১৬ জুন, ২০২১

জগাদা-কোভিড সিরিজ



জগাদা-কোভিড সিরিজ / ইস্যু রথযাত্রা 

ওরা আজ বেড়াতে বেরুবে। ভোর থেকেই তার তোড়জোড়। একলাটি বিমলা বসে বসে ভাবছে ছাইপাঁশ। প্রতিবারের মতোই তার মন উচাটন। উৎকল দেশের সংস্কৃতি বলে কথা। যে দেশের নামের মূলে হল উৎকৃষ্ট কলা। তা বাপু, কলাই হোক আর মুলোই হোক অতিমারীর মধ্যে এসব কলাকৃষ্টি তে না সামিল হলে চলছিল না? জগাদা বলেছে, না চলে না, জানোই তো। দিন পনেরো নিভৃতবাসে থেকে তিন ভাইবোনের ক্যাটারপিলার ইন দ্যা গতর। অর্থাৎ গতরে শুঁয়োপোকা ধরে গেছে। না বেরিয়ে বেরিয়ে সুভদ্রার সাজপোশাকে বাহুল্য নেই। মদিরাসক্ত বলরামের ভুঁড়িটা যেন আরও বেড়েছে। তবে বলাই বাহুল্য বদ্ধ ঘরে বসে বসে শুধু ভালোমন্দ খেয়ে খেয়ে আর নিত্যি পাঁচন সেবন করে জগাদার অ্যাপেটাইট রসেবশে রয়েছে। 
কে জানে যাবার সময় সবাই মুখবন্ধনী পরল তো? বিমলা সুদর্শন কে বলে রেখেছিল কাল রাতে। মনে করে যেন মুখবন্ধনী গুলো নেওয়া হয়। সুভদ্রা আবার না কাঁদতে বসে। গতবারেও এমন বায়না ধরেছিল মেয়েটা। সে কিছুতেই মুখবন্ধনী চড়াবে না মুখে। সব সাজ ঢাকা পড়ে যাবে। একে বেরুনো হয়না। তায় একদিন বেড়ালের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়েছে । তো মুখবন্ধনী পরবে না সে। ওষ্ঠরঞ্জনী চাপা পড়ে যাবে। তার স্টাইল স্টেটমেন্ট সবার চেয়ে আলাদা। ভীড়ের মাঝে হেড টার্নার সে। নাক মাটামাটা চোখ ভাসা। বৌদি হল গিয়ে লড়াকু, উগ্র জাত সুন্দরী। আর ননদ হল নরম স্বভাবের ঘরোয়া মেয়ে। বিমলার সেই নিয়ে ননদিনীর সঙ্গে একটু আধটু ইগো ক্ল্যাশ আছে অবিশ্যি। জগা দা বলেছে ননদ ভাজে অমন হয়। তাই নিয়েই বাঁচতে হবে তোমাদের। দুই সুন্দরী কে নিয়ে মাঝেমধ্যেই টানাপোড়েন চলে। জগাদা অভ্যস্ত এসব রাজনীতি তে। বলরামের অবিশ্যি এসব তরজায় হেলদোল নেই। তিনি বুঁদ হয়ে থাকেন সোমরসের মৌতাতে। জগাদা বৌ আর বোন কে সামলাতে গিয়ে হিমশিম খেয়ে মাঝেমধ্যেই বলে ওঠেন, যার নেই উত্তরপুব তার মনে সদাই সুখ। 
এই তো সেবারেই  বোনের সে কী কান্না! তোমাদের সবার মাথার মুকুট কত্ত বড়! আর আমারটা দেখ। অথচ লোকসমাজে কী আদিখ্যেতা আমায় নিয়ে। সে আমার ছোটো বোন, বড় আদরের ছোটো বোন... বিরক্ত লাগে এসবে তার। মনে মনে বলে ওঠে সে, হু হু বাবা, মেয়ে সন্তান বলে কথা! জানা আছে সব হিপোক্রেসি তোমাদের। 
জগাদা ভাবে, নিরীহ বোনটা আমাদের ছোটো থেকেই ঝগড়া করতে পারেনা। চেঁচাতে পারেনা। বৌদির অপোজিট এক্কেরে। বিমলা কে বোঝাতে কালঘাম ছুটে যায় তার। শোনো বিমলি, ও কিন্তু সাক্ষাত আদ্যাশক্তির অংশ।বাবা বলতেন। ওকে একদম হেনস্তা করবেনা কেউ। গা জ্বলে যায় বিমলার। কে কাকে কী শোনাচ্ছে? জগাদা বলেছিল সেদিন। তুমি হলে ওয়ান অ্যান্ড ওনলি শুধু শ্রী অর্থাৎ মহালক্ষ্মী। আরেকজন হল ভগিনী শ্রী। এসব শুনে বিমলার গা জ্বলে যায় আজকাল। সব শ্রী য়ের ব্র্যান্ড ডাইলুশ্যান হয়ে গেছে মিনসে অতবড় বড় চোখ দিয়েও দেখতে পায়না। 
। 
বাইরে কলরব শুনতে পেয়ে বিমলা দুয়ারের খিল খুলে উঁকি দিয়ে দেখতে পায়। সেই সম্বচ্ছরিক রথযাত্রায় যাচ্ছে তিন মক্কেল। বারণ শুনলো না। যাবেই। নিভৃতবাসে থেকে দম বন্ধ হয়ে আসছে তাদের। কিন্তু গতর আর নড়েই না তাদের। বাব্বা ! খেয়েদেয়ে, শুয়েবসে আরাম করে করে বদ অভ্যেস হয়ে গেছে গুষ্টির! সব্বার ওজন বেড়েছে। তায় আবার ভরা বর্ষায় ১০৮ ঘড়া উপর্যুপরি স্নানে সারা শরীর রসস্থ। পেইন কিলার আর পাঁচনের সম্মিলিত বুস্টার ডোজে শরীরের গাঁটে গাঁটে বাতজ বেদনা। এক পক্ষকালে নব যৌবন পেয়েছেন বাবুরা। মহালক্ষ্মী বিমলা ভাবে বসে বসে সাতপাঁচ। জ্বরের কারণে ইমিউনিটি কমে গেছে। বাইরে না গেলেই নয়? জগাদা কাল রাতেও বলে গেছে এসে, আহা! ওরম কোরোনা বিমলি! যেতে আমাদের হবেই। একটানা  অনশরে তো থাকোনি জীবনে, বুঝবে কী করে মুক্তির স্বাদ? বিমলা তার উত্তরে বলেছে, জানোনা? সব পেলে নষ্ট জীবন? 
জগাদা বলেছে না, পনেরো দিনের বিরহ কী জিনিষ তুমি বুঝবে কেমন করে? তোমার সঙ্গে তো আমার রোজ রাতে দেখা হয়েছে, আমার এই সোশ্যাল ডিটক্সে ফ্যান ফলোয়ারস দের পরাণ আটুপাটু। 
বিমলা তার উত্তরে বলেছে, ভ্যাকসিনের দুটো ডোজ হলনা কারোর, তাই তো চিন্তা এত। এসব ভাবতে ভাবতেই সিংহদুয়ার দিয়ে তিন ভাইবোন একে একে বেরিয়ে আসে। বিমলার তখন দুয়ারে রথ। রাতের অন্ধকারে দেখতে পায়নি সে। এ কী! জগাদার চোখের চারিপাশে টুকটুকে লাল আভা কিসের? ব্ল্যাক ফাঙ্গাস না কী সব শুনছিল সেদিন। নাহ! ওনার তো অতিমারী সংক্রমণ হয়নি এখনও। তার মানে ফ্যানেদের বিরহে কেঁদে কেঁদে উতলা হয়েছে চিত্ত। তাই চোখ লাল। মনে হল চীৎকার করে বলে, "তা বলি যাদের জন্য এত দরদ উঠলে উঠছে তারা তোমার কোমরে দড়ি বেঁধে টানতে টানতে কেন নে যায়?" 
শুনতে পায়না জগাদা। আবারও বলে ওঠে সে। "বলি হ্যাঁগা? তুমি কী চোর না ডাকাত?"  
জগাদার এহেন টানা ও পোড়েনে বিমলা বড় ব্যথা পায় প্রতিবার। কী জানি? জগাদা বুঝি শুনতে পেয়েও পায় না সেই কোলাহলের মাঝে। 
বিমলার পরক্ষণেই মনে পড়ে যায়। ঠিকই করছে ওরা। 
"মিনসে সেই ছোটো থেকেই পাক্কা হয়ে উঠেছে চৌর্যবৃত্তিতে। শৈশবে পড়শিদের ননী চুরি করে খাওয়া থেকে কৈশোরে সঙ্গিনীদের কাপড় চুরি? আর ফাইনালি যৌবনে গোপিনীদের মন চুরি? জানিনা বুঝি? সব মনে আছে আমার। শুধু আমায় কব্জা করতে পারেনি লোকটা। একচুল সরিনি আমার পাওনাগণ্ডা আর অধিকার থেকে।"   

স্নান যাত্রা 
হ্যাঁ গা বিমলা! দু সপ্তা কোয়ারেন্টিনেই নাহয় থাকব। তুমি মাঝরাতে চলে আসবে তো আমার ঘরে? তোমায় না দেখলে, না ছুঁলে আমার জীবন বড়থা মনে হয়। জগা দা হোয়াটস্যাপ করল।  বিমলা টাইপ করে...কি জানি বাপু! এখন ছোঁয়া বারণ। আমার যদি কোভিড হয় তখন তুমি তো আমার মাথাটাও টিপে দিতে পারবেনা।ঠুঁটো নাগর থাকার যে কি যন্ত্রণা তা আমার চেয়ে আর কে ভালো বুঝবে? কি যে দরকার ছিল এবছর তোমার এই মহাস্নানের! বলে তাত সয় তো বাত সয় না। বারণ তো শোনো না। এবার জ্বর তো আসবেই। তারপর তুমি আবার ওষুধ গিলবে না। আমায় পাঁচন বানিয়ে মরতে হবে। আমার হল মহা জ্বালা।তারপর তোমার হলে তোমার ঐ সাগরেদ দুজনেরও হবে ছোঁয়া লেগে। কিচ্ছু হবে না দেখো। আমি বলে দিলাম। আমার কাছে এসো রোজ রাতে একবার করে, আগের মতন। তোমার গায়ের গন্ধেই আমার সব টেনশন ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যায়।  আজ্ঞে মশাই গত তিনমাস আমার গায়ের ফুল চন্দন চর্চিত সেই গন্ধ আর নেই। আমি এখন সাফসুতরা শহুরে পটের বিবিদের মতন।বিমলা লিখল হোয়াটস্যাপে। কিচ্ছু চিন্তা করোনা বিমলা। নারায়ণী শীর্ষদেশে, সর্বাঙ্গে বিমলা বাহিনী। জগা দা টাইপ করল। 
...
আমায় যেতিই হবে। আমায় যেতি দিতি হবেই।
সত্যিই তো! সম্বচ্ছর স্বেচ্ছায় নিভৃত যাপন করে তারা। বছরে একবার মোটে বাইরে পা দেয়। তাও আবার দিন সাতেকের জন্যি। তাদের বুঝি মনের ভেতরটা হু হু করেনা?
বেড়াতি যাবুই আমরা। তায় এবছর কতদিন বাইরের লোকের পর্যন্ত মুখ দেখিনা!

গতকাল রাত অবধি দোটানায় ছিল তিন ভাইবোন। একবার ব্যাগ গুছোয় তো আরেকবার সব ঢেলে ফেলে দেয় মনের দুঃখে। উত্তেজনা তার‌ই তুঙ্গে। কি পরবে? কি মাখবে? কি গয়নাগাটি সঙ্গে নেবে? আর উত্তেজনা বড়জনের। সঙ্গে যাবে সাতদিনের মত সোমরস। তার তোড়জোড় নিখুঁত করে। সঙ্গে মুখরোচক সব স্ন্যাক্স। নিমকিই হরেক কিসিমের। ভাজা মশলা দেওয়া শুকনো সিঙ্গারা। রকমারি বাদাম। শুকনো ফল। বেসনের ভাজাভুজি। জগা দা ভাইবোনের কথা ভেবে অস্থির ছিল এ ক'দিন। যাব কি যাব না। ভেবেই অস্থির সে। প্রতিবছর বিমলি যা ক্ষেপে থাকে তাদের তিন ভাইবোনের এই বেড়াতে যাওয়ার ধুম দেখে! এবার কি ভাগ্যি সে সিনে নেই! নিজেই কোয়ারিন্টিন করে রেখেছে নিজেকে তার কারণ অবিশ্যি কোভিড নয়। অম্বুবাচী পড়ে গেছে বলে। জগাদা বলে বলে থকে গেছে বিমলি কে।
বছরের ঐ চারদিন তুমি যে কি কর! এত্ত ছুঁতমার্গ এ যুগে হয়না বিমলি।
বিমলি নারাজ। চারদিনের চান হোক। আবার এসো আমার ঘরে।
এ যুগে আমার এসব ভালো লাগেনা বিমলি।
এই করতে করতে অবশেষে মধ্যরাতে অনুমতি এয়েচে। হেডাপিস বলেছে, তারা বেড়াতে যেতে পারে। ব্যাস! এবছর নিজের গাড়ী বের করার রাস্তা বৃষ্টি তে ধুতেও হবেনা জগাদা কে। বৃষ্টি এবার আষাঢ়ের আগেভাগেই এসে গেছে।কিন্তু মাস্ক? সুভদ্রার মনখারাপ। সব সাজ নষ্ট হয়ে যাবে। বলরাম অবিশ্যি বয়সে সবার বড় তাই মাস্কটা বেঁধেই নিয়েছে মুখে। কোভিডে ধরলে নাকি রক্ষে নেই। জগাদা বিন্দাস। মাস্ক নামিয়ে রেখেছে। একবার নাকের ফুটো বের করে তো একবার থুতনিতে ঝুলিয়ে নেয়। যাবার আগেই বিমলি জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে পরিয়েই ছেড়েছে। তোমার না দিন পনেরো আগেই চান যাত্রায় বেদম চান করে জ্বর এয়েচিল! আমি ছিলুম তাই পাঁচন গিলিয়ে পথ্যি করেছি। তাই আজ সুস্থ হয়েছ! নির্লজ্জ, বেহায়া মিনসে ! মাস্ক পর মাস্ক। আর শোনো তিনজনের হ্যান্ড স্যানিটাইজারটা দয়া করে পকেটের মধ্যে রেখো না। বাইরেই রেখে দাও।
জগাদা ভাবে শালা! এমন রথ এ জম্মে বের করিনি! এর চেয়ে না যাওয়াই ভালো ছিল!

জগাদা কোভিড সিরিজ / ইস্যু জামাইষষ্ঠী 
রোজ রাতে টুক করে একটিবার বিমলা কে চোখের দেখা না দেখলে জগাদার ঘুম আসেনা। 
জামাইষষ্ঠীর আগের রাতেও তাই হবারই কথা। সবার চোখে ধুলো দিয়ে টুক করে তিনি বেরিয়ে পড়লেন।দ্বাররক্ষী, দয়িতাপতি, মোহন্ত কেউ জানল না। বিমলার কাছে গিয়ে জগাদা দেখলেন রোজ রাতের মত সেও জেগে বসে আছে। একটু স্বামী সোহাগ, একটু ফষ্টিনষ্টি। তবে আসার আগে স্যানিটাইজ করে মাস্ক পরে আসতে হয় সেটাই চাপের। তবুও গেলেন নিশুতিরাতে। 
কি গো? আজ মন ভার মনে হচ্ছে? জগাদা বললেন। 
বিমলা বলল, এবছরেও বাড়ি যাওয়া হলনা। জামাইষষ্ঠীর খাওয়া, পাওনাগণ্ডা কিছুই হলনা গতবারের মতই। 
জগাদা বললেন, আহা, দুঃখ্যু কোরোনা বিমলা। আমরা এখন বেরুলেই লোকজনও বেরিয়ে পড়বে। কোভিডের তৃতীয় ঢেউ আগতপ্রায়। এখন সব আম আদমির মত আমরাও দুয়ার এঁটে বসে আছি, জানোনা? গতবার রথেও মাসীর বাড়ি যাই নি তেমন করে।এবারেও হয়ত যাওয়া হবেনা। সব হবে। আবার সব মিটুক প্রিয়ে! 

তোমার আর কি? এতগুলো শ্বশুরবাড়ি! কোনটাই তেমনই আইনতঃ বিয়ে নয়। সবার সঙ্গে সারাটা জীবন থাকাথাকির খেলা খেলে গেলে তুমি। সন্তানও দিলে তাদের। আমি তো হাতের পাঁচ। বিয়েও করলে অথচ ঘর করলে না। সন্তান দিলে না। সবাই জানলো লক্ষ্মী-সরস্বতী-কার্তিক-গণেশ আমার পেটের ছেলেপুলে। আমি তো জানি সেসব মিথ্যে। তোমার এখানে পড়ে থেকে থেকে আমার রক্তাল্পতা ধরে গেল। কি না, পুরীক্ষেত্র বৈষ্ণব থান। সেখানে আমিষ ঢুকবে না। আর কত ত্যাগ স্বীকার করি বলতে পারো? 

আরে শোনো। এই জন্যই তোমাকে বলেছিলাম বাপের বাড়ি থাকতে। শুনলে না। সারাক্ষণ চোখ ঘুরছে তোমার। আমি কোথায় কি ফষ্টিনষ্টি করি সেদিকে খেয়াল রাখবে বলে এখানে এলে। জগাদার গলায় আক্ষেপের সুর। 

বছরে একবার এই জামাইষষ্ঠীর সময় বাবা মায়ের কাছে যেতে চাই। একটু খেয়েদেয়ে সুখ করে আসব বলে। বিমলা গর্জে ওঠে। 
আমি তো শ্রীক্ষেত্রে দুর্গাপুজোর সময় বলির ব্যবস্থা করেইছি। শুধু তোমার জন্যে। নয়ত তোমার ওই সময় রাগ চরমে ওঠে। আরও মাংস চাই তোমার? জগাদা এবার রেগে গেলেন। 

বিমলা বলল, বছরে মোটে একদিন? দেখছ না? অতিমারীতে ইমিউনিটি না বাড়িয়ে কেমন ঝিমিয়ে পড়েছি রোজ রোজ শাকপাতা, ফলমূলে খেয়ে খেয়ে? এসবে নাহয় ভিটামিন, মিনারেল আছে কিন্তু... এখন তোমারও কিন্তু শরীলে একটু আমিষ এর প্রয়োজন। হ্যাঁগো, যদি আমাদেরও অতিমারী তে ধরে?