২৬ নভে, ২০১১

ডুবাইলি রে, ভাসাইলি রে..

http://sonartoree.files.wordpress.com/2011/09/pujo02.jpg
"আমার ঘরে বসত করে কয় জনা" এর উত্তরে সারা পৃথিবীর অন্ততপক্ষে এক তৃতীয়াংশ মানুষ সোশ্যাল নেটওয়ার্কের জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে চিত্কার করে সমস্বরে বলবে " এই তো অর্কুট ক্লাবঘরে শ'তিনেক ছাড়িয়ে ট্যুইটার খুপরিতে শ'পাঁচেক আর কেল্লাফতে ফেসবুক পাড়ায় । হাজার ছাড়িয়ে গেলে তুমি তো সেলেব ! স্মার্টফোনের সাথে সোশ্যালনেটের দোস্তি যত বাড়ছে তার ইউসারদের মধ্যেও বাড়ছে সেই বন্ধুত্বের হাতছানি । আর মানুষের ইঁদুর দৌড়ের গতিবেগ যত বাড়ছে তত বাড়ছে স্ট্রেস এবং স্ট্রেন । ফলে কম সময়ে মানুষের কাছে সহজে পৌঁছে যাবার এই সুবিধে গুলোও মানুষ কাজে লাগাতে শিখেছে বুদ্ধিমানের মত । তাই দোল-দুর্গোত্সবে গ্রিটিংস থেকে শুরু করে জন্মদিন-বিয়ের তারিখ আর হাতের পাঁচ সুপ্রভাত-শুভরাত্রি তো আছেই । তারপর আমি হংকং থেকে হনললু কিম্বা বন্ধু সিকিম থেকে সিঙ্গাপুর পৌঁছিয়েই বার্তা বিনিময় । আমি আজ চিংড়ি না ইলিশ রাঁধলাম তাও জেনে গেল বন্ধু ছবিসমেত । আমার মায়ের রক্তচাপ ঊর্দ্ধমুখী সেও জানলো সারা পৃথিবী । কেউ বা তার বোনের জন্মদিনের কেক কাটার ছবি কেউ আবার শিকাগো কিম্বা টরোন্টোর এয়ারপোর্টে পা দিয়েই সারা দুনিয়াকে জানিয়ে দিল আমি " হেথায় "; কিন্তু কেউ যদি লেখে " আমার খুব বিপদ, কে আছো কোথায় , ছুটে এসো আমার কাছে " তাহলে সেই অগণিত বন্ধুগোষ্ঠীর মধ্য থেকে কেউ কি আসবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে ?অচেনা, অজানা উড়োমিতে-মিতেনীর দলে কে বন্ধু আর কেই বা অ-বন্ধু বোঝা মুশকিল ।
এখন তো কিটিপার্টি থেকে শুরু করে ঘরোয়া পার্টিতে গৃহবধূদের মুখেও সেই এক কথা । দেখা হলেই " তুই ফেসবুকে আছিস্" কিম্বা " গুগ্‌ল প্লাসে একাউন্ট খুলেছিস? " নয়তো যেন তার সোশ্যাল স্টেটাস রক্ষা করাই দায় । কিন্তু একবার বন্ধু হয়ে যাও । ব্যাস! তারপর আর বন্ধুত্বকে কে পায়! সেই অঞ্জন দত্তর গানের মত " তুমি না থাকলে সকালটা এত মিষ্টি হত না " বলে চালিয়ে যাও স্টেটাস আপডেট । আর যদি তুমি ছন্দের কারসাজি জানো তাহলে তো ফিদা হয়ে যাবে বন্ধুকুল তোমার । দুকুল ছাপিয়ে কাব্য ঝরবে ফেসবুকের আঙিনায় । উপছে পড়বে নাতি-১৪০ সনেট । আর ছন্দ না এলেও,
ক্ষতি কি ! না হয় আজ পড়বে , ফেসবুকে লিটারারি কাব্য !
পড়ল কথা সবার মাঝে, যার কথা তার গায়ে বাজে !
তবু বেঁচে থাক সোশ্যালনেট । একাকীত্বের অবসাদে ভুগছেন এমন অনেক সিনিয়ার সিটিজেনের জন্য, একরাশ মনখারাপের দুপুর নিয়ে অপেক্ষমানা হোমমেকারটির জন্য , প্রোষিতভর্তিকার জন্য আর প্রবাসী ছেলেপুলেদের মা-বাপের জন্য ; ডুবাইলিরে, আমায় ভাসাইলি রে " বলে ঝপাং করে ঝাঁপিয়ে পড়ুন অর্কুট থেকে ফেসবুকে ও সেখান থেকে গুগ্‌লপ্লাসে । ট্যুইট করুন গোটাকতক। বদল করুন প্রোফাইল ছবি মাঝে মাঝে । জগতের হাটের মাঝে আপনার হাঁড়ি ভাঙুন । দেখবেন আপনি আর একা নন । বন্ধুত্বের পারদ যত চড়বে ওপরে আপনিও তত ভালো থাকবেন । সদা থাকো আনন্দে ! হ্যাপি সোশ্যালনেটওয়ার্কিং !  

কোন মন্তব্য নেই: