তারকেশ্বর
পশ্চিমবাংলার শৈবতীর্থের
অন্যতম তারকেশ্বর । হুগলীজেলার
এই দেবভূমি হাওড়া স্টেশন থেকে
মাত্র ৩৬ মাইল দূরে । আমার
চলেছিলাম বর্ষণমুখর এক কাকভোরে
। গাড়ি নিয়ে সোজা উত্তরে
নিবেদিতা সেতু পেরিয়ে দুর্গাপুর
এক্সপ্রেস ওয়ে ধরে সিঙ্গুরের
পর বাঁদিকে ঘুরতে হবে । তারপর
স্টেট-হাইওয়ে ২
ধরে গেলেই পড়বে তারকেশ্বর ।
গাড়ি রাখবার চমতকার জায়গা
আছে মন্দিরের বাইরে । চমত্কার
রাস্তা । বহু মানুষ শেওড়াফুলি
থেকে তারকেশ্বর পর্যন্ত
রেলপথে যাতায়াত করে থাকেন ।
স্বনামখ্যাত স্বয়ংভূ শিবলিঙ্গ
আছেন এখানে যাঁর কলিযুগের
নাম বাবা তারকনাথ । এবার আসি
প্রতিষ্ঠাতার কথায় ।
তারকেশ্বর
তীর্থস্থান থেকে প্রায় মাইল
তিনেক দক্ষিণ-পূর্বে
কানানদীর তীরে রামনগর গ্রাম
। সেখানে রাও ভারামল্ল নামে
এক রাজপুত রাজা রাজত্ব করতেন
। রামনগরের স্থানীয় অধিবাসীদের
উপর জোর জবরদস্তি করে রাজস্ব
আদায় সহ নানাবিধ অত্যাচার
শুরু করলেন । রামনগরের নিকটবর্তী
গ্রাম বাসিন্দারা ক্ষিপ্ত
হয়ে উঠল । তারা মুর্শিদাবাদের
নবাবকে সেকথা জানালে নবাব
রাজারূপী ঐ দস্যুগণকে মুর্শিদাবাদে
বন্দী করে পাঠাতে বললেন ।
এদিকে রাজা ভারামল্ল ও তার
ভাই বিষ্ণুদাসকে দেখে নবাব
বুঝলেন এরা কেবলমাত্র ভিনদেশী
দুই রাজপুত । যাদের ব্যবহার
অত্যন্ত ভালো এবং যারা ব্যবসার
কারণে বাংলায় থিতু হয়েছে।
নবাব তাদের রামনগরে থাকতে
আদেশ দিলেন ।
রাজা
ভারমল্লের একটি গোশালা ছিল
। কপিলা নামে একটি হৃষ্টপুষ্ট
গোরু সেখানে প্রচুর দুধ দিত
। একদিন হঠাত দেখা গেল রাজার
দুধ কমে গেছে । গোরক্ষকের ওপর
ভার পড়ল সেই রহস্য উদঘাটন
করার জন্য । সে গিয়ে দেখতে পেল
জঙ্গলের অনেক গরুর মধ্যে
কেবলমাত্র কপিলা একটি চকচকে
পাথরের মধ্যে খোদিত একটি গর্তে
স্তন রেখে সেখানেই দুধ দিচ্ছে
। রাজাকে জঙ্গলের মধ্যে এনে
সেই দৃশ্য দেখালেন গোরক্ষক
। আশপাশের গ্রামের মানুষ
দেখতে লাগল সেই দৃশ্য । তারা
জানালো সেই পাথরটির ওপর বহুদিন
ধরে তারা ধান ঝাড়ে কিন্তু এরূপ
দৃশ্য তারা কখনো দেখে নি । আর
এই পাথরটি হল সেই স্বয়ংভূ
লিঙ্গ যিনি তারকনাথ রূপে পূজিত
হন ।
শ্রাবণ
মাসে প্রচন্ড ভীড় হয় তাই শ্রাবণ
মাস পড়ার আগেইভাগেই ভোর ভোর
আমরা পৌঁছেছিলাম আর পুজো দিয়ে
নিয়েছিলাম । আছে সেই বিখ্যাত
দুধপুকুর যেখান থেকে জল নিয়ে
বাবার পুজোসামগ্রী কিনে পুজো
করার ব্যবস্থা আছে । কথায় বলে দুধপুকুরে স্নান করলে সর্ব ব্যাধি বিনাশ হয় । তারকনাথের
সেবার জন্য বাবার গদিতে দানের
সুবন্দোবস্ত আছে । রসিদের
বিনিময়ে দান গ্রহণ করা হয়
সেখানে । জলযোগ ও দুপুরের
খাওয়ার ভালো হোটেল ও আছে আর
আছে কাশী বিশ্বনাথের মত অজস্র
অলিগলি ও সেখানে দন্ডায়মান
ষাঁড় । মোটের ওপর বাড়ির কাছাকাছি
বেশ ভালো তীর্থস্থান এই
তারকেশ্বর ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন