আমার ভাষাতেই দিদা বলতেন, খুব "তার" হয়েছে আজ আমার রাঁধা আলুর দমে। সেই শুনে মা বলতেন "বাসি" বলে "মজেছে" আরো। ঠাম্মা আমার চিবুক ছুঁয়ে বলতেন, "আমার এক ভুবন আকাশ"। ভাইকে বলতেন "আমার শিব্রাত্তিরের সলতে"। বুড়ো বাবা সেই শুনে দুই ভাই বোনের মাথায় দুটো হাত রেখে বলতেন, এরা "আমার এক বৃন্তে দুটি কুসুম"।রান্নাঘর থেকে প্রায়শই মুখ বাড়িয়ে ফোন ধরে মা এখনো বলেন "নাটাঝামটা" খাচ্ছি। বাবা টিভিতে খবর শুনতে শুনতে চেঁচিয়ে আজো বলেন "উচিত তর্পণে গাঙ শুকলো" উন্নতি আর হল না রাজ্যের। মা বিয়ের পর আমার নতুন সংসার দেখে বলেছিলেন" কি সুন্দর "ঘরুনি-গেরুনি" হয়েছিস!
সেই ভাষায় জ্বর আসে "তাড়সে" আর কাঁচালংকা আজও কামড়ে খাই প্রতিটি "গরাসে"।আজও সেই ভাষায় কাজের পরে লাগে একটু "জিরেন"। আজও হাতড়ে এই যে ভাষায় খুঁজি আমার "দোসর"। আজও মিস্ত্রীর পারিশ্রমিক দিই "ফুরোনে"।এই ভাষায় মা এখনও সামলায় "ভাঁড়ার"। এই ভাষাতেই বাবা লেখাপড়ায় ফাঁকি দিলে এখনও বলেন বলে "ব্যাদড়া"। অশীতিপর শাশুড়ি মা এখনও বলেন দিনভর "ব্যারাম" এর কথা।
আবার ঘুম এলে এই ভাষায় চোখের "পাতা ভারি" হয়ে আসে আবার সারারাত জেগে থেকে দুচোখের "পাতা এক" করা যায় না যে ভাষায়। এই ভাষাতেই বহুদিন আড়ির পর দুই বন্ধু আবার "আমে-দুধে" মিশে যায়। বড় ঘরে মেয়ের বিয়ে দিয়ে যে ভাষায় মেয়ের মায়ের "পায়াভারি" হয়। সেই মিষ্টি ভাষাতেই আবার বন্ধু বন্ধুকে তেড়ে যান "ষাঁড়ের নাদ" বলে। বিষহীন সাপ এই ভাষায় "ঢ্যামনা"। বেকার পুত্রকে বাবা রেগে গিয়ে বলে ওঠেন "ঢেঁড়স"। শাশুড়িকে বউ ঝগড়ার সময় বলেন তাঁর "শাঁখের করাতের" মত অবস্থার কথা অথবা বলে ওঠেন মা কি "মুখে মধু" দেয় নি গা? শাশুড়ি আরও বলেন বৌয়ের মুখে "কুলুপ আঁটার" কথা। সেই শুনে শ্বশুর বলেন নিজের "উভয়সংকটের" কথা। ট্রেন যাত্রায় "ভোগান্তির" কথা বলে সেই ভাষা, অথচ সেই ট্রেনে চড়ার জন্য "হত্যে" দিয়ে থাকে কত মানুষ। মা সংসারে দেন "গতর" আর "আলটপকা" কিছু বলে ফেলেই বিপদ বাড়ান তিনি। মা বলেন সারাদিন পিঠটা "দোমড়" করতে পারিনি। এই ভাষাতেই কেউ তাঁর কাজের "কদর" করে না বলে অভিযোগ জানান তিনি। "আগুপিছু" কিছু না ভেবেই এ ভাষায় মন্তব্য করি আমরা।
সেই ভাষা হল আমাদের মিষ্টি মাতৃভাষা। আমাদের বাংলাভাষা।
ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়
সেই ভাষায় জ্বর আসে "তাড়সে" আর কাঁচালংকা আজও কামড়ে খাই প্রতিটি "গরাসে"।আজও সেই ভাষায় কাজের পরে লাগে একটু "জিরেন"। আজও হাতড়ে এই যে ভাষায় খুঁজি আমার "দোসর"। আজও মিস্ত্রীর পারিশ্রমিক দিই "ফুরোনে"।এই ভাষায় মা এখনও সামলায় "ভাঁড়ার"। এই ভাষাতেই বাবা লেখাপড়ায় ফাঁকি দিলে এখনও বলেন বলে "ব্যাদড়া"। অশীতিপর শাশুড়ি মা এখনও বলেন দিনভর "ব্যারাম" এর কথা।
আবার ঘুম এলে এই ভাষায় চোখের "পাতা ভারি" হয়ে আসে আবার সারারাত জেগে থেকে দুচোখের "পাতা এক" করা যায় না যে ভাষায়। এই ভাষাতেই বহুদিন আড়ির পর দুই বন্ধু আবার "আমে-দুধে" মিশে যায়। বড় ঘরে মেয়ের বিয়ে দিয়ে যে ভাষায় মেয়ের মায়ের "পায়াভারি" হয়। সেই মিষ্টি ভাষাতেই আবার বন্ধু বন্ধুকে তেড়ে যান "ষাঁড়ের নাদ" বলে। বিষহীন সাপ এই ভাষায় "ঢ্যামনা"। বেকার পুত্রকে বাবা রেগে গিয়ে বলে ওঠেন "ঢেঁড়স"। শাশুড়িকে বউ ঝগড়ার সময় বলেন তাঁর "শাঁখের করাতের" মত অবস্থার কথা অথবা বলে ওঠেন মা কি "মুখে মধু" দেয় নি গা? শাশুড়ি আরও বলেন বৌয়ের মুখে "কুলুপ আঁটার" কথা। সেই শুনে শ্বশুর বলেন নিজের "উভয়সংকটের" কথা। ট্রেন যাত্রায় "ভোগান্তির" কথা বলে সেই ভাষা, অথচ সেই ট্রেনে চড়ার জন্য "হত্যে" দিয়ে থাকে কত মানুষ। মা সংসারে দেন "গতর" আর "আলটপকা" কিছু বলে ফেলেই বিপদ বাড়ান তিনি। মা বলেন সারাদিন পিঠটা "দোমড়" করতে পারিনি। এই ভাষাতেই কেউ তাঁর কাজের "কদর" করে না বলে অভিযোগ জানান তিনি। "আগুপিছু" কিছু না ভেবেই এ ভাষায় মন্তব্য করি আমরা।
সেই ভাষা হল আমাদের মিষ্টি মাতৃভাষা। আমাদের বাংলাভাষা।
ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন