কবিতা | |
পদ্মবনে সদ্য কিছু পদ্য ফুটেছে
চোদ্দোটা মৌমাছি অদ্য ঠিকই জুটেছে যেই না মধু শুষতে গেল ওষ্ঠপুটে সে বোধ্য হল মদ্যপানা পঙক্তি জুটেছে। |
আমি বাপু বোকার হদ্দ,পদ্ম দেখতে পাইনে
পদ্ম দেখে পদ্য লিখি কবি হতে চাইনে। সদ্য সদ্য গদ্যপুরে পাড়ি দিয়ে এনু পদ্যরা সব পদ্ম বনে থমকে দাঁড়িয়ে ছিনু মদ্দা কথা গদ্যপদ্য সব পুরেতেই শান্তি চোদ্দোগন্ডা লিখতে গিয়েই গাইতে ভুলি গানটি। |
প্রকৃতি | |
মাঝে মাঝে ফিরে যেতে ইচ্ছে করে
অরণ্যজীবনে চাপমুক্ত মনে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে আছি সভ্যতার অপরূপ নাগপাশ বন্ধনে। |
অরণ্যের সবুজ ধরে পেরুবো মেঠো পথ
নদীর সাঁকোয় দেখবো উঠে সূর্যোদয়ের রথ। মাটির বুকে কীতপতঙ্গ হাওয়ায় পাখির ডাক মায়ের বুকে শিশুরা সব বেঁচেবর্তে থাক। |
পরিবেশ | |
কংক্রিটবনে ধূম্রকন্টক দূষণক্লিষ্ট শহর নিশ্বাস নিতে সবুজ খুঁজছি সবুজই পরশপাথর। |
গাছের পাতার ঘুম নেই আজ
ভারী হয়ে আছে দূষণে পত্ররন্ধ্র বুজে গেছে তার রং তেজ সব হরণে। |
অতিমারী | |
ওষধিরা ফুল সেজে ভরে থাকে বারান্দার কোণ ক্লেশক্লান্ত মানুষকে নিরন্তর করে উন্মন। |
রক্তজলে ভাসছে দেহ
অসহায় বড় মানুষ তবুও আমরা খাচ্চিদাচ্ছি ওড়াচ্ছি আজো ফানুস। |
ফুল | |
ফুলের গান কি শুনেছ কখনও অতিশয় সুশ্রাব্য রাতের স্বপ্নে মোহজাল বুনে ভোরে ঘুম ভাঙে মিঠে সুর শুনে উঠে বসে লিখি পরমানন্দে ফুলসুন্দর কাব্য। |
ফুলেরা কখন চোখ মেলে চায় দেখেছ কখনো ভেবে? পাপড়িগুলো খুলে খুলে চায় কেউ কেউ তারা ঝরে পড়ে যায় ঠিক কখন যে ঘটে যায় সব খেয়াল করিনা দেখে। |
কোবিদ | |
কই কাশফুল, ফুটলি কি রে, তাহলে এবার তৈরি হব কোবিদ কি এখন গেছে দেশ ফেলে না এবারও পুজো ফাঁকা প্যান্ডেলে ও কাশ, শিউলি, ফিরতি পোস্টে সবটা জানিয়ে পাঠাস খবর। |
যমরাজ আছে লুকিয়ে চুরিয়ে দিনকয়েকের ছুটিতে সাগরে কিম্বা নদীতে পাহাড়ে, পঞ্চবটীতে। করোনা কী তাকে হটিয়ে দিল? ভাটা পড়ল কী দোস্তিতে? |
মার্জার সংবাদ -১ | |
পুষিবেড়ালটা কী কারণে যেন গোঁসাঘরে দিল খিল
খবরে প্রকাশ, গোপনে কিচেনে মাছটি খেয়েছে, গিন্নিমা জেনে ঘেটি ধরে তার দিয়েছে কষিয়ে গোটা কয় ঘুষি-কিল |
পুষির আজকে মনখারাপ খাবেনা কিছুই আজ আগামীকাল চাপড়াষষ্ঠী, ডিটক্স, উপোস গুষ্টি তুষ্টি কব্জি ডুবিয়ে খাবে বলে কাল ভুলে যাবে সব লাজ। |
মার্জার সংবাদ-২ | |
মাছপাহারায় ব্যস্ত আছে সে এক আজব বিল্লি কর্তব্যে সে ঘোর অবিচল দিবারাত্রি পল-অনুপল নড়নচড়ন নেইকো যতই করো চেল্লাচিল্লি। |
আজ যে ঘরে আন্নাপুজো বিল্লির ভারি সুখ কাঁটাপোঁটা, ল্যাজামুড়ো সব এসেছে বাড়ির ভেতর বিল্লির সব হুঁশ আছে যে, খেয়াল রাখে নিজের মতো কাল ভোরের আগে পাবেনা সেসব সেটায় বড় দুখ। |
ফুল | |
ফুল বলল, তাকাও ওহে, হয়ো না নাক-উচ্চ একবার তুমি দৃষ্টিং দেহি হাম কিসিসে কমতি নেহি তুচ্ছ ভাবছ যাকে--তুমি তারও কাছে তুচ্ছ। |
ফুলের কথায় বৃষ্টি বলে
আমি তো নীচেই নামি। তৃণের চেয়েও নীচে ঝরি, গাছের মাথায় থামি। এক আকাশের বুকে আছি মোরা বাতাসেও একই শ্বাস। তবু চেয়ে দেখ, মানুষের শুধু অহং সর্বনাশ। |
বাগান বিলাস | |
বাগানবিলাসী গৃহিণীর খেতে ফুটে আছে দেখলাম
ছোট্ট তবুও কী যে তার জাঁক বাজারবিখ্যাত কচি লালশাক বর্ষাদুপুরে লাল লাল ভাত খেতে কী আশ্চর্য আরাম! |
আমিও বড় বাগানবিলাসী, সবুজ ভালোবাসি
বৃষ্টি এলেই ছেঁটে কেটে সব রূপ দিয়ে চলে আসি। কারোর শেকড়, কারোর পাতা, কারোকে সমূলে তুলে নতুন নতুন টবে মাটি ঢেলে পুঁতে দিই প্রাণ খুলে। বর্ষার জলে নেচে ওঠে ওরা, পরাণে কত যে সুখ! ওদের খুশিতে আমি বড় সুখী ভুলে যাই সব দুখ। |
কবুতর কিসসা | |
গম্ভীর মুখে চোয়াল ফুলিয়ে অপেক্ষায় পায়রানি
রোজ খুদকুড়ো জিবের অরুচি তেনাকে বলেছি 'এনো ভাজাভুজি' না আনলে আজ কি যে অনর্থ ঘটবে কী তা জানি। |
প্যাকেট প্যাকেট দেখি চারধারে, মনে জাগে খুলে দেখি
ফাস্টফুড আর হোম ডেলিভারি আমার ওপরই যত নজরদারি নীরব দর্শক বসে থাকি শুধু লালা ঝরিয়েই দুখী। |
জীবন | |
জীবনবাবু রসিক মানুষ রাখতে হবে রসেবশে
জীবন তো চায় ছন্দে চলন ব্যত্যয় হলে পদস্খলন ভাবো একবার ঝরনা যদি চলতে চলতে ব্রেক কষে! |
ঝর্ণা যদি ব্রেক কষে ভাই নদীও যাবে থমকে।
পাহাড় যদি সচল হয়ে সমুদ্র তবে শান্ত হয়ে বৃষ্টি ঝরা থেমে গিয়ে ভাই বরফই শুধু গলবে। |
শরত এলো | |
ফড়িং ঘুরছে ফুলবাগানে ডানায় কত জাঁক মধু কি খায় ফড়িংসোনা করছি দেদার গবেষণা ফড়িং যদি মধুই খাবে কোথায় ফড়িংচাক! |
আমরা দু'জন এই নৌকায় থাকি, যে নৌকায় জায়গা অনেক বেশী শিউলিগন্ধ এতোই আছে সেথায় পারলে তুমি ভরো নিয়ে যেও শিশি কাশের হাওয়া লাগে নৌকাপালে, বন্ধু তুমি আছো ধরে তার হাল সোনারতরী ভাসবে দুলে দুলে, আজ যাই ভাই, আসব আবার কাল । |
সূর্য তামসী | |
সূর্য যেই-না উঠতে চাইল, ধমকায় মেঘ, 'এখন না'
বর্ষাকালের মরসুমে
সবাই এখন ভোরঘুমে আরেকটু পর উঠে তুমি ছড়িও আলোর বন্যা। |
সূর্য তার কাজ সেরে উঠে পড়ে তাড়াতাড়ি মেঘের তখনো প্যাকিং সারা, যেতে হবে যে বাড়ি। বৃষ্টি বলে আরেকটু থাকি, আবার তো কত পরে চোখ রাঙিয়ে বর্ষা বলে আর না! দেব দু'ঘা করে। |
ভরা বাদর | |
মিষ্টি নদী, নাচছ, বইছ, সারাক্ষণ কী সজাগ
ছোট্ট ঢেউয়ের পিঠে উঠে ইচ্ছে করে বেড়াই ছুটে অচিন দেশে হারিয়ে যাওয়ার একশো এক মজা। |
নাচছে নদী, কাঁদছে আকাশ
জীবন ফুরায় হাঁফিয়ে সাজছে শরত, পুজোর আমেজ তবুও বাতাস ভিজিয়ে। ভিজছে মাটি, জোলো হাওয়ায় পুজোর গন্ধ ফুরোয় না শারদীয়ার গন্ধ ভাসে আগমনী কেউ গায়ই না। |
মেঘ -বৃষ্টি | |
মেঘ বলল, ও মেঘবউ, আজ ওয়েদার ফাস্টো কেলাস
সন্ধেবেলা যাওয়াই যায়
কুলকুল কোনও রেস্তোরাঁয় বেশি দূর নয়, একবেলা পথ, চল উড়ে যাই খাইবার পাস। |
মেঘবতী শুধায়।" বলছিলাম কী, পুজো টা নাহয় থেকেই যাই,
এখনো বড় সাধ হয়, যদি দু'জনে ভেজাতে পারি। দুদণ্ড প্যান্ডেলের মাথায় বসি। ওরা কেমন খায়দায়, মজাটজা করে সেজেগুজে বেড়ায় ঘুরে। আমরা নাহয় নামব কারোর ছাদে কিম্বা কোনো সবুজ মাঠে। আশ্বিনে তবু নামা যায়। কার্তিক এলেই আবার ওরা লাঠিসোঁটা নিয়ে করবে তাড়া । বাতাসে তখন হিমহিম গন্ধ তোমার আমার নীলকালো সংসার। সময় তখন আড়ালে লুকিয়ে থাকার। |
আমরা বেড়াতে যাব না? | |
'কোথায় যাবেন, আপ না ডাউন, বলুন মশয়, কীসে যাওয়া?
আপ ট্রেন যায় সব ফাইভ স্টার ডাউন ট্রেন পাইস রেস্তরাঁ' 'কোত্থাও নয়, দিন না টিকিট, যেখানে ফ্রি থাকা-খাওয়া। |
আমি যাব চলে জাহান্নামে কিম্বা বেহেস্ত, পরীর দেশে অথবা যাব মায়ের কাছে সুখ যেখানে উপচে আছে। কিম্বা যাব বাবার কোলে ছোট্ট আমি ঘুমের দেশে হয়ত কখন যাব চলে। |
প্রজাপতি | |
ফুলটার পাশে হাসল বসে সে এক প্রজাপতি
কালচে গাউন তার পরনে লাল স্কার্ট পরে অন্যজনে মাপছে দুজন, আমি না ও, কে কম রূপবতী! |
পেরজাপতির পুজোয় এবার পালাজো, টপ চাই
গাউন, স্কার্ট ব্যাকডেটেড বরং, কেপরি হাইফাই। ফুলের কাছে যেতে গিয়ে থমকে গেছে আজ। ও কী! ও মা! ফুলের আবার দেখ কেমন সাজ! শরত আলোয়, পুজোর ভীড়ে শিউলিবাড়ির দোর রাত পোহালেই দেখব সবাই মহালয়ার ভোর। |
৫ অক্টো, ২০২১
ভোরের বার্তা
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন