৮ অক্টো, ২০২১

মহিষাসুরবধ ও নারীশক্তির উত্থান / ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়

 


পুরুলিয়ার চড়িদা গ্রামের ছৌ মুখোশে মহিষাসুর - লেখকের নিজস্ব সংগ্রহ 


মহিষাসুরমর্দ্দিণি দুর্গা বৃত্তান্তের খলনায়ক হলেন অপরাজেয় দোর্দ্দন্ডপ্রতাপ মহিষাসুর। তিনি কে? কিভাবেই বা তাঁর জন্ম? কেনই বা মা দুর্গা তাঁকে বধ করতে উদ্যত হলেন, মা দুর্গার এত শক্তির উৎসের কারণই বা কি আর বিপদে পড়লে দুর্গানাম জপতে বলাই বা কেন, সেই নিয়ে বলব এবার। 

বরাহপুরাণের মতে বিপ্রচিত্তি নামক এক দৈত্যের মাহিষ্মতী নামে একটি মেয়ে ছিল। ছোট মেয়ে খেলার ছলে সিন্ধুদীপ নামে তপস্যারত এক ঋষির সামনে গিয়ে মহিষীর বেশে তাকে প্রচণ্ড ভয় দেখাতে লাগল। ঋষির তপস্যা ভঙ্গ হল । ক্রুদ্ধ ঋষি ছোট মেয়েটিকে অভিশাপ দিয়ে বললেন “তাহলে তুমি বরং মহিষী‌ই হয়ে যাও”। সেই মহিষীরূপী মাহিষ্মতীর গর্ভে যে পুত্রসন্তান হয়েছিল তার নামই মহিষাসুর।

আবার কালিকাপুরাণে বলে মহিষাসুর হল রম্ভাসুরের পুত্র। প্রবল ক্ষমতাশালী রম্ভাসুর মহানন্দে এক সুন্দর মহিষীকে বিবাহ করেছিল। বিবাহ করে ফেরার পথে আর এক অসুরের দ্বারা রম্ভাসুর নিহত হয় আর তার নবপরিণীতা স্ত্রী কিছুদিন পর জন্ম দেয় মহিষাসুরের। যে কিনা মহাদেবের আরাধনা করে দেবীর আশীর্বাদী বর লাভ করে। কঠোর তপস্যার দ্বারা ব্রহ্মার কাছ থেকে অমরত্ব পায় । ব্রহ্মা যেমন মহিসাসুরকে অমরত্ব দিলেন তেমনি বললেন একমাত্র নারীশক্তির দ্বারাই এই মহিষাসুর বধ হবে।

বামনপুরাণে দেখা যায় পুল্যস্ত নারদ কে বলছেন, 

দেবতারা মহিষাসুরের কাছে পরাস্ত হয়ে গৃহ পরিত্যাগ করে ব্রহ্মার নেতৃত্বে বিষ্ণুর কাছে শরণাপন্ন হলেন। সেখানে মহাদেব‌ ও উপস্থিত ছিলেন।এবং তাঁরা তিনজনে মিলে দেবতাদের এই দুরবস্থার কথা শুনে প্রচন্ড ক্রোধানলে জ্বলে ওঠেন। তাঁদের চোখ এবং মুখমন্ডল থেকে যে রোষানল বহির্গত হয় সেই পর্বতসম অগ্নি থেকে জন্ম নেন অষ্টাদশভুজা, ত্রিনয়নী, কৃষ্ণকেশা এবং দীপ্তিময়ী কাত্যায়নী মহিষাসুরমর্দিনী।  

একের পর এক বর লাভের পর এই সর্বশক্তিমান মহিষাসুরের দাপট ক্রমশঃ বাড়তেই থাকে।

ওদিকে এক নারী শক্তির উত্থানও হতে লাগলো ঋষি কাত্যায়নের লালনে। কাত্যায়নের কন্যা কাত্যায়নীই পরবর্তী কালে দিব্যায়ুধে সুসজ্জিতা আমাদের দুর্গা। 

কোন মন্তব্য নেই: