জায়গাটা কলকাতার খুব কাছেই। নাম "বনের হাট'। আর এটা বারুইপুরে একটি ছোট ঘরোয়া বনভোজনের স্পট।সবুজ গাছগাছালি ঘেরা, একটুকরো জলের ঠাণ্ডা ধার, তক্তপোশে শীতলপাটি বিছানো একটা ছোট্ট বিশ্রামের কুঁড়ে, রান্নাবাটির জন্য টালির শেড, বাথরুম সব আছে তবে নেই ইলেকট্রিক। তাতে অবিশ্যি অসুবিধেও নেই। দিনে দিনেই ফিরে এসেছি আমরা।
কলকাতা থেকে সোজা বাইপাস দিয়ে বারুইপুর স্টেশন। তারপর ফ্লাইওভার পেরিয়ে ওপারে গিয়ে নেমে সোজা যে রাস্তা ক্যানিং এর দিকে গেছে সেটা ধরা। পেরুবে ফুলতলা, রামনগর হাইস্কুল তারপরেই রাস্তার ওপরেই ডানদিকে পড়বে ঝাঁ চকচকে রেসর্ট যার নাম বনের হাট। যাবার রাস্তা খুব ভাল (টাচ্ উড্) । ভোরবেলা গড়িয়াহাট থেকে সময় লাগল মাত্র ৫০-৫৫ মিনিট। বেলা বাড়লে বাজারের ভীড় পড়ে তাই বেশী সময় লাগে। এহেন বনভোজন @ বনের হাট ছিল গতকাল অর্থাত অঘ্রাণের অলস ছুটির দিনে। শীত পড়তে না পড়তেই বাঙালীর কফি আর স্যুপ প্রেম যেমন উথলে ওঠে তেমনি আর কি পিকনিক প্রেমেও ভেসে যায় অমৃত কমলার ভোর। প্রতি শীতের অবশ্যকরণীয় দায়িত্ব রূপে আমাদের দক্ষিণ কলকাতা পাঠচক্রের সব বরিষ্ঠ নাগরিক মাসীমাদের এই বাত্সরিক ভ্রমণের আনন্দদানটাও যেন সর্বকনিষ্ঠা এহেন আমির ওপরে বর্তায়। বেশী শীতের দাপুটে বৃদ্ধারা আবার একটু কাতরে পড়েন তাই এবার অঘ্রাণেই পালন করলাম সেই দায়িত্ত্বটি। সর্বসাকুল্যে ৩০-৩৫ জন, কিছু গেষ্ট আর সকলের বাহনচালক। সেই সাথে ছিল পাঠচক্রের সেক্রেটারী মাসীমা মনীষা দের ৫০ তম বিয়ের তারিখ। অসুস্থ মেশোমশাই ও সামিল ছিলেন এই পিকনিকে।কেক কাটা, মোমবাতি জ্বালা, কোনো অনুষ্ঠানের ত্রুটি ছিল না কাল। ওনাদের ৫০ বছর টিকে থাকার অভিনন্দন জ্ঞাপনে কবিতা থেকে শুরু করে হালকা হাসি, জোকস, অন্ত্যাক্ষরী, রবীন্দ্রগানের সাথে নাচ, আরো আরো কবিতাপাঠ, নাটকের নির্বাচিত অংশ, চিরকূট তুলে "যে যেমন খুশি পারো" এইসব নিয়ে কেটে গেল দুপুর। সকালের ব্রেকফাস্ট থেকে দুপুরের চাইনিজ লাঞ্চ সব কিছুই হল ঠিকঠাক। কেউ ভুললেন হাঁফের টান, কেউ আরথাইটিস, কেউ বা COPDর কষ্ট, কেউ ডিপ্রেশান, কেউ আবার পিকনিকের এক্সাইটমেন্টে রাতের ঘুমটুকুনিও।
আর যে ছাড়া "বনের হাট' আমাদের কাছে অজানা থেকে যেত সে হল আমার পাড়ার, আমার স্কুলের বন্ধু, আমার প্রতিদিনের অঙ্ক কষার সাথী, রোজ স্কুল যাওয়ার দুই বিরুণীর সঙ্গী চুনচুন ।
আর এহেন আমি এনাদের প্রতিবছর এভাবে বেড়াতে নিয়ে যেতে পারি বলে বেশ লাগে আমারো। কারোর জন্যে কিছু বেশী ভাল কিছু করতে না পারি, মন্দ তো করিনা তাই মনটা বেশ লাগল সারাদিন। এই মাসীমাদের মধ্যে একজন আমার শাশুড়িমাও। তিনিও সারাদিন বেশ ফুরফুরে ছিলেন গতকাল। এভাবেই বেঁচে থাকেন কলকাতার কিছু সিনিয়ার সিটিজেনরা আমাদের সঙ্গে। এঁদের ছেলেপুলেরাও তো বেশীরভাগ বাইরে। জেরিয়াট্রিক এই মহানগরের ফ্ল্যাটবন্দী এঁরাও একটু মুক্তির আলো দেখেন। আর ব্লগ লেখার মত ঘরের খেয়ে বনের হাটে বনের মোষ তাড়িয়ে আমিও নির্মল আনন্দ পাই কারণ আমার প্রাপ্তি মাসীমাদের নির্ভেজাল হাসিটুকুনি আর তাঁদের অকুণ্ঠ আশীর্বাদ।
1 টি মন্তব্য:
এতজন মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর একটা দিন বড় উজ্জ্বল, তাই না? খুব ভালো লাগল পড়ে দিদি। আমি ও পথে যাই অনেক সময়। ক্যানিং-এর দিকে কোন রাস্তা যায় চিনিনা। এর পর একবার যাবার ইচ্ছা রইল।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন