মায়ের দিন? সে ত রোজদিন। মা-দিবসের প্রাক্কালে এ আর এমন কি? দেশের অগণিত মায়েদের জন্যই এ লেখা। সেই আসনতলে, মাটির পরে তাদের স্থানটি বেশ শক্তপোক্ত তো এখনো? না মানে আজ কেবলই গৃহবধূ মায়েদের কথাই মনে করছি। এক একটা দিন এই অবলা গৃহবধূদের কথা খবরের কাগজে শিরোনামে স্থান পায়। মনে পড়ে? উত্তরপ্রদেশের গৃহবধূ রেণু আগরওয়ালের রোড একসিডেন্টে মৃত্যু? তার স্বামী অরুণ আগরওয়াল আদালতের দ্বারস্থ হয়ে ইন্সিওরেন্স কোম্পানির থেকে ক্ষতিপূরণ স্বরূপ ১৯.২ লক্ষ টাকা দাবী করেন আজ থেকে বেশ কয়েক বছর আগে। এলাহাবাদ হাইকোর্ট, এবং মোটর একসিডেন্ট ক্লেম ট্রাইব্যুনাল সেটি মেনে নিল না এবং তখনই শুরু গৃহবধূ ওরফে হোমমেকার চ্যাপটার । একজন গৃহবধূর ন্যাজ্য মূল্য কি হতে পারে সেই নিয়ে চাপানউতোর । গৃহবধূর প্রাণের মূল্য থেকে একজন হোমমেকারের income potential সব উঠে এল। পার্লামেন্টে ও চিন্তা ভাবনা শুরু হল। এই হোমমেকারের সঠিক মূল্য কত হওয়া উচিত? আর সংসারে তার অবদান কড়ায় গন্ডায় হিসেব করে একটি ন্যাজ্য মাপকাঠিতে তার জন্য একটি পে-রোল স্ট্রাকচার খাড়া করা যায় না কি? তাহলে রেণুর মত কোনো গৃহবধূর পথ দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলে তার স্বামী যাতে ন্যাজ্যমূল্যের অঙ্কটি ক্ষতিপূরণ রূপে পান ।
অন্যথায় সেনসাস 2001 অনুযায়ী ৩৬কোটি এরূপ গৃহবধূ মা' কে ভিখারিণী, বারবণিতা এবং বন্দিনীর সঙ্গে একই আসনে সেবার রাখা হল কারণ এই চার ধরণের মায়েরা নাকি অকর্মার ঢেঁকি এবং দেশের nonproductive population এর মধ্যে পড়ে তারা । এর অর্থ মায়েরা তবে রইলেন অবহেলিতা, স্থান পেলেন না সেই আসনতলে? পেলেন না তাঁর কাজের প্রাপ্য মূল্য ।
ভিখারীনি মা দেশের অর্থনীতিতে কিছু contribute করেনা। কিন্তু ভিখারীনি তার লোটা-কম্বল সম্বল করে ফুটপাথের স্নিগ্ধ সুশীতল ছায়াতরু তলে লালন করেন তার সংসার। কেউ কি স্বেচ্ছায় ভিক্ষা করে ? তাঁর প্রাপ্য মর্যাদাটুকু কে দেবেন?
বন্দিনী মা ? সেও তো অর্থনীতিতে এক নয়া পয়সা contribute করে না বরং উল্টে তার জন্য সরকারের প্রচুর টাকা ব্যয় হয় । বারবণিতা মা, ত স্টেজ পারফর্মারের মত মনোরঞ্জন করছেন জনতার । তিনি সমাজে না থাকলে ঘরের মায়েদের রাস্তায় টেনে আনা হত। তিনি নৈতিক না অনৈতিক কাজ করছেন সেটা আলোচনার বিষয় বস্তু নয় কিন্তু তিনি উত্পাদনে তথা দেশের জিডিপিতে পরোক্ষভাবে কিছু contribute করছেন । তাকে আন-প্রোডাক্টিভ বললে তো সিগারেট বা লিকার মার্চেন্টদেরও সেই পর্যায়ে ফেলতে হয় ।
এদের সঙ্গে একবার হোমমেকারদের পঙতিভোজনে বসানো হয়েছিল সেবার। আজ মা দিবসের প্রাক্কালে কেবলই এই প্রশ্ন মাথায় ঘুরছে। দেশের গ্রস ডোমেষ্টিক প্রোডাক্ট বাড়া কমায় একজন হোমমেকারের অবদান তবে কি শূন্য ?
এবার বলি ? "শিশুরাই জাতির ভবিষ্যত'। তা বলি এই শিশুদের দশমাস দশদিন নিজের জঠরে ধারণ করে, তারপর জন্মের পর থেকে মায়ের স্নেহটি দিয়ে লালন করেন সেই মা । আবার তাকে স্কুলের জন্য তৈরী করে, পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করে তাকে কত টানাপোড়েনের মধ্যে দিয়ে মানুষ করেন কে শুনি ? আর ঘর গেরস্থালী? বাড়িতে কাজের লোক না এলে, বাড়ির সব লোকের দেখাশুনো করা থেকে শুরু করে ইলেকট্রিক বিল, টেলিফোনবিল জমা দেওয়া, ডাক্তার ডাকা, প্রত্যেক সদস্যের জন্য কাস্টমাইজড সার্ভিস দেন এই মা । কথায় বলে "খুজরো কাজের মুজরো নেই' । তাই গৃহবধূ মা'দের কাজের কোনো দাম নেই । অনেকে বলেন "বাড়িতে থাকো, কি আর কর, আমাদের মত দশটা-পাঁচটা তো আর করতে হয়না' বা "বুঝতে ঠেলা যদি বাইরে বেরোতে হত, তুমি আর কি কর, রান্না ? সে কাজ তো সবাই পারে'।
অতএব মা তার দৈনন্দীন কৃতকর্মের জন্য অর্থনৈতিক ভাবে উতপাদনশীল বলে আখ্যা পাক অন্ততঃ । নয়ত তারা কেবলই দেশের জনসংখ্যা বিস্ফোরণের দায়টি মাথায় তুলে নিয়ে তাদের উতপাদনহীনতার মুকুট পরে বসে থাকবে আজন্মকাল । একটি কোম্পানির সারাবছরের হিসাবের খাতাটিকে বলে অ্যানুয়াল রিপোর্ট যেখানে দুটি টেবল থাকে একটি ব্যালেন্সড শিট অন্যটি লাভ-ক্ষতির হিসাব; এই মা সেই দেশের অর্থনৈতিক হিসাবের খাতায় ভবিষ্যত প্রজন্মের প্রতিপালন করে জাতীয় সম্পদ বা capital asset তৈরী করছেন । চুলোয় যাক বাসন মাজা, ঘরপোঁছা, রান্না করা, ঝুল ঝাড়া । লাভ-ক্ষতির একাউন্টে তাকে না আনাই শ্রেয় । তিল তিল করে সঞ্চিত হচ্ছে সেই সব ধনরত্ন সেই শিশু নাগরিকের মধ্যে । যার মধ্যে থেকেই কেউ গিয়ে নাসায় রকেট চড়ছে, কেউ বৈজ্ঞানিক হয়ে জীবনদায়ী ওষুধ তৈরী করছে, কেউ বানাচ্ছে অটোমোবাইল, কেউ বা হচ্ছে সৌরভ, লিয়েন্ডার-বিশ্বনাথনের মত কিম্বা রবীন্দ্রনাথ, অমর্ত্য সেনের মত নোবেল লরিয়েট !
আর সেই মা যিনি নেপথ্যের নায়িকা? ভোর থেকে রাত্রি পর্যন্ত সংসারের স্টিয়ারিংটি হাতে নিয়ে সংসারটিকে চালনা না করতেন তাহলে জানিনা কোথাকার জল কোথায় গিয়ে দাঁড়াত । তাঁর প্রতিপক্ষ বলবে কারোর জন্য কারোর আটকায় না কিন্তু যতক্ষণ দাঁত থাকে ততক্ষণ দাঁতের মর্যাদা বোঝা যায় না । বাড়ির যে খরচাগুলি সেই মহিলা বাঁচান ততটাই টাকা রোজগারের সমতুল্য ।
আর মা তাঁর সেই ব্যস্ততায় ছেলের জ্বরে মাথায় জলপটিতে ওডিকোলন, নুন-হলুদ মাখা আঁচলে পোঁছেন মেয়ের টিফিনকৌটোটি, স্বামীর ওয়ালেট্, রুমাল, কলম হাতে দাঁড়িয়ে থাকেন অফিসের তাড়ায়, তারপর বাজারের ব্যাগ হাতে বেরোন ইলেকট্রিক, টেলিফোন বিল, গ্যাসের দোকান, ওষুধের দোকান, আর এটিএম মেশিনের লাইনে ।
মায়েদের জীবন অনেকটাই বহুজন হিতায়, সুখায় চ। এ নারীর বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না । তাই চালু হোক গৃহবধূ মায়ের বেকারভাতা।
যুগশঙ্খ "রবিবারের বৈঠক"
অন্যথায় সেনসাস 2001 অনুযায়ী ৩৬কোটি এরূপ গৃহবধূ মা' কে ভিখারিণী, বারবণিতা এবং বন্দিনীর সঙ্গে একই আসনে সেবার রাখা হল কারণ এই চার ধরণের মায়েরা নাকি অকর্মার ঢেঁকি এবং দেশের nonproductive population এর মধ্যে পড়ে তারা । এর অর্থ মায়েরা তবে রইলেন অবহেলিতা, স্থান পেলেন না সেই আসনতলে? পেলেন না তাঁর কাজের প্রাপ্য মূল্য ।
ভিখারীনি মা দেশের অর্থনীতিতে কিছু contribute করেনা। কিন্তু ভিখারীনি তার লোটা-কম্বল সম্বল করে ফুটপাথের স্নিগ্ধ সুশীতল ছায়াতরু তলে লালন করেন তার সংসার। কেউ কি স্বেচ্ছায় ভিক্ষা করে ? তাঁর প্রাপ্য মর্যাদাটুকু কে দেবেন?
বন্দিনী মা ? সেও তো অর্থনীতিতে এক নয়া পয়সা contribute করে না বরং উল্টে তার জন্য সরকারের প্রচুর টাকা ব্যয় হয় । বারবণিতা মা, ত স্টেজ পারফর্মারের মত মনোরঞ্জন করছেন জনতার । তিনি সমাজে না থাকলে ঘরের মায়েদের রাস্তায় টেনে আনা হত। তিনি নৈতিক না অনৈতিক কাজ করছেন সেটা আলোচনার বিষয় বস্তু নয় কিন্তু তিনি উত্পাদনে তথা দেশের জিডিপিতে পরোক্ষভাবে কিছু contribute করছেন । তাকে আন-প্রোডাক্টিভ বললে তো সিগারেট বা লিকার মার্চেন্টদেরও সেই পর্যায়ে ফেলতে হয় ।
এদের সঙ্গে একবার হোমমেকারদের পঙতিভোজনে বসানো হয়েছিল সেবার। আজ মা দিবসের প্রাক্কালে কেবলই এই প্রশ্ন মাথায় ঘুরছে। দেশের গ্রস ডোমেষ্টিক প্রোডাক্ট বাড়া কমায় একজন হোমমেকারের অবদান তবে কি শূন্য ?
এবার বলি ? "শিশুরাই জাতির ভবিষ্যত'। তা বলি এই শিশুদের দশমাস দশদিন নিজের জঠরে ধারণ করে, তারপর জন্মের পর থেকে মায়ের স্নেহটি দিয়ে লালন করেন সেই মা । আবার তাকে স্কুলের জন্য তৈরী করে, পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করে তাকে কত টানাপোড়েনের মধ্যে দিয়ে মানুষ করেন কে শুনি ? আর ঘর গেরস্থালী? বাড়িতে কাজের লোক না এলে, বাড়ির সব লোকের দেখাশুনো করা থেকে শুরু করে ইলেকট্রিক বিল, টেলিফোনবিল জমা দেওয়া, ডাক্তার ডাকা, প্রত্যেক সদস্যের জন্য কাস্টমাইজড সার্ভিস দেন এই মা । কথায় বলে "খুজরো কাজের মুজরো নেই' । তাই গৃহবধূ মা'দের কাজের কোনো দাম নেই । অনেকে বলেন "বাড়িতে থাকো, কি আর কর, আমাদের মত দশটা-পাঁচটা তো আর করতে হয়না' বা "বুঝতে ঠেলা যদি বাইরে বেরোতে হত, তুমি আর কি কর, রান্না ? সে কাজ তো সবাই পারে'।
অতএব মা তার দৈনন্দীন কৃতকর্মের জন্য অর্থনৈতিক ভাবে উতপাদনশীল বলে আখ্যা পাক অন্ততঃ । নয়ত তারা কেবলই দেশের জনসংখ্যা বিস্ফোরণের দায়টি মাথায় তুলে নিয়ে তাদের উতপাদনহীনতার মুকুট পরে বসে থাকবে আজন্মকাল । একটি কোম্পানির সারাবছরের হিসাবের খাতাটিকে বলে অ্যানুয়াল রিপোর্ট যেখানে দুটি টেবল থাকে একটি ব্যালেন্সড শিট অন্যটি লাভ-ক্ষতির হিসাব; এই মা সেই দেশের অর্থনৈতিক হিসাবের খাতায় ভবিষ্যত প্রজন্মের প্রতিপালন করে জাতীয় সম্পদ বা capital asset তৈরী করছেন । চুলোয় যাক বাসন মাজা, ঘরপোঁছা, রান্না করা, ঝুল ঝাড়া । লাভ-ক্ষতির একাউন্টে তাকে না আনাই শ্রেয় । তিল তিল করে সঞ্চিত হচ্ছে সেই সব ধনরত্ন সেই শিশু নাগরিকের মধ্যে । যার মধ্যে থেকেই কেউ গিয়ে নাসায় রকেট চড়ছে, কেউ বৈজ্ঞানিক হয়ে জীবনদায়ী ওষুধ তৈরী করছে, কেউ বানাচ্ছে অটোমোবাইল, কেউ বা হচ্ছে সৌরভ, লিয়েন্ডার-বিশ্বনাথনের মত কিম্বা রবীন্দ্রনাথ, অমর্ত্য সেনের মত নোবেল লরিয়েট !
আর সেই মা যিনি নেপথ্যের নায়িকা? ভোর থেকে রাত্রি পর্যন্ত সংসারের স্টিয়ারিংটি হাতে নিয়ে সংসারটিকে চালনা না করতেন তাহলে জানিনা কোথাকার জল কোথায় গিয়ে দাঁড়াত । তাঁর প্রতিপক্ষ বলবে কারোর জন্য কারোর আটকায় না কিন্তু যতক্ষণ দাঁত থাকে ততক্ষণ দাঁতের মর্যাদা বোঝা যায় না । বাড়ির যে খরচাগুলি সেই মহিলা বাঁচান ততটাই টাকা রোজগারের সমতুল্য ।
আর মা তাঁর সেই ব্যস্ততায় ছেলের জ্বরে মাথায় জলপটিতে ওডিকোলন, নুন-হলুদ মাখা আঁচলে পোঁছেন মেয়ের টিফিনকৌটোটি, স্বামীর ওয়ালেট্, রুমাল, কলম হাতে দাঁড়িয়ে থাকেন অফিসের তাড়ায়, তারপর বাজারের ব্যাগ হাতে বেরোন ইলেকট্রিক, টেলিফোন বিল, গ্যাসের দোকান, ওষুধের দোকান, আর এটিএম মেশিনের লাইনে ।
মায়েদের জীবন অনেকটাই বহুজন হিতায়, সুখায় চ। এ নারীর বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না । তাই চালু হোক গৃহবধূ মায়ের বেকারভাতা।
যুগশঙ্খ "রবিবারের বৈঠক"
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন