১৩ ফেব, ২০১১

খুশির প্রেমদিবস






ভ্যালেন্টাইনস ডে ছিল না আমাদের সময়ে । কিন্তু তখনো প্রেমে পড়ত ছেলেমেয়েরা । আর বসন্ত এলেই প্রেমের জোয়ারে গা ভাসিয়ে দিত তারা । পালন করত নিত্য নতুন ভ্যালেন্টাইনস ডে । কখনো হোলিতে কখনো সরস্বতী পুজোতে । আর প্রণয়ের পারাবারে সাঁতার কাটতে কাটতে বিবাহিত স্বামী-স্ত্রীরা  ? দৈনন্দীন জীবনের একঘেয়েমিতে কেমন পাগল পাগল ভাব নিয়ে  তারাও মাঝে মাঝে পালন করত ভ্যালেন্টাইন্স ডে । স্বামী তার বিশেষ দিনটিতে স্ত্রীয়ের জন্য ছোট খাট গয়না 
কিনে উপহার দিতেন । অফিস থেকে ফেরার পথে, জলযোগের কেক-প্যাটিস নিয়ে বাড়ি ফিরে বলতেন " কি গো চা বসাও ? দেখ আজ কি এনেছি, তোমার জন্যে " কিম্বা  চলো দু'দিন পুরী বেড়িয়ে আসি" এ সব দেখেছি আমাদের বাবা 
মায়েদের আমলে । আমাদের বিয়ের ঠিক আশপাশের সময় থেকে শুরু হ'ল ভ্যালেন্টাইন্স ডে । লেট আশির দশকে । ব্যাস! সেই থেকে শুরু "ভ্যালেন্টাইন প্যাকেজ"  ফুলের দোকান থেকে শুরু করে গ্রিটিংস কার্ড , গয়না থেকে কেক, মকটেল, 
কফি , আইস ক্রিম সর্বত্র সেই তীর বিদ্ধ হৃদয়ের ছবি !  শপিং মলে ঝুলছে বিশাল বিশাল রক্তাক্ত হৃদয় , টিভির পরদায় প্রেমের গান, প্রেমের ছবি, প্রেমের কবিতা আবৃত্তি  । আর এসেমেসের চোটে আগের দিন মধ্য রাত থেকে সেলফোনের 
নেট ওয়ার্ক হ'ল বেজায় স্লো।   সামনেই সব ছেলেপুলেদের বড় বড় পরীক্ষা ! তো কি ? পরীক্ষার আগে একটু ডাইভারশান চাই না ? তাই তো সাধু ভ্যালেন্টাইন এই উপায় বাতলেছেন ।
গতবছর ভ্যালেন্টাইন্স ডে'র দিন সকালে মর্নিং ওয়াকে গেছি; এক ভদ্রলোক তার সহধর্মিনীকে বলছেন " এই রোজ রোজ তোমার পাল্লায় পড়ে সকালে হাঁটতে বেরোনো আমার জীবন বিষময় করে তুলছে" 
নীরব স্ত্রীটি হাঁটতে লাগলেন আরো জোরে জোরে । 
ভদ্রলোক বললেন " খাবার ওপর ট্যাক্স ও বসালে , আর হাঁটাও ধরালে ...তাহলে যেকোনো একটাই করো হয় খেতে দিও না, নয় হাঁটতে  বোলোনা"আমার মা বেঁচে থাকলে দেখিয়ে দিত তোমার মজা  সব কিছুতেই  কাঁটছাঁট ! চায়ে চিনি বন্ধ , সকালে একগাদা ফল খাও , দুপুরে ভাত নৈব নৈব চ ! রাতে মোটে একটা রুটি ! কি কুক্ষণে একটা সেমি-ডায়েটিশিয়ান বৌ এনেছিলাম" 
বেচারী বৌটি তখনো চুপ !  
স্বামীটি আবারো বললে " দাঁড়াও দেখাব মজা , অফিসের বেয়ারাকে দিয়ে ভাল ভাল খাবার আনিয়ে খাব, তুমি জানতেও পারবে না" 
তখন বৌটি আর থাকতে না পেরে মুখ খুলল "আজকের দিনে ঝগড়া করতে  নেই গো , আজ প্রেমের দিন, আজ আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা প্রেমের সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে আর তুমি কি না শুধুমুদু আমাকে সক্কালবেলা গালাগালি দিচ্ছ ? আমি যে 
তোমার ওয়ান এন্ড ওনলি ভ্যালেন্টাইন !" 
তাদের এই মৃদু প্রেম মিশ্রিত ঝগড়ার সুর উঠল আমার প্রাণে । অঞ্জন দত্তের গান মনে পড়ে গেল " তুমি না থাকলে সকালটা এত মিষ্টি হত না .. " 
আর  আমি তাদের কথাগুলো নিয়ে একটা গান লিখেছিলাম অঞ্জন দত্তের গানের সুরে .. যারা জানেন গানটি তারা বুঝতে পারবেন আশাকরি ;


 বৌটি বলছে 
"আমি না থাকলে তোমার জীবন আরো মধুময় হত, রাগঝাঁঝ আর ঝগড়াঝাটির অবসান আজ হোত । 
আমি না  থাকলে থোড়-বড়ি-খাড়া রান্নাঘরের মেনু, চামচ হাতে, প্লেট বাজিয়ে বাজাতে বসে বেণু  
আমি না থাকলে প্রতিসন্ধ্যায় কাঁচের গেলাস হাতে, শুধু ঘন ঘন চুরুট আর চাট দিতে তুমি শুধু দাঁতে । 
আমি না থাকলে ল্যাপটপ খোলা শুধু তুমি আর তুমি, চ্যাট, ইমেল খেয়েছে তোমায় (যা) আমার চেয়েও দামী । 
আমি না থাকলে ব্যাঙ্কের টাকা দ্বিগুণ হয়ে যেত, সকালে চিংড়ি, বিকেলে মাটন বন্ধুরা এসে খেত । 
রোজ সকালে হাঁটার জন্য উঠিয়ে দিত না কেউ, হত না এমন মন কষাকষি ঝগড়াঝাটির ঢেউ ! 
খাবার ওপর ট্যাক্স বসিয়ে জিমে পাঠালাম আমি, এখন ভুঁড়ি কমল তোমার, 
সুফল পেলে তুমি"

কোন মন্তব্য নেই: