ফিরে এসে ঘরময় সেই ডিওডেরেন্টের হালকা চেনা গন্ধটা আমার স্নায়ুগুলোকে অবশ করে দিল। বাথরুমের দরজার হুকে রেখে যাওয়া কমলারংয়ের বাটিকের পাঞ্জাবীটাতেও সেই পরিচিত ঘামের গন্ধ। ভিজে তোয়ালেটাও তুলে মেলে দিলাম খাটের ওপর থেকে। আর বইয়ের র্যাক থেকে সেই বিশালাকার বইখানা? যার শিরদাঁড়াতে জ্বলজ্বল করে, বোল্ড করে লেখা সেই পরিচিত অক্ষরত্রয় "GRE" আমাকে তাড়িয়ে নিয়ে চলল। একটা বছর আগে এই গুরুত্বপূর্ণ বইটি জায়গা করে নিয়েছে আমাদের বাড়িতে। একটামাস সেই বইখানির সাথে লেপটে রইল। আর মাত্র একমাসের মধ্যেই ফুরিয়ে গেল তার কাজ। আর কেউ সেই বইখানি খুলেও দেখেনা। তারপরেই শুরু হয়েছিল চিঠি লেখালেখি...তারপর খোঁজ খোঁজ ভালো কোন ইউনিভার্সিটিতে কোথায় কি পড়ানো হয়....তারপর অনিশ্চয়তা...মা আমি স্কল পাবো তো ? ইমেল, এস-ও-পি লেখা, রেকো যোগাড়, ট্রান্সক্রিপ্ট পাঠানো....কত্ত কাজ তার! তারপর চুপচাপ বেশ কিছুদিন। হঠাত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি উড়ে এসেছিল দরকারি ইমেলখানি। খুশির ইমেল, আনন্দের ইমেল....সফলতার ইমেল, পিএইচডি স্কল ।
লাস্ট একটা বছর কলকাতার চাকরীটাও বেশ ছিল। ডেটা-সায়েন্টিস্ট, রিসার্চ এসোসিয়েট যাই বলো। ফ্যাটি পে প্যাকেট। তবুও মন যে মানেনা। রাতবিরেতে ক্লায়েন্ট কল...আবার লেখো প্রোগ্র্যাম...কোডিং করো..দুনিয়ার ডেটা নিয়ে কাজ এহেন সায়েন্টিষ্টের । সেক্টরফাইভ থেকে ফিরেই ডিনার খেতেখেতেই কানে হেডফোন লাগিয়ে কন-কল ...কি ব্যস্ততার জীবন !
কিছুদিন পরেই কর্মজীবন স্ট্যাগনেন্ট কিন্তু! বাবা বলল, ডক্টরেটটা করা থাকলে অনেক সুবিধে।
তাই তো ফুরিয়ে গেল একটা বছর হুড়মুড় করে। এবার?
ইন্ডিয়ান স্টুডেন্টস এস্যোসিয়েশান...পাসপোর্ট-আই টোয়েন্টি ভিসা--এয়ার টিকিট.. ক্যাব বুকিং..... গুচ্ছের ইমিউনাইজেশান, ফরেক্স, সেলফোনের জন্য ডেটাকার্ড...যত দিন বদলাচ্ছে ততই যেন প্রযুক্তির উন্নতি হচ্ছে। কাজটাও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। এয়ারপোর্ট। তারপরেই চেক-ইন-ইমিগ্রেশন-সিকিওরিটি চেকিং ...আমাদের ছাদের ওপর দিয়ে হয়তবা উড়ে গেল উড়োজাহাজ খানি। মেঘের মধ্যে দিয়ে ঠিক ঐ সময়ে যেন পেলাম একটা রামব্লিং সাউন্ড।
ঠিক যেন কালবৈশাখীর আগে থম মেরে যাওয়া আকাশটার মত। গাছের পাতা কাঁপছেনা মোটেও। নিস্পন্দ, নিথর একটা পরিস্থিতি। সব যেন ফুরিয়ে গেল মনে হচ্ছে। আশপাশটা ফিকে গোলাপী কুয়াশার মতই অস্পষ্ট । চাপা একটা উত্তেজনা তবুও অসাড়। আমি কি হারিয়ে গেলাম?