৫ নভে, ২০০৮

অদ্রিজার দোলায় গমন

অদ্রিজা-জননীর দোলায় গমন করলেন আশ্বিনের শারদপ্রাতের শঙ্খনিনাদ, ঢাকের বাদ্যি, শিউলির গন্ধ এ সব কিছু ধুইয়ে, মুছিয়ে তিনি চতুর্দোলায় গমন করলেন জনগণের স্বাস্থ্যে লাগলো দোলা ভেক্টরবাহিত রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পেল ব্যাধিগ্রস্ত স্বাস্থ্য-পরিষেবার কবলে পড়ে কত প্রাণ অকালে চলে গেল কৃষি না শিল্প এই টানাপোড়েনে মার খেল এ রাজ্য রাজ্যের শিল্পায়নকে কাঁচকলা দেখিয়ে টা টা করে টাটার মত বড় সংস্থা সানন্দে বেরিয়ে গেল এই রাজ্য ছেড়ে বাঙালির গৌরবের আইকন সৌরভ তাঁর ক্রিকেট জীবনের বৃত্ত সম্পূর্ণ করে যবনিকা টানলেন... হয়তো আরো কিছু আমরা পেতাম তাঁর কাছ থেকে সারা বিশ্ব জুড়ে রিসেশনের ঢেউ এখন ভারতের অর্থনীতির তটভূমিতেও সেই ঢেউ আছড়ে পড়েছে শেয়ার-সূচকের ক্রমাগত পতন , টাকার মূল্যের হ্রাস এই সবকিছু আমাদের অর্থনীতিকে অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত করেছেসন্ত্রাসবাদ, জঙ্গি-হামলা ,ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণ ক্রমশঃ তাদের প্রকান্ড কালো থাবা দেশের অভ্যন্তরে বিস্তার করে অসহায় মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে প্রতিবার তারা সরকারি গোয়েন্দাদের নিরাপত্তার ঘেরাটোপ এড়িয়ে কার্যসিদ্ধি করে রক্ষা পেয়ে যাচ্ছে অদ্রিজার পুনরাগমন হোল কার্ত্তিকের কৃষ্ণপক্ষে, করালবদনী ষোড়শ-উপাচারে পূজিতা হলেন ঘোর অমাবস্যার পুণ্যলগ্নে |মুক্তকেশী,মুণ্ডমালা-বিভূষিতা এসেছিলেন তাঁর লোলজিহ্বায় রাজ্যের তমসা,কালিমা লেহন করে আমাদের মুক্তি দিতে কিন্তু অতি শীঘ্রই বিসর্জনের বাজনা বেজে উঠল ক্রন্দনরত বাঙালী মাতৃমূর্ত্তিকে নিমজ্জিত করতে করতে ভাবছে, মায়ের সাথে তাদের সব কিছু বিসর্জন হয়ে গেল নাতো? যে দীপাবলী সাজিয়ে তারা দীপাণ্বিতার অমাবস্যাকে আলোকিত করেছিল তা কি সত্যি নাকি প্রহসন? আমাদের জীবনের সামাজিক,রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক,, নৈতিক,অর্থনৈতিক প্রত্যেক ক্ষেত্রের গুপ্ত চোরা কুঠুরি আঁধারে মসীলিপ্ত হয়ে রইল দীপাবলীর আলোক-রশ্মি প্রবেশ করলো না সেই পঙ্কিলতার গর্তে শুধু হা-হুতাশ, আবেগ,আর অতিন্দ্রিয় সুখের আরাধনা করে, নেতিবাচক মানসিকতার উপাসনা করে আর পূর্বসুরীদের জ্বালাময়ী ভাষণ কে পাথেয় করে আমরা চলতে থাকবো যুগ যুগ ধরে রাজনৈতিক অমাত্যগণ, আমলা, মন্ত্রীরা গণতন্ত্রের পূজা-প্রহসন নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন আর আমরা সাধারণ মানুষেরা থিয়োরি অফ নেগেটিভিটির আরাধনা করে যাবো এই ভাবেই দেশের কাজ ও দশের কাজ চলবেশিল্প-কলা-কৃষ্টি-ক্রীড়ার পীঠস্থান সনাতন ভারতভূমি এই ভাবেই ভৌগোলিক মানচিত্রের মর্যাদা বহন করে চলবে | সমস্যা সঙ্কুল বঙ্গবাসী তথা ভারতবাসীর জীবন বন্ধ-হরতাল-মিছিল-ধর্ণার ছন্দে আবার দুলবে একটা বছর... অদ্রিজা-মায়ের দোলায় গমন বলে কথা!!!

১৩ অক্টো, ২০০৮

তুমি আসবে বলে তাই ....

জিত্ , শুভায়ন , অরিজিত ,স্বাগত , ধুর্যটি , স্বাগতা , মহশ্বেতা , চেতা আর তনুশ্রী(রাকা)... এরা সোনার তরীর পরিবারের ক'জন | এরা নতুন যৌবনের দূত। এরা অকারণে চঞ্চল। এরা দামাল ,এরা অদ্ভুত। এরা নবীনতায় ভরা, সজীবতায় পূর্ণ। এদের মনে অসীম সাহস, মুখে সদা হাসি। এদের প্রাণে আছে বল যেন জোয়ার জলে ভাসি। নতুন প্রজন্মের এই ক'জন পাগলা হাওয়ায় মেতে উঠে গড়ে তুলেছে একটি দলছুট ব্যাণ্ড যার নাম "প্রান্তিকা" এরা পুরাতনকে ফেলে দেয় না, নতুনকে ও স্বাগত জানায় । শান্তিনিকেতনের অনতিদূরে ছোট্ট শহর প্রান্তিকের সোনারতরী আবাসনের দুর্গোত্সবে আমরা এদের প্রতিভার পরিস্ফূরণ লক্ষ্য করি। এদের চোখে সুরের ভাষা, মুখে স্বরের মূর্ছনা, এবং কন্ঠে সুর,ছন্দ,তাল ও লয়ের অপূর্ব মেল বন্ধন লক্ষ্য করা যায়।










১৬ সেপ, ২০০৮

দিদির দুঃখ

পশ্চিমবঙ্গে সহসা শিল্পায়নের হাইটেক জোয়ার এসেছে। বেশ ভাল কথা। অনেক বছর পিছনে হাঁটার পরে আমরা বিবেকানন্দের অমোঘবাণী "উত্তিষ্ঠিত, জাগ্রত" কে পাথেয় করে এগুতে সহস করেছিলাম। বুঝতাম সিঙ্গুরের আলু প্যাকেজিং হয়ে সি-আট্-ল্ পৌঁছে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে এল, তাহলেও হোত। সিঙ্গুরের চাষী একটু বেটার লাইফস্টাইলের মুখ দেখতো। কিন্তু কৃষিজমি, জীবিকা এসব নিয়ে এখন বিরোধীদল যা করছেন তা দেখে মনে হয় বাঙালির আত্মঘাতী নাম সার্থক। আসলে আমাদের মাননীয় দিদি নতুন করে কুড়ুল মারেন নি নিজের পায়ে। আবেগপ্রবণ দিদি বলতে চান পিছিয়ে গেছি ই যখন সুদীর্ঘ একত্রিশটা বছর তখন আর এগিয়েই বা কি হবে? "এমনি করেই যায় যদি দিন যাক্ না" এতদিন তোমাদের কথা যখন রইল, এবার আমার কথাই থাক্ না | "ভাবিতে উচিত ছিল প্রতিজ্ঞা যখন"| একদিন তোমরা টাটা-বিড়লার কালো হাত গুঁড়িয়ে নুলো করতে চেয়েছিলে , রক্ত দিয়ে অটোমেশন রুখেছিলে, প্রাথমিক স্তরে ইংরেজী উঠিয়ে দিয়েছিলে তখন ভাবো নি যে, বেশিদিন নেতিবাচক, বন্ধ্যা রাজনীতির বোরখা পরে বঙ্গবাসী অমানিশার মুখ দেখবে না একদিন তাদের বোধদয় হবেই তাই টাটার সাথে হাঁটা শিখলে! সালিমের কাছ থেকে ব্যবসার তালিম নিলে! অভিমানী দিদির মনের জ্বালা আমরা আর কি বুঝি। আমরা শিল্পায়নের জোয়ারে উদ্বেলিত হয়ে মনে মনে বলছি "বেটার লেট দ্যান নেভার"| কিন্তু দিদির মনের ব্যাথা অন্যখানে | তিনি যে নিজের চোখে দেখেছেন সত্তরের দশকের বাঙলার বেকারত্বের হাহাকার, শয়ে শয়ে বন্ধ কলকারখানার শ্রমিক ইউনিয়নের চিত্কার , আই.বি.এম, পেপসির মত মাল্টিন্যাশানালদের এ রাজ্য থেকে একদা মুখ ঘুরিয়ে নেওয়া | এখন তেলের শিশি ভাঙলো বলে খুকুর পরে রাগ করলে কি করে হবে?

৪ সেপ, ২০০৮

সর্বশিক্ষাঅভিযানের ঢক্কানিনাদ ফক্কানিনাদে পরিনত হল!!


"সর্বশিক্ষা অভিযান(SSA)" নামে গালভরা একটি প্রকল্প চালু আছে যা শুরু হয়েছিল কেন্দ্রীয় ও রাজ্যসরকারের সহায়তায় ২০০১ সালে | সারা ভারত ব্যাপী শিক্ষাক্ষেত্রে এই কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল । উদ্দেশ্য একটাই : ৬ থেকে ১৪ বছরের সকল শিশুর জন্য অবৈতনিক এবং আবশ্যিক শিক্ষা । এই কর্মসূচি রূপায়নের প্রথম ধাপ ছিল শিক্ষক - ছাত্র অনুপাত বৃদ্ধিকরে ১:৪০ করা | যার জন্য অস্থায়ী প্যারা টিচার নিয়োগ করা ছিল আবশ্যিক। এবার গ্রামে গঞ্জে, এমনকি শহরতলী সর্বত্র শিক্ষিত বেকার গ্র্যাজুয়েটরা আবেদন করে নিযুক্ত হোল প্যারা টিচার নামক পোষ্টটিতে। তাদের বেতন কত জানেন? মাসে ২০০০ টাকা। যা বৃদ্ধিপেয়ে ২০০৭ এ হোল ৩০০০ টাকায়। যে দেশে ক্রিকেটপ্রেমীরা ২০০ থেকে ১০০০ টাকা অবধি খরচা করে খেলার মাঠে যায়, যেখানে পড়ুয়ারা স্কুল পালিয়ে পকেটমানি জমিয়ে মাল্টিপ্লেক্সে সিনেমা দেখে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা অবাধে খরচা করে, যেদেশে দুর্গাপুজোয় থিম পুজো নিয়ে এত মাতামাতি করে পুজোর কর্মকর্তারা ফান্ডরেজিং এর জন্য পারলে প্রাণ দিয়ে দেন, একটা "কুমার অমুক" কি "মিস তমুক" নাইটের জন্য লাখে লাখে টাকা খরচা হয়ে যায় সেখানে প্যারাটিচার মহাশয় কিন্তু দিনের পর দিন স্কুলে হাজির হয়েও মাস গেলে তার ঐ যত্সামান্য বেতন পান না অথবা বকেয়া বেতন আদায়ে তার কালঘাম ছুটে যায় । এত গেল প্রাথমিক শিক্ষকের দুরবস্থা | চুক্তিবদ্ধ, অস্থায়ী, প্যারা টিচার বহু স্কুলে স্থায়ী টিচারের পদ শূন্য পড়ে আছে। প্যারাটিচারগণকে বাধ্য করা হয় স্থায়ী টিচারের ক্লাস গুলি নিতে নতুবা তাকে শীঘ্রই বরখাস্তের হুমকি দেওযা হয়। এমনকি মধ্যমিক ও উচ্চ-মাধ্যমিক স্তরেও প্যারাটিচারদের এহেন এক্সপ্লয়টেশন চলছে। এদিকে ফুলটাইম স্থায়ী শিক্ষকেরা বহাল তবিয়তে গৃহশিক্ষকতা করে চলেছেন | তাদেরও উপায় নেই |আমাদের দেশের শিক্ষকদের সঠিক মূল্যায়ন কোনো কালে ছিল না ভবিষ্যতেও হবে বলে মনে হয় না | কে ঠিক করবে শিক্ষার মান? কে ঠিক করবে শিক্ষকের বেতনের পরিকাঠামো? এসব তুচ্ছ জিনিষ নিয়ে মাথাব্যাথা কারোর নেই | বহুদিন আগে এক প্রখ্যাত দক্ষিণী গায়িকা দুঃখ করে বলেছিলেন কত কষ্ট করে গুরুজির বেতন জোগাড় করে গান শিখেছি। আজ এত নামডাক আমার | কিন্তু ক্রিকেট খেলে বাচ্চাছেলেটি যা পাচ্ছে আমি একটা জলসাতে গান গেয়ে তার এক দশমাংশও পাই না | সেই গায়িকার সাথে সহমত পোষণ করে বলি শিক্ষার মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করে একটা কিছু করা আমাদের দরকার | টিউশান রোধ করে কি হবে? শিক্ষকের বেতনের পরিকাঠামো বদলাতে হবে। তাঁদের প্রাপ্য বেতন সময়মত দিতে হবে। তবেই তাঁরা স্কুলে কোয়ালিটি টিউশান দেবেন |
মহামান্য শিক্ষামন্ত্রীরা কেন রামকৃষ্ণমিশনের কাছ থেকে শেখেন না? কেমন করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালাতে হয় , কেমন করে সরকারী টাকা নয়ছয় না করে শিক্ষাখাতের জন্য বরাদ্দ টাকা শিক্ষাখতের উন্নয়নেই ব্যয় করতে। বিবেকানন্দ কবে বলেছিলেন অশিক্ষা আর কুশিক্ষাই আমাদের দেশের প্রধান শত্রু। তাই বিদেশের জেসুইট সোসাইটির অনুকরণে তিনি গড়ে তুলেছিলেন "রামকৃষ্ণ মিশন" যারা "শাকের টাকা শাকে আর মাছের টাকা মাছে " এই পন্থায় এখনো সুন্দর ভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষাকেন্দ্র গুলিকে ।
তাই "সর্বশিক্ষা অভিযান " নামে এই ঢক্কানিনাদ আজ ফক্কানিনাদে পর্যবাসিত হোল | neither অভিযান nor মিশন কোনোটিই পশ্চিমবাংলার প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য " Universal elementary education for all by 2010"এ রূপায়িত হতে পারল না গ্রামে গঞ্জে লক্ষ লক্ষ শিশু এখনো নিরক্ষর, মিড ডে মিলের প্রলোভন দেখিয়ে ও সরকার পারলেন না দরিদ্র পথশিশুদের স্বাক্ষর করতে , মহামান্য মন্ত্রী বলেন
" কেনরে ছেলে পড়িস না? ছাত্র বলে ," টিচার কেন আসেনা ? মন্ত্রী বলেন "কেনরে টিচার আসিস না ? শিক্ষক বলেন,” কেনরে তোরা আমার সঠিক বেতন দিস না ? আমি স্কুল পড়িয়ে যা পাব প্রাইভেটে ঢের বেশি পাবো , যেখানে বেশি পাবো সেখানে ভালো সার্ভিস দেবো।" তাই মন্ত্রীমশাই মিড-ডে-মিল এ ম্যাগি অথবা বিরিয়ানি চালু করেও সুরাহা হবে না| ছেলেরা চেটে পুটে খেয়ে মুখ মুছে ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়বে আর সর্বশিক্ষা অভিযানের ফ্রি পুস্তক পুড়িয়ে মিড -ডে-মিলের রান্না হবে |
এই ভাবেই আমার কথাটি ফুরোবে, নটেগাছটি মুড়োবে ,কিন্তু কেনরে নটে মুড়োলি তার গোড়ার গলদের কথা কেউ জানবেনা, কেউ চেষ্টাও করবে না তা জানার | শুধু ফি বছর ঢাক পিটিয়ে "শিক্ষক দিবস " পালন চলবে আর সর্বশিক্ষা অভিযানের আইকন হয়ে একটি বিশাল পেন্সিলের দুই প্রান্তে দুটি শিশু মস্তিতে আবহমান কাল ধরে বসে থাকবে


২ সেপ, ২০০৮

শরণাগত, দীনার্ত, পরিত্রাণ প্রার্থী, পরীক্ষার্থী

জবাকুসুমসঙ্কাশন কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিং
এবারের মত ক্লাসে তুলে দাও, হয় নাকো যেন কোনো বড় সিন্।।
সরস্বতিমহাভাগে বিদ্যে কমললোচনে
কেস যেন না খাই ক্যালকুলাসে, জয় হয় যেন মহারণে।।
জয় জয় দেবী চরাচরসারে কুচযুগশোভিত মুক্তাহারে
ত্রিকোণমিতি আর পরিমিতি, দয়া যেন করে শুধু আমারে।।
সরস্বত্যৈ নমোনিত্যং ভদ্রকাল্যৈ নমোনমঃ
কেমিকাল-ইক্যুয়েশন ব্যালেন্সিং মোর আসে যেন শুধু কমোকমঃ।।
সর্বমঙ্গলমঙ্গল্যে শিবে সর্বার্থসাধিকে
সল্ট-এনালিসিস পারি যেন মাগো, সার্কিট যেন পড়ে না বিপাকে।।
নমো ব্রহ্মণ্যদেবায় গো-ব্রাহ্মণ্যহিতায় চ
পদার্থবিদ্যায়, রসায়নায়, অঙ্কশাস্ত্রায়শ্চ নমো নমঃ।।
নমো মুখস্থবিদ্যায় প্র্যাক্টিসশ্চ পড়িলাম মহাসাগরে
অকুলস্রোতে হাবুডুবু খাই, সারাবছর আমি না পড়ে।।
ত্বমেব মাতা পিতা ত্বমেব, ত্বমেব বন্ধুশ্চ সখা ত্বমেব
এবারের মতো পাশ করিয়ে দাও, কান দেবো নাকো টিভি এফ্-এম্ এ ।।

৭ আগ, ২০০৮

A key e-ব্যাঙ্ কিং or g-বং যুদ্ধ ?

ইউনাইটেড স্টেটস্ এর অবতার যখন Y -2K'র ছড়ি ঘুরিয়ে সারাবিশ্বের দরবারে যাদু সৃষ্টি করল তখন আমাদের দেশেও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক ঢেউ এসে আছড়ে পড়েছিল প্রথমে বিদেশি ব্যাঙ্কিং পরিষেবায় ও কিছু পরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কম্পিউটার স্ক্রীনে।তখন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির ষ্টাফ, অফিসার কেউই সানন্দে whole heartedly মেনে নিতে পারেন নি এই অট্যোমেশন | নতুন প্রজন্ম মহা আনন্দে এই কম্পিউটারাইজেশনকে welcome জানাল কিন্তু বয়স্করা এই নব্য প্রযুক্তির সংযোজনে Male-Menopause এর স্বীকার হলেন । স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে থমকে দাঁড়িয়ে গেলেন। কিং-কর্ত্যব্য-বিমূঢ় হয়ে সারাদিন অফিসে 'আসি যাই মাইনে পাই' এই মানসিকতা নিয়ে ম্লান বদনে গণক মেশিনের দিকে করুণপানে তাকিয়ে দিন যাপন করতে লাগলেন। একদিকে চাকুরীরক্ষার দায় অন্যদিকে কম্পিউটারে প্রশিক্ষণের আবশিক্যতা এই দুয়ের টানাপোড়নে কালাতিবাহিত করতে লাগলেন.. "একি জ্বালারে বাবা".... "আমাদের কি এই বয়সে কম্পিউটার না শিখলেই নয়"? "না" জানালেন ম্যানেজমেন্ট |" ভালো তো , না পারেন তো VRS নিয়ে বাড়িতে বসে পড়ুন , আপনারও শান্তি , আমাদেরও লাভ | অগত্যা, "এই বেশ ভাল" এই সত্যকে মেনে নিয়ে অনেকে স্বেচ্ছাবসর নিলেন , সঙ্গে থোক টাকা | কিছু ষ্টাফ দাঁতে দাঁত চেপে নতুন প্রযুক্তিতে "কাটাইনু সারাদিন সুখ পরিহরি, অনিদ্রায় অনাহারে সঁপিকায় মন" এই ভাবে দক্ষতা অর্জন করলেন | এবং দন্ত রুচি-কৌমুদী বিকশিত করে ,কাউণ্টারে কম্পিউটার স্ক্রীনের বিপরীতে বসে ঠান্ডা-যুদ্ধ চালিয়ে গেলেন | কিছু বছর পরেও সেই ট্র্যাডিশন এখনো চলছে .....

কলকাতার কোনো এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কথোপকথনের ক্যানভাস থেকে একটি মজার চিত্র তুলে ধরলাম :
[diclaimer: কারুকে আঘাত করার উদ্দেশ্যে নয় , just একটু মজা করার জন্য ]

সুমন: "সুপর্ণাদি ,ঐ ভদ্রলোককে FD certificate টা প্রিন্ট করে দিন না ,উনি দু দিন ঘুরে গেছেন |"
সুপর্ণাদি: "এই সুমনা তুমি কি মেশিনটা ছাড়বে? আমি তবে প্রিন্টাউট নিয়ে নি "
সুমনা: "আরে দাঁড়াও সুপর্ণাদি আমার মেশিন hang করে গেছে "
সুপর্ণ :আরে বাবা কতবার তো বলেছি, CAD মারো | মেরেছো?
সুমনা:এই যাঃ সব গেল! সারাদিন এত খেটে data গুলো entry করলাম! save করতে ভুলে গেছি। কি হবে এখন ?
সুপর্ণ: দেখি আপনার user-id,password টা দিন দেখি
সুপর্ণাদি : এই সুমন? দেখোনা ভাই, মিসেস বোসের একটা pay-order আছে
সুপর্ণ : দাঁড়ান তো আগে ঠিকমত logout করে বেরোই
জনৈক customer: দাদা আজও আপনাদের মেশিন খারাপ আমিএর আগে দু দিন এসে এই একই অবস্থা দেখে গেছি। আজও আমার passbook updation হবেনা? কত গুলো ECS হোল কিনা দেখার ছিল ....
সুপর্ণ: দাদা একটু বসুন না.. চা-কফি কিছু ? এই বিমল এনাকে চা দে | দাদা , দুধ চা ? না লেবু চা ? চিনি ছাড়া না চিনি দিয়ে ?
বিরক্ত customer:আরে মশাই রাখুন তো আপনার চা আমার কাজটাই হোলনা, ECSটা জেনে নিলে....আমার একটা payment ছিল।
সুমনা : এই বারে হয়েছে, যাক বাব্বা! বাঁচলাম। এই বিমল? আমাকে চা দিলি ,বিস্কুট দিলিনা ?
সুপর্ণাদি : তোমার শাড়ির রং টা খুব suit করেছে তোমার complexion এর সাথে |
সুমনা : এই দেখ সুপর্ণাদি আবার log-in করতে পারছিনা | কি যে হচ্ছে আজ!
সুপর্ণাদি : দাড়াও আমার printer এ cartridge শেষ , printout নিতে গিয়ে মাঝপথে error দিল | ওফ্! আর পারিনা ;
সুমন : হ্যাঁ, বলুন দাদা, আপনার জন্য কি করতে পারি ;
জনৈক customer : কি আর করবেন দাদা ? এই computerisation এক আপদ হোল দেখছি ... রোজ রোজ মেশিন খারাপ, প্রিন্টারে কালি নেই, নেট-ওয়ার্কে গন্ডগোল...
সুপর্ণাদি : হচ্ছে না সুমন, তুমি এস এখানে একবার please... একটু দেখোনা...
সুমন : আরে আগের প্রিন্টটা ক্যানসেল করেন নি এখন print করতে শুরু করলে মেশিন আবার hang করে যাবে।
সুমনা : সুপর্ণদা, আমার ফাইলটা আর edit করা যাচ্ছে না , read only তে চলে গেছে। কি হবে?
সুপর্ণ : ফাইলে গিয়ে 'save as' করে re-name করে আবার save করো।
সুপর্ণাদি : এই সুমন ছাড়ো না machine , বিমল কে cartridge লাগাতে বল |
সুমন : আগে reset করুন তারপরে print-option এ যান ...
সুমনা : এই যাঃ সব উড়ে গেল ...
সুপর্ণ :সুমনা, নাহলে machine টা shut-down করো,করে আবার restartকরো |

২৩ জুল, ২০০৮

মৌসুমী অধিবেশনের পর্যালোচনা

প্রথমে , ঝলক দিখলা যা...

  • নিউক্লিয়ার-ডিল কে সমর্থন করতে গিয়ে মুলায়ম-মনমোহনের মধুর-মিলন ।
  • পক্ক্ব-কেশ, প্রকাশ কারাট প্রচুর ক্যারট খেয়ে দৃষ্টিশক্তি বাড়িয়েছিলেন কিন্ত ইউ-পি-এ সরকার থেকে সাপোর্ট প্রত্যাহার দেখে মনে হয় তাঁর ক্যারাট-মিটারের রিডিংটা ভুল নেওয়া হয়েছে। এর চেয়ে ক্যারাটে প্রশিক্ষণ নিলে বোধ হয় ভাল হোত।
  • বিজেপির এই মূহুর্তে বামে রাম ও ডাইনে বাম।
  • সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম ইস্যু নিয়ে ক'দিন আগে আরএসপি নেতা ক্ষিতি ক্ষ্যেপে ব্যোম্ হয়েছিলেন তাঁর ওপরওলাদের উপর। তাতে অবিশ্যি কোনো মেজর ক্ষতি হয়নি। এখন কারাটের করাত চালনায় সোমনাথ ক্ষেপে ব্যোমনাথ । কেন তাকে স্পিকারপদ ছেড়ে দিতে হবে? তিনি সিপিএম পার্টির হতে পারেন কিন্তু তিনি লোকসভার মাননীয় স্পিকার মহাশয়--তিনি কি এদের হাতের ক্রীড়নক?
  • মমতা অবিশ্যি এখন খুশিতে ডগমগ। একে ব্যাপক লোডশেডিং এর দাপটে বুদ্ধের চোখে কালি , তাতে আবার বিকাশ জল-নিকাশ করতে পারছেন না | একেই শিল্পায়নের জোয়ারে মানুষ হাবুডুবু খাচ্ছে | তার ওপরে প্রতিনিয়তঃ মুদ্রাস্ফিতির চাপে সাধারণ মানুষ পিষ্ট।
  • এসব তো সারাদেশের প্রবলেম। অন্যবছর বৃষ্টি হলেই ইনফ্লেশন কমে,শেয়ার-সূচকের পারদ হৈ হৈ করে বাড়তে থাকে,সোনার দাম কমে ।
  • যত দোষ নন্দঘোষ হল পরিশোধিত,অপরিশোধিত তেল। বিশ্বের বাজারে তেলের দাম না বাড়লে , বিকল্প হিসেবে নিউক্লিয়ার পাওয়ার জেনারেশনের কথা কেউ ভাবতো না | আপামর-জনসাধারণ অবিশ্যি এসব নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন না তাঁদের জিনিষপত্রের দাম কমলেই হোল।
  • এই সব সাতপাঁচ ভেবে বুদ্ধ বিপাকে।জল সরাবেন, না আলো জ্বালাবেন ? আম-ইলিশের দাম কমাবেন, না হাসপাতালের রোগীর পাশে কুকুর হটাবেন? বুদ্ধের বুদ্ধিতে সত্যিই কুলোচ্ছে না | মমতার ক্ষমতা দেখে এমনিতেই একটু দমে রয়েছেন তাঁরা সকলে।

  • পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের সাফল্য দেখে এবারে সংখ্যালঘুদের তোষণ হবে কি না সেটাও বিচার্য্য ; বর্ষীয়ান বিরলকেশ মাননীয় জ্যোতিবাবু কি আর পারেন বুদ্ধি দিতে?
  • বিজেপির বর্ষীয়ান নেতা আদবানি সদ্য আত্মজীবনী প্রকাশের আনন্দে আত্মহারা । তাতে আবার বামের সাথে ইউপি এর বিরুদ্ধে আস্থাভোট দিতে হোলে আসন্ন জন্মাষ্টমীর কি এজেন্ডা হবে? রামনবমীতেই বা কি হবে? রথে করে বিজেপির ভারত-পরিক্রমা হবেনা? নাকি আদবানি এবার মহরমের তাজিয়া নিয়ে বেরুবেন?
শেষে এখন উপায়?

সেবার এসেছিল ফিল্-গুড্-ফ্যাক্টরের টাইফুন। এবার কি সেই আনন্দধারা আর বহিবে না ভুবনে? সেবার শুনেছিলাম তৃতীয়বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে "ইন্ডিয়া শাইনিং"এর রূপোলী গল্প। এপাড়ার ভিখারি ওপাড়ার ভিখারিকে মোবাইলফোনে জিগেস করছে" আজ ভিক্ষের বাজার কেমন?” আমার কাজের মেয়েটি ছেলের স্কুলের টিফিনে ম্যাগি দিচ্ছে, আমাদের স্যুইপার রাস্তায় আঙ্কল্-চিপ্-স্ চিবোচ্ছে । সে বছর আমার মালী তার বৌ কে গানের স্কুলে ভর্তি করেছে ,অফিসের ড্রাইভার বৌ কে নিয়ে ধনতেরসের গয়না কিনছে,রাম-শ্যাম-যদু-মধু সকলেই এফ্-এম্-সি-জি'র ক্রেতা , গ্রামে গিয়ে দেখি বাচ্চারা বিগ্-বাব্-ল্- ফোলাচ্ছে। ট্যক্সিচালক নাইটে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিচ্ছে আরো ভালো লাইফ-স্টাইলের মুখ দেখবে বলে | দেশে কতো ফ্লাইওভার, কতো মাল্টিপ্লেক্স হয়েছে , কতো পাঁচতারা হোটেল,কতো শপিংমল হয়েছে ,কতো দেশি-বিদেশি গাড়ী এসেছে বাজারে কতো কল্-সেন্টার হয়েছে ,সত্তর-আশির দশকের মতো অর্ডিনারি বি.এ, বিএস্-সি , বি.কমরা বেকার হয়ে পাড়ার রোয়াকে বসে আড্ডা দিচ্ছেনা বা বস্তির নাবালক সিনেমা হলে টিকিট ব্ল্যাক করতে গিয়ে ধরাও পড়ছে না | বরং রাস্তার মোড়ে কি করে একটা ফাউন্টেন পেপসির গাড়ি অথবা আমূল দুধের ব্যবসা করা যায় তাই ভেবে বারাসাত থেকে বেন্টিঙ্কস্ট্রিট ছুটছে। দেশের আকাশে বাতাসে ফিল্-গুড্- ফ্যাক্টরের অনুরনণ। গেরস্তের হাতে টাকা , হিগ্-মিগ্-লিগ্ সকলেই রিয়েল-এস্টেটে লগ্নি করেছে । সকলের পাতেই মহার্ঘ্য ইলিশ, অগ্নিমূল্য বাজারদরে সকলেরই একটা "ডোন্ট-কেয়ার এটিচ্যুড "। কিন্তু এ কার নেক-নজরে পড়ে গেলাম আমরা ? রোজ সেনসেক্স নিম্নমুখী , তরলসোনা,ধাতবসোনা ঊর্দ্ধমুখী , মুদ্রাস্ফিতীও সর্বকালীন ঊর্দ্ধসীমা পেরিয়েছে, বাজারদর অগ্নিমূল্য, নিউক্লিয়ার-ডিল সাইন হলে কি এ সমস্যার সমাধান হবে ?

১৯ জুল, ২০০৮

More ভাবনারে ..... তৃতীয় পর্ব

আসলে কলকাতার বাঙালীর গতরে শুঁয়োপোকা, ভাবনায় উইপোকা, এবং মানসিকতায় ঘুণপোকা । এরা কুরে কুরে সর্বক্ষণ বাঙালী কে খেয়ে ফেলছে। বাঙালীর কর্মে আলস্য, আলস্যের পরিণামে নিদ্রা , এবং সর্বোপরি নিদ্রায় আতিশয্য এদের শ্রম-বিমুখতার কারণ। এ জাতি ভাঙ্গতে জানে বেশী, গড়তে জানে কম।

এ শহরের লোকের মজ্জায় মজ্জায় মত্স্যের ঘ্রাণ, হাড়ে হাড়ে হাওয়া বদলের জন্য সদা ব্যাকুলিত প্রাণ, রক্তের প্রতিটি কণায় কণায় নৃত্য-গীত-বাদ্যানুরাগ | এদের চোখের চাহনিতে চপলতা, চলনে চঞ্চলতা , গমনে গতিহীনতা , ব্যাক্তিত্বে ছদ্ম-গাম্ভীর্য্য ,ভোজনে ভুঁড়ি-বিলাসিতা , আর মুখে তর্কের ফুলকি ও যুক্তির ভেলকি। বাঙালী দিনের বেলায় মাছ-ভাত খেয়ে ভুঁড়ি উঁচিয়ে যত ঘুম দিতে পারে সন্ধ্যাবেলায় মুড়ি-তেলেভাজা সহযোগে ততধিক আড্ডার আরাধনা করে। এ শহরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অন্ধ ভালবাসা, যার গন্ধে গন্ধে বিজাতীয় মানুষ এখানে ভীড় করে | মানুষের চৌম্বকীয় আবেশে মানুষকে বশ করে কাছে টানে। সস্তার এ শহরে একবার কেউ এসে ব্যবসা ফাঁদলে ধনী হয়,পস্তায় না | বাঙালী কেবল শাড়ি,স্বর্ণ এবং শর্করাজাত অর্থাত্ মিষ্টান্ন --এই তিনটির ব্যবসায় যুগে যুগে হাত পাকিয়েছে। অধুনা বাঙালী রমণীদের গতিশীলতায় কলকাতার বুকে বিউটিপারলার তো পিঠে শাড়ির বুটিক ,ও হাতে হোম্-ডেলিভারি |

শত-সহস্র তারকাখচিত এ শহরের আকাশ। যার রূপে সুচিত্রা রসে ভানু, বর্ণে সৌমিত্র কন্ঠে শানু | এ শহর আমাদের উপহার দিয়েছে সৌরভকে তেমনি হারিয়েছে নিজের গৌরবকে। এখানকার মানুষের শয়নে উত্তমকুমার,স্বপনে হেমন্তকুমার আর জাগরণে কিশোরকুমার। এ কলকাতাবাসীর ছন্দে তনুশ্রী-আনন্দ, সুরে শচীনকর্তা-কৃষ্ণচন্দ্র, সঙ্গীতে নজরুল-রবীন্দ্র, রসে রাজশেখর-সঞ্জীবচন্দ্র, সাহিত্যে বঙ্কিম-শরত্চন্দ্র, স্পর্শে সিনিয়র-জুনিয়র প্রদীপচন্দ্র, শিল্পকলায় যামিনী-গগনেন্দ্র ,স্বর্ণে পিসিচন্দ্র আর সর্বোপরি মিষ্টান্নে কে.সি.দাস কিংবা যাদবচন্দ্র.....এদের নিয়েই বাঙালী বহাল তবিয়তে কাল যাপন করছে। যুগ যুগ ধরে এ শহর তৈরি করেছে ব্রান্ডেড-ব্যাক্তিত্ব । যেমন অফুরান হাসিতে ঘনাদা, রহস্যে ফেলুদা, রোমাঞ্চে টেনিদা ইত্যাদি।

এখনকার বহুতলে বর্ণময় কলকাতার তালতলা , বেলতলা , নাকতলার সাথে যুক্ত হয়েছে হাইতোলা ও হিলতোলা এক কালচার। এ কলকাতার হাওয়ায় হাঁপানি হয়, জলে জন্ডিস হয়,এবং মশায় ম্যালেরিয়া হয়।আধুনিক কলিকাতার দার্শনিক মানুষের জলে এখন আর্সেনিক, নবনির্মিত নর্দমার মুখে প্ল্যাসটিক ,যা কিনা পরিবেশবিদের উদ্বেগের কারণ। মিষ্টান্নে মেটানিল-ইয়েলো এবং সরবতে এলিজারিন-রেড রসায়নবিদের গবেষণার বিষয়।

পথে যেতে যেতে কলকাতা কে দেখে একখানা পুরভর্তি মচ্ মচে পরোটা মনে হয় যার কোথাও যাদবপুর,কোথাও সেলিমপুর; কোথাও আলিপুর তো কোথাও চিত্পুর। কখোনো আবার আলমবাজার, বড়বাজার, বাগবাজার, শ্যামবাজার, নাগেরবাজার শুদ্ধ এ শহরকে মনে হয় বাস্তবিকই আমরা প্রত্যেকে বিগ্-বাজারের ব্যাপারী। যে শহরের আকাশে বাতাসে মাছের আঁশটে গন্ধ কেন তার কাছে অ-বাঙালীর ভীড়্? চিংড়িহাটায় জ্যাম নিয়ে ,তপসিয়ায় তৃণমূলীদের নিয়ে, ট্যাংরার চাইনিজ নিয়ে আমরা আজও আছি ও থাকবো। ভেতো বাঙালীর বাজারের থলি থেকে সজনেডাঁটা আর পুঁইশাক উঁকি দেবে। বাঙালীর পোস্তোচচ্চড়ি ছাড়া কড়াই এর ডাল রুচবে না , বাঙালী যুত করে মাছের কাঁটা চচ্চড়ি চিবোবে, বাঙালী মজা করে মৌরলার টক খাবে আর সরষের তেল ছাড়া ইলিশমাছ রাঁধবে না । এই নিয়ে তারা শন্তিতে থাক না.. ক্ষতি তো নেই। তাতে যদি অন্যের ক্ষতি না হয় ... রোজ সন্ধ্যায় তুলসীতলায় আলো দিয়ে রেডিও খুলে অনুরোধের আসরে প্রতিমার আরতি শুনুক .. ...অথবা বিকেলে ভোরের শুকনো ফুল ফেলে শাঁখ বাজিয়ে বাড়ির মঙ্গল কামনা করুক .... নৈশাহারের পরে দিলখুশের জন্যে মন উস্-খুস্ করবে, নতুন প্রজন্ম লোডশেডিং এ অঙ্ক কষে বিদেশ যাবে, বাংলা ব্যান্ডের ফাজলামি আর নেতাদের পাগলামি নিয়েই পড়ে থাকবো...ক্ষতি কি? শুধু দফ্তরের ডেস্কে বসে ঘুমোব না আর নিজের পায়ে কুড়ুল মারব না। তাহলেই আমাদের মোক্ষলাভ হবে। সৃজনশীল বঙ্গসন্তান বুদ্ধি বেচে বড় হবে, অদূর ভবিষ্যতে কোলকাতা হবে "The entertainment hub for the world" যেথায় আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সৃষ্টি সুখের উল্লাসে উদ্দাম নৃত্য-গীত-বাদ্যের সমন্বয়ে জগতের মনোরঞ্জন করে "কলযুগ্-কি-কলিউডের" আখ্যা পাবে। এখানেই তার সার্থকতা। তথ্য-সংস্কৃতি-শিল্পকলার সেরা পীঠস্থানে বঙ্গ সন্তানদের শর্মিলা-জয়া-রাণী-রিয়ার মতো কিংবা রাহুল-কিশোর-শান-শানুর মতো মুম্বাই পাড়ি দিতে হবে না।কলকাতার মানুষ দোল-দুর্গোত্সবে দক্ষযজ্ঞ নিয়ে, বামে-ডানে দলাদলি করে, নন্দনে সত্যজিতের বন্দনা, রবীন্দ্রসদনে রবির আরাধনা আর রবীন্দ্র সরোবরে প্রেমের উপাসনা নিয়ে যদি কোনো এক দিন জগতের আনন্দ-যজ্ঞে নিমন্ত্রণ পায় ......শুধু ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি -hypocrisy এবং corruption এই মানিকজোড় যেন আমাদের জীবন থেকে বিদায় নেয়। পুনরায় আমাদের কল্লোলিনী কোলকাতা যেন ভারতবর্ষের রাজধানী হবার যোগ্যতা অর্জন করে। উপর থেকে নেতাজি-নেহেরু-গান্ধীরা দিল্লির মসনদের ঘাড় ধরে কোলকাতায় নিয়ে আসার আদেশ দেন। এ তো যেকেনো সময়েই সম্ভব। মহম্মদ-বিন্-তুঘ্-লক্- আমাদের সেই রূপ শিক্ষা দিয়েছেন।

সবশেষে বলি, কলকাতার কালিমা ,কলুষতা ,কপটতা আলোকের ঝর্ণাধারায় ধুয়ে মুছে সাফ হোক। এই জনমেই ঘটাতে চাই--- জন্ম-জনমান্তর........ সুন্দর,হে সুন্দর!!

(সমাপ্ত)

১৬ জুল, ২০০৮

More ভাবনারে ..... দ্বিতীয় পর্ব

প্রায় অর্ধ শত বত্সর পূর্বে দেশবরেণ্য চিকিত্সক বিধান রায় তিল তিল করে গড়ে তুলেছিলেন তাঁর সুপরিকল্পিত স্বপ্ননগরী সল্টলেক। আজ কলিকাতার মহান ব্যক্তিরা ,আমলারা এবং সর্বোপরি নেতারা সেথায় সুখে-স্বচ্ছন্দে ঘরকন্না করছেন । কলিকাতার লবণহ্রদ আজকের বাংলার সিলিকন-ভ্যালি।আহা! বিধানচন্দ্র দেখে যেতে পারলেন না । তিনি আরো কিছু দেখে গেলেন না, নিজ হাতে গড়া তাঁর এ শহরের চিকিত্সা-ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হয়েছে। আধুনিক কলকাতার হাসপাতালের কি দশা আজ!! শল্যচিকিত্সকেরা একহস্তে শাণিত scalpelসহ বরাভয় এবং অন্যহস্তে স্টেরিলাইজড scissors সহ আশীর্বাদ নিয়ে হাসপাতালের operation theatre এ স্বাগত জানাতে সর্বদা অপেক্ষমান। এ কি মুখের কথা? বিধানচন্দ্র রাজারহাটে চাঁদের হাট বসেছে তাও দেখে যেতে পারলেন না । কেষ্টপুর ক্যানেলে গন্ডোলা চলল বলে!!

আজকের কলিকাতার উত্তরে, দক্ষিণে, পূর্বে, পশ্চিমে শুধু শপিং মল । কত বাজার , কত মল্টিপ্লেক্স, কত বহুতল |পশ্চিমে বিদ্যাসাগর সেতু ধরে কোনা এক্সপ্রেস ওয়ে ধরলে সোজা গিয়ে পড় পূর্বতন সরকারের সুচিন্তিত পরিকল্পনা 'স্বর্ণালী-চতুর্ভুজ-সড়ক- যোজনার'সার্থক রূপ দেখতে। কলিকাতা থেকে যেদিকে খুশি যাও। কোনো বাধা নেই। বম্বে রোড ,দিল্লি রোড যা খুশি ধরে জাহান্নাম,বেহেস্ত যেদিকে দুচোখ যায়...আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র সেই কবে বলেছিলেন"বাণিজ্যে,বসতে,লক্ষ্মী" আজকের কলিকাতা দেখলে তাঁর প্রাণ জুড়িয়ে যেত... একদা যারা বড় মুখ করে রক্ত দিয়ে রুখেছিল automation তারাই আজ automation এর গুণকীর্তন করছেন।অনেক বছর পিছনে চলার পরে কলকাতার মনুষ্যজন ঘুমের ঘোরে বিবেকানন্দের অমোঘ বাণী শুনতে পেয়েছে...."উত্তিষ্ঠিত ! জাগ্রত !"তাই পুনরায় চলতে শুরু করেছে। এ শহর পারে শুধু পরকে আপন করতে, নিজেকে পেছনে ফেলে পরকে এগিয়ে দিতে। নিজের ব্যবসায় ইতি টেনে ভিনদেশিদের স্বাগত জানাতে। এ শহরে এখন শিল্পের জোয়ার, হাইটেকের বান | নগরবাসী সালিমের কাছ থেকে ব্যাবসার তালিম নিচ্ছে। টাটার সাথে হাঁটা শিখছে। প্রফুল্ল-বিধান উপর থেকে আশীর্বাণী বর্ষণ করে বলছেন,"বেটার,লেট ; দ্যান নেভার ; "

আজকের কলিকাতা দেখে জোবচার্নক বোধ করি বলে উঠতেন এই কি ছিল সুতানটি ? আজকের কলিকাতা কোলকাতা তে যেতে যেতে থমকে দাঁড়িয়ে গেছে, সুতানটির লোকজন খুনসুটি করে ধমকে দিয়ে গেছে আমাদেরকে, আমরা চমকে উঠে দেখি কোলকাতায় ঘোর কলিযুগ। আজ কোলকাতা প্রাচ্যের ভেনিসের মর্যাদা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভূমধ্য-সাগরীয় ভেনিস অপেক্ষা গাঙ্গেয় ভেনিস কোনো অংশে কম নয়। বন্ধ্যা রাজনীতির এই মিছিল নগরী পাশ্চাত্যের পর্যটককে আহ্বান করছে এ শহরে পা দেবার জন্য। কি দেখানোর জন্যে? উপছে পড়া জনস্রোতে এ নগরীর রাজপথে সদা কোলাহল, শত ব্যস্ততা | শুধু ভীড় আর মিছিল এই দেখাবে তাদের ? এ স্থানে বারোমাসে তেরোপার্বনের সঙ্গে চতুর্দশতম ব্রত হোল বন্-ধ্- উদ্-যাপন । এখানে বর্ষা নামলে জল নিষ্কাশনের সকল পথেও বন্-ধ্- । তাই গ্রীষ্মাবকাশের পরে বিদ্যালয়গুলিতে পুনরায় বর্ষাবকাশের ছুটি ঘোষণা করা হয়। এ শহরে বিশ্বায়নের টারবাইন বোঁ বোঁ করে সর্বক্ষণ ঘুরছে । ফলে বিদ্যুতের চাহিদা ও শোঁ শোঁ করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু বিকৃত মানুষ দ্বারা পরিচালিত এবং বিকল যন্ত্রাদির দ্বারা উত্পাদিত বিদ্যুত চাহিদার যোগান দিতে পারছে না ফলে কলকাতাবাসীদের ভবিষ্যত সহ বর্তমান ও তমসাবৃত হয়ে গেছে। এ রাজ্যের মানুষের লোক-লৌকিকতা ,আতিথেয়তা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। কিন্তু বিশ্বের মানুষজন অতিথিরূপে আমাদের গৃহে পা দেবার পূর্বে জঞ্জালপূর্ণ পথ-ঘাট অবলোকন করে তাদের যেরূপ ব্রহ্মজ্ঞান হবে তার ফলে গৃহের অভ্যন্তরে প্রবেশের মানসিকতা লোপ পাবে।

স্বাধীনতার পূর্বে যে সব প্রাসাদোপম অট্টালিকা নির্মিত হয়েছিল তারাই কোলকাতার ঐতিহ্য আজীবন বহন করে চলবে। স্বাধীনতা-উত্তর যুগের বাবুরা নতুন কিছু গড়তে না পারলেও পুরানোগুলিকে ভেঙে-চুরে তাল গাছের সাথে পাল্লা দিয়ে নতুন নতুন লম্বা,লম্বা বসতভিটা বানাবে। ঐতিহ্যবাহী রাস্তাগুলির কেতাদুরস্ত নাম বদল করে নতুন গালভরা নাম রাখবে | অর্থাত্ বোঝা যাচ্ছে যে কাজ অতি সহজে সম্পন্ন করা যায় সে কাজ বাঙালী চটপট করে নাম কিনতে চায়।

যাদের জন্য দলে দলে মেধাবী ছাত্রেরা যখন প্রবেশিকা পরীক্ষা দিয়ে অন্য রাজ্যে পাড়ি দিল তখন ব্যাঙের ছাতার ন্যায় পোলট্রির ডিমের গুণমান সম্পন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ খোলা হল । একদা এ রাজ্যের নেতাজী,রবীন্দ্রনাথ, অরবিন্দ,বিবেকানন্দেরা বিদেশে গিয়ে ইংরেজিতে জ্বালামুখী ভাষণ দিয়েছেন | এখন সেই রাজ্যে প্রাথমিক স্তরে ইংরাজী পাঠ থাকবে না তুলে দেওয়া হবে সেই নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই।
(ক্রমশঃ)

১৩ জুল, ২০০৮

More ভাবনারে ..... প্রথম পর্ব

প্রথমে ছিল বেহুলার ভেলা, চাঁদ-সদাগরের সপ্তডিঙা, তারপরে দেবী-চৌধুরাণীর বজরা,পর্তুগীজ জলদস্যুদের ছিপ নৌকা, তার আরো পরে ক্লাইভের জাহজ । এ হল জলযানের ফিরিস্তি। তার সাথে ছিল কুলীনদের পালকি করে বৌ আনা , গ্রামের লোকের গো-যান ,জমিদারের অশ্বযান, সাহেব-বিবিদের ফিটন গাড়ি , ঘোড়ায় টানা ট্রাম ,হেনরি ফোর্ডের মডেল-টি , ক্রমে ইলেকট্রিক ট্রাম ,দেহাতিদের টানা রিকশো , বাস, মিনিবাস, মেট্রোরেল, দম আটকানো অটোরিক্সা ... তারপরে পাঁই পাঁই করে কেবল ফিয়াট আর আরাম করে এমবাস্যাডার চলত ... আর এখন? ম্যারাথনে মারুতির সাথে মার্সিডিজ , হৈ হৈ করে হুন্ডাই ,হা হা করে হন্ডা , শোঁ শোঁ করে শেভ্-রোলে আর ফুড়ুত্ করে ফোর্ড , টগ্-বগ্ করে টয়োটা ধূলামাটির শহরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এভাবে হল স্থলযানের বিবর্তন ।

কত ছোটাছুটি হ'ল ,পায়ে হেঁটে পাণিহাটি থেকে সুতানটি, পালকি চেপে ব্যারাকপুর থেকে গোবিন্দপুর, বজরায় চাঁদপালঘাট থেকে কুটিঘাট , বাসে করে খড়দা থেকে শিয়ালদা, ট্রামে চেপে শ্যামবাজার থেকে বড়বাজার, ট্রেনে করে খড়গপুর থেকে বারুইপুর ,আবার খানিক হেঁটে তালতলা থেকে তারাতলা ...ঠিক এমন করেই পায়ের তলায় সর্ষে নিয়ে কলিকাতার মানুষজন নিয়ে বেঁচে বরতে আজও কলিকাতা আছে কলিকাতাতেই। "কলিকাতা চলিয়াছে নড়িতে নড়িতে " এ যুক্তির যথার্থতা কলিকাতার সব বাঙলী না বুঝলেও অন্য প্রদেশের বাঙালী,অ-বাঙালী সকলেই বোঝে। ১৬৯০ সালে জোব্-চার্নক কলিকাতা মহানগরীর গোড়াপত্তন করেছিলেন । তখন শিয়ালদহে সত্যি সত্যি শৃগাল প্রতি সন্ধ্যায় সুর-সাধনা করতো, বাগবাজারে বাঘ বেরোতো, হাতীবাগানে হাতী না থাক, হায়ানা হা হা করে হাসতো, আর গোবিন্দপুরের জঙ্গলে নাগরাজ বাসুকির আধিপত্য ছিল। ৩১৮ বছর পূর্বে জোব চার্নক অনুধাবন করেছিলেন এ শহরের মাহাত্ম্য। এ শহরের মৃত্তিকার কনায় কনায় কণক-দানা ,যার প্রমাণস্বরূপ এখানে প্রোমোটার-কাম-ডেভালপার রাজ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। মহাপুরুষের বাণী কি বিফলে যাবে? শ্রীরামকৃষ্ণ সেই কবে বলেছিলেন "টাকা মাটি, মাটি টাকা"| আহা! ঠাকুর দেখে যেতে পারলেন না।

জোবচার্নক আড়িয়াদহ গঙ্গার ঘাটে পরিক্রমাকালে এক হিন্দুরমণীর প্রেমে পড়েন ও তাকে বিবাহ করেন। সেই মহিলা যদি জানতেন যে উত্তর কলিকাতার বিবেকানন্দ সেতুর পার্শ্বে নিবেদিতা সেতুর কি অপূর্ব মেলবন্ধন সৃষ্টি হয়েছে ,তা হ'লে সাহেব-সুবোর নিকট তার পিতৃগৃহের কদর আরো বৃদ্ধি পেত। কি কলা-কুশলী! কি দৃষ্টিনন্দন কারিগরী। কলিকাতা এই মূহুর্তে সেতু-নগরী । আগে ছিল হাওড়া ব্রীজ,ভারতবর্ষের প্রথম ফ্লাই-ওভার ব্র্যাবোর্ণ রোড ফ্লাই ওভার , শিয়ালদা'র উড়াল-পুল। পরে হেমন্তসেতু, বিজন সেতু, অরবিন্দ সেতু, আরো পরে শম্বুক-গতিতে তৈরী হল বিদ্যাসাগর সেতু । তার পরে আর চেয়ে দেখতে হয়নি। প্রয়োজনীয়,অপ্রয়োজনীয় সেতুতে সেতুতে ছয়লাপ। বেচারা রামচন্দ্র! কি কষ্ট করে সেতুবেঁধেছিলেন! তিনি বেঁচে থাকলে অবশ্যই রামেশ্বর স্টাইলের আরো দু চারটে সেতু গঙ্গাবক্ষে এত দিনে নির্মাণ হয়ে যেত। তফাত কেবল একটাই। বানরসেনার সেতুবন্ধে কোনো ক্যাপিটাল cost ছিলনা।

যোগাযোগ ব্যাবস্থায় কলিকাতার জন্মলগ্নেই বৃহস্পতি তুঙ্গে। ভৌগালিক সীমারেখা আদি অনন্তকাল থেকেই একে বর্গি,জলদস্যুর হাত থেকে যেমন রেহাই দেয়নি ,ঠিক তেমনি ইউরোপিয় বণিকদের আশ্রয় দিয়ে তাদের ব্যাবসা বাণিজ্যের পথ ও সুগম করে দিয়েছিল। সেই জন্যই সাহেব-সুবো বুঝতে পেরেছিল তাদের এই প্রাণের জায়গাটি অর্থাত 'ক্যালকাটা' সারা ভারতবর্ষের রাজধানী হবার যোগ্য। এর অন্যতম ও প্রধান কারণ হোল এ নগরীর যোগাযোগ ব্যাবস্থা |আর সহজলভ্য শ্রমিক,যারা অন্যের হাতে মার খেয়ে কাজ করতে প্রস্তুত,আর তার সাথে বিদেশি বণিকের মোসায়েবি করতে পিছপা নয় এরূপ উত্কোচলোভী বাঙালি-বাবু |

(ক্রমশঃ)

৩ জুল, ২০০৮

আজকের অরুণ,বরুণ,কিরণমালা

সন্টু,মন্টু,পিন্টু.....যে যেখানে আছিস শুনে যা বাছা, দেখে যা ,শিখে নে তোরা | গুপী আর গান শোনাবে না, বাঘা আর বাজাবে না। সবুজদ্বীপে রাজা নেইরে, হীরকরাজার দেশে আমরা যাবনা কক্ষোনো। ঠাকুমার ঝুলি পড়ে কি লাভ? কঠিন জ্যামিতি,পরিমিতি করেই বা কি হবে? ভূত-পেত্নী-দত্যি-দানব সত্যি সত্যি নেই রে ,রাম-রাবণের যুদ্ধ মিথ্যে। পক্ষীরাজ ঘোড়া কোনোদিনও ছিল না । আমরা সকলে তোদের এতদিন শৈশবকে আমাদের কাজে লাগিয়েছি।তোদের ঘুম পাড়াবার জন্য গল্প বলেছি। সব মিথ্যে...সব ঝুট হ্যায়.....

আমরা,হ্যাঁ আমরাই শিশুদের শৈশবের শ্রাদ্ধ করে, কিশোরের কৈশোরকে কেড়ে নিয়ে তাদের একটু আগে আগেই যৌবনের দায়ভার নিতে বাধ্য করলাম। শিশুরা আর ছোটো নয় এখন। সভ্যতার তরল-গরল গলায় ঢেলে তারা ছুটে চলেছে । তাদের পড়াশুনোর কি প্রয়োজন? তাদের বাঁয়ে কেব্ ল্ মামা তো ডাইনে এফ্-এম্- দাদা । মাথার ওপরে মোবাইল ম্যাজিক তো নীচে পর্ণোগ্রাফি। তারা শুনছে যেমন গান ,দেখছে তেমন নাচ । গানের যেমন ভাষা তেমন সুর | তারা "হাসছি মোরা হাসছি দেখ, হাসছি যেন আহ্লাদে" ভুলে(জরা) স্কোয়ার (টাচমি)কিউব অথবা ঝলক দিখলা যা ... খুল কে বাতা'র বাতাবরনে বড় হচ্ছে বাবা! টিভিতে রিয়েলিটি শো তে কোনোটিতে হয় শিশুদের নাচ,কোনোটিতে কিশোরীদের গান |যেমন তাদের অঙ্গ-সুষমা ,তেমন তাদের লাবণ্য-লালিমা । কখনো কিশোরীটি লাস্যময়ী যুবতী কখনো অপাঙ্গে দৃষ্টিহানা হাস্যময়ী সুন্দরী । প্রতিনিয়ত প্রচার মাধ্যমে শিশুর শৈশবের ও কৈশোরের এহেন অপহরণ আর সহ্য করতে পারছিনা। মনে হচ্ছে, এ কোন যুগে পদর্পণ করলাম? যেখানে কিছু অর্থলোলুপ,স্বার্থান্বেষী নরপিশাচ শিশু-কিশোরকে যৌবনের খুঁটি-নাটি টিপ্-স্- সহ আকর্ষনীয় শরীরি-বিভঙ্গ ,রগরগে পোশাক এর সোনালী মোড়কে আবৃত করে রূপোলী পর্দায় পেশ করছেন। শিশুটি একটি অকালপক্ক্ব যুবাকীটে রূপান্তরিত হচ্ছে। যেটি পিউপা থেকে লার্ভা না হয়ে ডাবল্ প্রোমোশান পাওয়া একটি প্রজাপতি। এই সব শিশুর কি ভবিষ্যত? এদের দেখে আর কি কখনো মনে হবে"ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে" ? কিই বা এদের জীবনাদর্শ?এরা হয়তো বর্তমানে এবং ভবিষ্যতে পর্যাপ্ত অর্থ উপার্জন করবে কিন্তু এদের রুচিবোধ,শালীনতা নীতিবোধ কি কিছু অবশিষ্ট থাকবে? অথবা কৈশোরে এত অর্থের স্বাদ পেয়ে গেলে যৌবনে ধরা কে সরা জ্ঞান করবে। এত প্রাচুর্য্যের কি প্রয়োজন আছে?

"বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে" - এই উক্তির অবতারণা করে বলি,দোহাই,বিজ্ঞাপনদাতা! দয়া করে শিশুর যৌনতায় সুড়সুড়ি দিয়ে ,তাদের পণ্যরূপে বাজারে প্রোমোট করবেন না, তাতে আপনাদের বাসনা সিদ্ধি না হোক ,দর্শকের কামনা চরিতার্থ না হোক । একান্ত প্রয়োজন থাকলে অন্য উপায় খুঁজুন , মেনে নিলাম যে, ব্যাপক বিশ্বায়নের ঢেউতে সাঁতার কেটে আমাদের শিশুরা ইঁদুর-দৌড়ের সামিল আজ। কিন্তু সাঁতারের পূর্বে কিরূপে, কখন ডুব দিতে হয় , বা নিঃশ্বাস নিতে হয়, এই শিক্ষা না নিয়ে বিশ্বায়নের ঢেউয়ের সম্মুখীন হ'লে বিপদ বাড়বে বই কমবে না।

২২ জুন, ২০০৮

ব্-বা-বু উপাখ্যান

এবাড়ীর বাবু বেজায় কুঁড়ে, বিশাল তার ভুঁড়ি, ব্যাপক তার নাম ডাক, বড্ড ঘুম কাতুরে আর ভীষণ ভোজন রসিক। বাবু কানে সুড়সুড়ি দিয়ে খুব আরাম বোধ করেন,বাবু পুরো গরমকালটা খালি গায়ে,সারা বর্ষাকালটা ছাতি মাথায় না দিয়ে আর সমস্ত শীতকালটা লেপ-কম্বল না গায়ে দিয়েই কাটিয়ে দেন। ঘুম পেলে বাবু বড় বড় হাই তোলেন, আর বিকট হুঙ্কার ছাড়েন।আর ঘুমিয়ে একবার পড়লে আর রক্ষে নেই তাঁর নাসিকাগর্জনে ঘরের ঘুরন্ত পাখা মাঝে মাঝে থেমে যায় আর কি! নাকডাকানির চোটে বোলতা ঘরে ঢুকেই ভয়ে বেরিয়ে যায়। বাবু খেতে বড্ড ভালবাসেন তা সে যা' হোক, দর্পের সঙ্গে বলেন বাবু " anything that is not moving,while I am eating"চচ্চড়ি থেকে চিংড়ি ,বিয়ার থেকে বিড়ি, কাটলেট টু চকোলেট, পেস্ট্রি কি মিষ্টি ,বেগুনপোড়া থেকে সিঙ্গাড়া, সর্ষে কাঁকড়া দিয়ে শুরু করে পোস্ত-আমড়া, চিলি পর্ক টু মৌরলার টক, বিরিয়ানী সে লেডিকেনি তক সানন্দে গ্রহণ করেন। যখন বিদেশে বাবু ছিলেন তখন যে সব 'edible exotica'র দ্বারা তাঁর gastronomic satisfaction হয়েছিল সেসব খাবারের গল্প এখনো সুযোগ পেলেই ছেলেকে শোনান। কারন বাবু বিশ্বাস করেন যে সাহিত্য,অঙ্কের মত চর্চা না করলে বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যাবে তাঁর 'rude food'এর রসনাতৃপ্তির সুখস্মৃতি। একদা জিভের কোণে হারিয়ে যাওয়া অয়েস্টারের ঘিলু কিংবা দাঁতের ফাঁকে আটকে যাওয়া বেবি অক্টোপাসের শুঁড়--এই সব আর কি! "কি ভালই না খেয়েছিলাম জানিস।" সিঙ্গাপুরের পেল্লাই সি ফুড প্লাজায় কবে শার্ক-ফিন-স্যুপ খেতে খেতে বাবু হাঙ্গরের সাইজটা আন্দাজ করেন,কখনো স্টার-ফ্রায়েড-স্কুইড খেতে খেতে ডিস্.কভারি চ্যানেলে দেখা অতলান্তিকের তলায় অজস্র শুঁড় তোলা স্কুইডের ছবি ভেসে ওঠে তাঁর চোখে। অস্ট্রেলিয়াতে গিয়ে বাবু অক্স্-টাং-ইন -অরেঞ্জ সস খেয়ে ভেবেছিলেন,এই কি সেই তার বাবার মুখে গল্প শোনা হলস্টাইন ষাঁড়ের জিভ চুষছি?--তুলতুলে নরম, কি সুস্বাদু!

ছাত্রাবস্থায় ,আমেরিকাতে থাকাকালীন 'রেড-লবস্টার' রেস্তোরাঁতে কিং সাইজ জাম্বো-মাম্বো গলদার রংচঙে ছবি দেখে বাবুর মনে হ'ত,"ইস ! কলকাতার জঞ্জালের ভ্যাটে যদি এর খোলা পড়ে থাকে তবে কুকুর-ছানা তার মধ্যে দিয়ে ঢুকবে আর বেরুবে।" আমেরিকায় ছাত্রাবস্থায় এই লবস্টার affordকরা কি মুখের কথা? হতো যদি লেক-বাজার থেকে কিনে এনে কমলার মাকে বলতে পারতাম মালাইকারি বানাতে। কিন্তু দশ ডলার দিয়ে একটা মাছ খেতে বুকে বড় ব্যাথা হয়,হাঁটুতে খঞ্জনি বাজতে শুরু করে। কারন বাবা আসবার সময় বলে দিয়েছেন,ছাত্রাবস্থায় ডলার একদম নষ্ট না করতে, আগে চাকরী পাবে তার পর । তাই লবেস্টার-কো-বাবালোগ দের নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হোত। কোনদিন বাবু তার শালাবাবুর সাথে জমিয়ে বিয়ার খেতে খেতে প্যাসিফিকের তীরে বসে শ্যাম্পেন উইথ ক্যাভেয়ার সেবনের গল্প করেন। সদ্য কাটা স্টার্জন মাছের ডিম কে দু-ফোঁটা লেবুর রস আর সস দিয়ে শ্যাম্পেনের সাথে পরিবেশন করা হয়। "কোনদিন দেখবে, বর্ষায় থৈ থৈ লেকের জল থেকে কৈ মাছ ধরে ,হৈ হৈ করে তার পেট থেকে দুষ্প্রাপ্য কৈ-ডিম্ব কে বার করে ঐ ভাবে বিক্রি করা হচ্ছে"বাবু বললেন।

এ তো গেল বাবুর ভোজনবিলাসিতা। বাবু যখন প্রথম মায়ের আঁচল ছেড়ে হোস্টেলে গেলেন ইঞ্জিনীয়ারিং পড়তে, ragging ধাক্কায় মিশমিশে কলো,সুললিত গোঁফজোড়ার একদিকটি ছেলেরা কামিয়ে দিয়েছিল|পরের বার বাড়ি আসার পরে মা তো তাঁর শ্বশ্রুগুম্ফহীন পুত্রকে দেখে তো মাথায় হাত! বাবু আসলে বাঁশবেড়িয়ার বাঁড়ুজ্যে । নাম বংশগোপাল। বাবু বরাবর ই বিস্তর বুদ্ধিমান। বিদ্বানবাবু বিজ্ঞানশাস্ত্রে ব্যুত্পত্তি লাভ করে,বিদেশ থেকে বড় বড় ডিগ্রী নিয়ে পুনরায় স্বদেশে প্রত্যাগমন করেছিলেন; সেইখানেই বাবুর সাথে আর পাঁচজন বৈজ্ঞানিকের তফাত। বাবু বইয়ের পোকা। লেখনীর জোর ও বাগ্মী হিসেবে বিদ্বজনমহলে বাবুর কদর আছে। বাবু বিগব্যাং থেকে বিশ্বযুদ্ধ,থিয়োরি অফ রিলেটিভিটি থেকে গোদেল'স থিয়োরেম ম্যালথাস থেকে মুদ্রাস্ফিতী নিউটন থেকে নেতাজী, এমন কি বদ্রীবিশাল থেকে বিবেকনন্দের মাহাত্ম্য-- এ সব কিছু নিয়েই বহুক্ষণ আলোচনা চালাতে পারতেন। বাবু খেলাধূলায় বিমুখ কিন্তু প্রত্যেক খেলার নিয়মাবলী বা সাজ-সরঞ্জাম বিষয়ে তাঁর জ্ঞানের পরিধি যেকোনো ক্রীড়াসাংবাদিককেও হার মানিয়ে দেবে। কোন পোশাকে বিলিয়ার্ড রুমে ঢুকতে হয়্,গল্ফকোর্সের কোথায় গর্ত থাকে,পোলো খেলাতে কখন বিরতি হয় বা ফর্মুলা ওয়ান রেসিং এ কখন কটা পিটস্টপ হবে,এ সব তার নখদর্পণে।

বাবু বেজায় কাবু হয়ে যান একটি ব্যাপারে,যখন তাকে গান নিয়ে কোনোও প্রশ্ন করা হয়। সঙ্গীত ও আনুষাঙ্গিকের ওপর তার নেই কোনো টান-টুন। এ জন্মে তার কন্ঠে গুপীর মতো বেসুর আর হস্তে বাঘার মতো বেতাল,তাই পরের জন্মে কোকিলের মাংসের বার্-বি-কিউ খাবার বাসনা আছে তার। তাহলে যদি নারদমুনি একটু কৃপা করেন। জগতের বুকে প্রতিনিয়ত কত ই না সুরসাধনা চলেছে, তাতে বাবুর কোনো হেলদোল নেই।

বাবুর কাছে যাহাই সঙ্গীত তাহাই শব্দ,যাহাই শব্দ তাহাই দুষণ রূপে পরিগণিত হয়।কে হেমন্ত,কে বসন্ত, কে আশা আর কে নিরাশা, কে রাঘব কে বোয়াল ,কে সোনু আর সে কি হনু, এসব নিতান্ত ই তুচ্ছ। দাদরা,কাহারবা,কিম্বা jazz, rock, pop, reggae....মানেই "শব্দ-কল্প-দ্রুম্"|কেবল নিজের গালে পটাপট থাপ্পড় কষিয়ে আধুনিক তবলায় লহরী তোলার কড়া সমালোচক তিনি।
বিদ্যাসাগর-বঙ্কিমের যুগে আমরা যে বাবুচরিত্রের পরিচয় পাই সেই তথাকথিত বাবুদের থেকে আমাদের বংশের মুখ উজ্জ্বলকরা বংশগোপাল বাবু সম্পূর্ণ আলাদা। ইনি বাপ-ঠাকুরদার পয়সায় ফুটানি না মারা বাবু।ইনি হেড অফিসের বড়বাবুর মতো ঘুষ না নেওয়া শান্তবাবু। কখনো তার অকালপক্ক কেশরাজিকে রঞ্জিতকুন্তলে পরিণত না করা বাবু। বিদেশের ভালটুকু নিয়ে ,আর বাঙালীয়ানাকে বিসর্জন ন দিয়ে বিদেশ থেকে ফিরে আসা বাবু। বাবু ভোজন-পানীয়-নিদ্রা বিলাসী কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত নয়। তিনি পূর্বসুরীদের পয়সায় ফোতোকাপ্তেনি করা বাবু নন যিনি দুর্গাপুজোর শেষে নীলকন্ঠ পাখী না উড়িয়ে উত্তরসুরীদের জন্য সঞ্চয় করেন। আধুনিক সমাজে যে বেগুণ সম্পন্ন বাবু উত্পন্ন হচ্ছে তা দেখলে মনে হয় এরূপ বাবুর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকলে বাঙালীর ভবিষ্যতে হাতে হ্যারিকেন,গলায় গামছা।

হঠাত্ বড়লোক বাবু তার্কিক বাবু ,অধুনা বড়লোক বাবু 'মিস্-ড্-কল্-কালচারে' অভ্যস্ত বাবু হালেরশাইন করা বাবু ' blue-arrows 'চড়া বাবু |সদ্য বড়লোক হওয়া বাবুর বাড়ীর মাছ-ভাত রোচেনা | বেশীবড় বিদ্বান বাবু বিদেশে গিয়ে দেশের কথা ভুলে যান। বেঁড়ে পাকা আজকের বাবুদের ছদ্মগাম্ভীর্য ই সার । বিশ্বায়নের প্রবল গতিতে তাদের বিচার,বুদ্ধি,বিবেক প্রায় লোপ পেতে বসেছে |

২ জুন, ২০০৮

বিষয় - একটি একাঙ্ক নাটক

নাট্যকার - জয় নন্দী।
নাটক - "গ্রামের মেয়ের ক্ষমতা" ।
নির্দেশনা - পাওলি মিত্র।
অভিনয়ে -সুবর্ণ সেন, শৌভিক সেন এবং অন্যান্য ।
শিল্পনির্দেশনা - বরদাপ্রসন্ন।
স্থান - খেজুরি, মুক্তমঞ্চ।


প্রথম দৃশ্য

[ স্থানীয় চাষী উপেন মালিক হাত জোড় করে জমিদার বাবুর নিকট হাঁটু গেড়ে বসে আছে।]
বাবু বলিলেন "বুঝেচো উপেন! এ জমি লইব কিনে"।
উপেন বলিল "আপনি ভূস্বামী ভূমির অন্ত নাই, চেয়ে দেখো মোর আছে বড় জোর মরিবার মত ঠাঁই"।
বাবু - "পেলে দুই বিঘে প্রস্থে ও দীর্ঘে, গড়ি রসায়ন কারখানা"।
উপেন (কাঁদিতে কাঁদিতে) - "শুধু বিঘা দুই ছিল মোর ভূঁই ..."।

দ্বিতীয় দৃশ্য
[ উপেনের পুত্র তাপস মালিকের প্রবেশ। ]
বাবু - "ন্যায্য মূল্যের বিনিময়েও দেবে না জমি?"
তাপস - "বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচাগ্র মেদিনি(পুর)" ।

তৃতীয় দৃশ্য

উপেনের পৌত্র, তাপসের পুত্র ভূপেন ও তার বন্ধু খগেনের প্রবেশ।
ভূপেন - "এমন মানব জমিন রইল পতিত আবাদ করলে ফলত সোনা"।
খগেন - "আর আবাদ না করলে তোমার বৌএর গায়ে উঠত সোনা"।
ভূপেন - "বেশ ত ছিলাম, খাচ্ছিল চাষী ধান বুনে"।
খগেন - "আরো ভাল হত , জমি বেচে , ন্যানো গাড়ী কিনে ..."।
ভূপেন - "আমরা চাষ করি আনন্দে ... আয় রে মোরা ফসল কাটি ফসল কাটি"।
খগেন - "না ভাই, ফসল নয়, খাল কাটি জাহাজ আনি ..." ।
..............
বিবেকের প্রবেশ - "যে আছে মাটির কাছাকাছি সে কবির বাণী লাগি কান পেতে আছি"।
বাউল (গান ধরে) "গ্রাম ছাড়া ওই রাঙা মাটির পথ, আমার মন ভুলায় রে "।
বিবেক - "আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি"।


সমবেত কণ্ঠে - "ধন ধান্য পুষ্প ভরা, আমাদের এই বসুন্ধরা। তাহার মাঝে আছে দেশ এক সকল দেশের সেরা ও সে স্বপ্ন দিয়ে তৈরি সে দেশ মাটি দিয়ে গড়া!" 

৩১ মে, ২০০৮

পরিবেশের দম্ভ বেজায় - বাড়ির গরম, গাড়ীর গরম, হাওয়া গরম, মাথা গরম।

পরিবেশের দম্ভ বেজায় - বাড়ির গরম, গাড়ীর গরম, হাওয়া গরম, মাথা গরম।

ধন্যবাদ! আবহাওয়া দফতর! দোহাই আপনাদের, পচা গরমে, ঠান্ডা ঘরে বসে বসে , আমাদের আর স্তোক দেবেন না। মৌসুমী বায়ু দিক প্রত্যাবর্তন করে আসবে না। পুকুর নেই, ডোবা নেই, আছে শুধু মাল্টিস্টোরিড বিল্ডিং, শপিং মল, মাল্টিপ্লেক্স, ফুললি এয়ার কনডিশানড ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। সেই অনুপাতে বাড়ছে লোক, বাড়ছে গাড়ী, বাড়ছে এ-সি, বাড়ছে জেনারেটার, বাড়ছে রেফ্রিজারেটার। বিদ্যুত্ উত্পাদন সীমিত কিন্তু চাহিদা প্রচুর। বিদ্যুত নেই? জেনারেটার চালাও। আরে বাবা সে ও তো চলবে ডিজেলে। এদিকে পেট্রোলে, ডিজেলে ভর্তুকি দিতে দিতে সরকার ফতুর। মানুষকে সুখে থাকতে ভূতে কিলোয়। এরা বোঝেনা এঁড়ে গরু টেনে দুধ দোয়া যায়না। এরা ভুলে যায় "Resources are limited" গাছ কাটো, পুকুর বোজাও, ফ্ল্যাট তোলো, -সি বসাও, জেনরেটার চালাও, ঘরে বসে বসে টিভিতে আই-পি-এল-এর খেলা দেখ, আর চিপস্ চিবোয়, নয়তো ঠান্ডা পানীয় গেলো  -- মামারবাড়ীর আবদার পেয়েছো? তাই তো mother earth ক্ষেপে ব্যোম্ আমাদের ওপর। দক্ষিণপশ্চিম মৌসুমী বায়ু বিরূপ হয়েছে,ভাগ্যদেবতা ওপরে বসে বসে হাসছেন। সকলে দোষ দিচ্ছেন global warming কে, আরে কেন সেটা বল? greenhouse gas এ পরিবেশ সংপৃক্ত। তাই তাপমাত্রা কমবে না। আরে কার জন্য সেটা বলো? এবার বৃষ্টি হবে না। বৃষ্টি এলে ফেরিওয়ালার মত দূর দূর করে বলব চাই না আমাদের ,লাগবে না, দরকার নেই। বন্ধ করে দোব জানালা। লজ্জায় মুখ দেখবো না বৃষ্টির। বৃষ্টিকে স্বাগতম জানাতে দুঃখ হচ্ছে কারণ সে ও আমাদের কথা ভাবছে। আর আমরা আমাদের কথা না ভেবে প্রতিনিয়তঃ নিজেদের পায়ে কুড়ুল মারছি। আর বৃষ্টি হলেই তো জল জমবে। পর্যাপ্ত প্ল্যাস্টিক পূর্ণ পরিবেশের সব নর্দমার মুখে জল আটকে যাবে। তার থেকে "এই বেশ ভাল আছি" মেনে নিয়ে হাসি মুখে সহ্য করুন।

২৪ মে, ২০০৮

হারিয়ে যাওয়া ছেলেবেলা

বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর মনখারাপের সারাদুপুর ,
আবার কবে শুনতে পাব কাজলাদিদির পায়ের নূপুর?
লেবু গাছের ছায়ায় ছায়ায়
, চাঁপার বনে দুষ্টুমিতে ,
হারিয়ে গেছে ছেলেবেলা বইয়ের ভারে ব্যাগ বইতে ;
মায়ের সাথে ছাদের কোণে
, বৃষ্টিভেজা বিকেলবেলা ,
শিল কুড়িয়ে মুখেপুরে
,কুকুর নিয়ে কত খেলা,
কৃষ্ণচূড়ার পাতার ফাঁকে
,টুনটুনিটা আজও ডাকে,
কেমন করে সেলাই কোরে পাতার সংগে পাতা জোড়ায়।
জামগাছটায় এক ই সময়
, রোজ ই আসে কুটুমপাখি
মাছরাঙাতে মাছ ধরে খায় কাজলকালো তার যে আঁখি ।
উড়ে আসা তালপাতাতে মা বানাতো বাহারীফুল
,
কখনো বা মাটি দিয়ে আমার জন্য রকম পুতুল।
আজ ও সেথায় তালগছেরা দাঁড়িয়ে আছে সবাইমিলে
,
আমি ই শুধু চলে এলাম বিয়ের পরে তাদের ফেলে।

২১ মে, ২০০৮

জানেন কি ?

রবীন্দ্রনাথ এক উপন্যাসের সূচনায় লিখেছেনঃ "আরম্ভের পূর্বেও আরম্ভ আছে, সন্ধ্যাবেলায় দীপ জ্বালানোর আগে সকালবেলায় সলতে পাকানো।" ঠাকুর পরিবারের আদিপুরুষ জগন্নাথ কুশারী, পীরালি ব্রাহ্মণ অর্থাত মুসলমানের অন্নগ্রহণের দোষযুক্ত হয়েছিলেন। তিনি শুকদেব রায়চৌধুরীর এক কন্যাকে বিবাহ করে বাংলা দেশের খুলনা গ্রামের ভূসম্পত্তি পেয়ে সেখানেই বাস করতে শুরু করেন। পিরালী বামুনরা তদানীন্তন সমাজে এক ধাপ নীচের শ্রেণীর ব্রাহ্মণ বলে পরিগনিত হতেন। সেই কারণে জগন্নাথ হলেন 'পতিত'। জগন্নাথের কয়েক পুরুষ পরে তাঁর উত্তরসূরী পারিবারিক মনোমালিন্য হেতু খুলনা থেকে নৌকা কোরে চলে এলেন কলকাতায়।ততদিনে রাজধানী কলকাতায় ইংরাজ বণিকদের মৌরসীপাট্টা। অতএব জীবিকার জন্য চিন্তা নেই।কুশারীরা এসে ঘর বাঁধলেন গোবিন্দপুর গ্রামে,দরিদ্র হিন্দুসমাজের হরিজন পল্লীতে। সেখানে এতদিন একঘরও ব্রাহ্মণ ছিল না। লোকেরা তাদের মধ্যে ব্রাহ্মণ পেয়ে খুব খুশী।। খুলনায় যারা ছিলেন পতিত-পিরালী ,এখানে তারা হলেন "ঠাকুর-মশাই "। মুখে,মুখে চলল ঠাকুর-মশাই | তাঁরা ইংরাজদের মালপত্র ও সরবরাহ করতেন। ইংরাজদের মুখে মুখে "ঠাকুর-মশাই "শব্দটি অপভ্রংশ হতে হতে ট্যাগোর বা টেগোর হল। এইরূপে কুশারী পদবী উঠে গেল এবং তাঁরা নিজেরাই ঠাকুর পদবী ব্যবহার শুরু করলেন।


১৭ মে, ২০০৮

উত্তিষ্ঠিত! জাগ্রত !

পিছনে হাঁটিতে থাক ভারতবাসী! সমগ্র বিশ্ব জুড়িয়া জ্বালানি সংকট। তরলায়িত প্রাকৃতিক খনিজ গ্যাস নাই। কেমনে পশিবে তুমি মডিউলার কিচেনে? কেমনে রাঁধিবে তুমি পঞ্চব্যঞ্জন? রেস্তোরাঁর রন্ধনশালেও এলপিজি সাপ্লাই বন্ধ হইয়াছে । খাইবে কি? ক্ষুধার্ত হইয়া হাঁটিয়া হাঁটিয়া পরিশ্রান্ত।; কারণ গাড়ী, বাস কিছুই চলিবে না, পেট্রোল ,ডিজেল ফুরাইয়াছে অতএব,ফিরিয়া চলো মূর্খ ভারতবাসী প্রস্তরযুগে! প্রস্তরে,প্রস্তরে ঘর্ষণ করিয়া অগ্নিসংযোগ করিয়া কাঠ্-কুটো জ্বালিতে শেখো নিশ্চয়ই পারিবে। জ্বালানী নাই,অতএব দূষণও কমিয়াছে, কাজেই গাছ কাটিতে আর বাধা নাই। গাছের গুঁড়ি কাটিয়া ঠেলাগাডী তৈয়ারী করিতে শেখো,উহাতে লাভ আছে। আমরা সভ্য হইয়া উঠিয়াছি, পাশ্চাত্যের দিক হইতে লজ্জায় মুখ ফিরাইয়া লইয়া পিছনে হাঁটিতেছি। রাজনীতি আমাদের চালনা করিতেছে, ইন্ডিয়ান পলিটিকাল লিডার্স (আই-পি-এল) দ্বারা তাড়িত হইয়া আমরা, ইন্ডিয়ান পরিবার লিগ (আই-পি-এল) এর সদস্যগণ জ্বালানীবিহীন যুগের উদ্দেশ্যে ধাবমান।
তাঁহারা স্ব স্ব ক্ষেত্রে পাকাপাকি অবস্থান করিবেন বলিয়া এই সিদ্ধান্ত । তাঁহারা গণতন্ত্রকে রক্ষা করিতেছেন, আপামর জনতার কথা ভাবিতেছেন - ইহাই বা কি কম কথা! হউক না জ্বালানী সংকট, বিশ্বের বাজারে সকল সভ্য দেশ জ্বালানীর যে মূল্য দিতেছে, আমরা তাহা কিছুতেই দিব না। এ আমাদের অঙ্গীকার। সরকার, অভাগা করদাতাদের পকেট কাটিয়া, ভর্তুকি দিয়া যেমন খনিজ সম্পদের মূল্য হ্রাসপ্রাপ্ত করিয়া রাখিয়াছেন, তেমনই থাকিবে। কোন চিন্তা নাই। "তোমরা আমাকে ভোট দাও, আমি গ্যাসের দাম কমই রাখিব" -- এরূপই চলিবে। প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি হইবে না কারণ আমরা ন্যায্য মূল্য দিব না , মুদ্রাস্ফিতী হইবে হউক , নোট ছাপিতে পিছ পা হইব না। তবু ত তাঁহারা আম জনতার কথা ভাবিতেছেন, দেশের অর্থনীতি রসাতলে যাউক। 
শেষমেশ  চন্ডীদাসের আমোঘ বাণী মাথায় করিয়া 
"সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই"

১৪ মে, ২০০৮

সেদিন বোশেখ মাস, গাঁধীর চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ!

বুদ্ধ-গান্ধী-মমতার দেশে আলো নাহি জ্বলে বোশেখের শেষে,
পাখা নাহি ঘোরে মাথার ওপর, ভালো নাহি মোরা আজ।
একদা তাঁরা যে বড় মুখ করে বলেছিলেন আমাদেরকে,
উদ্বৃত্ত বিদ্যুত আছে বাংলায়, দিতে পারি অন্য রাজ্যকে।
দিনের মধ্যে কতবার সে যে আসে আর চলে যায়,
অভিমানী গাঁধী তাই দেখে শুনে বার করেন এক উপায়।
বিদ্যুত বিনা দু ঘন্টা প্রায় রাজ ভবন অন্ধকার,
যেথা রাখাল রাজা গোপালের আমার কষ্ট করাই সার!
কেউ বা বলেন "শিশু সুলভ" আর কেউ হন "মৌনীবাবা",
সবে মিলে কন রাজ্যপালের
পোস্টকে কর না হাবা

৯ মে, ২০০৮

হিন্দু কলেজের ঠাট-ঠমকের বাকি কি রাখলে বাঙলী?

কোথায় হারাইলাম ঐতিহ্যপূর্ণ সেই এডমিশন টেস্ট? একে তো প্রাথমিক স্তর হইতে ইংরাজী তুলিয়া দিয়া, মাধ্যমিক স্তরে এম-সি-কিউ চালু করিয়া, উচ্চমাধ্যমিক স্তরে ঢালাও নম্বর পরিবেশন করিয়া আপনার পায়ে কুড়ুল মারিলাম। একদা বিদেশের সঙ্গে তুলনীয়। ঐতিহ্যবাহী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ দুটিতে রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঘুণ ধরাইয়া পচন শুরু হইল প্রায়; সে দুটিকে রক্ষা করিতে পারিলাম না, অন্যথায় ব্যঙের ছাতার ন্যায় ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ খুলিয়া শয়ে শয়ে ইঞ্জিনিয়ার উত্পাদন করিতেছি, যাহাদের গুণমান পোলট্রির ডিমের ন্যায়। যা ও বা প্রেসিডেন্সীর অনার্সের এডমিশন টেস্টটি ছিল বাঙলার তথাকথিত সেরা ছাঁকনি যার দ্বারা ভবিষ্যতের মৌলিক গবেষকদের বীজ বপন হইতে পারিত সে পথও আজ বন্ধ করিলাম আনন্দে। "কি আনন্দে করিলে একাজ? নিজের পায়ে কুড়ুল মারিয়া লুকাইবে কোথা আজ?"

৩০ এপ্রি, ২০০৮

ঈশানী পামেলা লাবণী (IPL) এর জন্য প্রেমের গান

তুমি কোন কাননের রূপ (KKR)
যাকে ভোরের রাতে চাওয়া (BRC)
তোমায় দুদিন দেখিনি (DD)
যেন কোন দুপুরের ছায়া (DC)
কবে শোনাও রাগ-রঞ্জনী (RR)
রূপে তুমি মেয়ে ইরাণী (MI)
কিংবা একা পাপিয়া (KEP)
তবু মনের মধ্যে তুমি আছো চির স্বপনের কায়া (CSK)
.........................................................................
রবীন্দ্রনাথের 'তুমি কোন কাননের ফুল' গানটি অবলম্বনে

২৯ এপ্রি, ২০০৮

বাঙলা নামের নতুন অভিধান

আমার নামের সংগ্রহশালা থেকে :

  • ঊর্মিলা : Wavi-la
  • দীপা : Lamp-a
  • চন্দনা : Sandal-ina
  • উত্তরা : Answer-a or North-era
  • ঝর্ণা : Torrent-ia
  • দুর্গা : Castle-a
  • কালী : Ink-i
  • চন্দ্রাণী : Moon-ani
  • সর্বাণী : All-ani
  • রাণী : Queen-i
  • অসীমা : A-Limit-a
  • কাকলি : Crow-koli

আনন্দের আড্ডা হল শুরু!!

গরমা গরম জবর খবর , শুরু হল যেই নতুন বছর ।
স্টার্-আনন্দে আনন্দ-আড্ডা জুড়িয়ে দিল মোর পরাণডা।
e-চ্চে হলেই বস নেটে, লেখ দুকলম মাথা খেটে।
অচল স্কোর-বোর্ড কেবল কাটা, তাপ্পি-আঁটা পিচের ফাটা।
শ্রীসন্তের ফুঁতফুঁতানি, হরভজনের রামপ্যাঁদানি।
কে-কে-আর্-এ ওমর গুল , আনন্দের e-ডেনে আমি মশগুল।
ইন্দিরা পাঠাই চিরকুট্, বেঁচে থাকে যেন এই ব্লগকূট।

posted at Star Ananda Discussion Board

২৩ মার্চ, ২০০৮

এখানে বাঙলা লিখুন



আপনি যদি এই লেখা পড়তে পারেন তাহলে আপনার মেশিনে  unicode font আছে । তাই আপনার লেখার কোন অসুবিধা হবে না ।  "Dont Panic"  লেখাটির তলায় যে  text box আছে তার ভেতরে  cursor নিয়ে গিয়ে   roman  হরফে লিখুন  "aami baaGalaa likhachhi"  ।  দেখবেন নিচের সাদা জায়গায় এসে গেল  "আমি বাঙলা লিখছি "। . লেখা শেষ হলে সাদা জায়গা থেকে  text  copy করুন -- highlight করে  ctrl+c টিপে। তারপর  যেখানে দরকার সেখানে  গিয়ে  paste করুন । কোন কঠিন বাঙলা অক্ষরে আটকে গেলে  "Dont Panic"এর উপর  cursor নিয়ে   দেখুন সেটা  "Read the guide"  button হয়ে গেছে, তখন সেটা  Press করুন। একটা  Help screen খুলবে। 

২৪ ফেব, ২০০৮

বাংলা ভাষায় ব্লগ লিখুন !

বাংলাতে লিখতে গেলে প্রথমে আপনার চাই একটি রোমান হরফ থেকে বাংলা হরফে ট্রান্সলিটারেট করার একটি সহজ উপায় । এর জন্য আপনি চলে যান এই ওয়েব্সাইটে । অথবা এই ওয়েব্সাইটে । অথবা অফলাইন কাজ করতে হলে এই ওয়েবসাইটে গিয়ে একটি বিনামুল্যের ওযার্ডপ্রোসেসার ডাউনলোড করে নিন । মহানন্দে এই রকম কথা টাইপ করুণ। স্ক্রিনে যা দেখবেন কাট্-পেস্ট করে একটি ইউনিকোড কম্প্যাটিবল ওয়ার্ডপ্রোসেসারে নিযে চলুন । মাইক্রোসফট ওইন্ডোজের নোটপাড খুব ভাল কাজ করবে । তারপর যে ভাবে সাধারন ইংরাজী ব্লগ পোস্ট করেণ সেই ভাবে নিউ পোস্ট খুলুন ও নোটপাড থেকে আবার কাট্-পেস্ট করে দিন । এই বার সাধারণ ভাবেই পাবলিশ করুণ। দেখবেন ব্লগে বাংলা হরফ দেখা যাচ্ছে ! যে মেশিনে ব্লগ লিখছেন আর যে মেশিনে ব্লগ পড়ছেন দুই মেশিনেই ইউনিকোড ব্যবস্থা থাকা দরকার । সব আধুনিক কম্পিউটারেই এখন ইউনিকোড থাকে অতএব চিন্তা করবেন না সব ঠিক কাজ করবে। একটু আধটু বানান ভুল হলে মাপ করে দেবেন। জয বংলা!

২৩ ফেব, ২০০৮

ইন্দি-পেন্ডেন্স !!!

আজ আমার ব্লগের যাত্রা হোলো শুরু... 

স্বাধীনদেশের রক্ষণশীল, একান্নবর্তী পরিবারের কন্যা সন্তানের স্বাধীনতা ছোটথেকেই ছেঁটেকেটে রাখা হয়। আমার বেলাতেও তার ব্যাতিক্রম হয়নি । ছাঁটা-কাটা স্বাধীনতার ঘেরাটোপে, শুল্ক বসানো সাজপোশাক, কর চাপানো বন্ধুনির্বাচন, আর খাজনা আরোপিত বাইরে বেরোনো মেনে নিয়ে কি ভাগ্যি একটা স্নাতকোত্তর ডিগ্রিলাভ করে,যথাসময়ে গুরুজনদের নির্বাচিত পাত্রের গলায় মাল্যদান । দস্তুরমতো বিদেশগমন এবং বেশ কিছুদিন পরে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন । এই ভাবে দেখতে দেখতে প্রায় উনিশটা বছর পার করেছি, একমাত্র পুত্রবধূ,স্ত্রী, মা এবং রসায়নের গৃহশিক্ষিকা রূপে। লক্ষ্মণের মত আদর্শ ভাই, রামের মত আদর্শ ছেলে, সীতার মত আদর্শ কন্যা, যুধিষ্ঠিরের মত আদর্শবানের সততা....এইসব আদর্শবান দের গল্প তো মাথার মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল সেই ছোটবেলা থেকে। তাই ছেড়েছিলাম অনেকটাই। তারপর একটা সময় এল, ভাবলাম, আর নয়। অনেক ছেড়েছি এ জীবনে। এবার নিজের জন্য ভাব রে মন। নিজের জন্য কিছু কর হে বঙ্গের আদর্শ হোমমেকার। অতএব রোজ রাতে শুতে যাবার আগে, সব কাজ সেরে শুরু হল ডায়েরী লেখা। সেটা কাগজে কলমে নয়। ডিজিটাল ডায়েরীতে মানে ব্লগে।  কিন্তু স্বাধীন হতে পারিনি।
বিজ্ঞানের ছাত্রী হয়েও মাঝেমাঝে বাংলা সাহিত্যচর্চার স্বাদ থেকে নিজেকে বঞ্চিত করিনি। স্বামী পুত্র মাথা খেতে লাগল। বলল যা লিখছ সব আর জীবনে খুঁজে পাবেনা। হারিয়ে যাবে। 

ভাবলাম স্বাধীনভাবে যখন লিখতে পারি মনের কথা ,প্রকাশ করতে পারি বাংলাভাষায় তখন... । কিন্তু সকলের উদ্দেশ্যে এই কথা,এই ভাষা ছড়িয়ে দেবার স্বাধীনতা নেই। বুঝলাম "এ কেবল দিনে রাত্রে ,জল ঢেলে ফুটা পাত্রে ,বৃথা চেষ্টা তৃষ্ণা মেটাবার।" হাল ছাড়লাম না। অবশেষে ইন্টারনেটের গোলকধাঁধায় হারিয়ে গেলাম ফাগুনের আগুনে রেঙে ওঠা এক পড়ন্ত বিকেলবেলায়। দিনটা ছিল ২৩ শে ফেব্রুয়ারি,শনিবার,২০০৮ .... আমার যাত্রা হোল শুরু।

খুলে ফেললাম নিজস্ব 'ব্লগ' । অসাধারণ আইডিয়া! অভিনব টেকনোলজি, স্বাধীনভাবে যা খুশী লেখো সেখানে। অব্যক্ত মনের কথা, অপ্রকাশিত প্রাণের ব্যাথা, বাংলা হরফে টাইপ করা আর কোনো বাধাই নয়। ইউসারফ্রেন্ডলি ফন্টের দৌলতে খটাখট টাইপ করে,আপলোড করে দাও ব্লগে। সারা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের লোক পড়ছে আমার লেখা,মন্তব্য পাঠাচ্ছে ই-মেলে--এই বা কি কম কথা। আমি আজ স্বাধীন লেখক হলাম। এতদিনে প্রকৃত স্বাধীনতার স্বাদ পেলাম। যেখানে আমার হারিয়ে যেতে নেই মানা। যেখানে আমার লেখনীর ঝর্ণাকলমের মুক্ত হরফ, স্বাধীন ভাষার ছন্দে উদ্দাম নৃত্যের তালে তালে স্বাধীনভাবে সৃষ্টি করে চলেছে অবিরত। সব শাসনের লক্ষণরেখাকে মুছে দিয়ে স্বাধীন আমিই আমার একমাত্র সম্পাদক, প্রকাশক এবং সর্বোপরি মুদ্রাকর।

"সোনার তরীর রূপোর পালে ব্লগের হাওয়া লাগলো বলে, ঘুচল শিকল মুক্ত পাখির ফুটল বুলি যন্ত্রজালে।"