আমাদের
টিকিট হাওড়া থেকে বিলাসপুর।
জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসে ।
রাতের ট্রেন ছাড়ল ভোর সাড়ে
চারটেয় । বিকেল চারটে নাগাদ
বিলাসপুর পৌঁছলাম । ভাড়ার
গাড়িতে উঠে এবার যাত্রা শুরু
অমরকন্টকের উদ্দেশ্যে ।
দুপুর
গড়িয়ে বিকেলেবেলায় আমরা তখন
অমরকন্টক থেকে আরো পশ্চিমে
চলেছি ন্যাশানাল হাইওয়ে ১১
ধরে জবলপুরের দিকে । ডিন্ডোরি
আর শা'পুর
পেরিয়ে একটি মোড় থেকে বাঁদিকে
১৪ কিমি এগিয়ে চেয়ে দেখি ঘুঘুয়া
ন্যাশানাল পার্কের বিশাল গেট
। ভারতবর্ষের একমাত্র ফসিল
পার্ক এটি ।আমেরিকার এরিজোনার
পেট্রিফায়েড ফরেস্ট ন্যাশানাল
পার্কের পর পৃথিবীতে বোধহয়
এটাই একমাত্র পেট্রিফায়েড
ফরেস্ট যা কয়েক মিলিয়ন বছর
আগে ফসিলাইজড হয়ে রকগার্ডেনে
রূপান্তরিত হয়েছে । কার্বন
ডেটিং পরীক্ষায় জানা যায় এই
স্থানের বিশাল ট্রপিকাল
চিরসবুজ বৃক্ষের জঙ্গল ছিল
। যার বয়স ৬৫ মিলিয়ন । তাই এই
ন্যাশানাল পার্কের প্রবেশ
দ্বারে রয়েছে কংক্রীটের বিশাল
ডাইনোসরাস ।
তক্ষুণি
মনে হল রাজোসরাস নর্মোডেনসাসের
কথা । ইন্ডিয়ান অরিজিনের এই
ডাইনোসরের ফসিল তো নর্মদার
তীরেই আবিষ্কৃত হয়েছিল ।
ভারতবর্ষ যুগে যুগে রাজারাজড়ার
দেশ বলে এখানকার ডাইনোসরের
নামকরণেও সেই রাজকীয়তার ছোঁয়া
। কে জানে হয়ত এই ঘুঘুয়াতেই
ঘুরে বেড়াতো নর্মোডেন্সাসের
পরিবার ।
সরকারী কেয়ারটেকার । আমাদের ঘুরে ঘুরে সবটা পরিদর্শন করিয়েছিলেন যিনি
১৯৮৩ সালে মধ্যপ্রদেশ সরকার ঘুঘুয়াকে ন্যাশানাল পার্কের সম্মান প্রদান করে। ঘুঘুয়া এবং পার্শ্ববর্তী গ্রাম উমারিয়া নিয়ে এই ফসিল পার্কের সমগ্র ব্যাপ্তি ২৭ হেক্টর জুড়ে । এখনো অবধি ৩১ টি প্রজাতির উদ্ভিদ সনাক্ত করা গেছে । প্রধানতঃ পাম ও দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদ এরা । ইউক্যালিপ্টাস, খেঁজুর, কলা, রুদ্রাক্ষ, জাম, এই সব ট্রপিকাল সবুজ গাছকেই চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে ।
১৯৮৩ সালে মধ্যপ্রদেশ সরকার ঘুঘুয়াকে ন্যাশানাল পার্কের সম্মান প্রদান করে। ঘুঘুয়া এবং পার্শ্ববর্তী গ্রাম উমারিয়া নিয়ে এই ফসিল পার্কের সমগ্র ব্যাপ্তি ২৭ হেক্টর জুড়ে । এখনো অবধি ৩১ টি প্রজাতির উদ্ভিদ সনাক্ত করা গেছে । প্রধানতঃ পাম ও দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদ এরা । ইউক্যালিপ্টাস, খেঁজুর, কলা, রুদ্রাক্ষ, জাম, এই সব ট্রপিকাল সবুজ গাছকেই চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে ।
ইউক্যালিপ্টাস
সরকারী কেয়ারটেকার আমাদের
নিয়ে ঘুরে ঘুরে সব দেখালেন ।
কিছু
শামুক জাতীয়
অর্থাত খোলসযুক্ত বা মোলাস্কা
পর্বের প্রাণীর ফসিল দেখা
গেল । এর থেকে বোঝা যায় যে
স্থানটি আর্দ্র ছিল এবং পর্যাপ্ত
বৃষ্টিও হত এখানে । তারই
ফলস্বরূপ চির সবুজ বৃক্ষের
সমারোহ ছিল ।
অপর্যাপ্ত ফসিলাইজড চিরসবুজ বৃক্ষের জীবাশ্মের সাক্ষী হয়ে আমরা
স্থানীয় মানুষ এই অঞ্চলকে বলে "পাত্থর কা পেড়" অর্থাত পাথরের গাছ । আমি বলব গাছ-পাথর । কথায় বলে বয়সের গাছ-পাথর নেই । তার মানে এতদিনে বুঝলাম । যে কত পুরোণো হলে গাছ পাথরে রূপান্তরিত হয় ।
স্থানীয় মানুষ এই অঞ্চলকে বলে "পাত্থর কা পেড়" অর্থাত পাথরের গাছ । আমি বলব গাছ-পাথর । কথায় বলে বয়সের গাছ-পাথর নেই । তার মানে এতদিনে বুঝলাম । যে কত পুরোণো হলে গাছ পাথরে রূপান্তরিত হয় ।
গাছ-পাথর
অমরকন্টকে এসে পৌঁছলাম বেশ রাত্তিরে । এম পি ট্যুরিসমের লাক্সারি টেন্টে থাকবার ব্যবস্থা । রাতের খাবার খেয়ে এসে বরাদ্দ তাঁবুতে সেরাতের মত আমরা আশ্রয় নিলাম ।
পরদিন
ভোরে উঠে এবার আমাদের যাওয়া
লাইমস্টোনের দেশে । বিখ্যাত
জবলপুর মার্বেল রকস্ দেখতে
। প্রথমে
ভেরাঘাট । জবলপুরের ২২ কিমি
দূরে নর্মদা নদী একটি গর্জের
মধ্য দিয়ে প্রবাহিত এখানে ।
দুধসাদা পাথরের ওপর দিয়ে ঝরণার
মত আছড়ে পড়ছে নর্মদা ।
এই
গর্জটির দৈর্ঘ্য ৩ কিমি । নদীর
কিনারা দিয়ে,
বুকের
ভাঁজে মিনারের মত সারে সারে
উঠে এসেছে শ্বেতপাথরের স্তম্ভেরা
। কি অপূর্ব সেই রূপ । আর নদীর
উচ্ছলতায় পুরো পরিবেশটাই যেন
ভিন্নস্বাদের অনুভূতি সৃষ্টি
করে । ভেরাঘাট পৌঁছে কেবলকারের
টিকিট কিনে রোপওয়েতে যাওয়া
হল মাঝ নর্মদায় ধূঁয়াধার
জলপ্রপাতের এক্কেবারে গায়ের
কাছে । কেবলকারের ঘেরাটোপে
ডিজিটাল ক্লিকে বন্দী হতে
লাগল আমার নর্মদা । চারিদিকে
যেন ফোটোশপড নীল আকাশ । আর
ক্যালসিয়াম-ম্যাগনেসিয়াম
কার্বনেটের গাঁটছড়া । কি
অপূর্ব সেই রূপ !
আর
নদীর উচ্ছলতায় পুরো পরিবেশটাই
যেন ভিন্নস্বাদের । পুব
থেকে পশ্চিমে বহতী নর্মদা ।
সাদা ফেনা হয়ে জল পড়ছে গর্জের
মধ্যে আর পুরো জায়গাটি ধোঁয়াময়
।
এবার
পঞ্চবটী ঘাটে এসে নৌকাবিহারে
বান্দরকুঁদনী । দুপাশে মার্বল
রক্স এর অলিগলি রাজপথের মধ্যে
দিয়ে প্রবাহিত নর্মদা নদী ।
নৌকো চড়ে ঘন্টাখানেক যেন
ভুলভুলাইয়ার মধ্যে ভাসমান
হলাম । পাথরের কত রকমের রঙ ।
পরতে পরতে যেন সৃষ্টির প্রলেপ
। নৌকার মাঝির স্বরচিত কবিতায়
বলিউড থেকে টুজি স্ক্যাম সবই
উঠে এল স্বতস্ফূর্ত ভাবে ।
দুপুর সূর্য্যি
তখন মাথার ওপরে । আদুড় গায়ে
ডাইভ মারছে স্থানীয় কিশোর
নর্মদার বুকে ।
বর্ষার পর
যেন আরো ঝাঁ চকচকে পাথরের রং
আর নর্মদাও যেন থৈ থৈ রূপ নিয়ে
খুশিতে ডগমগ । লাইমস্টোনের
স্তবকে স্তবকে গাম্ভীর্য আর
নদীর হাসি মিলেমিশে একাকার
।
কে যানে পূর্ণিমার রাতে এখানকার
নিসর্গ কেমন হয় !
কোজাগরীর
রাতে আবার আসতে হবে এই বলে
প্রণাম জানালাম মা নর্মদাকে
।
সকালবেলা, "ঘুরেআসি" সংবাদপত্রে প্রকাশিত বৃহস্পতিবার, ১৩ই সেপ্টেম্বর ২০১২ তে প্রকাশিত "সৃষ্টিপাথরের উপাখ্যান" ঘুঘুয়া ফসিল ন্যাশানাল পার্ক এবং জব্বলপুর মার্বল রকস নিয়ে ভ্রমণ বৃত্তান্ত
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন