কোলকাতা
ছেড়ে আমরা তখন বিটি রোড ধরেছি
। হুগলীর বাঁশবেড়িয়ায় আমার
শ্বশুরমশাইয়ের পিতামহ শ্রী
সত্যচরণ মুখোপাধ্যায়ের তৈরী
বসতভিটে পরিদর্শনে । একে একে
পেরোলাম বালি, উত্তরপাড়া,
কোন্নগর, ভদ্রকালী,
রিষঢ়া, শ্রীরামপুর
পেরোতে পেরোতে জৈষ্ঠ্যের
রোদ তখন প্রায় আলম্ব মাথার
ওপর । তারমধ্যেই শহরতলীর
বাজারে হৈ হৈ করে বিকোচ্ছে
আম-কাঁঠাল-লিচু
। রবিবারের সরগরম বাজারে ঠা
ঠা রোদেও বিকিকিনির খামতি
নেই ।
জিটি
রোড ছেড়ে এবার পুরোণো দিল্লী
রোড ধরে সোজা মগরা হয়ে বাঁশবেড়িয়া
। হংসেশ্বরী রোড ধরে রঘুদেবপুরে
থামা ।
দেড়শো
বছরের পুরোণো মুখুজ্যে
বাস্তুভিটে এখন জঙ্গলাকীর্ণ
। লোকাল ক্লাব, লোকনাথ
বাবার মন্দির গড়ে উঠেছে এই
জমিতেই ।
দোতলাবাড়ি ভেঙে গেছে
বহুদিন আগেই ।জানলা দরজা ভেঙে
ভেঙে নিয়ে গেছে কেউ । কড়িবরগার
ছাদের নীচে একতলায় বাস করছে
তিনটি পরিবার । পাশে দুটো
পুকুরে এখনো জল থৈ থৈ । সংলগ্ন
বাড়ি উঠেছে আমাদের জমির ওপর
দিয়েই । প্রকান্ড বাড়ির সামনে
বারমহল এখনো কিছুটা ভগ্নাবস্থায়
দাঁড়িয়ে । পাশে ছিল উঁচু করা
খানিক জমি যেখানে প্রতিবছর
জগাদ্ধাত্রী পুজো হত ।
এখন পরিত্যক্ত ভিটের কুলুঙ্গিতে চামচিকের আনাগোনা । ক্লান্ত দুপুরে এ ভিটে হয়ে ওঠে নিঃসঙ্গ কুবো-ঘুঘুদের ছায়াসাথী । পোড়া ইঁটের সুরকি নিয়ে রান্নাবাটি জমিয়ে দেয় পাড়ার ছোট ছেলেমেয়েরা । বারমহলের লবি চু-কিত্কিত প্রেমীদের অবারিত দ্বার ।
এরপর যাওয়া হল হংসেশ্বরী মন্দির ।
পুরোণো
হুগলীজেলার শিল্পনগরী ব্যান্ডেল
এবং ত্রিবেণীর মাঝামাঝি
অবস্থিত হংসেশ্বরী মন্দির
। রাজা নৃসিংহদেব রায় এই
মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন এবং
পরবর্তীকালে ওনার বিধবা পত্নী
রাণী শংকরী সেই কাজ সমাপ্ত
করেন । হংসেশ্বরী মন্দিরের
অদ্ভূত গড়ন । বাংলার অন্যান্য
মন্দিরের থেকে ভিন্নরকমের
। পঞ্চতল এই মন্দিরে তেরোটি
উঁচু মিনার আছে যাকে বলে রত্ন
। প্রতিটি মিনার যেন এক একটি
প্রস্ফুটিত পদ্মের আকৃতিতে
তৈরী । হংসেশ্বরী মন্দিরের
গঠনশৈলীকে বলা হয় তান্ত্রিক
সাতচক্রভেদ ।
পাশেই অনন্ত
বাসুদেবের মন্দিরটি ও নজর
কাড়ে । সেটি বাংলার চালাঘরের
আদতে পোড়ামাটির তৈরী ।
গায়ে টেরাকোটার অভিনব স্থাপত্য
।নিঁখুত কারুকার্য এই টেরাকোটার
। কোনোটিতে রাধাকৃষ্ণ,
কোনোটিতে দশাবতার,
কোনোটিতে হনুমান
।
এই দুই মন্দিরই এখন আরকিওলজিকাল
সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার অধীনে
।কাছেই ত্রিবেণী হল তিন নদী
গঙ্গা, সরস্বতী
ও বিদ্যাধরীর সঙ্গমস্থল ।
কিন্তু সরস্বতী নদী মজে যাওয়ায়
দুটি নদী এখন দৃশ্যমান ।
মন্দির
এবং সংলগ্ন জমিদার বাড়ীর পুরো
চৌহর্দির সীমানা বরাবর পরিখা
খনন করে সুরক্ষিত করা রয়েছে
এখনো ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন