১৩ জানু, ২০২২

ধাপধাড়া গোবিন্দপুর টা ঠিক কোথায়?

ধাপধাড়া গোবিন্দপুর টা ঠিক কোথায়? 

ধাপধাড়া বা ধ্যাধধেড়ে সে যাইহোক না কেন বাংলা সাহিত্যে গোবিন্দপুর জায়গাটির পেছনে এমন বিশেষণ বসে সেই স্থানকে অখ্যাতির শিখরে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বহুকাল আগে থেকেই। এমন কী ঠাকুমা, দিদিমার মুখে কোনও জ্ঞাতির বাড়ি নিমন্ত্রণ রক্ষার্থে যাবার অনীহা প্রকাশেও ব্যাঙ্গার্থে এই শব্দবন্ধের প্রয়োগ হতে দেখেছি। বিশেষ করে বিয়ের কনে দেখতে গিয়ে পাত্রপক্ষের যেন পাত্রীপক্ষের সেই পিত্রালয়ের অক্ষাংশ - দ্রাঘিমাংশ কে হেয় না করলেই নয়। অথচ তাঁরা জেনে বুঝেই যাচ্ছেন সেখানে। প্রত্যন্ত শহরতলী বা অচেনা, অনামা কোনও জায়গায় যাবার আগে আমরা আর এখন এসব বলিনা কারণ এখন আমাদের হাতের মুঠোয় গুগল ম্যাপ আছে দিশা দেখানোর জন্য। 

আমাদেরই এই কোলকাতার অন্যতম একটি গ্রাম ছিল এই গঙ্গার ধারের গোবিন্দপুর। এখনকার বউবাজারের আশপাশের অঞ্চলই সেসময়ের গোবিন্দপুর। সেখান থেকে একটা খাল প্রবাহিত ছিল অধুনা ইস্টার্ন মেট্রোপ্লিটান বাইপাসের পাশে ধাপা অবধি। এই খাল ধাপার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে যুক্ত ছিল বিদ্যেধরী নদীর সঙ্গে। আজকের বাইপাসে চিংড়িহাটা অঞ্চলে এই খালটির পাশে ধাড়া (একরকম ট্যাক্স) আদায় করার জন্য জমিদারের পেয়াদা পাহারায় থাকত। সব বাণিজ্য নৌকোকেই এই অঞ্চলের ক্যানাল দিয়ে যাওয়ার সময় এই ট্যাক্স দিত।

এ স্থান ছিল সেসময় বেশ দুর্গম, তাই ক্রমে ধাপধাড়া গোবিন্দপুর হয়ে ওঠে পাণ্ডববর্জিত জায়গা। 

আজ যেখানে উত্তর কলকাতার ক্রিক রো, সেখান দিয়েই বয়ে গেছিল এই খাল। ক্রিক শব্দের অর্থ হল সংকীর্ণ নদী বা খাল। তখন বিদ্যেধরী বড় নদী ছিল। মাতলা নদীতে গিয়ে পড়ত। কালে কালে তা মজে গেছে। বর্তমানের দ্রুত শহরায়নের ফলে এসব রাস্তাঘাট ভরাট হতে হতে আগেকার সেই প্রত্যন্ত জায়গা বাসযোগ্য হয়ে উঠেছে ঠিকই কিন্তু সে যুগে মানুষ সেসব জায়গায় যেতে বেশ ভাবনাচিন্তা করত। আজ হয়ত আমরা তুমুল শহরায়নের সামিল হয়ে জল জঙ্গলের বিপদসংকুল কোলকাতা কে ভুলেছি কিন্তু এই শব্দবন্ধ আজও মনে করায় পুরনো কলকাতা কে। 


কোন মন্তব্য নেই: