাগে তন্ময়ের। স্কুল টিউশান সেরে বাড়ি এলেই আবার কেমন যেন ছন্নছাড়া ভাবটা পেয়ে বসে । মাঝে মাঝে মনে হয় ছাদে বসে কবিতা লিখতে । ছুটির দিনে মনে হয় একটা ভালো ছবি আঁকতে । কিন্তু এই সিলেবাস আর দমবন্ধ করা চাপটা তাকে গ্রাস করে ক্রমশঃ । 

তন্ময় নিজেও জানেনা এর থেকে মুক্তি পাবে কি করে । উচ্চমাধ্যমিকের আর ঠিক দশ মাস বাকী । মাথার বাঁদিকটা দপদপ করে ওঠে।

এই টানাপোড়েনের মাঝে এক পশলা সুবাতাস দেয় নীপা। তার সমবয়সী । এবার কেঁপে ওঠেন অলকা। 

তার মেয়ের নামও নীপা। কোচিং ক্লাসে বন্ধুত্ব হয়েছিল তবে এই ছেলেটির সঙ্গেই । দুজনে একসঙ্গে বাসস্টপে হেঁটে যেত রোজ । একসঙ্গে এইটুকুনি হাঁটাতেই  কিছুক্ষণের ভালোলাগা জন্মাত তাদের পড়াশুনোর চাপের মাঝে । দমবন্ধ হওয়া থেকে নিস্তার। মিষ্টি মেয়েটাও খুব পছন্দ করে ফেলেছিল তন্ময় কে ।

এখন ভাবেন তিনি। ভালোলাগার মতোই ছেলে তন্ময়।  

একজায়গায় সে লিখেছে... 

" নীপা, তোর চেহারায় কি যে যেন একটা আছে, মনে হয় অনেকটা পথ হেঁটে যেতে পারি তোর সঙ্গে। তুই বুঝেও বুঝলি না।    

তুই না আমার না মেলা সব অংক মিলিয়ে দিতি? কোচিং ক্লাসের ফাঁকে, পথ হাঁটতে হাঁটতে। তুই তো খুব প্র্যাক্টিকাল ছিলি। তোর যেমন গভীরতা পড়াশুনোয় তেমনই চাহনিতে।

আচ্ছা, নীপা তুই আমাকে সত্যি সত্যি ভালোবাসিস তো? ঠিক যেমন আমি বাসি তোকে?” 


শেষ লাইনে গিয়ে আটকে যান অলকা। তন্ময়ের লেখায় অনিশ্চয়তার সুর। 


শেষমেশ অলকা মিলিয়েছেন অংকটা । একমাত্র মেয়ের জীবনের সমীকরণ উল্টোপথে মেলাতে গেছেন। তিনি। আজ তিনি তন্ময়ের কাছে অপরাধী। কী করে আর দাঁড়াবেন এই ছেলেটার সামনে? নীপা কে তন্ময়ের কাছ থেকে সরিয়ে নেওয়ার মূলে তো তিনিই । হাসপাতালের সেবিকা সিঙ্গল মাদার অলকার লড়াই আর কেই বা বুঝবে? 

তিনিই তো মেয়েকে বোঝাতে গিয়েছিলেন এসব। এখন কী তার ভালোবাসাবাসির সময়? আগে পড়াশুনো তারপর প্রেম। ঠিক যেমন অতি স্মার্ট সংযুক্তার বেলাতেও তন্ময়ের মা বলেছিল, "আগে গুছিয়ে নাও জীবনের চলার নুড়িপাথরগুলোকে। সবে তো চাকরীর শুরু। একবার সময় নষ্ট হয়ে গেলে আর ফিরে আসবেনা ।"  


কিন্তু এসব তো বুঝে হজম করে ফেলেছে তন্ময় ।  তবুও বুঝলনা তার মন।  এত এত মোটা মোটা ব‌ই, কঠিন পরীক্ষা পেরিয়ে সংযুক্তা বা নীপা কারোর সঙ্গেই  দুটো ভালোলাগার  মূহুর্ত্ত পাওয়া হলনা তার জীবনে। তন্ময় তো হারবার পাত্র নয় কোনোদিনো । একটা ছবি শুরু করলে শেষ না করে ও ভাত খেতনা ছুটির দিনে । একটা কবিতা শুরু করলে ঘুমোতে যেত না রাতে । তাই বুঝি পাকাপাকি একটা চাকরীও শুরু করেছিল কেরিয়ার গড়তে। 


অলকা হঠাৎ পড়তে পড়তে থেমে গেলেন । অনেকটা লেখা কলম দিয়ে খুব যত্ন করে কেটে দেওয়া হয়েছে। ঠিক কি লিখেছিল তন্ময়? বারেবারে প্রেম ভেঙে যাওয়ার জন্য হয়ত দায়ী করেছে কাউকে। কিম্বা লিখেছে, আমাকে আমার মত থাকতে দাও... 

অলকা সেরাতের মত তন্ময়ের ডায়েরীখানা মাথার শিয়রে রেখে ঘুমোতে চেষ্টা করলেন । ভোরে উঠে আবার তার মাথায় পাক খেতে লাগল সেই কথা । কি এমন লিখেছিল ছেলেটা যে কেটে দিতে হল! প্রশ্ন করলে সে আরো অস্বস্তিতে পড়তে পারে । এসব নিয়ে বেশী সন্দেহ, কৌতুহল প্রকাশ পেলে তার ভালোর চেয়ে মন্দ হবেনা । চিন্তার জটগুলো গ্রাস করে অলকা কে । কোথায় গেল স্মার্ট সংযুক্তা? আর কোথায়ই বা হারিয়ে গেল তাঁর ব্রাইট নীপা? মেয়েটাও চলে গেছে তার মায়ের কাছ থেকে। বহু দূরে। কোথায় পাবেন তিনি এখন সে নীপার ঠিকানা? তার সঙ্গে অলকার একটিবার কথা বলতে পারলে ভালো হত । কিন্তু কোথায় খুঁজবেন তিনি নীপা কে? নীপা তো নিজের জীবনকে নিজেই মুক্তি দিয়েছিল সেদিন। নিজের অদৃষ্ট কে ধিক্কার দিতে দিতে তন্ময়ের বিছানার দিকে এগিয়ে গেলেন অলকা । 

যুগশঙ্খ ( রবিবারের বৈঠক, ১ লা আগস্ট, ২০২১)