দক্ষিণ ভারতের এক অত্যন্ত জনপ্রিয় লৌকিক দেবী পেরিয়াচি কালী আম্মান। দেবী পার্বতী, মা কালীর আরেক উগ্ররূপী অবতার এই দেবী। যাকে ঘিরে এক লোকগল্প রয়েছে। সিঙ্গাপুরে এসে লিটল ইন্ডিয়ায় ঘুরতে ঘুরতে রাস্তার ধারে এই পেরিয়াচিআম্মান মন্দির দেখে টুক করে ঢুকে পড়ি। মারাত্মক এক গল্প এই দেবী কে ঘিরে। যিনি নিজের মাহাত্ম্যেই বলীয়ান। আদতে ছিলেন এক ধাত্রী। আর কিভাবে এই মিডওয়াইফ থেকে তাঁর দেবীতে উত্তরণ, সেই নিয়েই এই গল্প।
তামিল ডাকাতরাজা বল্লরাজনের রানী কারকুজালি।জ্যোতিষী গণনায় জানা গেল তাঁদের সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে রাজার সমূহ বিপদ। অমঙ্গলের আশঙ্কা রয়েছে তাই গর্ভস্থ সন্তানকে ভূমিস্পর্শ না করিয়েই প্রসব করাতে হবে। ডাক পড়ল পেরিয়াচি আম্মানের। তাই রাজা চাইলেন শিশুটিকে তো বটেই, এমনকি যে নবজাতককে স্পর্শ করেছে, তাকেও হত্যা করা উচিত! পেরিয়াচি উগ্র মূর্তি ধারণ করলেন। ত্রিশূল এবং তরবারির সাহায্যে একে একে বল্লভনের সব সেনাদের হত্যা করে অবশেষে মেরে ফেলেন রাজাকেও। রাণীর পেট চিরে বের করলেন গর্ভস্থ শিশুটি কে। এ যেন ঠিক আজকের যুগের সিজেরিয়ান সেকশন। শিশুর যাতে কোনো ক্ষতি নাহয় তাই ভেবেই হয়ত এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
এ সময়ে কারকুজালি তাঁকে বাধা দিতে এলে পেরিয়াচি তাঁকেও ছাড়লেন না। রাণীর মধ্যে লক্ষ্য করলেন সন্তানস্নেহের অভাব। তাই রাণীকেও হত্যা করলেন।
প্রসূতির গর্ভাবস্থা এবং জন্মের পরে মা ও সন্তানের সুরক্ষার জন্য উপাসনা করা হয় তাঁর। পাথরের উপরে উপবিষ্ট এই দেবী পদতলে দলিত করেন এক মন্দবুদ্ধি রাজাকে। তাঁর কোলের উপরে দেখা যায় রাণীর শব যার পেট চিরে নাড়িভুড়ি বের করে এনে দুই হাতে তা ধরে চেবান পেরিয়াচি। ষড়ভুজা দেবীর হাতে একটি নবজাত শিশু, ত্রিশূল, নাগপাশে বাঁধা ডমরু, পাশ, তরবারি এবং একটি রক্তপূর্ণ পাত্র থাকে।
একদিকে সিজারিয়ান সেকশন, অন্যদিকে আমাদের ষষ্ঠীদেবীর মত gurdian spirit বা শিশু রক্ষয়িত্রী দেবী এই পেরিয়াচি। দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালন মনে করায় অত্যাচারী রাজা হিরণ্যকশিপু আর তাঁর পুত্র প্রহ্লাদের গল্প। সেখানে বিষ্ণুর নরসিংহ অবতার হিরণ্যকশিপুর বুক চিরেছিলেন। প্রহ্লাদ বেঁচে গেছিল। আমাদের শিশুজন্মের পরে যেমন ষষ্ঠীপুজো হয় তেমনি দক্ষিণ ভারতে হয় পেরিয়াচির পুজো।
ইতিহাস বলছে আজ থেকে ৬০০ বছর আগে (1400 AD) সত্যিই ছিলেন পেরিয়াচি নামের এক বয়স্ক মহিলা। প্রসূতির সুখপ্রসব করানোর কারণে যার খুব নামডাক ছিল। তামিলভাষায় যাকে বলে Maruthuvachi (doctor)। অধুনা চেন্নাইয়ের Thondai Nadu অঞ্চলের Kondithoppu গ্রামের এই ধাত্রী রীতিমত অস্ত্রশস্ত্র চালনায় পারদর্শী ছিলেন।১৪০৬ সালে রাজা বল্লভরাজন আর তাঁর স্ত্রী কারকাজুলি নামেও ছিলেন সেখানকার এক অত্যাচারী রাজা। বাকীটুকু মিথ না মিথ্যে তা যাচাই করার স্পর্ধা বা দুঃসাহস কোনটাই নেই আমার তবে গতকাল রাতে ন'টার পরেও ব্যস্তসমস্ত, আধুনিক সিঙ্গাপুরের পেরিয়াচি কালী আম্মান মন্দিরে ভীড় দেখে মালুম হল, যা রটে তা হয়তবা কিছু বটে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন