মনের ভিতরে যখন খুব ক্লান্ত হয়ে পড়ি, তখন মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে ছায়া ঘেরা বনের মধ্যে সবুজ ঘাসের উপর হাত-পা ছড়িয়ে চোখ বুজে শুয়ে থাকি, মাথার উপর গাছের উপর শুধু থাকুক ছোট ছোট রঙিন পাখির কিচিমিচি। গভীর কান্না বুকে নিয়ে নিঃশব্দ জ্যোৎস্না ভরা ছাদে বসে থেকে দু’চোখের জলে মনের ব্যাথা ধুয়ে পেয়েছি শান্তি। ইয়ুমথাং-এ যাবার আগে যে লাচুং গ্রামে রাত কাটিয়ে ছিলাম, সেখানে মাথা উঁচু ক’রে দাঁড়িয়ে থাকা স্তব্ধ পর্বতের নীচে লাচুং নদীর তীরে বসে ভোর বেলার আলোয় হাত জোড় ক’রে গাইতে ইচ্ছে করেছিল এমন গান যা আমি কখনও গাইনি – মনের মধ্যে খুঁজে পাইনি তাকে, তাই নদীর কলতান শুনেছিলাম পাথরের উপর বসে বসে। আমাকে আমার মতো থাকতে দিও না – আমাকে থাকতে দাও তোমাদেরই মাঝে, তোমাদেরই একজন হয়ে – আমার ভালবাসা, অভিমান, হাসি, বেদনা, চাওয়া-পাওয়া, আশা-হতাশা সব তোমাদের নিয়ে, সব তোমাদেরই ঘিরে।
ছেলেবেলায় খুব মনে হ'ত জানো ? আমাকে কেন এত নিয়মের শৃঙ্খলে থাকতে হবে ? কেন আমি আমার নিজের মত থাকতে পারব না , নিজের ইচ্ছেমত চলতে পারব না । ক্রমশ: এই নিয়মের শৃঙ্খলটাই অভ্যেস হয়ে গেল । ঠিক তোমাদের জীবনেও যেমন হয়েছে । তারপর এই অভ্যেসগুলোকেই কখনো ভালবেসে কখনো না ভালবেসে কখনো বিরক্তিতে অনুসরণ করে চলেছি । রিক, আমার ছেলে বলেছিল -" অভ্যাস মেনোনা মা, নিয়ম মেনোনা -নিয়ম থেকে বেরিয়ে নিজের মত সময় কাটাও, তবেই আনন্দ পাবে" ভাবছিলাম, তাই কি ? তাহলে সেবার ক'দিন বাইরে কাটিয়ে বাড়ি ফিরে রাতে সোশ্যাল-নেটওয়ার্কিং সাইটে নিজের অর্কুট, ফেসবুক আর কমিউনিটিতে গিয়ে যখন দেখলাম আমার জন্য অজস্র মানুষের বার্থডে উইশ এসে জমা হয়েছে তখন দারুণ আনন্দ পেয়েছিলাম। মনে হয়েছিল সবার মধ্যে থেকে যে আনন্দ পাওয়া যায় সেটা অনেক । জীবনে চলার পথে অন্যকে খুশি করে চলার মধ্যেও এক পরিতৃপ্তি আছে । আমি আমার মত করে চলতে পারি যদি আমার সেই চলা অন্যদের ভাল লাগে ; আমার মনের গান যদি অন্য কারোর ভালো লাগে তবেই না আমার গান গাওয়ার সার্থকতা; আমার লেখা কবিতা হয়ে ওঠে যখন অন্য কেউ তা কবিতা বলে পড়ে ।
সংঘমিত্রা নাথ
ইংরেজি শিক্ষিকা , গড়িয়া হরিমতি দেবী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়
নেশা : গান করা
[ ১ম পাতায় ফেরত ]
1 টি মন্তব্য:
দারুণ ! সঙ্ঘমিত্রাদি !
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন