বলি
গেল গেল রব উঠল ৫০০/১০০০
বাতিল হল বলে কিন্তু সত্যি
তো বাতিল কেউ নয়। এ কথা আমাদের
সকলেরি জানা। রাস্তায় ঘাটে
সবাই ঊর্ধ্বমুখে জোড় হাত
তুলে কয় নমো নমোহ!
যে আদার
ব্যাপারী সে এদ্দিন পাত্তা
দেয়নি নরেনকে। আর এই নরেনই
রক্ষে করল তাদের। হোয়াটস্যাপে
ঠাট্টার ঝড়। রামকৃষ্ণ বলেছিলেন
টাকা মাটি,
মাটি
টাকা। আর তাঁর প্রিয় নরেনই
প্রমাণ করেছেন এদ্দিনে। আমি
বলি টাচ উড!
আগে শেষ
রক্ষে হোক বাপু!
এইবার
শুরু খেলা। রাজার ঘরে যে ধন
আছে, টুনির
ঘরেও সে ধন আছে। শুধু রাজার
ঘরে বেশী আছে,
টুনির
বাসায় অনেক কম আছে। রাজা হলেন
জাহাজের কারবারি আর টুনি
বেচারা আদার ব্যাপারী। কিন্তু
যে ৫০০/১০০০
এর নোট টুনির আছে সেটাই রাজার
ভল্টেও আছে। সেই এক,
অবিনশ্বর
গান্ধীর ছবি ওলা। রাজার কত
উপায়ে সেই প্রাচুর্য লাভ হয়।
আর টুনি বেচারা দিনাতিপাত
করে কোনোক্রমে একটা নোট মুখে
করে এনে বাসার মধ্যে রাখে।
রাজার অনেক আছে তাই টাকা শুকোতে
দিতে হয়। আর টুনি বেচারা একটা
এনেই কি ঝামেলা হল সেবার।
কিন্তু এবারে টুনি মুখ্য নয়।
উলুখাগড়ার মত ব্রাত্য টুনি
দিব্যি আছে মনের সুখে। এখন
রাজারাজড়ার পরাণ যায়।
টুনি
এখন মগডালে বসে মনের সুখে
গাইছে বেহাগ
"
কালো
টাকা, সাদা
টাকা, টাকা
নানান জাতের,
এত
টাকার মধ্যে শুয়ে ঘুম গেল তার
বাপের"
টুনির
মা তাই শুনে ধরে
"বুঝলেন,
বুঝলেন,
বুঝলেন
বাবুমশাই?
টাকা
গোনে, কেন
গোনে, কিসের
এত টাকা?
আশেপাশে
সবাই গোনে,
আমার
বাসাই ফাঁকা"
টুনি
বলে, ও
মা? আজ
চলো যাই উড়ে,
রাজার
বাড়ির বারান্দার দিকে আরেকবার।
যদি পেয়ে যাই একটা ৫০০ কিম্বা
১০০০ ? টুনির
মা বলল, অতি
লোভ ভাল নয় টুনি। টাকা থাকার
অনেক জ্বালা। দেখলি তো ?
টুনি
বলল, মা
তবে যে ৫০০ টাকার নোটটা আমাদের
বাসায় পড়ে রয়েছে সেটা গিয়ে
রাজার বারান্দার কোণে রেখে
আসিগে, কি
বলো?
টাকা
এমনি জিনিস!
মায়া
বাড়ায়। আর টুনির মা টুনির চেয়ে
বয়স্ক, দুঁধে,
পোড় খাওয়া
এক পাখী। সে বলে,
পাগল না
মাথাখারাপ?
ওটা রেখে
দে, কাজে
আসবে। টুনি বলে,
ওটা ক'দিন
বাদে চলবে নি গো,
বাতিল
হবে। তখন ভাঙাবে কি করে?
টুনি
ফুড়ুত করে উড়ে গিয়ে বসে মাছ
বাজারে। সেখানে জলের দরে মাছ
বিকোচ্ছে । আর দোকানি বলছে,
মাছ নিয়ে
যান, পয়সা
পরে দেবেন। ৫০০,
১০০০
নেবনা। অন্য আরেকটা বাজারে
গিয়ে টুনি দেখল সেখানে দিব্যি
নিচ্ছে ৫০০-১০০০।
ক্রেতা বিক্রেতাকে বলছে,
মশাই,
টাকা হল
টাকা। আপনার হোক কিম্বা আমার
। ব্যাঙ্কে দিয়ে দিলে সবই এক
জায়গায় যাবে। টাকা আটকে থাকলে
ব্যাবসা করব কিভাবে?
আরেকটা
বাজারে গিয়ে শোনে সেখানে
দোকানি বলছে,
আগের ধার
শোধেনি এখনো। ধারবাকীতে কি
মাছ বেচা যায়?
বিভ্রান্ত
টুনি এবার উড়ে যায় শহরের এক
ব্যস্ত পেট্রোল পাম্পে। রাতে
তোপ দাগার পরেও মাথায় আসেনি
কারোর। এবার মাথায় হাত। এমন
লাইন কেন সেখানে?
তারপরেই
বচসা শুনে বুঝতে পারল,
ভোর হতেই
সবাই তেল কিনে গাড়িতে ভরছে,
কেউ
বাড়িতেও মজুত রাখছে। তেলের
তো অনেক দাম। সোনার মতোই প্রায়।
তাই কিছু ৫০০-১০০০
সরকারের ঘরে চালান করে দেওয়াই
শ্রেয়। ও মা গো!
এখানে
তো সকলে জেরিক্যান ভরে পেট্রোল
নিচ্চে গো!
এ আবার
কেমন তর?
পেট্রোলের
গন্ধে ম ম করছে আশপাশ। সেই
তেলের গন্ধ নিয়ে আবার ফুড়ুত
টুনি রেলের স্টেশনে। নিচ্ছে,
নিচ্ছে,
নিচ্ছে,
এখানেও
নিচ্ছে বড় নোট। তবে ছোট টিকিটের
জন্য বড় নোট কেন নেবে তারা?
আগেও
নিতনা এখনো নেবেনা। প্যান্ট্রিকার,
টিকিট
কাউন্টার সবজায়গায় নিচ্ছেই
তো । এবার টুনি চলল বিমানবন্দরে।
সেখানে যারা যাওয়া আসা করে
তাদের পার্সে,
ওয়ালেটে
ক্রেডিট কার্ড থাকে,
ডেবিট
কার্ডও থাকে অতএব নো ঝঞ্জাট।
কিন্তু প্রিপেইড ট্যাক্সিবুথে
একটু বাকবিতন্ডা চলছে। ওরা
অমনি। চিরকাল। নমো-ই
হোক, মম-ই
হোক। এরা আর বদলাবেনা। টুনি
তো আর আজকের লোক নয়। এ শহর তার
অতি পরিচিত। টুনি ভাবে,
বিদেশীদের
সামনে না লজ্জায় পড়তে হয়।
অতিথি দেব ভব। তাদের সামনে
এমন ঝগড়াঝাটি না করলেই নয়?
সেই এক
কথা। আরে মশাই নিন না বাবা।
আপনি বা আমি যে কেউ কাল গিয়ে
এই নোট তো ব্যাঙ্কেই জমা করে
আসব।
তার
চেয়ে শেখো তোমরা ভলভো বাস
সার্ভিস, ওলা,
উবেরের
কাছ থেকে। এরা কেমন ব্যাওসাপাতি
বোঝে বাপু!
টুনির
মনে হয় ঘাড় ধরে শিখিয়ে দিক
ওদের।
টুনি
যায় গুটি গুটি। একটু ফুড়ুত
তো একটু মজা লুটি। যারা নেই
উত্তর-পুব,
তার মনে
সদাই সুখ। এবার গন্তব্য
শপিংমলে। বিশাল কাঁচের দরজার
সামনে চুপটি করে ঘাপটি মেরে
বসে থাকে সে। এই বাগানে তার
প্রবেশ মানা। সময়ে অসময়ে সে
পিচিক করে পটি করে ফ্যালে।
তখন রামপেয়াদা এসে তাড়া করে
মেরেও ফেলতে পারে একরত্তি
টুনিকে। মানুষের তাড়া খেলে
যা বুক ধুকপুকুনি হয়!
তার চেয়ে
দরজার বাইরে থাকাই ভাল।
এ
বাবা, এখানেও
হোঁচট কেন?
কার্ড
না থাকলে জিনিস কেনা যাবেনা?
নো বড়
নোট লেনদেন। প্রবেশের মুখেই
জিগেস করে নিচ্ছে সিকিউরিটি।
আচ্ছা এর নামই কি "অচ্ছে
দিন"? এর
নামই কি "গো
ডিজিটাল"?
টুনি
ভাবে বসে বসে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত
শপিং মলের দরজা খুলে মানুষ
ঢোকে আবার কেউ কেউ ঢুকেই পত্রপাঠ
বেরিয়ে যায়। ঠান্ডা হাওয়ায়
শীত করে টুনির। সেদিন সকালেই
টুনি খবরের কাগজের প্রথম পাতায়
জোরালো বিজ্ঞাপন দেখেছে বটে।
অব এ.টি.এম
ছাড়ো, পে.টি.এম
করো। এটাই কি তবে ডিজিটাল দেশ
গড়ার পূর্বলক্ষণ?
টুনি
সেদিন বাসায় ফিরে গিয়ে মা কে
বলল,
-
মা,
ঐ টাকার
নোটটা রেখেই আসি রাজার ঘরেতে।
টাকা থাকার অনেক হ্যাপা। এই
বেশ খুঁটে খাই আমরা। দিব্য
চলে যায় আমাদের।
টুনির
মা সেই শুনে বলল,
-
মার খেয়ে
মরবি এবারে। আমি কত কায়দা করে
সেই উপেনবাবুর আমল থেকে যত্ন
করে টাকাটা বাসায় সামলিয়ে
আসছি আর তুই কিনা এদ্দিনের
সঞ্চিত ধন বিকিয়ে দিবি?
নানা
টুনি যাসনা। আমি মরে গেলে ঐ
টাকাটাই তোকে দেখবে।
-
কিন্তু
মা, ওই
টাকাটা এখুনি ফেরত না দিলে
আর কোনও কাজে আসবেনা আমাদের।
ওটা বাতিল হয়ে যাবে।
-
রাজার
বাড়ী ঢুকবি আবারো?
জানিস
না? রাজাকে
রাগিয়ে দিয়ে কি বিপত্তি হয়েছিল
আর তারপরেই তরোয়াল থেকে শুরু
করে ব্যাঙ ভাজার কাহিনী কে
না জানে?
-
আর সেই
বেচারা সাতরাণীর গল্প তুমি
যে ফলাও করে বলতে !
শুধু
একটা নোটের জন্যে ওদের নাকগুলো
যখন কেটে দিল তরোয়াল দিয়ে?
সে কি
দৃশ্য! রক্তারক্তি
কাণ্ড!
-
বেচারা
রাণীরা কিন্তু আমাকে খুব আদর
যত্ন করেছিল জানিস ?
ওমা কি
সুন্দর পাখী !
কত মিষ্টি
পাখীটা!
টুনি
সেই শুনে বলল,
-
মা আবার
যাবে নাকি রাজার বাড়ি গিয়ে
সেই পুরণো কাসুন্দি ঘাঁটতে?