বাঙালি বিয়ের আইবুড়োভাত অনেকটা বিদেশের ব্যাচিলরস পার্টির মত। বিয়ের দিন পাত্র পাত্রী অনেকক্ষণ উপোস করে থাকবে। আমিষ খাবেনা। ভাত নয়। কেবল ফলাহার, দুধ মিষ্টি, শরবত ইত্যাদি। তাই বিয়ের আগের দিন ফাঁসির খাওয়া খাইয়ে তাকে পুরোদস্তুর ফর্টিফায়েড করে দিতে হবে। বিয়ের দিনে সে ফিট থাকবে। বজ্রদন্তি, চন্দ্রকান্তি, তন্দরস্থি পাত্র পাত্রী রেডি ফর দ্যা শো।
না, না আমাদের বাড়িতে ফেয়ারনেস ক্রিম চলে না। বরং চলে কাঁচা হলুদ সেবন। সঙ্গে নিমপাতা, মধু তে শরীরের দিনভর টক্সিন সুপার ক্লিনিং। তারপর আইবুড়োভাতের দিনে সকালে স্নান সেরে ফুলকো লুচি, সাদা আলু চচ্চড়ি আর বোঁদেতে কব্জি ডুবিয়ে আমার পুত্রটি রেডি হতে না হতেই ফুলওয়ালা হাজির মালা নিয়ে। ততক্ষণে দোরেগোড়ায় আলপনা, মঙ্গলঘট, আম্রপল্লব, কলা গাছ, ডাব, সিঁদুর দিয়ে স্বস্তিকা পর্ব সমাপন। এবার ল্যাপটপে হালকা শব্দ। হিন্দুস্তানী ক্ল্যাসিকাল মিউজিকের মূর্ছণা। রবিশঙ্কর, আলি আকবর, শিবকুমার শর্মা, হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া আর বিসমিল্লা খান সাহেবের মধ্যরাতের মেলোডি, স্বর্ণযুগের রাগরাগিণীর সুর। ওদিকে গায়েহলুদের তত্ত্ব সাজানো শেষ। কবিতায় তত্ত্বসূচি পড়ে চলেছেন দুই মা। মিলিয়ে দেখার পর্ব। প্রতিটি ট্রের সিরিয়াল নম্বর অনুযায়ী কবিতার লিষ্টি ।
ওরে ওরে কাল সকালে সাতটার মধ্যে কাতলা মাছ রেডি তো? আর তার ঘাগরা চোলি? নাকের নথ? মাথার ওড়না? শতরঞ্চি বিছানো পানপাতার বাগানে সুপুরীর সমাবেশ? রূপোর বাটিতে হলুদ বাটা? আর গায়েহলুদের গঙ্গাযমুনা শাড়ি? সঙ্গে সরিষার তেলের পেট বোতল? আমাদের সময় ছিল টিন।
।। মত্স্য নাকি মাঙ্গলিক, ইহাই কহেন লোকে
কাঁচা হলুদ, পান সুপারী সঙ্গে যদিবা থাকে।
ঘাগরা চোলিতে মতস্যকন্যে বিয়েবাড়ি যায়
গাত্রহারিদ্রা শেষে ইহারে কুটিয়া খায় ।
সরিষার তেল-হলুদ মাখিও ওগো কনে
লাল হলুদ গঙ্গাযমুনা শাড়িটি থাকিল সনে।
শতরঞ্চিতে বসিও সব ভাইবোনে মিলিয়া
হলুদ কপালে দিও, মাথায় জল ঢালিয়া ।
কমলা গামছায় ঢাকিও অঙ্গের ভূষণ
ধান দুব্বোয় আশীর্বাদ করিবে স্বজন।।
আইবুড়োভাতের দিন দুপুরের খাওয়াদাওয়া মিটলেই বিকেলে আমরা তত্ত্ব পাঠিয়ে দিই মেয়ের বাড়ি। নইলে বিয়ের দিন হুলুস্থুল হয়। পুজো আচ্চা, রীতিনীতির ভীড়ে সব তোলাপাড়ায় অসুবিধে হয়। বিয়ের দিন সকালে নিয়মমাফিক শুধু হলুদ ছুঁইয়ে মাছ, হলুদ আর গায়ে হলুদের শাড়ি পাঠানো হয়।
|| তত্ত্বীয় সব তত্ত্বতালাশ, বাক্স প্যাঁটরা কর খালাস
ছড়ায়, ছন্দে তত্ত্বসূচী, যা কিছু সব শুভ শুচি
ঠাম্মা-দিদার কচকচানি, ইন্দিরা মা'র ছটফটানি
বই বাঁধালেন শ্বশুর মশাই, সোজা হয়ে বসেন দাদাই
শাঁখ বাজাও, উলু দাও গো এয়োতিরা প্রাণ ভরে
মাতিয়ে দাও বিয়ে বাড়ী সানাইয়ের সুরে ||
আমার অনেকদিনের সাধ ছিল ছেলের বিয়ের গায়েহলুদের তত্ত্বসূচি সম্পূর্ণ ছড়ায় লিখব। সংবাদ প্রতিদিনের পাতায় পড়েছিলাম ঋতুপর্ণ ঘোষের লেখা অপর্ণা সেনের মেয়ের বিয়েতে লেখা এমন সব। তার ধারে কাছ দিয়ে না গেলেও চেষ্টা করে গেছি মাত্র। যেমন শাড়ির নাম দিয়ে, ড্রেসের নাম দিয়ে প্রতিটি ট্রের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ না হলেও আংশিক লিষ্টি। মিষ্টি, মশলা, স্যুটকেস, স্নানের সরঞ্জাম, ঘুমের টুকুটাকি সব দিয়ে মিলিয়ে মিশিয়ে। বন্ধুদের অনুরোধে কিছুটা দিলাম।
যেমন স্নানের সব কিছু উপকরণ দিয়ে সাজানো ট্রে খানি ছিল এমন।
।। মধুচন্দন ফেসপ্যাকে হোক সুকোমল তব ত্বক
বিয়ের জলে হয়ে ওঠো তুমি উজ্জ্বল ঝকঝক।
কদম্ব-কুর্চি জলে ছড়িয়ে স্পা এর অনুরূপ
গোলাপজলে স্নান সেরে ওডিকোলন টুপটুপ ।
হেনা করা কেশ হোক সুগন্ধিত, ধূপের ধোঁয়ায়
আধফোটা কুসুমকলি, হবে স্নানের ছোঁয়ায় ।
বাথরোব, তোয়ালে, চটি রইল এইখানে
যখন যেটা লাগবে বোলো কিনে দেব এনে ।।
রাতপোষাক আর তার আনুষাঙ্গিক এর ট্রে টি ছিল এমন।
।। ঘুম ঘুম চাঁদ, মাধবী রাতে ঝিকিমিকি তারা
এসব ব্যবহারে কন্যে হোয়ো না নিদ্রাহারা।
কাছে শোবে, কানে কবে, মেখে নেবে সুগন্ধি
ভুলো নাকো মুখে দিতে দুটো মুখশুদ্ধি।
ফুলেল গন্ধে ঘর মোম জোছনায়
আড়ি পাতে বাড়িসব, তারা ফিশফিশায়।।
না, না আমাদের বাড়িতে ফেয়ারনেস ক্রিম চলে না। বরং চলে কাঁচা হলুদ সেবন। সঙ্গে নিমপাতা, মধু তে শরীরের দিনভর টক্সিন সুপার ক্লিনিং। তারপর আইবুড়োভাতের দিনে সকালে স্নান সেরে ফুলকো লুচি, সাদা আলু চচ্চড়ি আর বোঁদেতে কব্জি ডুবিয়ে আমার পুত্রটি রেডি হতে না হতেই ফুলওয়ালা হাজির মালা নিয়ে। ততক্ষণে দোরেগোড়ায় আলপনা, মঙ্গলঘট, আম্রপল্লব, কলা গাছ, ডাব, সিঁদুর দিয়ে স্বস্তিকা পর্ব সমাপন। এবার ল্যাপটপে হালকা শব্দ। হিন্দুস্তানী ক্ল্যাসিকাল মিউজিকের মূর্ছণা। রবিশঙ্কর, আলি আকবর, শিবকুমার শর্মা, হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া আর বিসমিল্লা খান সাহেবের মধ্যরাতের মেলোডি, স্বর্ণযুগের রাগরাগিণীর সুর। ওদিকে গায়েহলুদের তত্ত্ব সাজানো শেষ। কবিতায় তত্ত্বসূচি পড়ে চলেছেন দুই মা। মিলিয়ে দেখার পর্ব। প্রতিটি ট্রের সিরিয়াল নম্বর অনুযায়ী কবিতার লিষ্টি ।
ওরে ওরে কাল সকালে সাতটার মধ্যে কাতলা মাছ রেডি তো? আর তার ঘাগরা চোলি? নাকের নথ? মাথার ওড়না? শতরঞ্চি বিছানো পানপাতার বাগানে সুপুরীর সমাবেশ? রূপোর বাটিতে হলুদ বাটা? আর গায়েহলুদের গঙ্গাযমুনা শাড়ি? সঙ্গে সরিষার তেলের পেট বোতল? আমাদের সময় ছিল টিন।
।। মত্স্য নাকি মাঙ্গলিক, ইহাই কহেন লোকে
কাঁচা হলুদ, পান সুপারী সঙ্গে যদিবা থাকে।
ঘাগরা চোলিতে মতস্যকন্যে বিয়েবাড়ি যায়
গাত্রহারিদ্রা শেষে ইহারে কুটিয়া খায় ।
সরিষার তেল-হলুদ মাখিও ওগো কনে
লাল হলুদ গঙ্গাযমুনা শাড়িটি থাকিল সনে।
শতরঞ্চিতে বসিও সব ভাইবোনে মিলিয়া
হলুদ কপালে দিও, মাথায় জল ঢালিয়া ।
কমলা গামছায় ঢাকিও অঙ্গের ভূষণ
ধান দুব্বোয় আশীর্বাদ করিবে স্বজন।।
আইবুড়োভাতের দিন দুপুরের খাওয়াদাওয়া মিটলেই বিকেলে আমরা তত্ত্ব পাঠিয়ে দিই মেয়ের বাড়ি। নইলে বিয়ের দিন হুলুস্থুল হয়। পুজো আচ্চা, রীতিনীতির ভীড়ে সব তোলাপাড়ায় অসুবিধে হয়। বিয়ের দিন সকালে নিয়মমাফিক শুধু হলুদ ছুঁইয়ে মাছ, হলুদ আর গায়ে হলুদের শাড়ি পাঠানো হয়।
|| তত্ত্বীয় সব তত্ত্বতালাশ, বাক্স প্যাঁটরা কর খালাস
ছড়ায়, ছন্দে তত্ত্বসূচী, যা কিছু সব শুভ শুচি
ঠাম্মা-দিদার কচকচানি, ইন্দিরা মা'র ছটফটানি
বই বাঁধালেন শ্বশুর মশাই, সোজা হয়ে বসেন দাদাই
শাঁখ বাজাও, উলু দাও গো এয়োতিরা প্রাণ ভরে
মাতিয়ে দাও বিয়ে বাড়ী সানাইয়ের সুরে ||
আমার অনেকদিনের সাধ ছিল ছেলের বিয়ের গায়েহলুদের তত্ত্বসূচি সম্পূর্ণ ছড়ায় লিখব। সংবাদ প্রতিদিনের পাতায় পড়েছিলাম ঋতুপর্ণ ঘোষের লেখা অপর্ণা সেনের মেয়ের বিয়েতে লেখা এমন সব। তার ধারে কাছ দিয়ে না গেলেও চেষ্টা করে গেছি মাত্র। যেমন শাড়ির নাম দিয়ে, ড্রেসের নাম দিয়ে প্রতিটি ট্রের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ না হলেও আংশিক লিষ্টি। মিষ্টি, মশলা, স্যুটকেস, স্নানের সরঞ্জাম, ঘুমের টুকুটাকি সব দিয়ে মিলিয়ে মিশিয়ে। বন্ধুদের অনুরোধে কিছুটা দিলাম।
যেমন স্নানের সব কিছু উপকরণ দিয়ে সাজানো ট্রে খানি ছিল এমন।
।। মধুচন্দন ফেসপ্যাকে হোক সুকোমল তব ত্বক
বিয়ের জলে হয়ে ওঠো তুমি উজ্জ্বল ঝকঝক।
কদম্ব-কুর্চি জলে ছড়িয়ে স্পা এর অনুরূপ
গোলাপজলে স্নান সেরে ওডিকোলন টুপটুপ ।
হেনা করা কেশ হোক সুগন্ধিত, ধূপের ধোঁয়ায়
আধফোটা কুসুমকলি, হবে স্নানের ছোঁয়ায় ।
বাথরোব, তোয়ালে, চটি রইল এইখানে
যখন যেটা লাগবে বোলো কিনে দেব এনে ।।
রাতপোষাক আর তার আনুষাঙ্গিক এর ট্রে টি ছিল এমন।
।। ঘুম ঘুম চাঁদ, মাধবী রাতে ঝিকিমিকি তারা
এসব ব্যবহারে কন্যে হোয়ো না নিদ্রাহারা।
কাছে শোবে, কানে কবে, মেখে নেবে সুগন্ধি
ভুলো নাকো মুখে দিতে দুটো মুখশুদ্ধি।
ফুলেল গন্ধে ঘর মোম জোছনায়
আড়ি পাতে বাড়িসব, তারা ফিশফিশায়।।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন