১৬ জুল, ২০০৮

More ভাবনারে ..... দ্বিতীয় পর্ব

প্রায় অর্ধ শত বত্সর পূর্বে দেশবরেণ্য চিকিত্সক বিধান রায় তিল তিল করে গড়ে তুলেছিলেন তাঁর সুপরিকল্পিত স্বপ্ননগরী সল্টলেক। আজ কলিকাতার মহান ব্যক্তিরা ,আমলারা এবং সর্বোপরি নেতারা সেথায় সুখে-স্বচ্ছন্দে ঘরকন্না করছেন । কলিকাতার লবণহ্রদ আজকের বাংলার সিলিকন-ভ্যালি।আহা! বিধানচন্দ্র দেখে যেতে পারলেন না । তিনি আরো কিছু দেখে গেলেন না, নিজ হাতে গড়া তাঁর এ শহরের চিকিত্সা-ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হয়েছে। আধুনিক কলকাতার হাসপাতালের কি দশা আজ!! শল্যচিকিত্সকেরা একহস্তে শাণিত scalpelসহ বরাভয় এবং অন্যহস্তে স্টেরিলাইজড scissors সহ আশীর্বাদ নিয়ে হাসপাতালের operation theatre এ স্বাগত জানাতে সর্বদা অপেক্ষমান। এ কি মুখের কথা? বিধানচন্দ্র রাজারহাটে চাঁদের হাট বসেছে তাও দেখে যেতে পারলেন না । কেষ্টপুর ক্যানেলে গন্ডোলা চলল বলে!!

আজকের কলিকাতার উত্তরে, দক্ষিণে, পূর্বে, পশ্চিমে শুধু শপিং মল । কত বাজার , কত মল্টিপ্লেক্স, কত বহুতল |পশ্চিমে বিদ্যাসাগর সেতু ধরে কোনা এক্সপ্রেস ওয়ে ধরলে সোজা গিয়ে পড় পূর্বতন সরকারের সুচিন্তিত পরিকল্পনা 'স্বর্ণালী-চতুর্ভুজ-সড়ক- যোজনার'সার্থক রূপ দেখতে। কলিকাতা থেকে যেদিকে খুশি যাও। কোনো বাধা নেই। বম্বে রোড ,দিল্লি রোড যা খুশি ধরে জাহান্নাম,বেহেস্ত যেদিকে দুচোখ যায়...আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র সেই কবে বলেছিলেন"বাণিজ্যে,বসতে,লক্ষ্মী" আজকের কলিকাতা দেখলে তাঁর প্রাণ জুড়িয়ে যেত... একদা যারা বড় মুখ করে রক্ত দিয়ে রুখেছিল automation তারাই আজ automation এর গুণকীর্তন করছেন।অনেক বছর পিছনে চলার পরে কলকাতার মনুষ্যজন ঘুমের ঘোরে বিবেকানন্দের অমোঘ বাণী শুনতে পেয়েছে...."উত্তিষ্ঠিত ! জাগ্রত !"তাই পুনরায় চলতে শুরু করেছে। এ শহর পারে শুধু পরকে আপন করতে, নিজেকে পেছনে ফেলে পরকে এগিয়ে দিতে। নিজের ব্যবসায় ইতি টেনে ভিনদেশিদের স্বাগত জানাতে। এ শহরে এখন শিল্পের জোয়ার, হাইটেকের বান | নগরবাসী সালিমের কাছ থেকে ব্যাবসার তালিম নিচ্ছে। টাটার সাথে হাঁটা শিখছে। প্রফুল্ল-বিধান উপর থেকে আশীর্বাণী বর্ষণ করে বলছেন,"বেটার,লেট ; দ্যান নেভার ; "

আজকের কলিকাতা দেখে জোবচার্নক বোধ করি বলে উঠতেন এই কি ছিল সুতানটি ? আজকের কলিকাতা কোলকাতা তে যেতে যেতে থমকে দাঁড়িয়ে গেছে, সুতানটির লোকজন খুনসুটি করে ধমকে দিয়ে গেছে আমাদেরকে, আমরা চমকে উঠে দেখি কোলকাতায় ঘোর কলিযুগ। আজ কোলকাতা প্রাচ্যের ভেনিসের মর্যাদা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভূমধ্য-সাগরীয় ভেনিস অপেক্ষা গাঙ্গেয় ভেনিস কোনো অংশে কম নয়। বন্ধ্যা রাজনীতির এই মিছিল নগরী পাশ্চাত্যের পর্যটককে আহ্বান করছে এ শহরে পা দেবার জন্য। কি দেখানোর জন্যে? উপছে পড়া জনস্রোতে এ নগরীর রাজপথে সদা কোলাহল, শত ব্যস্ততা | শুধু ভীড় আর মিছিল এই দেখাবে তাদের ? এ স্থানে বারোমাসে তেরোপার্বনের সঙ্গে চতুর্দশতম ব্রত হোল বন্-ধ্- উদ্-যাপন । এখানে বর্ষা নামলে জল নিষ্কাশনের সকল পথেও বন্-ধ্- । তাই গ্রীষ্মাবকাশের পরে বিদ্যালয়গুলিতে পুনরায় বর্ষাবকাশের ছুটি ঘোষণা করা হয়। এ শহরে বিশ্বায়নের টারবাইন বোঁ বোঁ করে সর্বক্ষণ ঘুরছে । ফলে বিদ্যুতের চাহিদা ও শোঁ শোঁ করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু বিকৃত মানুষ দ্বারা পরিচালিত এবং বিকল যন্ত্রাদির দ্বারা উত্পাদিত বিদ্যুত চাহিদার যোগান দিতে পারছে না ফলে কলকাতাবাসীদের ভবিষ্যত সহ বর্তমান ও তমসাবৃত হয়ে গেছে। এ রাজ্যের মানুষের লোক-লৌকিকতা ,আতিথেয়তা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। কিন্তু বিশ্বের মানুষজন অতিথিরূপে আমাদের গৃহে পা দেবার পূর্বে জঞ্জালপূর্ণ পথ-ঘাট অবলোকন করে তাদের যেরূপ ব্রহ্মজ্ঞান হবে তার ফলে গৃহের অভ্যন্তরে প্রবেশের মানসিকতা লোপ পাবে।

স্বাধীনতার পূর্বে যে সব প্রাসাদোপম অট্টালিকা নির্মিত হয়েছিল তারাই কোলকাতার ঐতিহ্য আজীবন বহন করে চলবে। স্বাধীনতা-উত্তর যুগের বাবুরা নতুন কিছু গড়তে না পারলেও পুরানোগুলিকে ভেঙে-চুরে তাল গাছের সাথে পাল্লা দিয়ে নতুন নতুন লম্বা,লম্বা বসতভিটা বানাবে। ঐতিহ্যবাহী রাস্তাগুলির কেতাদুরস্ত নাম বদল করে নতুন গালভরা নাম রাখবে | অর্থাত্ বোঝা যাচ্ছে যে কাজ অতি সহজে সম্পন্ন করা যায় সে কাজ বাঙালী চটপট করে নাম কিনতে চায়।

যাদের জন্য দলে দলে মেধাবী ছাত্রেরা যখন প্রবেশিকা পরীক্ষা দিয়ে অন্য রাজ্যে পাড়ি দিল তখন ব্যাঙের ছাতার ন্যায় পোলট্রির ডিমের গুণমান সম্পন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ খোলা হল । একদা এ রাজ্যের নেতাজী,রবীন্দ্রনাথ, অরবিন্দ,বিবেকানন্দেরা বিদেশে গিয়ে ইংরেজিতে জ্বালামুখী ভাষণ দিয়েছেন | এখন সেই রাজ্যে প্রাথমিক স্তরে ইংরাজী পাঠ থাকবে না তুলে দেওয়া হবে সেই নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই।
(ক্রমশঃ)

1 টি মন্তব্য:

Unknown বলেছেন...

Bhison bhalo hoyeche. mom and dad will go through it tonight.