২৮ জানু, ২০২০

কলাবতী কথা সম্পর্কে কে কি বলেছিলেন ২০১৫ তে


সানন্দা পুজোসংখ্যা-২০১৫ এ প্রকাশিত উপন্যাস  
মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্যঃ
এবছরের সেরা পুজো উপন্যাস ছিল কলাবতী কথা। 

প্রত্যুষা চক্রবর্তীঃ  
অপেক্ষা করছি অনেক অনেক দিন ধরেই ...
হাতে আসামাত্র পড়ে ফেললাম একটু ও দেরি না করে,
ঘড়ির কাঁটা কি করে তিরিশ মিনিট ঘুরে গেল, টের পেলাম না!
পটশিল্পের কি অসাধারণ কথামালা বোনা হয়েছে বাংলার রীতি আচার অনুষ্ঠান আর ব্রতকথার সুতো দিয়ে ।মেদিনীপুর এর প্রত্যন্ত গ্রাম তাদের কথা নিয়ে উঠে এসেছে অবলীলায়। নয়াগ্রাম , খড়্গেশ্বর , পিংলা, পাথরা , কুকাই , নানকারচক , কুরুম্ভেরা গনগনি কত নাম না জানা গাঁয়ের গন্ধ মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে বৈশাখী অশোক ষষ্ঠীর ব্রতকথা থেকে মঙ্গলচণ্ডী, ভৈমীএকাদশী,বিপত্তারিণী , লোটন ষষ্ঠীর কথার সাথে ।আর চরিত্রেরা ! মাটির গন্ধ পাচ্ছি যেন ।
সবশেষে লেখিকার উদ্দেশ্যে বলি, আপনি লুপ্তপ্রায় একটি শিল্পকে পুনঃজীবিত করার প্রয়াস করেছেন ।
অতনু বন্দ্যোপাধ্যায়ঃ 
কাছের মানুষদের নাম যখন বহুল প্রচারিত পত্রিকার পুজোসংখ্যায় দেখি, গর্বে ও খুশিতে ভরে ওঠে।
প্রিয় মানুষ, বন্ধু ও দিদি ইন্দিরাদির প্রথম উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে সানন্দা পুজো সংখ্যায়। ‘কলাবতী কথা’। পড়া শেষ করলাম কাল।
মেদিনীপুর নিয়ে রীতিমত রিসার্চ করা এ উপন্যাস। মেদিনীপুরের প্রত্যন্ত গ্রাম গঞ্জের অলিগলি, গ্রামীন সংস্কৃতি ও তার রীতিনীতি, ব্রতকথার নানা হারিয়ে যাওয়া গল্প, গ্রামীন মেলা ও উতসব, নানা পার্বন ও গ্রামীন মানুষের জীবনের এত ডিটেইলস এ উপন্যাসে পেলাম যে অবাক হতে হয় লেখকের পরিশ্রম ও গবেষনায়। উপন্যাসের পটভূমিকা হল গ্রাম বাঙলার পট শিল্প। এই পটশিল্পীদের জীবন, তাদের মনস্তত্ব, দারিদ্র, সামাজিক ও রাজনৈতিক বাধা, তাদের স্বপ্ন, অপ্রত্যাশিত সুযোগ, সাফল্য সবকিছুই এসেছে এ উপন্যাসের সাজানো ইটের সারিতে। লতু, কনক,  কলাবতী, মিকি, আকিও এবং আরো নানা চরিত্রদের মধ্যে দিয়ে লেখক বলেছেন অনেক অনেক গ্রামীন সংস্কারের গল্প, তাদের বিচিত্র জীবন চর্চা, প্রতিবাদ, বেঁচে থাকার স্বপ্ন। নিবিড় গ্রাম বাংলার সাহচর্য্য, ক্ষয়ে যেতে থাকা এক শিল্পী সম্প্রদায়ের কিছু মানুষ ও তাদের লড়াই হয়ে উঠেছে এ উপন্যাসটির উপজীব্য।
অর্ণব রায়চৌধুরীঃ 
কলাবতী কথা পড়লাম। বাংলার পটশিল্পীদের জীবন নিয়ে এরকম লেখা আগে পড়িনি। গ্রামবাংলার এত মেলার কথাও জানা ছিল না। কুরুম্ভেরা মেলা বা ময়নাগড়ের রাসমেলার বর্ণনা পড়ে ইচ্ছা করে ঘুরে আসতে। তবে যে জিনিসটা আমাকে মুগ্ধ করেছে তা হল সহজ সরল ভাষায় কথকতার গল্প। পুরাণ নিয়ে তোমার গল্প সম্ভার আমাকে মোহিত করেছে। যদিও 'অহল্যা' নিয়ে তোমার বিশ্লেষণ পড়ে জেনেছিলাম পুরাণ নিয়ে তোমার অগাধ আগ্রহ ও knowledge। উপন্যাসের শেষে নোট থেকে জানলাম মেদিনীপুরের এই প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকার সময় তুমি এই পটশিল্পীদের সান্নিধ্যে এসেছিলে। অনেক ধন্যবাদ তাদের কথা এরকম সুন্দর উপন্যাসের রূপ দেওয়ার জন্য। দু একটা জায়গায় একটু প্রশ্ন এসেছে মনে। এক জায়গায় পড়ে মনে হয়েছে আকিও বাংলা ভাষা জানে না। আবার সে রাতেই সে দিব্যি পরিষ্কার বাংলায় কলাবতীর সাথে কথা বলে। মনে হল এখানে কথোপকথন টা না থাকলেও চলত। আর উপন্যাসের শেষ লগ্নে যখন কলাবতী জাপানে নিজের সংসার শুরু করেছে তখন জানা গেল না তার স্বামী রামু বা তার শ্বাশুড়ি কনকের মনের অবস্থা কেমন হল বা তারা এত সহজে কি করে মেনে নিল ব্যাপারটা। আর জানতে ইচ্ছা করছে এখন কি গ্রাম বাংলার প্রত্যন্ত গ্রামে এইসব পটশিল্পীদের জন্য কম্পিউটার পৌঁছেচে নাকি তোমার উপন্যাসে ভবিষ্যতের রূপরেখার ইংগিত আছে। সব শেষে অসংখ্য ধন্যবাদ এরকম একটা উপন্যাস আমাদের উপহার দেওয়ার জন্য। আশাটা এবার বেড়ে গেল।
সুনন্দা চক্রবর্তীঃ 
দিদি আজ আমি সারা দুপুর ধরে লেখাটি পড়েছি । প্রথমেই বলি তোমার ধৈর্য অপরিসীম । তোমার লেখা ১) খুব ক্লাসি, ২) ঐতিহাসিক তথ্য সমৃদ্ধ , ৩) বাংলার বার ব্রত যা অনেকেই জানেনা তা সুচারুরূপে ব্যক্ত করেছ, ৪) বাংলার একটা শিল্প তোমার লেখনীতে স্থান পেয়েছে বলে খুব ভালো লেগেছে। এবার আসি কলাবতীর কথায়, তিনটে একই সংসারে থাকা নারী যেখানে ঝগড়া ঝাঁটি আর গালাগালিতেই পার করে সেখানে সুন্দর শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান আর একে অপরের পরিপূরক , উদার হৃদয় চরিত্রগুলো অপূর্ব এঁকেছ । পুরো উপন্যাসটাই আসলে রূপকথা । যা বেঁচে থাকার রসদ দেবে । 
শর্বরী ব্যানার্জিঃ
কলাবতী কথা পড়লাম। গ্রামীন শিল্পীদের অনেক অনেক সম্মান ও মর্যাদা প্রাপ্য। আমরা শহরে বসে তাঁদের শিল্পীমন বা শিল্পের কথা জানতেই পারিনা তাই হয়ত প্রাপ্য মর্যাদাটুকু দিতে পারিনা। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ এই শিল্পীদের তুলে ধরার জন্য।

শ্রাবণী দাশগুপ্তঃ
কলাবতীকথা - অনেক যত্নের বহু পরিশ্রমের ফসল উঠেছে লেখিকার কর্ষণে। প্রয়োজনীয় বৃষ্টি দিয়েছে সজীবতা, শ্যামল হয়ে উঠেছে উপন্যাস - বারব্রত, সংস্কার মিলেমিশে। একেক সময়ে মন ভার হয়ে উঠেছে, কত দ্রুত এসব হারিয়ে গিয়েছে শহুরে জীবন থেকে, নিষ্প্রাণ দেখনদারী এসে দখল করে নিয়েছে সজল আত্মীয়তা - আত্মার কাছাকাছি, মনের কাছাকাছি থাকা মানুষদের। হয়ত আছে গ্রামে-গঞ্জে এখনো - থাকুক, বেঁচে থকুক। বেঁচে থাকুক পটচিত্র আর স্বরচিত গান নিয়ে কলাবতীরা। শহরায়ন বিশ্বায়ন - অনেক কিছু শুকিয়ে দিয়েছে, কোথাও বাঁধ দরকার...। নইলে আমাদের নিজস্বতা হারিয়ে যাবে।
টানাপোড়েন আছে উপন্যাসে, কিন্তু তেমনটা নয়, খুব সাবলীল ভাবে ঘটে যায় ওঠা-পড়া। জটিলতা ধরা যায়না তেমন।

নন্দিতা ভট্টাচার্যঃ
এত ডিটেলিং ভাবা যায়না।  অনেকদিনের প্রয়াস মনে হচ্ছে। বাংলাকে এভাবে  একেবারে টেনে তুলে এনেছ, তুলে ধরেছ ভুলে যাওয়া সব কথা।

অমৃতা ঘোষঃ
অনেক কিছু জানতে পারলাম বাঙলার পটচিত্রও কিংবদন্তীর ব্যাপারে। অসাধারণ শুধুই কলাবতী নয়। কনক, লতু প্রত্যেকেই। আরো একটি ব্যাপার যেটি খুব ভালো লেগেছে সেটি হল একজন নারী হয়ে অন্য আরেকজনকে অণুপ্রাণিত করা। লতু, তার পুত্রবধূ কনককে আর কনক তার পুত্রবধূ কলাবতীকে।  আমাদের জীবন এমন হলে বরতে যেতাম।

রুচিরা চ্যাটার্জিঃ 
কলাবতী কথা পড়ে পটশিল্পীদের সম্বন্ধে অনেক কথা জানতে পারলাম আগে যা অজানা ছিল। ওদের ছবি আঁকার ডিটেলস জেনে ভালো লেগেছে। সত্যি অনেক অভাব অনটনের মধ্যে দিয়ে লড়াই করে ওঁরা এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। বাংলার সব ব্রতকথার ছোতছোট গল্পগুলি বিশেষতঃ উমনোঝুমনোর কথা জেনে অনেকদিন বাদে খুব মজা পেলাম। আবারো নস্টালজিক হয়ে পড়লাম।

শর্মিলা দাশগুপ্তঃ
খুব ভালো লাগল কলাবতী কথা পড়ে। পটশিল্পীদের সম্বন্ধে অজানা কথা, ওদের ছবি আঁকার ডিটেলস, আমাদের গ্রামবাংলার এতসব ব্রতকথা আর পুজোআর্চার গল্প জানতামনা। কনক আর কলাবতীর সম্পর্কটা এত সুন্দর ভাবে দেখিয়েছ খুব ভালো লাগছে। কনকের প্রতিবাদী চরিত্রটি দারুন। কিন্তু শেষের দিকটা পড়ে মনে হল কলাবতী কেন এত স্বার্থপর হয়ে গেল? যে শাশুড়িমা তার জন্য এতকিছু করল তাকে ছেড়ে, স্বামীকে ছেড়ে সে চলে গেল কি করে? হতেই পারে এটাই বাস্তব কিন্তু কনক এত পুজো করে কি পেল? খুব‌ই বাস্তবিক পটভূমি সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। পুরোটাই নিঃসন্দেহে উপভোগ্য। 

২টি মন্তব্য:

Pranab Basu Ray বলেছেন...

পড়ে, পরে লিখব। তবে ভরসা রাখি তোমার কলমের ওপর। লুপ্তপ্রায় এই শিল্প ও শিল্পীরা তোমার থেকে প্রাপ্য মর্যাদা পাবে, তা অনস্বীকার্য। এই লেখাটা নিয়ে তুমি এক প্রকার রিসার্চের কাজটাই করেছ-- তা আগেই জানতাম, সুতরাং এটা প্রামাণ্যও। এরপর, এই প্রেক্ষাপটে জোড় ও ঝালাইয়ের কাজটা তোমার-- এ ব্যাপারে তোমার দক্ষতার দলিল ভ্রমণ, বার-ব্রত ও অন্যান্য রচনা। সো আই এ্যাম মাচ হোপফুল !

Indira Mukhopadhyay বলেছেন...

PranabDa

shall wait for your feedback !