৪ ফেব, ২০১১

"টাইটানিক বৃষ্টি"


সেদিন তিন্নি পার্কে বসেছিল দাদুর সাথে। উঠল ভীষণ ঝড়, পড়ল বাজ, চমকাল বিদ্যুতমালা আকাশের গায় । এল বৃষ্টি । আষাঢ়ের প্রথম বৃষ্টি। গাছপালা নতুন বর্ষার জল পেয়ে নেচে উঠল। দাদুর সাথে গল্প হচ্ছিল চাঁদের বৃষ্টির। চন্দ্রযান খবর পাঠিয়েছে জলের, বৃষ্টি ঝরেছে কয়েক ফোঁটা সেখানে । পৃথিবীর সাতসমুদ্রের কত জল তিন্নি তা জানে; মহাসিন্ধুর কত জল বাষ্পীভূত হয়ে বৃষ্টি রূপে তাই ঝরে পড়ে মাটীর বুকে। পার্কের ঘেরা বারান্দার ওপরে উঠে বৃষ্টি দেখল প্রাণ ভরে, ঘুম এল তার চোখ জুড়ে। দাদুর কোলে মাথা রেখে ছোট্ট তিন্নি বৃষ্টির নূপুর শুনতে শুনতে স্বপ্নের দেশে পাড়ি দিল । আকাশের গায়ে ভূগোল ব‌ইয়ের সৌরমন্ডলের ছবি । পৃথিবীর কোল আলো করে দাঁড়িয়ে আছে তিন্নি । একে একে কাছে তার এল বুধ, শুক্র, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস, আর সবশেষে নেপচুন ।

"বল তোমরা কে কে বৃষ্টি দেখেছ?" তিন্নি প্রশ্ন করে তাদের ।

শান্ত সৌম্য চেহারায় ঠান্ডা মাথায় জবাব দিল বুধ | বললে, "বড্ড গরম, সূয্যিমামার কাছে থাকি, মোটে আরাম নেই, কি যে বল, বৃষ্টি কি তাই জানিনা ।"

ধবধবে ফর্সা রঙের শুক্র বললে, "শুনেছি মেঘ থেকে নাকি বৃষ্টি হয়, কিন্তু আমার কাছে মেঘের অনেক বাড়ি, তাতে বাষ্প নেই, আছে সালফারডাই-অক্সাইড গ্যাস । বৃষ্টি হবে কোত্থেকে? আমি কি ছাই বৃষ্টি দেখেছি!"

এল মঙ্গল। গম্ভীর মুখ করে রেগেমেগে বলল, "জানিনা, জানতে চাইও না ; বৃষ্টি! দূর দূর ! পাথরে, পাহাড়ে, লোহার শরীরে কঠিনে আমি লাল হয়ে গেছি দেখছ, আর তুমি বলছ বৃষ্টি?"

বিশালাকার বৃহষ্পতি মাথা চুলকে উত্তর দিল "জল নেই তো বৃষ্টি কোথা? হাইড্রোজেন আর হিলিয়াম সেথা ।" জানো? আমার এখানে তো শুধু হিলিয়ামের সাইক্লোন দেখি, বৃষ্টি তো দেখি না

সবশেষে এল শনি । "বল তিন্নি কি বলবে। অনেক কিছু বলার আছে তোমায় । তুমি যে দেশে থাকো তার নাম পৃথিবী। তুমি অনেক ভাগ্যবতী যে ওখানে আছ । আমার চারপাশ ভীষণ ঠান্ডা, জানো? বরফের কুচি আমার চারধারে বলয়ের মত আমাকে বেষ্টন করে রেখেছে । আর আমার চাঁদের নাম টাইটান । তা তো তুমি জানো তিন্নি । সেখানে দেখেছি বৃষ্টি আমি ; সেদিন বর্ষা নেমেছিল শনির ঘরে, শনির দেশে, শনিগ্রহে। অতি ঠান্ডায় সব মিথেন গ্যাস তরলায়িত হয়ে ঝরঝর করে ঝরে পড়ে বাদলরূপে,ঠায় পড়তেই থাকে | যাকে তোমরা পৃথিবীর বুকে বৃষ্টি বল আমি তাকে শনির বুকে সৃষ্টি বলি । আহা কি সুখ কি সুখ! তোমায় যদি দেখাতে পারতাম তিন্নি। তুমি কি যে খুশি হতে!"

শনিদাদার কথা শুনে ভয় পেয়ে ইউরেনাস আর নেপচুন পিছু হাঁটল। মুখে তারা তিন্নির সামনে রা'টি কাটল না । যেতে যেতে বলল ফিস ফিস করে

"বৃষ্টি কিরে? কেমন তর?
বৃষ্টি কোথা? কেমন বড়?
বৃষ্টি নামে জলের ফোঁটা,
বৃষ্টি মানেই বাদল ফোটা"

"দাদাই, দাদাই," ঘুম থেকে ধড়মড়িয়ে উঠে তিন্নি বলল দাদুকে আমাকে টাইটানের গল্প বলবে ? আমি মিথেনের বৃষ্টির গল্প শুনব । তখন পার্কের মধ্যে বৃষ্টি-বাদল গেছে টুটে । আকাশে রামধনু উঠেছে । বৃষ্টির জলের ফোঁটায় আলোর প্রতিসরণে কি করে রামধনু সৃষ্টি হয় সেই গল্প শুনতে শুনতে দাদুর সাথে তিন্নি বাড়ি ফিরল সে বিকেলে। কিন্তু দাদাই যত তাকে রামধনুর গল্প বলে তিন্নি তত‌ই টাইটানের মিথেন বৃষ্টির গল্প শুনতে চাইল।
ছোটদের ম্যাগাজিন "দিয়ালা"য় প্রকাশিত

কোন মন্তব্য নেই: