ওরা পরিত্যক্ত জঞ্জালের মত অথবা নালীর মুখে জড়ো হওয়া দশ মাইক্রন পলিথিনের নোংরা ক্যারিব্যাগের মত । ওদের কেউ চায়না । ওরা বাজারে যায় টলোমলো পায়ে। পোষ্ট অফিসের এম আই এস কাউন্টারে লাইন দিয়ে সুদ তোলে । কখনো টাল খেয়ে যায় মাথা। সোডিয়াম-পটাসিয়াম ব্যালেন্সটা ঠিক হয়না আজকাল । চোখের ছানিটা পেকে যায় ধীরে ধীরে । খবরের কাগজটা পড়তে হয় বাইফোকাল চশমাটাকে এদিক ওদিক সামলিয়ে । কানেও কম শোনে ওরা । রাস্তায় সাইকেল ধাক্কা মেরে দেয় তাই । হর্ণ শুনতে পায়না । জিভের স্বাদটা আছে কিছুটা । তবে দাঁতগুলোর জন্যে নরম খেতে চায় আজকাল । স্মৃতিটুকুনিও তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে । পুরোণো কথা সব মনে আছে, নতুন কথা ভুলে যায় ওরা । সেটাও ওদের দোষ । কখনো বা এদের রোজ রোজ সুগারের ওষুধ খেতে খেতে হাইপো গ্লাইসিমিক শক হয়ে যায় । নিঃসাড়ে চিনির কৌটো হাতড়ে মুখ ভর্তি চিনি খেয়ে এরা বিছানায় শুয়ে পড়ে চুপিচুপি । আবার কিছু পরে স্বাভাবিক হয়ে যায় । কোনোদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে বাঁ পা' টা ফুলে গেছে । মনে ভাবে এই বুঝি লেফট ভেন্ট্রিকুলার ফেলিওর হবে । বাঁচা গেল বাবা মরে যাব । কিন্তু সেদিনটা আর আসেনা । ওরা বারবার এক কথা বলে যায় অনর্গল । স্মৃতির চোরাকুঠরির নুড়িপাথর গুলো নিয়ে খেলতে চায় ওরা । কিন্তু শুনতে চায়না কেউ ওদের কথা । ওদের কথায় বিরক্তি প্রকাশ করে ।
এইভাবে ওরা বেঁচে থাকে দিনের পর দিন এই শহরের অলিগলিতে, উঁচু ফ্ল্যাটের একচিলতে ব্যালকনির আরামকেদারাতে, বিশাল বাড়ির বারান্দায় রোদের ওম নিতে নিতে, কুঁচকে যাওয়া চামড়ার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে ... কেউ স্মৃতির ঘাটতি নিয়ে, কেউ অধরা রাতঘুম নিয়ে কিম্বা কেউ পঙ্গু জীবনখানা নিয়ে ।
এ শহরে শুধু পড়ে রইলাম তুমি, আমি আর সেই জেরিয়াট্রিক মানুষগুলো । আমার বন্ধুত্ত্ব এই মানুষগুলোর সাথেই । ওদের এই বয়সের দোষ-গুণ গুলো আমি মানিয়ে গুনিয়ে নিয়ে চলি কারণ আমারো তো এমন হবে একদিন সেই কথা ভেবে । আমার চিরটাকাল পটে এই বয়স্ক মানুষগুলোর সাথে । আমার ঠাকুমা, দিদা আমার খুব বন্ধু ছিলেন একসময়। তারপর বাবা-মা । আমার পিসি শাশুড়ি, দিদিশাশুড়ি, জেঠি শাশুড়ি, সকলেই ছিলেন আমার অনুরাগী। পিসিশাশুড়ি ছিলেন তীর্থপতি ইনসটিটিউশানের অঙ্কের দিদিমণি । শেষবয়সে পড়ে গিয়ে পা ভেঙে বিছানায় পড়েছিলেন বহুদিন । তিনি ছিলেন অনূঢ়া । মনে খুব দুঃখ ছিল তাঁর । সুখের একখানা ঝাঁ চকচকে সংসারের মুখ দেখতে পাননি বলে । আমি অনেক স্নেহ পেয়েছি এঁদের থেকে । আমার মাসী শাশুড়ি তখনকার দিনে কেমিষ্ট্রিতে এমএসসি পাশ করেছিলেন । আমার খুব পটত ওনার সাথে । এখন তাঁর একিউট ডিমেনশিয়া । আমার জেঠি শাশুড়ির কোনো সন্তান ছিলনা । আমাদের কাছেই থাকতেন চিরকাল । এক একসময় খুব বিরক্তিও আসত। এদের রেগুলার ডাক্তারের চেক আপ, আয়া ইত্যাদির ব্যবস্থা করতে, খাবারদাবার ঠিকমত করে বানিয়ে রাখতে ও ঠিকঠাক খাচ্ছেন কিনা তার তদারকি করতে । কিন্তু যত আমার বয়স বাড়তে লাগল তত বুঝলাম অনেক ভালো এই বৃদ্ধ মানুষ গ্যুলো । এদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। রান্নাবান্নার তাকবাক থেকে ঘর গেরস্থালির টুকটাক। সেই থেকে বয়স্ক মানুষরাই আমার বেশি কাছের । আর যাই হোক । এঁরা স্নেহপ্রবণ । এরা আমার কোনো ক্ষতি করেনা। আমাকে হিংসে করেনা বা আমার ভালো দেখলে এরা আর যাই হোক পরশ্রীকাতরতায় ভোগেনা । তাই এদের সাথে মিশতেই আমার বেশি ভালো লাগে আজকাল । এদের দেখলে আমি দুঃখ পাই কিন্তু এরা আমাকে দুঃখ দেয়না । পুরোণো কথাবার্তার আলপচারিতার মধ্যে দিয়ে আমি অনেক কিছু শিখি এখনো । হয়তো একসময় এরা আমাকে কেউ কেউ আঘাত দিয়েছিল কিন্তু বয়সের ভারে কুব্জ ও স্মৃতির টানাপোড়েনে ন্যুব্জ এই মানুষগুলোর জন্যে আমি মনে মনে খুব ব্যথা পাই । এদের কত দাপট ছিল একসময়! এরা কত সুন্দর করে শাড়ি-গয়না পরতেন্! কিম্বা কেউ নিজে গাড়ি চালিয়ে অফিস যেতেন অথবা পার্টিতে গিয়ে এক আধ পেগ ভদকা বা জিনও খেতেন !
আমরা না হয় ইন্টারনেট বুঝি, ব্লগ লিখি, স্মার্ট ফোন দিয়ে সর্বক্ষণ স্ট্যেটাস আপডেট করি তাই বলে এরা কি ফ্যালনা?
আমার শ্বশুর মশায়ের বন্ধুরা আমার ঘনিষ্ঠ । এমন একজনের নাম মনে পড়ে তিনি হলেন অসীমদেব গোস্বামী ।
অঞ্জুমাসি
, অসীম
মেসো আমাদের
পাড়ার বহুকালের বাসিন্দা।
ওনাদের একমাত্র পুত্র আমার
স্বামীর সাথে একই স্কুলে
পড়াশুনো করার কারণে দুই পরিবারের
মধ্যে একটি হৃদ্যতার সম্পর্ক
আছে। অসীমমেসো বিলেতফেরত
চাটার্ড-একাউন্টেন্ট
ও অবসরপ্রাপ্ত মাল্টিন্যাশানাল
এক্সিকিউটিভ |
একমাত্র
পুত্রকে স্বেচ্ছায় আমেরিকাতে
ডাক্তার হতে পাঠিয়ে পুত্র
বিগলিত প্রাণ মাসি-মেসোর
মনোকষ্টের শেষ নেই |
তাঁরা
বছরে একবার ছেলের কাছে যান
মাসতিনেকের জন্য আর সারাবছরের
রসদ সংগ্রহ করে আনেন স্মৃতির
ক্যানভাসে। এই ভাবেই বেশ
চলছিল। একাকিত্বের বিষন্নতাকে
প্রশ্রয় না দিয়ে ক্লাব,আত্মীয়-বন্ধু,
এই সব নিয়ে
বার্ধক্যের বারাণসিতে সুখেই
ছিলেন তাঁরা। হঠাত চিকিত্সা-বিভ্রাটের
কবলে পড়ে অঞ্জুমাসির একটি
পায়ের সব কটি আঙ্গুল একে একে
বাদ দিতে হল। আমেরিকাতেও
বিশেষ সুরাহা হল না । বিশেষজ্ঞের
পরামর্শে বিশেষ ধরনের সিলিকোন
আস্তরণ দেওয়া জুতো ,
ওয়াকার
এসবের সাহায্যে অঞ্জুমাসি
কালাতিবাহিত করছেন । স্বামীর
সাহচর্য,
আর সহমর্মিতা
তাঁকে কখোনই বুঝতে দেয় না
পুত্রের অভাব ,
ও তাঁর এহেন
বিপর্যয়। অঞ্জুমাসি অনেক
বেশী পরনির্ভর এখন। যখন
ঘরে-ঘরে
ধৈর্য্য-সহ্য,পারষ্পরিক
বোঝাপড়া এসবের মতো তুচ্ছ কারণে
বহু বছর একসাথে ঘর করার পরেও
স্বামী-স্ত্রীর
মধুর সম্পর্ক ভেঙে চুরমার
হয়ে যাচ্ছে ,
ঠিক তখনই
ক্লাবে গিয়ে দেখি অসীমমেসো
একহাতে নিজের জন্যে হুইস্কি
আর অন্যহাতে অঞ্জুমাসির জন্যে
অরেঞ্জ-জুস
নিয়ে ফুড্-
কোর্টে
খাবার,
অর্ডার
করেছেন হাসিমুখে ।
বিজয়াদশমীর প্রণাম করতে গিয়ে
দেখি অসীমমেসো ডাক্তারের
নির্দেশমত অঞ্জুমাসির কাটা
পা'টিতে গরম-ঠাণ্ডাজলের
স্পঞ্জ দিচ্ছেন । তারপরে
মুছিয়ে নিখুঁতভাবে এলোভেরা-ভিটামিন
ই সমৃদ্ধ ক্রিম লাগিয়ে সবশেষে
সেই বিশেষ জুতোটি পরিয়ে তার
ফিতে বেঁধে দিলেন । পঁচাত্তর
বছরের বৃদ্ধের অসহায় ,প্রতিবন্ধী
বৃদ্ধা স্ত্রীর জন্য প্রতি
মূহুর্তে এরূপ সাহায্যের
হাতবাড়িয়ে দেওয়া দেখে মনে হয়
ভালবাসার কি অপূর্ব 'অসীম-অঞ্জলি'
!!
সেই অসীমমেসোর এখন ক্যানসার হয়েছে শুনলাম । দেখা করতে গেলে জড়িয়ে ধরে কাঁদেন । অঞ্জুমাসীর স্মৃতিবিভ্রম হয়েছে । ছেলে কিছুদিন নিয়ে গেছিল কিন্তু আবার দিয়ে গেছে ওঁদের কোলকাতায় । দুজনেই দিন গুনছেন । কিন্তু বিধাতা কানে শুনতে পাননা এদের ডাক ।
উচ্চশিক্ষার জন্য আমরাও মরিয়া হয়ে ছেলেপুলেদের মানুষ করছি । কিন্তু হায়রে পোড়া শহর্! কি রইলো তোর? না হল শিল্প, না হল উন্নয়ন । আবার পিছিয়ে পড়লাম আমরা । মেধাবী ছাত্রগুলো পাড়ি দিল অন্যরাজ্যে, বিদেশে । কোলকাতায় পড়ে রইল শুধু জং ধরা, তামাটে হয়ে যাওয়া রং চটা, চামড়া কুঁচকে যাওয়া সেই বুড়িবুড়িগুলো। তাই তো এই মহানগর আজ জেরিয়াট্রিক এক বৃদ্ধাবাস! আমার শাশুড়িমা একসময় আমাকে খুব একটা যে স্নেহ করতেন তা নয় । আমিও খুব ডিষ্টার্বড দিন কাটিয়েছি সে সময় । কিন্তু এখন উনি আমার খুব ভালো বন্ধু একজন । কোলকাতায় আমার মা এবং শাশুড়ি যে মহিলা সংস্থাগুলির সাথে যুক্ত সেই "জননী সংঘ" , মিলনমেলা" "পাঠচক্র", "শরত্সমিতি"র এমন সদস্যা বহু এমন মাসীমারা আছেন যাদের ছেলে-বৌ, মেয়ে-জামাইরা বিদেশে কিম্বা ভিনরাজ্যে । ওনাদের জন্য ফিল করি । যাঁরা দুজনে আছেন অর্থাত স্বামী-স্ত্রী তাঁরা তবুও একরকম আছেন বেঁচে বর্তে কিন্তু যাঁরা একলা হয়ে গেছেন তাঁদের জন্য বড্ড কষ্ট হয় । কি ভবিষ্যত এই মানুষগুলোর! কেনই বা এদের বেঁচে থাকা ?
প্রতিবার "প্যাপিরাস" ওয়েব ম্যাগাজিনে এদের মধ্যে থেকে কারোকে দিয়ে আমি লিখিয়ে নি তার জীবনের কথা, বেড়ানোর কথা । তারপর ম্যাগাজিন প্রকাশের পর ল্যাপটপ তুলে ধরি তাদের চোখের সামনে । নিজের লেখা প্রকাশের সে কি আনন্দ ! লক্ষ্য করি তাদের চোখেমুখে ।
আমি যাই এঁদের মনোরঞ্জনের জন্য । গান শোনাই কিছু সময় । এবার পূজোয় ওদের কজনকে নিয়ে অনুষ্ঠান করলাম একটা । ওরা কনফিডেন্স পেলেন । আমার ভালো লাগল । ওরাও যে কিছু করতে পারেন এখনো সেই আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে দেওয়া । নয়ত সেই তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের সামিল হওয়া মনুষগুলোর জীবনে তো আর কিছুই নেই। একটু ভালোবাসা চায় এরা। একটু সম্মান চায় । আর চায় একটু ভালো ব্যবহার । আর কিই বা চাওয়ার আছে এদের্? এদের জীবনে না আছে সেক্সলাইফ, না মাল্টিপ্লেক্সে ফূর্তিফার্তা, না কেউ আদর করে এদের ক্যান্ডেললাইট ডিনার খাওয়ায় । কারই বা অত সময় আছে এদের নিয়ে ভাববার? কেই বা শুনবে সেই ঘুণ ধরা শরীরের হাজার একটা সমস্যার কথা ।
সময়ের খেয়া বয়ে এদের পার করে দেয় জীবনের শেষপ্রান্তে । ধুঁকতে থাকে মানুষগুলো। স্মৃতি হাতড়ে মরে তখনো। " কি ক্ষমতা ছিল আমার!, কত বড় চাকরী করেছি আমি! একা হাতে চল্লিশজনের রান্না করেছি একসময়! সাঁতরে গঙ্গায় করেছি এপার-ওপার".. ইত্যাদি ইত্যাদি। সে তো এখন ইতিহাস তার মতে।
উচ্চশিক্ষার জন্য আমরাও মরিয়া হয়ে ছেলেপুলেদের মানুষ করছি । কিন্তু হায়রে পোড়া শহর্! কি রইলো তোর? না হল শিল্প, না হল উন্নয়ন । আবার পিছিয়ে পড়লাম আমরা । মেধাবী ছাত্রগুলো পাড়ি দিল অন্যরাজ্যে, বিদেশে । কোলকাতায় পড়ে রইল শুধু জং ধরা, তামাটে হয়ে যাওয়া রং চটা, চামড়া কুঁচকে যাওয়া সেই বুড়িবুড়িগুলো। তাই তো এই মহানগর আজ জেরিয়াট্রিক এক বৃদ্ধাবাস! আমার শাশুড়িমা একসময় আমাকে খুব একটা যে স্নেহ করতেন তা নয় । আমিও খুব ডিষ্টার্বড দিন কাটিয়েছি সে সময় । কিন্তু এখন উনি আমার খুব ভালো বন্ধু একজন । কোলকাতায় আমার মা এবং শাশুড়ি যে মহিলা সংস্থাগুলির সাথে যুক্ত সেই "জননী সংঘ" , মিলনমেলা" "পাঠচক্র", "শরত্সমিতি"র এমন সদস্যা বহু এমন মাসীমারা আছেন যাদের ছেলে-বৌ, মেয়ে-জামাইরা বিদেশে কিম্বা ভিনরাজ্যে । ওনাদের জন্য ফিল করি । যাঁরা দুজনে আছেন অর্থাত স্বামী-স্ত্রী তাঁরা তবুও একরকম আছেন বেঁচে বর্তে কিন্তু যাঁরা একলা হয়ে গেছেন তাঁদের জন্য বড্ড কষ্ট হয় । কি ভবিষ্যত এই মানুষগুলোর! কেনই বা এদের বেঁচে থাকা ?
প্রতিবার "প্যাপিরাস" ওয়েব ম্যাগাজিনে এদের মধ্যে থেকে কারোকে দিয়ে আমি লিখিয়ে নি তার জীবনের কথা, বেড়ানোর কথা । তারপর ম্যাগাজিন প্রকাশের পর ল্যাপটপ তুলে ধরি তাদের চোখের সামনে । নিজের লেখা প্রকাশের সে কি আনন্দ ! লক্ষ্য করি তাদের চোখেমুখে ।
আমি যাই এঁদের মনোরঞ্জনের জন্য । গান শোনাই কিছু সময় । এবার পূজোয় ওদের কজনকে নিয়ে অনুষ্ঠান করলাম একটা । ওরা কনফিডেন্স পেলেন । আমার ভালো লাগল । ওরাও যে কিছু করতে পারেন এখনো সেই আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে দেওয়া । নয়ত সেই তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের সামিল হওয়া মনুষগুলোর জীবনে তো আর কিছুই নেই। একটু ভালোবাসা চায় এরা। একটু সম্মান চায় । আর চায় একটু ভালো ব্যবহার । আর কিই বা চাওয়ার আছে এদের্? এদের জীবনে না আছে সেক্সলাইফ, না মাল্টিপ্লেক্সে ফূর্তিফার্তা, না কেউ আদর করে এদের ক্যান্ডেললাইট ডিনার খাওয়ায় । কারই বা অত সময় আছে এদের নিয়ে ভাববার? কেই বা শুনবে সেই ঘুণ ধরা শরীরের হাজার একটা সমস্যার কথা ।
সময়ের খেয়া বয়ে এদের পার করে দেয় জীবনের শেষপ্রান্তে । ধুঁকতে থাকে মানুষগুলো। স্মৃতি হাতড়ে মরে তখনো। " কি ক্ষমতা ছিল আমার!, কত বড় চাকরী করেছি আমি! একা হাতে চল্লিশজনের রান্না করেছি একসময়! সাঁতরে গঙ্গায় করেছি এপার-ওপার".. ইত্যাদি ইত্যাদি। সে তো এখন ইতিহাস তার মতে।
মনে মনে ভাবি আমাদের এই কলকাতায় একটা জেরিয়াট্রিক সোশ্যাইটি খুললে কেমন হয় যেখানে এক আকাশের নীচে সবাই বন্ধু হয়ে থাকবে এরা আর এই সোশ্যাইটি দেখভাল করবে এই অতিরিক্ত নাগরিকগুলোর? যাদের কোনো ভবিষ্যত নেই আছে শুধু স্বর্ণালী একটা অতীত!
মনে মনে গেয়ে উঠি "ঝরাপাতা গো, আমি তোমারি দলে" অথবা বলি "শেষের সেদিন কি ভয়ংকর মনে করো" !!!
১১টি মন্তব্য:
খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় নিয়ে বললে ইন্দিরা... ধন্যবাদ। সত্যি,আমরা এখন কেমন যেন (যদিও চিরকালই, তখন যৌথতা ছিল আর এখন কপোত-কপোতী যথা...)।
আমরা বদল সময়ের যুক্তি সাজিয়ে সবে দশে পৌঁছন সন্তানকে যাবতীয় প্রযুক্তি উপুড় করে দিই অথচ বার্ধ্যক্যের ব্যাপারে এই আমরাই অদ্ভুতভাবে নিশ্চুপ। এই নিস্পৃহতা কি আধুনিকতার দান? তাই যদি হয় তবে আমাদের দুর্ভোগ কে ঠেকাবে ইন্দিরা? আমরা তো সন্তানদের রোবট হতে শেখাচ্ছি...তারপর?
তোমার ক'জনকে নিয়ে এই অনুষ্ঠান করা বা গান শোনানো খুব প্রশংসাযোগ্য হলেও, বার্দ্ধ্যক্যের দাবী কিন্তু আরো। আমিও ভীশণভাবে অনুভব করি এটা, কিন্তু কষ্ট কমাবার রাস্তা খুঁজে পাইনা।
আসলে কি জানো, শিশুকে বকে-ধমকে স্নেহ দেওয়া যায়। কিন্তু বৃদ্ধ তো পাকা মাথার, তাঁদের ধমকে-বকে স্নেহদানটাও মুস্কিল হয়ে পড়ে। তাঁদের পাকা মাথা, টনটনে জ্ঞান... কোথাও থেকে এরমধ্যেই তাঁরা অমর্যাদা বা অসম্মান খুঁজে নেন। এ'হেন অবস্থায় পাশ থেকে মানুষ পালায়, এটা আমার দেখা।
সুতরাং আমার মনে হয়- তাদের সেবা নেবার যোগ্য করাটা আগে দরকার। দ্বিতীয় শৈশবকে তাঁরা এ্যাকসেপ্ট করতে পারেন না বলেই হয়তো এ'সব.. তবু প্রয়োজনটা প্রয়োজনই, এ' নিঃসন্দেহ।
আসলে কি জানো মঞ্জুশ্রী?
(১) আমরা হারিয়েছি মূল্যবোধ ।
(২) আমরা এত বেশি স্বার্থপর যে তাদের খারপটুকুনিই দেখি বড় করে, তারা যে ঠিক বলতে পারে বা তারাও একসময় ভব্যিযুক্ত মানুষ ছিলেন সেটা মানতে চায়না আমাদের যৌবনের ইগো।
(৩) আমরা যত না ব্যস্ত তত দেখাই ব্যস্ত যাতে কি না তাদের ছোটখাটো সমস্যাগুলোকে ওভারলুক করা যায় ।
(৪) আমরা ভুলে যাই আমরাও একদিন এই জীবনে উপনীত হব আর ওনরা তখন তারিয়ে তারিয়ে ওপর থেকে আমাদের মজাটা দেখবেন ।
আর সর্বোপরি হল আমরা যেন "কাজের সময় কাজি, কাজ ফুরোলেই পাজি"র মত ব্যবহার করি আর তখনই মনে পড়ে যায় নচিকেতার সেই বিখ্যাত "বৃদ্ধাশ্রম" গানটির শেষ লাইন দুটো । "
সেবা নেবার যোগ্য যাতে হয় সে চেষ্টা অনেকেই করেন শুরু থেকে । আশায় আশায় থাকেন কিন্তু বহুক্ষেত্রেই সমস্যা ঘটে যায় গো ।
অত্যন্ত মর্মস্পর্শী উপস্থাপনা। আমাদের সবারই এই ভবিতব্য। আমিটো এখনি ভাবতে বসি, আমি না থাকলে আমার স্ত্রীর একা কী হবে সেই বুড়ো বয়সে! কিন্তু সমস্যাটি অত্যন্ত জটিল। "জেরিয়াট্রিক সোশ্যাইটি " খুলতেই পারেন। কিহু লোক হয়তো স্বস্তি পাবেন। কিন্তু কেমন হয়, যদি একে আমরা সামগ্রিক সেই দৃষ্টি থেকে দেখি, যে দৃষ্টিতে দেখলে আমাদের যেতে হবে সেই সব দিনে যেদিন একান্নবর্তী পরিবার গুলো ভাঙতে শুরু করেছিল। এখন্তো সেই ছোট পরিবারগুলোও ভাঙতে শুরু করছে, স্বেচ্ছায় নতুবা অনিচ্ছাতে। শুধুই কি বাবা-মাকে? আমরা দূরে ঠেলে দিচ্ছি আমাদের ছেলে মেয়েদেরও দিয়ে ভবিতব্য নিজেদের নিজেরা লিখছি। এবং তার পর আছে বিবাহ বিচ্ছেদ ইত্যাদি ইত্যাদি... কোথাও কি বাজারের সঙ্গে সঙ্গে আমরা ছড়িয়ে যাচ্ছি না? এক বিশাল নিয়ন্তা আমাদের নিয়ন্ত্রণ করছে !
আমার মনে হয়
(১) ফ্যামিলি প্ল্যানিং (২) শৈশব থেকেই শিশুদের রোবট বানানোর দৌড়ে সামিল হওয়া ( ৩) অণু পরিবার এর ফল স্বরূপ আমাদের দেখতে হচ্ছে এসব
কিন্তু প্রকৃত সমাধান কি সুশান্ত???
কি পড়ালে ইন্দিরা ! ৬৮ বছর বয়সে এসে এর কিছু ঘটনার সামনা সামনি হই মাঝে মাঝে । তবু স্বাস্থ্য টা ঈশ্বরের কৃপায় এখনও ঠিক আছে ,পরে কি হবে জানিনা !
----Madhuchhanda Paul
Dwaita Goswami---- khub bhalo likhecho..ekdam sottyi katha ..onara kichuta samay chan shudhu..amaro khub kashto hai..
সমাধানতো বেশ জটিল এবং বিশ্বজোড়া প্রবণতাকে পাল্টাতে হবে। তাই আপাতত, আপনি যা ভাবছেন তাই। একদিন হবে আশা করতে পারি। বাজার অর্থনীতি থেকে বেরুনো ছাড়া আমিতো পথ দেখি না। এই নিয়ে আমারও একটি লেখা ছিল , আপনি পড়েছিলেনঃhttp://sushantakar40.blogspot.in/2011/09/blog-post.html
God knows who will solve this nationwide problem...
Indira tumi khub antorikatar sathe bardhokyer asahayota, akkhamota, sharirik protibandhokatar akta spasta chhobi amader samne tule dhorechho, eta niye bhabar samoy esechhe. Amader phele asa diner akannoborti poribare je ei samosya anek kom chhilo seto bolai bahulyo....adhunik sobhyota jamon achena jagot-ke haater muthoy ene dichhe compuer,internet-er madhyome temni apno jonder thele dichhe durey. Aj manush-ke tariye niye barachchhe swathoparota, atibo uchchasha, nityo-notun bhog-lalosa. Badhyokya-grostho Ma-baba-buro-burider byatha-bedona kamaate ki upay habe jani na, - old home??? Na, akmatro nijer chhele-meye nati-natnirai paare sei asohay akanto apon manush-guloke sadore buke tene nite, tader mukhe hasi photate......
বন্ধু, আমরা শুধুই সেই সব সিনিয়র সিটিজেন দম্পতির কথা আলোচনা করছি যাদের পুত্রকন্যারা বিদেশে থাকেন কিন্তু এ শহরেও অনেক এমন আছেন যাঁদের পুত্রকণ্যারা বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকে শুধু কর্তব্য এড়াতে ।সম্পর্ক ভাঙা সহজ কিন্তু গড়া শক্ত আর টিকিয়ে রাখতে যারা জানে তারা বুদ্ধিমান ।
Neena Ghosh Dastider:
ekei bale jibandarshan, amra ajkal baro beshi swarthapar hoye giyechhi.....bhule jai je ekdin amrao jaragrastho habo......paronirbhar habo......aj jebhabe ei manusguloke amra abohela korchhi....amader santan ra ekdin amadero thik ekibhabe abohela korbe...karon tara toh ei shikkhai pachhe amader kachh theke........
khub sundor likhechhis indira......antar nisrito lekha.....mon chhunye gelo......
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন