খুব ক্লান্তি রয়েছে। অ-সুখ এমন অবস্থাকেও বলে বুঝি। আক্ষরিক অর্থে ব্যাধি নেই তবে আধি আছে যা ব্যাধির চেয়েও মারাত্মক। সংবাদের স্রোত নজরে আসতেই দুপুরের সোহাগী বিশ্রাম আপাত নিদ্রা কেড়ে নিচ্ছে। রাতে তাড়াতাড়ি বিছানায় গেলেও তন্দ্রা ও নিদ্রার সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে হাত-পা আপাত জিরেন নিচ্ছে বটে কিন্তু স্বপ্নের ভেলায় ভাসিয়ে নিয়ে চলেছে দোদুল্যমান জীবনের অজানা ঘূর্ণিপাকে।
কাল বহুক্ষণ ছিলাম এমনি এক স্বপ্নের ঘোরে। মামারবাড়ির পুরনো রান্নার মাসী অরুণা দিকে দেখলাম স্বপ্নে। বাল্যবিধবা তিন ছেলে নিয়ে ইঞ্চিপাড় সাদা থান পরে থাকতেন। কথায় পূর্ববাংলার টান। কপালে চন্দনের ফোঁটা। ছোট্টখাট্টো লক্ষ্মীমন্ত মানুষটি সবার আবদার, ওজর আপত্তি মানিয়ে নিত দিনের পর দিন। বাংলার তথা সারা দেশের গিন্নীদেরও বলিহারি যাই বাপু! নিজেরা নড়ে বসতে পারেনা। কাজের লোকেদের কি ফরমায়েশের ঘটা। অরুণা দি সব হুকুম মুখ বুঁজে তামিল করবে। সেই অরুণাদি যখন দেশে যাবে তখন দিদিমার মেজাজ সপ্তমে। ওড়িয়া ঠাকুর এনে রান্না শিখিয়ে চারবেলার রান্না হবে। কারণ অরুণা দি একবার দেশে গেলে কমপক্ষে মাসখানেক। দিদিমার এমন দুরবস্থা দেখে আমার মায়ের ধনুকভাঙ্গা পণ। জীবনেও রান্নার লোক রাখেনি তাই । খুব মনের জোর আর রাঁধবার অভ্যেসের কারণে বুক বাঁধতে দেখেছি মা'কে। সেই মা কে বরং আমি বলে বলে মা ৬৫ পেরুতেই রাঁধুনি রাখতে বাধ্য করেছি মায়ের শারীরিক কারণে।
তা যা বলছিলাম । গতকাল রাতে অরুণা দি ছাড়াও দেখা হল মালকোঁচা দিয়ে ধুতি পরা মামার বাড়ির ঠাকুর গোলক কে। আমার শ্বশুরবাড়ির রান্নার মাসী পারুল কে। আমার বিয়েতে গায়েহলুদের তত্ত্ব নিয়ে গেছিল সে। পারুলের ব্রেস্ট অপারেশন, চোখের ছানি কাটানো সব করিয়ে সে বুড়ো হতে তাকে বাড়ি চলে যেতে বলা হল। টুকটাক ভুল করত বুড়িটা। বেদম বকুনিও জুটত কপালে। তারপর এসেছে জ্যোত্স্না, জবার মা, পুতুল, উত্তরা, চন্দনা এমন কত কত মেয়ে।
এখন রোজ নিজে কেটে, বেটে রান্না করছি বলেই এদের সবার মুখগুলো খুব মনে পড়ছিল খুব। একে একে আসছিল স্মৃতির সরণী বেয়ে, পরত খুলে খুলে। মনোবিদ্যায় একে বলে "ল অফ এসোসিয়েশন"। এর কারণেই স্বপ্নে দেখলাম সবকটা পরিচিত মুখকে অনেকদিন পর। করোনা না এলে এ জীবনে আর বুঝি তাদের কথা মনেও পড়ত না আমার। রান্নাঘরের জাহাজভাঙা হাতল ছাড়া তয়ীতে একটু ময়লা থাকলে দুই মা কি চীত্কার করতেন! গ্যাস বাড়িয়ে ভাজা বসালেই গিয়ে টুক করে গ্যাসটা সিম করে দিতেন। তরকারী কাটাকুটি করার সময় ভুল এদের হতেই পারে। তায় আবার অপুষ্টির কারণে স্মৃতির ঘাটতি আশ্চর্যের কিছুই নয়। একেক বাড়িতে একেক রকমের রান্না। সেই নিয়ে সব একহাত নিতেন। রোজ রোজ সকালবেলায় এই কাটা আর বাটা নিয়ে নিত্যি কথা কাটাকাটি দেখেছি। কতবার বলেছি ঝোলের আলু আর চচ্চড়ির আলু এক নয়। বেগুণভাজা ফালাফালা আর তরকারিতে ডুমোডুমো। সর্ষেটা একবাটা কোরো কিন্তু নয়ত ঝালের সোয়াদ হবেনা। কিম্বা ভাতটা আজো গলিয়ে ফেলেছ? এত দামী জুঁইফুলের মত চাল! আজ খাওয়াটাই মাটি! কিম্বা আজ আবার দুধ উথলে গেল? খেয়াল রাখতে পারোনা? জানো কত দাম এই দুধের? রুটিগুলো কাল বড্ড মোটা মোটা হয়েছিল। হ্যাঁগো! কাল রাত্তিরের তারকারিটার কি তলা লেগে গেছিল? পোড়া গন্ধ পেলুম যে। মনে রাখতে পারোনা? নাহ! সত্যি পারেনা এরা।
মা, শাশুড়িদের প্রথম দিকে বোঝাতে চেষ্টা করেছি বহুবার কিন্তু ভবি ভোলার নয়। তবে সংসারের হাল ধরতে গিয়ে আমি কিন্তু নিজের অগোচরে নিজেও তাঁদের মত এমন ভয়ানক গিন্নী হয়ে উঠেছি যে সেই লেগাসি বহন না করলে যেন বাড়ির যোগ্য গৃহিণী হওয়া যায় না। গত কয়েকদিন নিজে একাহাতে রান্না করতে করতে, তয়ী ধুতে ধুতে এসব মনে হচ্ছিল কেবলই। তাই বুঝি স্বপ্ন দেখেছি।
কাল বহুক্ষণ ছিলাম এমনি এক স্বপ্নের ঘোরে। মামারবাড়ির পুরনো রান্নার মাসী অরুণা দিকে দেখলাম স্বপ্নে। বাল্যবিধবা তিন ছেলে নিয়ে ইঞ্চিপাড় সাদা থান পরে থাকতেন। কথায় পূর্ববাংলার টান। কপালে চন্দনের ফোঁটা। ছোট্টখাট্টো লক্ষ্মীমন্ত মানুষটি সবার আবদার, ওজর আপত্তি মানিয়ে নিত দিনের পর দিন। বাংলার তথা সারা দেশের গিন্নীদেরও বলিহারি যাই বাপু! নিজেরা নড়ে বসতে পারেনা। কাজের লোকেদের কি ফরমায়েশের ঘটা। অরুণা দি সব হুকুম মুখ বুঁজে তামিল করবে। সেই অরুণাদি যখন দেশে যাবে তখন দিদিমার মেজাজ সপ্তমে। ওড়িয়া ঠাকুর এনে রান্না শিখিয়ে চারবেলার রান্না হবে। কারণ অরুণা দি একবার দেশে গেলে কমপক্ষে মাসখানেক। দিদিমার এমন দুরবস্থা দেখে আমার মায়ের ধনুকভাঙ্গা পণ। জীবনেও রান্নার লোক রাখেনি তাই । খুব মনের জোর আর রাঁধবার অভ্যেসের কারণে বুক বাঁধতে দেখেছি মা'কে। সেই মা কে বরং আমি বলে বলে মা ৬৫ পেরুতেই রাঁধুনি রাখতে বাধ্য করেছি মায়ের শারীরিক কারণে।
তা যা বলছিলাম । গতকাল রাতে অরুণা দি ছাড়াও দেখা হল মালকোঁচা দিয়ে ধুতি পরা মামার বাড়ির ঠাকুর গোলক কে। আমার শ্বশুরবাড়ির রান্নার মাসী পারুল কে। আমার বিয়েতে গায়েহলুদের তত্ত্ব নিয়ে গেছিল সে। পারুলের ব্রেস্ট অপারেশন, চোখের ছানি কাটানো সব করিয়ে সে বুড়ো হতে তাকে বাড়ি চলে যেতে বলা হল। টুকটাক ভুল করত বুড়িটা। বেদম বকুনিও জুটত কপালে। তারপর এসেছে জ্যোত্স্না, জবার মা, পুতুল, উত্তরা, চন্দনা এমন কত কত মেয়ে।
এখন রোজ নিজে কেটে, বেটে রান্না করছি বলেই এদের সবার মুখগুলো খুব মনে পড়ছিল খুব। একে একে আসছিল স্মৃতির সরণী বেয়ে, পরত খুলে খুলে। মনোবিদ্যায় একে বলে "ল অফ এসোসিয়েশন"। এর কারণেই স্বপ্নে দেখলাম সবকটা পরিচিত মুখকে অনেকদিন পর। করোনা না এলে এ জীবনে আর বুঝি তাদের কথা মনেও পড়ত না আমার। রান্নাঘরের জাহাজভাঙা হাতল ছাড়া তয়ীতে একটু ময়লা থাকলে দুই মা কি চীত্কার করতেন! গ্যাস বাড়িয়ে ভাজা বসালেই গিয়ে টুক করে গ্যাসটা সিম করে দিতেন। তরকারী কাটাকুটি করার সময় ভুল এদের হতেই পারে। তায় আবার অপুষ্টির কারণে স্মৃতির ঘাটতি আশ্চর্যের কিছুই নয়। একেক বাড়িতে একেক রকমের রান্না। সেই নিয়ে সব একহাত নিতেন। রোজ রোজ সকালবেলায় এই কাটা আর বাটা নিয়ে নিত্যি কথা কাটাকাটি দেখেছি। কতবার বলেছি ঝোলের আলু আর চচ্চড়ির আলু এক নয়। বেগুণভাজা ফালাফালা আর তরকারিতে ডুমোডুমো। সর্ষেটা একবাটা কোরো কিন্তু নয়ত ঝালের সোয়াদ হবেনা। কিম্বা ভাতটা আজো গলিয়ে ফেলেছ? এত দামী জুঁইফুলের মত চাল! আজ খাওয়াটাই মাটি! কিম্বা আজ আবার দুধ উথলে গেল? খেয়াল রাখতে পারোনা? জানো কত দাম এই দুধের? রুটিগুলো কাল বড্ড মোটা মোটা হয়েছিল। হ্যাঁগো! কাল রাত্তিরের তারকারিটার কি তলা লেগে গেছিল? পোড়া গন্ধ পেলুম যে। মনে রাখতে পারোনা? নাহ! সত্যি পারেনা এরা।
মা, শাশুড়িদের প্রথম দিকে বোঝাতে চেষ্টা করেছি বহুবার কিন্তু ভবি ভোলার নয়। তবে সংসারের হাল ধরতে গিয়ে আমি কিন্তু নিজের অগোচরে নিজেও তাঁদের মত এমন ভয়ানক গিন্নী হয়ে উঠেছি যে সেই লেগাসি বহন না করলে যেন বাড়ির যোগ্য গৃহিণী হওয়া যায় না। গত কয়েকদিন নিজে একাহাতে রান্না করতে করতে, তয়ী ধুতে ধুতে এসব মনে হচ্ছিল কেবলই। তাই বুঝি স্বপ্ন দেখেছি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন