২০ এপ্রি, ২০২০

লকডাউন মনোলোগ


কটা জিনিষ খুঁজতে গিয়ে আজ আলমারি খুলেছিলাম অনেকদিন বাদে। কেমন সুগন্ধী আবেশে যেন আবিষ্ট হয়ে গেলাম মূহুর্তের মধ্যে। প্রিয় শাড়ির ভাঁজে ভাঁজে কিসের যেন মাদকতা! পরতে পরতে চেনা চেনা সব গন্ধ। সাহিত্য আড্ডা থেকে শপিংমল, বিয়েবাড়ি থেকে মাল্টিপ্লেক্স, পিকনিক থেকে আউটিং...সর্বত্র মাড়িয়ে আসা, আমাকে আদরে লেপটে জড়িয়ে রাখা শাড়িগন্ধ আমায় কেমন যেন এক মূহুর্তের জন্য আনমনা করে দিল। আমার জীবন্মৃত আত্মার ভেতর থেকে কেউ যেন বলে উঠল, এমনটা কি ভেবেছিলে কোনোদিনো? জীবনে অনেকবার নার্সিংহোমে ভর্তি হয়েছি কিন্তু দিন দশেকের মধ্যে বাড়ি ফিরে আলমারি খুলে মনে হত আমি বেঁচে আছি। আজ হঠাত মনে হল, কি হবে এমন বেঁচে থেকে? শাড়িগুলো, ম্যাচিং ব্লাউজগুলো আর হরেক কিসিমের হ্যান্ডব্যাগ, পার্স, ক্লাচ সব যেন গিলে খাচ্ছে মনে হল। ওরা কেন এমন কটমট করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে?  সত্যি‌ই তো নশ্বর আমাদের এই তুচ্ছ জীবনটা। শেষসময়ে শুধুই পড়ে থাকবে একমুঠো ছাই। তার জন্য এত্ত আয়োজন আমাদের্? বেশ তো চলছে একমাস ধরে । আমাদের চাহিদার লেখচিত্র হঠাত করেই নিম্নমুখী তাই নয় কি? আমরা শাড়ি-জামা-কাপড়-বেডশিট-পর্দা আরো আরো কতকিছু থেকে নিজেদের সরিয়ে রেখেছি। এখন শুধুই চোখ যাচ্ছে চালের কৌটো, ডালের ডাব্বার দিকে। ফ্রিজে ক'টা ডিম বা দুধের প্যাকেট পড়ে আছে, আলু-পিঁয়াজের ঝুড়িতে ক'টা আরো আনতে হবে কিম্বা আদা-কাঁচালংকা? নাহ্! এতেই চালিয়ে নেব এই সপ্তাহটা। অথবা হঠাত করে ফ্রিজের কোণায় কুঁকড়ে, অবহেলায় পড়ে থাকা  এক প্যাকেট খেঁজুর কিম্বা একটা স্যুপের প্যাকেট মনটা কে খুশিতে ভরিয়ে দিচ্ছে। এখনো, মানে এই যুদ্ধের ঠিক একমাস আগেও যেমনটি দিচ্ছিল। এই একমাসে কোনোকিছুর পট পরিবর্তন হয়নি আমাদের। শুধু কয়েকটা মৃত্যু ছাড়া। নতুন সংক্রমণ? না কি গোষ্ঠীতে ছড়ালো ফাইনালি? চোখ এখন সেইদিকে শুধু সীমাবদ্ধ।কি হয়, কি হয়! 
পশুপাখিদের জীবনটাই বেশ|আহার, নিদ্রা, মৈথুন ছাড়া অন্য কোনও চিন্তা নেই তাদের। তাদের অতীত স্মৃতি নেই। ভবিষ্যতের চিন্তা নেই | আছে শুধুই বর্তমান। কিন্তু মানুষ তো আমি। তাই বুঝি আলমারি আজ বন্ধ না করে পাখা চালিয়ে হাওয়া খাওয়ালাম বেশ করে। আমার তো ভবিষ্যৎ আছে না কি!    

কোন মন্তব্য নেই: