৮ অক্টো, ২০১১

শুভ বিজয়াদশমী

থিম পুজোর শুচিবায়ুতায় মা তার ছেলেপুলেদের নিয়ে ভালোয় ভালোয় এসে আলোয় আলোয় ফিরে গেলেন । 
থিম থিম করে পাগলু  হয়ে পুজোয় চমক হল ।  দেব-দেবীদের চক্ষু চড়কগাছ।  হিংসায় উন্মত্ত ধরায় শান্তির বাণী বরষাতে এসে সব প্ল্যান ভন্ডুল ।  পিচঢালা ঝকঝকে  রাস্তায় প্যান্ডেলের খুঁটি পোঁতা হল । হোতারা গর্ত খুঁড়েই খালাস  । মা চলে যাবার পর সেই গর্ত গুলোর কি হবে তা নিয়ে কেউ ভাববেন না একটিবারও ।   একই পাড়ায় চারটে দলের আলাদা আলাদা পুজো হল । দলবাজির মা, রকবাজির মা, রঙবাজির মা, দাদাগিরির মা । আফটার অল ভাগের মা  বলে কথা । গঙ্গা পাবেন অবিশ্যি । কিন্তু গঙ্গার কি হবে ? একেই তো বুঁজে আছে পর্যাপ্ত প্লাস্টিকে ।  ক্লিন কোলকাতা, গ্রিন কোলকাতা থিম ততক্ষণে বিসর্জন । মহানগরের ড্রেনগুলি আবার ভর্তি হল । ঠাকুর দেখলেন প্রচুর দর্শনার্থী । জলের বোতল, কোল্ড ড্রিংক্সের বোতল, কফির কাপ, আইসক্রিমের কাপ, আরো কতকিছু ছড়িয়ে ছিটিয়ে তারা রেখে চললেন এই মহানগরের রাস্তাঘাটে । তেরঙ্গা, গুটখা, শিখরময় হল এই মহানগর ।   চাঁদের হাসির বাঁধ ভেঙে মাইক্রোফোনের স্পীকারে গান বাজতেই থাকল উচ্চৈ:স্বরে  । হোতারা বললেন 'বাজাতে রহো'। সদ্যোজাতের কর্ণপটহে তালা  সেই শব্দে ।  আলোর রোশনাই কোজাগরীর চাঁদের জোছনাকে আড়ালে রাখল। বিদ্যুত বিদ্যুত বিদ্যুত ! কত চাই এসময় ? জয়েন্ট পরীক্ষার আগের দিন না হয় অন্ধকারে ডুববে বঙ্গ তাই বলে পুজোতে আঁধার আমার ভালো লাগবে কি ? রমরমিয়ে ব্যবসা চলল ট্রান্সফ্যাটের । আবার ওজন বাড়ল বাঙালীর । পুজোতো রোজরোজ হবেনা । তাই বলে কি রসনা অতৃপ্ত থাকবে ? চক্ষুশুদ্ধি হল প্যান্ডেল হপিং করে । জিনস-কুর্তা, কুর্তি-কেপরি, স্কার্ট-লাচ্ছায়  লাস্যময়ী, হাস্যময়ীরা মাতালেন ম্যাডক্স স্কোয়ার,  তিনকোণা,  দেশপ্রিয়,  বাদামতলা, মুদিয়ালি । চিনে জোঁকের মত মানুষ ভীড় করলেন প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে । ততক্ষণে মা উধাও সেই প্যান্ডেল থেকে । পড়ে থাকল মৃন্ময়ী মূর্তি । চিন্ময়ী মায়ের বিরহী আত্মাটুকু পাড়ি  দিল   দয়িত ভোলেবাবার কাছে । ভীড়ভাট্টা থেকে রক্ষা পাবে বলে ।  কোলকাতার ভূষণ হল   দূষণ । মাননীয় নেতারা বিজয়া টিজয়া সেরে টেরে সিদ্ধান্ত নেবেন । মহানগরকে দূষণ মুক্ত করার জন্য অনেক মিটিং হবে ।ততক্ষণে শারদসম্মান এওয়ার্ড সেরিমনি শেষ ।
আকাশতলে, অনিলে জলে, দিকে দিগন্তলে,  বনে বনান্তরে বাজতে থাকল   'বলো দুগ্গা মাইকি জয়! আসছে বছর আবার হবে ! ' 
 নাড়ু মুখে, পান হাতে, সিঁদুর খেলে  মা মুচকি হেসে বললেন ' আবার আসিব ফিরে ধানসিঁডিটির তীরে এই বাংলায় '  
 সিংহমশাইয়ের পিঠে চেপে মা,  মায়ের দু জোড়া ছেলেপুলে , একাই একশো উগ্রপন্থী মহিষাসুর আর এক গন্ডা নির্বিবাদী পশুপাখি  বাক্স প্যাঁটরা প্যাক করে রেডি হয়ে ঝুলঝুল করে দেখছে তখন ।   কোথায় পাব বলরাম-যুগল? কোথায় পাব বাঞ্ছারামের পান্তুয়া? হায়রে সেনমশাইয়ের  মিষ্টি দৈ ! যাদবের দিলখুশ আর কেসি দাসের রসোমালাই  ।
মা বললেন ' চলো চলো চলো সবে , কৈলাসে গিয়ে হবে , চমরীর দুধে  মিষ্টিমালাই , বানাবো সকলে খাবে '  
বড়মেয়ে বলল 'শুধু যাওয়া আসা, শুধু পয়সা খসা' 
ছোটমেয়ে বললে ' চল রাস্তায় নামি ট্রামলাইন '
বড়ছেলেটা বলে বসল 'আহা কতদিন শুনতে পাবনা এ সব, বড্ড মিস করব রে ! '
মা কোলের ছেলেকে বললেন ' কি রে তুই কিছু বল্‌ '
অমনি ছোটছেলে বললে ' আমাকে আমার মত থাকতে দাও মা, কিচ্ছু ভাল্লাগছেনা ' 
পাড়ার ছেলেমেয়েরা দৌড়ে এসে খবর দিল 'আই এসডি কল এসেছে মাগো, একটিবার চলো । বোধহয় কৈলাস থেকে শিবুদা ফোন করেছে' 
ওনারা তো চলে গেলেন আমাদের ডুবাইলিরে ভাসাইলিরে করে ।  এবার লে ছক্কা! ভাঙারাস্তা, খোঁড়া গর্ত, তেরঙা-গুটখার স্যাশেতে, পলি বোতলে, সুরাশীতলে, ছয়লাপ মহানগরের অলিগলি, ব্যস্ত রাস্তা।  সাতমণ তেল পুড়েছে প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে । লাস্যময়ী শ্রীরাধিকাদের উদরপূর্তি হয়েছে ব্যাপক। তেলেজলে, অম্বলে শ্রীরাধিকারা নতুন জুতোর ফোস্কা নিয়ে দিন কয়েকের মধ্যেই আপিস ছুটলেন ।  পেত্থমদিন কি আর কাজ হবে? বড়বাবুর বিজয়ার ট্রিট, ছোটবাবুর শালীর সাথে প্যান্ডেল হপিং, মেজোবাবুর গার্লফ্রেন্ডের ক্রিসপি গসিপ নিয়ে চলবে সারাদিন ।  তারপর পাশের কিউবিকলে ফেসবুক খুলে কুশল বিনিময়, আরো আরো শঙ্খিনী, দামিনী, চাপিনীদের উঁকিঝুঁকি, বোল্ড ড্রেসের গল্প,  পাড়ার  রতনের হ্যাংলার মত বাংলু খেয়ে রাস্তায় পড়ে থাকা। মায়ের ব্যাটেলিয়ন ততক্ষণে কৈলাস ছুঁই ছুঁই । এদিকে সময় চলিয়া যায় , নদীর স্রোতের প্রায় । বড়বাবু গোমড়া মুখে  ফাইলের তাগাড় নিয়ে বসেই র‌ইলেন । পুজোর পর যেন "মন লাগেনা কাজে" ........

৫টি মন্তব্য:

সুশান্ত কর বলেছেন...

বাহ! বেশ জমিইয়ে লিখেছেনতো! বিজয়ার প্রীতি ও শুভেচ্ছা রইল!

Ivy বলেছেন...

শুভ বিজয়া !

Calcutta বলেছেন...
এই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।
Indira Mukhopadhyay বলেছেন...

সুশান্ত এবং আইভিকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা ! দুজনকেই গতকাল পর্যন্ত এসেমেস করতে করতে থকে গেছি । আমার এসেমেস যাচ্ছেনা কেন জানিনা । গতকাল অনন্যাও এসেমেস পাইনি বলল । যাইহোক দুই বন্ধুকেই আবার জানালাম বিজয়ার প্রীতি। কেমন ছিলে সব পুজোতে ? আশাকরি পুজো ভালো কেটেছে ।

সুশান্ত কর বলেছেন...

পুজো ? আমারতো নেটেই কেটে গেল। ফেলানি এগুচ্ছে অনেক ঢিমে তালে। তারই দুতো অধ্যায় করলাম। এসএমএস! ওদের এখন ট্রাফিক জ্যাম চলছে যে!