৩ জানু, ২০২৪

প্রফুল্ল রসায়নী - একটি ব্যাতিক্রমী জীবনোপন্যাস - ড: পার্থ সারথি দস্তিদার

 



প্রফুল্ল রসায়নী

ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়

প্রকাশক- মান্দাস

প্রচ্ছদ- সুপ্রসন্ন কুণ্ডু

মূল্য- ৩০০/-

প্রথমেই বলি লেখিকার পক্ষে খুব শক্ত ছিল কাজটা। প্রফুল্লচন্দ্র-চরিত্রের যে অসংখ্য ডাইমেনশন। তাঁর আমৃত্যু রসায়ন প্রেম আর যে বেঙ্গল কেমিক্যাল ছিল তাঁর স্বপ্নের ফসল তাঁকেই একদিন হটানো হল সেই বেঙ্গল কেমিক্যাল থেকে। 

উঠে এসেছে রবীন্দ্রনাথ সহ সব মনিষী দের সঙ্গে ওঠাবসার গল্প আর last not least প্রেসিডেন্সির কেমিস্ট্রি পড়া আর পড়ানোর অভিজ্ঞতা। সায়েন্স কলেজে কেমিস্ট্রি  বিভাগ খোলা... সে কত লড়াই, কত আত্মত্যাগ... আর বলব না। আপনারা বইটা হাতে তুলেই নাহয় দেখবেন।

রাজাবাজার সাইন্স কলেজ এর কৃতি ছাত্রী ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় এর লেখা উপন্যাস "প্রফুল্ল রাসায়নী" পড়লাম বললে ভুল হবে। গোগ্রাসে গিললাম। ইন্দিরার আগের সব লেখার মতোই (যত গুলো আমি পড়েছি) এই বইটিও অত্যান্ত সুপাঠ্য।  'প্রফুল্ল রাসায়নী' আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় এর জীবনী অবলম্বনে লেখা উপন্যাস। 

গল্পের শুরু রসায়নাচার্য, শিক্ষাব্রতী, ফিল্যান্থ্রপিস্ট, এন্টারপ্রেনর স্যার  পি সি রায় এর জীবন সায়াহ্ন দিয়ে। অনেকটা ফিরে দেখার মতো। বৃদ্ধ প্রফুল্লচন্দ্র নিজের গ্রামে এসেছেন (অধুনা বাংলাদেশের খুলনা জেলার রাডুলি গ্রাম) তাঁর শেষ অভিভাষণ দিতে বিরাশি বছর বয়সে। সেখান থেকে অনেকটা ফ্ল্যাশ ব্যাক এর মতো গল্প বলার শুরু।প্রকৃতির কোলে তাঁর গ্রামে বড় হয়ে ওঠা, কিশোর বয়সে কলকাতার ইস্কুলে ভর্তি হওয়া, সেখান থেকে ধীরেধীরে পৃথিবী বিখ্যাত রসায়নবিদ হয়ে ওঠার কাহিনি। কি ভাবে তিনি এগেইনস্ট অল অড্স নিজের ভাড়া বাড়িতে শুরু করলেন পরাধীন ভারতের প্রথম কেমিকাল ও মেডিসিন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি। কিভাবে তিনি মাত্র চৌতিরিশ বছর বয়সে ১৮৯৫ সালে মারকিউরাস নাইট্রাইট আবিষ্কার করে বিজ্ঞান মহলে তাকে লাগিয়ে দিলেন। তাঁর ছোট থেকে বেড়ে ওঠা, বাবা মা, দাদাদের তাঁর জীবনে অবদান, ওই সময়ের বিখ্যাত সব গুণীজন এর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক, ওঠাবসা, ভাবনাচিন্তার আদান প্রদান, রবীন্দ্রনাথ, জগদীশচন্দ্র এর সঙ্গে সখ্য, স্বাধীনতা সংগ্রাম, বিজ্ঞানীর কর্তব্য, শয়নে স্বপনে রসায়ন, তার উন্নতি, প্রয়োগ অতি প্রাঞ্জলভাবে উঠে এসেছে লেখিকার কলমের জাদুতে। আজকের দিনে যা স্টার্ট আপ বলে সবাই জানে তেমনি তো ছিল তাঁর মস্তিষ্কপ্রসূত বেঙ্গল কেমিক্যালের ভ্রূণ। প্রফুল্ল রসায়নী তে উঠে এসেছে রাজশেখর বসু সহ অনেকের সঙ্গে প্রফুল্লচন্দ্রের ইন্টারঅ্যাকশন। সেকালে দেশে কয়েক হাজার লোকের কর্ম সংস্থান করা, কৃতি ছাত্র তৈরী করা - সব কিছু অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তুলে ধরেছে ইন্দিরা। তাঁর চরিত্রের অনেকগুলি অ্যাঙ্গেল তুলে ধরেছেন লেখক। তাঁর স্বদেশপ্রেম থেকে ব্যবসা প্রীতি অন্যতম।  বাঙালি জাতি যে একে অন্য নামিয়ে দিয়ে আনন্দ পাই , খুব সহজেই ভুলে যাই প্রফুল্লচন্দ্র বা সেই রকম অনেক গুণীজন কে অথবা ফর রং রিজন কোনো গুণীজন কে শুধু সমালোচলা করার জন্য আলোচনা করি - সেই রকম ঘটনা যেটা প্রফুল্লচন্দ্রকে নিয়ে অতি সম্প্রতি কালে একটি লিডিং সংবাদ পত্রে হয়েছিল সেটাও ইন্দিরা খুবই দক্ষতার সঙ্গে তা নিজের কল্পনায় অতি যত্নে ফুটিয়ে তুলেছে। বাস্তবের একজন বিজ্ঞানী যেন প্রমাণ করেই ছাড়লেন "প্রফুল্লচন্দ্র মরিয়া প্রমাণ করলেন যে তিনি করেন নাই" এককথায় অনবদ্য উপস্থাপনা । আমার মনে হয় 'প্রফুল্ল রাসায়নী' সবার পড়া উচিত, কর্মতাপস প্রফুল্লচন্দ্র সম্পর্কে জানতে হলে। সমস্ত স্কুল কলেজ রিসার্চ ইনস্টিটিউশন এর লাইব্রেরি তে থাকা উচিত। 





[প্রফেসর পার্থসারথি দস্তিদার রাজাবাজার সাইন্স কলেজ থেকে জৈব রসায়নে মাস্টার্স করে ব্যাঙ্গালোরের ইন্ডিয়ান ইন্সিটিউট অফ সাইন্স থেকে পি এইচ ডি করেছেন। ভাবনগর অবস্থিত সি এস আই আর ইনস্টিটিউট সি এস এম সি আর আই তে ৯ বছর সায়েন্টিস্ট পদে থাকার পর ২০০৭ থেকে কলকাতার ইন্ডিয়ান এসোসিয়েশন ফর টি কাল্টিভেশন অফ সাইন্স এ সিনিয়র প্রফেসর পদে কর্মরত। বিভিন্ন ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল এ ১৫০ এর বেশি রিসার্চ পেপার পাবলিশ করেছেন। ১৯১৮ সালে ইন্ডিয়ান একাডেমী অফ সাইন্স, বেঙ্গালুরু এর ফেলো নির্বাচিত হন।]



প্রফুল্ল রসায়নী সংগ্রহ করতে 

কলেজস্ট্রিটে বইটি পাওয়া যাচ্ছে- মান্দাস, দে’জ, দে বুক স্টোর(দীপুদা) এবং ধ্যানবিন্দুর বিপণিতে।

বাংলাদেশে পাওয়া যাবে ‘বাতিঘর’, ঢাকার ‘কলকাতা বুকস্’এবং 'তক্ষশিলা'য়। 

কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় এবার মান্দাসের স্টল নম্বর ৬৫৩। ন' নম্বর গেট দিয়ে ঢুকে বাঁদিকে। ১৮-৩১ জানুয়ারি, সেন্ট্রাল পার্ক, বইমেলা প্রাঙ্গণ

অনলাইনে অর্ডার করতে পারেন boighar.in-এর ওয়েবসাইটে, amazon এবং flipkart-এ। এছাড়াও ডাকযোগে পেতে হলে বিক্রেতা এবং সাধারণ পাঠক হোয়াটসঅ্যাপ করুন 84798 73803 নাম্বারে।

৮৪৭৯৮৭৩৮০৩

mandaspublication@gmail.com। ১৮, সূর্য সেন স্ট্রিট, কলকাতা- ৭০০০১২

কোন মন্তব্য নেই: