৬ সেপ, ২০১০

অর্কুট-আগমনী-পাঁচালী



সোনারতরীর পক্ষ থেকে সকলকে জানাই আগমনী শারদীয়ার অভিনন্দন 
 
 শুভেন্দু দাস
মন উদাসী 
মন চলে যায় দিগন্ত উড়ে..
বহুদূরে, অদ্রিজার হাত ধরে..
কোন ঠিকানায় কোন সে পারে..
অকূল আমি বুঝি নারে..
তবুও চলি, অদ্রিজার পায়ে পায়ে..
 ...
মন উদাসী, হাওয়ায় ভাসি,
এলোমেলো আগুণ 
বর্ষা নেই ভরসা নেই
সুদ চড়ছে দ্বিগুণ 

এলো খরা, মাথা ভরা
ফুটিফাটা চারধার
নেই আকাশে, মুখ ফ্যাকাশে
বন্ধ কাজ-কারবার  

এল আশ্বিন, বুকে নিযে ঋণ
চাষি খুজে ফেরে দেশলাই
হয়নিকো জামা কষ্ট যে জমা
দুর থেকে ডাকে রোশনাই 

মা যে আসেন, (মোদের) ভালোওবাসেন
(তবু) সবখানে কেনো হাসি নেই
এমনো তো হয় আনন্দেতে রয়
সক্কলে মিলে... সব্বাই !         

সুশান্ত কর
 শিশির ভেজা শিউলি তলে
রোদের লুটোপুটি;
পুজো মানেই ভিড়ের ট্রেনে
জানালা তোলা ছুটি

পুজো মানেই ঘরের টানে
বাঁধন যত ছেঁড়া;
কাশের বনে পথ হারিয়ে
ছেলে বেলায় ফেরা।

পুজো মানেই সে কবেকার
প্রেমতলার মোড়;
তনুদীপুর সাথে সেবার
মিশন রোডে ভোর

ছোট বৌদি চায়ের কাপে
কত দিনের পর;
পুজো মানেই, কোথায় থাকে
তরুণিমার বর?

এবং তারপর...

বিসর্জনে ঢাকের কাঠি
বেলুন সাদা লালে;
স্টেশন জুড়ে ধোঁয়া এবং
টোল পড়ে না গালে। 
 
 সঙ্ঘমিত্রা নাথ
এই শরতে
বৃষ্টিশেষে নীল আকাশে,
আলো হাসে শরত কাশে

শিশিরভেজা শিউলিবোঁটা,
প্রভাতবেলা উদ্ভাসিতা

এই শরতে প্রাণের মেলায়,
ভাসব আমার গানের ভেলায়

ছেলেবেলার ফুল কুড়োনোর দিন,
দুর্গাপুজোর আনন্দে রঙীন

শরত তোমার পুজোর গন্ধে,
ফিরে যাই কৈশোর আনন্দে
  
ইন্দিরা মুখার্জি
আমি বৃষ্টিভেজা বিকেল হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম জেনো,

তুমি শিশির ভেজা পায়ে এসে আমার শব্দ শোনো,

আমি আগমনীর সুর তুলেছি শরত্‌ আলোর প্রাতে,

তুমি সেই সুরে যে সুর মেলালে আমার সাথে সাথে।

আমি অস্তরাগের রাগ-রাগিনী তোমার কান্না হাসি,

তুমিই আমার ইমন-বেহাগ তোমার কাছে আসি,

আমি তোমার দুখে দুখী, সুখের নতুন পাখী,

তুমিই আমার সুখের দোসর দুখ ভোলাতে ডাকি।

আমি অবাক হয়ে ভাবছি বসে আসছো তুমি রাণী,

তুমি সাজো নিজে, সাজাও আমায় ওগো আগমনী
বর্ণালী কর
শরত আলোর সকালবেলা শিউলিফুলের সুবাস ঢালা
কমলা সাদা রঙের মেলা শুরু হল তবে নেটের খেলা
দারুন ভালো লাগছে এমন কবিতাতে খেলা
যদি এমন করেই কেটে যেত আমার সকল বেলা
সুর বসিয়ে এ সব কথায় হতেই পারে গান
দরাজ গলায় গাইতে হবে জুড়ায় যেন প্রাণ
কল্যাণ মিত্র
কোন এক বিরহিণীর প্রতি শিউলি যখন হাসে
তখন তোমার চোখেতে জল আসে।
শিউলি মানেই তোমার বুকে জমাটবাঁধা ব্যথা -
সোনার আলো হারিয়ে যাওয়ার কথা।
শিউলি তোমায় নিজের সাথে সে-সব কথা বলায়,
চুপিসাড়ে তাই কি আসো শিউলিগাছের তলায় ?
...
পূজো এলে ছেলেদের যায়-যায় জান ,
সবুর সয় না বউ শাড়িগত প্রাণ ।
শাড়িতেই শেষ নয় হাত ধরে টানে –
শাড়ির ম্যাচিং জামা আছে কোনখানে ?
দিন কতো বদলায় চোখ মেলে চাই,
শাড়ি-গয়নার খিদে একই আছে ভাই !
কবিতা-কবিতা খেলা দেখ বেশ চলছে।
সবাই সবার কথা সবাইকে বলছে।
চলুক না এই খেলা এতো নয় মন্দ,
সব কবিতায় আছে পূজো-পূজো গন্ধ।
শরতের ওই হাসি চারধারে ঝরছে-
মিল-মিল এই খেলা ঝিলমিল করছে ।
...
পূজো ভীরু পায়ে আসছে।
হঠাৎ-হঠাৎ বৃষ্টিতে নেয়ে
পথঘাট সব ভাসছে।
এবার পূজোর থিম কি তাহলে
দেরি করে আসা বর্ষা ?
কলকাতা হলে জল কলকল
সব আনন্দ ফরসা !
কি খেল্ দেখাবে আকাশ এবারে ?
আঁটছে কি যে সে ফন্দি !
একগলা জলে একাকী প্রতিমা ?
দর্শক ঘরবন্দী ?
জলতরঙ্গে পূজো মাটি হলে
করার নেই তো কিছুর-ই!
শরৎকালের বর্ষা জমাতে
ঘরে-ঘরে হবে খিচুড়ি
অঝোর বারি নামছে
তাই অতএবমেজাজ গরম
কাব্যটাব্য থামছে!!
জলের ভেতর পা ডুবিয়ে
কেনাকাটায় কাঁটা
বলছে সবাই বৃষ্টিকে
তোর মুখে মারবো ঝাঁটা
কে কে রাজি ?ধরতে বাজি?
দেখবো কেমন দূরদৃষ্টি !
পূজোর দিনে রোদ থাকবে?
না কি ঝরবে ভারী বৃষ্টি?
দারুণ মজায় দিনগুলো সব
ফুচকা-রোলে লাগবে মিঠে?
না কি শাড়ি চুড়িদারে
উঠবে পথের কাদার ছিটে?
ফেলে আসা দিন হয়তো রঙিন
পথ যে অনেক বাকি,
ভ’রে মনপ্রাণ গাই তাই গান
এসো একসাথে থাকি।

আমরা এখানে স্বজন সবাই
একসুরে বাঁধা তার,
দূরে রাখি সব হতাশা-বিষাদ
মানি নাকো তাই হার,
হাতে ধরে হাত আমরা চলেছি
একপালকের পাখি।
 পূর্ণেন্দু চক্রবর্তী
শিউলিফুলের গন্ধ মানেই বাজলো পূজোর ঘন্টা
কাশ দুলিয়ে শরৎ এলো ভিজিয়ে দিলো মনটা
নড়বড়ে দাঁত কোমর ব্যাথা বুকের মধ্যে চিন চিন
পূজোর মধ্যে সেই ছেলেটা নাচবে তবু চারদিন ।।
মাগো এবার সামলে এসো , আবহাওয়াটা নয়কো ভালো
বর্ষাকালে খটখটে রোদ , শরৎকালে আকাশ কালো
জিনিপত্র বেজায় আগুন , এবার মাগো কি ভোগ নিবি
হাত পেতেছি তোর দুয়ারে , দু চার মুঠো ভাত তো দিবি ।।
ভয় নেই ভয় নেই বৃষ্টিতে ভাসবে
মেঘ জল থৈ থৈ তাই নিয়ে আসবে
ঢাক ঢ্যাম কুর কুর ঢং ঢং বাদ্যি
ধেই ধেই বাদ দেয় নেই কারো সাদ্ধি
আইস্ক্রিমের সাথে ফুচকাও জমবে
প্যান্ডেলে রোশনাই কলকাতা বোম্বে
ঝির ঝির ঝর ঝর ঝরছে তো ঝরছেই
এইবার রোদ্দূর মন মন করছে ।
...
সবাই বলে চিনি চিনি ক'জন পারে চিনতে
মুক্তো মানিক ছড়িয়ে আছে ক'জন পারে কিনতে ?
সবার মাঝে ঘুরে বেড়ায় তবু সবার নজর এড়ায়
"মুখের গড়ন দুর্গা যেন শিউলিছোপা শাড়ি
ও মেয়ে তুই কোথায় থাকিস কোনখানে তোর বাড়ি"
মধুমিতা ভট্টাচার্য
কাশ বনে হাওয়া খেলা দেখেছি সে কবে ...
মনে নেই আজ আর সেরকম ভাবে!
এখন সে খোলা মাঠে, নদির কিনারে
কাশ নয়, শুধু যে আকাশ চুম্বি খেলা করে ;
তবু করি করজোরে মায়ের বোধন
শিউলি গন্ধ ঢেলে পূজা আয়োজন
সোনালী শর্ত এল আবার জীবনে
দিব্য সুরের রেশ আগমনী গানে....
বাতাসে আজ শিউলি ফুলের গন্ধ
আকাশ জুড়ে শর্ত মেঘের আলো.
মা আসবেন, সেজেছে তাই ধরা
বাজাও শঙ্খ, লক্ষ প্রদীপ জ্বালো.
উঠোনে শিউলি পুকুরে পদ্ম কলি
কাশ বনে আজ হালকা বাতাস ছোটে
হৃদয়ে পুজোর আগমনী সুর বাজে
ভোরের আকাশে সোনালী সূর্য্য ওঠে
মহাশ্বেতা রায়
ওষ জড়ানো শরত ভোরে জানলা আধেক বন্ধ
বাগান থেকে ডাক দিয়ে যায় ভোরের শিউলি গন্ধ,
বড় হয়ে বদলাতে হয় চেনা জীবন ছন্দ
কিছু জানলা খোলা, আর কিছু জানলা বন্ধ।
মনের দরজা হয়ত খোলা, হয়ত আধা বন্ধ
ছোট্টবেলা ফিরিয়ে আনে সাঁঝের শিউলি গন্ধ।

অধরা মাধুরী
ও মেয়ে তুই থাকিস কোথায়, কোনখানে তোর বাড়ি?
মুখের গড়ন দূর্গা যেন শিউলিছোপা শাড়ি।
ও মেয়ে তোর এই অবেলায় চোখে কিসের জল
কাশের বনে নদীর কাঁপন করিস নে আর ছল।
ও মেয়ে তোর বুক গুড়গুড় মেঘলা আকাশ ডাকে
আয় তো দেখি বোস এখানে পদ্মবনের পাঁকে।

সিক্তা দাস
কৈ কৈ শরত কৈ মেঘজল সব থৈ থৈ
 ইন্দিরা মুখার্জি
দেখেছিস মা তুই কখনো মহালয়ার ভোর ?
সেই আদ্যিকালের বাদ্যিবাজা  শিউলিফুলের ঘোর! 
শিউলিছোপা দশহাতি তোর কমলা রঙের শাড়ি!
মা তোর কাশের ঝালর ঢাকের গায়ে পেঁজাতুলোর বাড়ি !
দেখেছিস মা তুই কখনো মহালয়ার ভোর ?    
সেই মাঝরাতের ঐ আগমনী-ভৈরবীর ঐ দোর !
শিশিরফোঁটায় দুব্বোঘাসে সবুজ কথা তোর 
খালিপায়ে একরত্তি মেয়ের  কত জোর ?
দেখেছিস মা তুই কখনো মহালয়ার ভোর ?

৬টি মন্তব্য:

Atlanta MasterCrafters Toastmasters Club বলেছেন...

Dhanyobad. Khub bhalo laglo.

Sharod shubbheccha.

সুশান্ত কর বলেছেন...

আমারতো আসতে একটু দেরি হয়ে গেল। তাই আর ভিড়ের চোখে পড়ছি না। চুপ করে এই পাশে দাঁড়িয়ে পড়িঃ

শিশির ভেজা শিউলি তলে
রোদের লুটোপুটি;
পুজো মানেই ভিড়ের ট্রেনে
জানালা তোলা ছুটি

পুজো মানেই ঘরের টানে
বাঁধন যত ছেঁড়া;
কাশের বনে পথ হারিয়ে
ছেলে বেলায় ফেরা।

পুজো মানেই সে কবেকার
প্রেমতলার মোড়;
তনুদীপুর সাথে সেবার
মিশন রোডে ভোর

ছোট বৌদি চায়ের কাপে
কত দিনের পর;
পুজো মানেই, কোথায় থাকে
তরুণিমার বর?

এবং তারপর...

বিসর্জনে ঢাকের কাঠি
বেলুন সাদা লালে;
স্টেশন জুড়ে ধোঁয়া এবং
টোল পড়ে না গালে।

Susmita Biswas বলেছেন...

sab kota kobita darun laglo. sabbaike dhanyabad.

সুশান্ত কর বলেছেন...

ওমা! কী বিপদ! এক্কেবারে ভিড়ের মাঝে? এ কিন্তু 'পার্সেলিটি' হয়ে গেল।

Indira Mukhopadhyay বলেছেন...

aamaara khub bhalo laglo "sonartoree" anek monimanikyo , heere-jahorat niye shighroi paree debe....ekhono kichhu jaiga achhe.....na hoi Sosthir din ek tu bela korei chharbe nouka khani!!!

Unknown বলেছেন...

সব কটাই ভালো .তবে আমার সেরা দুটো কবিতা হল শুভেন্দু দাস,অধরা মাধুরী