জানিনা, আমার ভিতর বাহিরে অন্তর অন্তরে সে আছে অর্থাত গান আর লেখা আছে বলেই জাতিস্মর আমার কাছে একটা কিংবদন্তী বাংলাছবি হয়ে রইল কিনা । আমি এই ছবিকে সঙ্গীতের জাতিস্মরময়তা না জাতিস্মরের সঙ্গীতময়তা বলব ভেবে পাচ্ছিনা তবে কাহিনীকার তথা চিত্রনাট্য ও পরিচালক সৃজিতকে অভিনন্দন ।
আমার মাথা থেকে আপাততঃ উত্তম-তনুজার সেই জলসাঘরের যামিনীময়তা উধাও । অনেকেই হয়ত সমালোচনা করবেন প্রসেনজিত ভার্সেস উত্তমকুমারের, মান্না দে আর শ্রীকান্ত আচার্যের। আমি সে সব বিতর্কে না গিয়েই বলছি দেশ-কাল-পাত্র বদলেছে এবং সৃজিত সফল হয়েছেন । প্রসেনজিত, যীশু সবটুকু দিতে পেরেছেন। আর সর্বোপরি কবীর সুমন ছবির সঙ্গীতের ব্যান্ডমাষ্টার হয়ে প্রমাণ করে দিলেন যে তিনি আরো পারেন । তাঁর জাতিস্মরে এই মেটামরফোসিস সৃজিত ছাড়া সম্ভব হত কি না জানিনা ।
ছবিতে দুএকটা লুপহোল চোখে পড়লেও সৌমিক হালদারের ক্যামেরার কারসাজি নিমেষে আটকে রেখেছে ছবির টানটান চিত্রনাট্যকে । অনবরত বদলেছে বর্তমান রঙীন থেকে সুদূর অতীতের সাদাকালো দৃশ্যপট। সাথে সাথে বদলে গেছে কুশীলবেরা । কিন্তু একটুও বুঝতে দেয়নি সেই ট্রানজিশান। আর সবচেয়ে মনকাড়া হল সেকালে এন্টনিদের কবিগান বা তরজার সাথে এযুগের ব্যান্ডেমোনিয়াম ২০১৪ সমান্তরালভাবে যুগপত ঘটে গেছে দর্শকের চোখের পলক ফেলার অবকাশে । একটুও প্যান্ডেমোনিয়াম নেই । বাংলাব্যান্ডের রকসঙ্গীত থেকে খেউড়-খেমটা, আধুনিক থেকে এন্টনীর আগমনী, লালন থেকে কীর্তন সব উঠে এসেছে সেই অনবদ্য ট্রানজিশানের মধ্যে দিয়ে । একবার একঝলক রবির ঝলক পেলাম "মাঝে মাঝে তব দেখা পাইয়ের" সেটাও নাড়া দিল মনটাকে । সুমনের গলায় সেই ওল্ড ওয়ান ইন নিউ বটলের তলানিটুকুও(যতবার তুমি জননী হয়েছ ততবার আমি পিতা.... ) সবশেষে আস্বাদ করতে গিয়ে দুফোঁটা জল ফেলে চোখ মুছে নিলাম আঁচলে আর একুশে ফেব্রুয়ারীর জন্য মনে মনে প্রণাম জানালাম টিম জাতিস্মরকে । স্মৃতির সরণী বেয়ে কুশল হাজরা পেরুচ্ছিলেন ঢেউ খেলানো সবুজ বাংলা । স্মৃতির মিছিলে হাঁটতে গিয়ে বারবার ঠোক্কর খাচ্ছিলেন বর্তমান ও অতীতের টানাপোড়েনে । তাই ছবির নাম জাতিস্মর সেক্ষেত্রে ফুলমার্ক্স দাবী করে ।
ছবির ট্যাগ লাইন A Musical of Memories দেখেই মনে হয়েছিল এতসব । রূপে ভোলাননি সৃজিতরা, ভালোবাসাতেও নয়। প্যানপানানি প্রেম দিয়েও নয় সত্যিকারের গান দিয়েই দ্বার খুলেছেন । তবে রেডিও জকি মহামায়ার সাথে এন্টনির সৌদামিনী মিলে মিশে এক না হলেও বুঝি মন্দ হতনা ।
আমি বাঙালীর মন কেঁদে উঠেছে বেজাতের এন্টনীর ঘর পুড়েছে তাই । আমি বাঙালী ঘৃণা করেছি মনে মনে সে যুগের বাঙালীদের যাঁরা সেই অনবদ্য কবিয়ালকে ঈর্ষা করেছিলেন । আমি বাঙালী, বাঙালী হয়েও আমার মাতৃভাষার সম্মান করতে পারিনা যা পারে ভিনরাজ্যের রোহিত মেহতা, "গানে ভুবন ভরিয়ে দেব" অনুষ্ঠানের রেডিও জকি মহামায়া আর সর্বোপরি বিজাতীয় এন্টনী ফিরিঙ্গী ওরফে কুশল হাজরারা । প্রতিটি পুঙ্খ-অনুপুঙ্খ ছুঁয়েছে এহেন আমি বাঙালীর মন । আর এক আকাশের নীচে অনেক আলোর মাঝে কালিকাপ্রসাদ, খরাজ, শ্রীকান্ত আচার্য, অনুপম, রূপঙ্কর,আর আমাদের ঘরের সব ছেলেগুলো যেমন চন্দ্রবিন্দুর অনিন্দ্য, লক্ষ্মীছাড়ার গাবু, ক্যাকটাসের সিধু, ফসিলসের রূপম ইসলাম সকলে মিলে বাংলাগানের হালটা যেন আরো শক্ত হাতে ধরে রইলেন ...এ যেন ছবির সাথে বোনাস পাওনা । আর সবার উপরে থেকে গেলেন সেই বংলাগানের কান্ডারী হয়ে কবীর সুমন যিনি একদিন দিশা দেখিয়েছিলেন নবীন প্রজন্মকে। বানভাসি নক্ষত্র সমাবেশের মাঝে গানভাসি ছবিময়তা ।
তাই সবশেষে বলি বাংলা গানের জয়, বাংলাভাষার জয়জয়াকার নিয়ে এভাবেও ছবি করা যায়!
৪টি মন্তব্য:
Tor jaatiswar niye lekha ta pore bhalo laglo.ei movie ta amaro bhishon bhalo lageche .prasenjiter acting Tao Tor prosonsa karar moto chilo ar kabir summoner ganer to kono tulonai nei....bangla sahityer itihiaser kabi gan ke niye ato sundar story,screen play n direction Srijit Mukherjee moto talented loker jonnoi sambhab....hats off to Srijit ...
thanks you Suranjana !tui dekhechhis bole bhalo lagchhe ....
eto sundor kroe likhehco je ki bolbo ar..bolar kichu nei..tabe movie ta anbar janya formash kroe ekhuni pathiey dilam kolkatay. time pele, nischoi amar hate ese pounchabe..ar Jodi ekahneo cinema Hall e dekhay thaole to 16 ana..thank you Indira.
A must see movie !
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন