১৮ সেপ, ২০১২

প্যাপিরাস পুজোসংখ্যা ২০১২ প্রকাশিত হল

 পটশিল্পীঃ আয়েষা ও বাবলু পটীদার
গ্রাম নানকারচক, পূর্ব মেদিনীপুর 

সেই বাংলা বছরের প্রথমদিনে প্যাপিরাসের আনাচেকানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বন্ধুদের সাথে দেখা হয়েছিল ।

ততদিনে সুনীতা উইলিয়ামস ভেসে রয়েছেন এই মহাবিশ্বে, মহাকাশে । কিউরিয়োসিটি খোঁজ নিতে গেছে মঙ্গল গ্রহের জল-মৃত্তিকার খুঁটিনাটি কিম্বা একরত্তি জীবনের । এবারের অলিম্পিকও আমাদের একেবারে নিরাশ করেনি । স্বাধীন ভারতের রাষ্ট্রপতি হয়েছেন এক বাঙালি । উত্তরপ্রদেশের এক বাঙালী বৈজ্ঞানিক নোবেলের সমতুল্য সম্মানে ভূষিত হয়েছেন । “রিসেশন-ইনফ্লেশন” চাপানোতরের পাশাপাশি  সামাজিক দুর্ঘটনার ভয়াবহতায় মাদুর্গাকে স্মরণ করেছি মনেমনে ।  আমাদের সকলের শুভকমনায় আর মাদুর্গার আশীর্বাদে ক্রিকেটের মাঠ আলো করে আবার যুবরাজ সিং ব্যাট হাতে ধরেছেন ।   অনেক গুণী মানুষকে আমরা হারিয়েছি এই কয়েকটা মাসে ।মনে মনে অনুভব করেছি..”একলা ঘরে হাতড়ে মরি, শিল্পী তোমার শূন্যতা” !



এই ছ’টি মাস প্যাপিরাসের নিরম্বু উপবাস । শুধু পাঠকমহলের আদর প্যাপিরাসের পাথেয় যুগিয়েছে । লেখক, কবি এবং সর্বোপরি পাঠকদের ভালোলাগা আর ভালোবাসাকে সাথে নিয়ে হৈ হৈ করে সেজেগুজে প্যাপিরাস সাজিয়েছে তার পুজোসংখ্যাটিকে ।
আমাদের এবারের সবচেয়ে বড়প্রাপ্তি হল চিলেকোঠার ঘর ঝেড়ে পাওয়া  স্বর্গতঃ শুভ্রেন্দু মুখোপাধ্যায়ের একখানি কবিতার খাতা । পাতার রঙটা বাদামী হয়েছে যার সময়ের সাথে সাথে কিন্তু পেন্সিলে লেখা খাতাভর্তি কিছু দুষ্প্রাপ্য কবিতা আজো অমলিন । ১৯৪৪ সালে ছাত্রাবস্থায় মাত্র ১৭ বছর বয়সে লেখা কবিতাগুলির মধ্যে থেকে দুটি কবিতা এবারের প্যাপিরাসকে সমৃদ্ধ করেছে ।


বেশকিছু রন্ধন পটিয়সী “হোমমেকার” স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে প্যাপিরাসকে উপহার দিয়েছেন তাঁদের কিছু সেরা পূজোর রেসিপি । একাকীত্বের অবসাদ কাটিয়ে অনেক বছর বাদে কলম ধরেছেন খড়গপুরের বিশ্বজিত সরকার । রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে তাঁর চাক্ষুষ অনুভূতি ফুটিয়ে তুলেছেন একদা বাংলা সাহিত্যের এই ছাত্র।  আমাদের কবিবন্ধুদের  জানাই মুঠোমুঠো শিউলিঝরা অভিনন্দন । এবারের শব্দসীমা লঙ্ঘন না করে অনেকেই লিখেছেন সুন্দর অণুগল্প, ছোটগল্প এবং ভ্রমণ বৃত্তান্ত ।


পাঠকদের অনুরোধে এবার থেকে প্যাপিরাসে রাখলাম একটি বিষয়ের ওপর ফোরাম বা আলোচনা চক্র  যার নাম দিলাম “চক্রবৈঠক” ।   সমাজের বিভিন্ন পেশার, বিভিন্ন বয়সের মানুষের কাছ থেকে চাওয়া হয়েছিল আমন্ত্রণ মূলক লেখা, বিষয়টি ছিল “ইন্টারনেট”  । তাদের সাড়া পেয়ে প্যাপিরাস আপ্লুত এবং অনুভূত । এত ব্যস্ততার মধ্যে সকলে যে সুচিন্তিত মতামত পাঠিয়েছেন সে জন্য আরো একবার তাদের সকলকে ধন্যবাদ জানাই ।
এবার যেন “হেমন্তে শরত” এর পথ চাওয়া । তাই বুঝি অতিবৃষ্টি আর খরার টানাপোড়েনে আমরা কাবু না হয়ে একটু বেশি সময় হাতে পেয়েছি পুজোসংখ্যা প্রকাশের ।
জীবনের আলপথগুলো গুলো চলতে চলতে অনেক বন্ধু এল চারপাশে । একঘেয়েমি কাটল ফেসবুকের একচিলতে ব্যালকনিতে । চলতে থাকে জীবন। আলগোছে, আলতো পায়ে । মনের কার্ণিশ বেয়ে নিঃশব্দে উঁকি দেয়  এসেমেস। বেজে ওঠে মুঠোফোন ঝন্‌ঝন্‌ । আমার মনোবীণায় সে ঝঙ্কারে হয়ত সামিল হয় অচেনা কোনো পাখি ।   ইনবক্সে উড়ে আসে অচেনা মেল, হঠাত মেল । বলে প্যাপিরাসকে ভালোবাসার কথা ।
চলতেই থাকে জীবন ছেঁড়া ছেঁড়া কবিতার ঘ্রাণ নিয়ে.. অলস সময় পেরিয়ে যায় বৃষ্টিপথ, ভাবনার গদ্যেরা ভেসে যায় আপন খেয়ালিপথে, আলগোছে, আলতো পায়ে… প্যাপিরাসের হাত ধরে  ! মনে মনে বলে উঠি,তুমি মেঘ-রোদ-বৃষ্টি হলে আমার ড্র‌ইং বারান্দায়
তুমি আলো-আঁধারের খালপাড়ে, আমি ভরাবর্ষায় ।
বৃষ্টিফোঁটায় কবিতা হতে চেয়েছিলে তুমি
আর আমি তোমার কর্ণিকা ।
জড়িয়ে ছিলে দুচোখে, ভরেছিলে ভোরবেলা
দিয়েছিলে সন্ধ্যে, অনেক অনেক আনন্দে ।
তবু এখনো বর্ষা হতে পারলাম ক‌ই ?

কিন্তু “বর্ষা” হওয়ার চেষ্টা তো আমরা করতেই পারি তাই নয় কি ?  তাই তো গ্রামবংলার শিল্পকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার চেষ্টায়  প্যাপিরাসের পুজোসংখ্যার থিম  গ্রামবাংলার পটচিত্র । মেদিনীপুরের মেলায় এবছর আলাপ হয়েছিল এক পটু পটশিল্পী দম্পতির সাথে ।  খড়গপুরে তাদের আমরা আমন্ত্রণ করে নিয়ে এসে বেশ কিছু পটচিত্র আঁকিয়েছিলাম বাংলার এই শিল্পকে সম্মান জানানোর জন্য ।  বন্ধুবান্ধবের অনুরোধে তারা নানারকমের পটশিল্প সামনে বসে এঁকে  পট-ভিত্তিক আনুষাঙ্গিক ঘরসাজানো এবং ফ্যাশানের জিনিষ বিক্রি করে যারপরনেই খুশি হয়ে বাড়ি ফিরেছিল  তাদের লক্ষ্মীর ঝাঁপি নিয়ে  । সেই দম্পতিকে খুশি করতে পেরে আমরা, যারা  সেদিন তাদের পাশে  ছিলাম তারাও আপ্লুত হয়েছিলাম ।

এবারের প্যাপিরাস পুজোসংখ্যাতে সেই অভিনব লোক-শিল্পের ছোঁয়া লেগেছে । পূর্ব মেদিনীপুরের নানকারচক গ্রামের বাসিন্দা বাবলু পটিদার ও আয়েষা পটিদার অক্লেশে বাঁচিয়ে রেখেছেন তাদের ২৫০ বছরের পুরোণো বংশ পরম্পরার ঐতিহ্য ।  মাদুর্গার কাছে প্রার্থনা করি তাঁরা যেন আরো বেশি প্রচারের আলোয় আসতে সক্ষম হন !


সকলের পুজো আনন্দে কাটুক ! প্যাপিরাসের লেখক ও পাঠকদের জানাই শারদীয়া শুভেচ্ছা।

প্যাপিরাস পড়ুন এবং পড়ান আপনার মূল্যবান মন্তব্যটি ওখানে কমেন্ট ফোরামে লিখুন ।  

কোন মন্তব্য নেই: