মহাভারতের ইতিহাস, পুরাণের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে ও ভারতীয় জ্যোর্তিবিজ্ঞানের সজ্গে তথ্যগুলিকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করলে দেখা যায় যে মহাভারতের যুদ্ধ হয়েছিল খৃষ্টপূর্ব ৩০৬৭ তে। এই সালটি তাত্পর্য পূর্ণ ও ভারতের ইতিহাসের কালঘন্ট নিরূপণে এর গুরুত্ব অনস্বীকার্য । মহাভারতের যুদ্ধের দিন স্থির করার প্রথম ধাপ হল পুরুষোত্তম শ্রীকৃষ্ণের জন্ম তারিখ নির্নয় করা। ভারতীয় জ্যোতিষশাস্ত্র অনুযায়ী, ভাদ্রপদ মাসের কৃষ্ণাষ্টমীর পুণ্যলগ্নে যখন সোমশুভ্র চন্দ্র, রোহিণী নক্ষত্রে পদার্পণ করেছে, সময় তখন মধ্যযাম, প্রকৃতি তখন ভরাভাদ্রের অনাবিল আনন্দে রোরুদ্যমানা; মহামানবের আগমনবার্তা ঘোষণার তাগিদে অবিরাম বর্ষণ করে চলেছে আনন্দাশ্রু | তখনই জন্ম নিলেন শ্রীকৃষ্ণ যার বৃষরাশিস্থ লগ্নে চন্দ্র ছিল বিরাজমান। জন্মের পূর্ব মূহুর্তে অন্যান্য গ্রহগুলির মধ্যে পাঁচটি তাদের তেজোদৃপ্ত রূপ প্রদর্শন পূর্বক তুঙ্গস্থানগুলিতে এবং বাকী দুটি যেন নিজেদের মহিমা দীপ্তি অবগুন্ঠন করে স্ব স্ব ক্ষেত্রে আশ্রয় নিল। কেউ একটু শীঘ্র, কেউ একটু বিলম্ব করল তাদের আবর্তনের গতি। এর ফলস্বরূপ মহামানবের সম্মিলিত গ্রহ-নক্ষত্রের জন্মকালীন অবস্থান অর্থাত সম্পূর্ণ ছকটি হল এক ও অদ্বিতীয়। লগ্ন এবং চন্দ্র ৫২ ডিঃ ১৫মিঃ রোহিণী নক্ষত্রে বৃষ রাশিতে । দেবগুরু বৃহস্পতি ৯১ডিঃ১৬মিঃ পুনর্বসু নক্ষত্রে, কর্কট রাশিতে । মহাদ্যুতি সম্পন্ন নক্ষত্ররাজ ভাস্কর ১৪৮ডিঃ১৫মিঃ উত্তরফাল্গুনী নক্ষত্রে সিংহ রাশিতে । শশীসুত, বালখিল্য, সৌম্যমূর্ত্তি বুধ ১৭২ডিঃ৩৩মিঃ কন্যা রাশির হস্তা নক্ষত্রে। ভৃগুর পুত্র, সর্বশাস্ত্রজ্ঞ, দৈত্যগুরু শুক্র ১৮০ডিঃ১৫মিঃ তুলা রাশিস্থ চিত্রা নক্ষত্রে । রবির ঔরসজাত, ছায়ার গর্ভসম্ভূত, গ্রহরাজ শনি ২০৯ডিঃ৫৭মিঃ তুলা রাশিস্থ বিশাখা নক্ষত্রে। ধরণীর গর্ভসম্ভূত কুমারমঙ্গল ২৭০ডিঃ০১মিঃ মকর রাশিস্থ উত্তরাষাঢ়া নক্ষত্রে। রাহু মেষরাশিতে ১৬ডিঃ০১মিঃ ভরণী নক্ষত্রে এবং কেতু তুলা রাশিতে। শ্রীকৃষ্ণের জন্মসময় হল রাত ১১টা ৪০মি, শুক্রবার , ইংরাজি ২৭ জুলাই খৃষ্টপূর্ব ৩১১২ তে।[*]
মহাভারতের কাহিনীর আদিপর্বের শেষে আমরা কৃষ্ণের দেখা পাই দ্রৌপদীর স্বয়ংবরার বিশেষ শুভক্ষণেইতিমধ্যে কৃষ্ণ কংস নিধন করেছেন, যাদবরা কংসের শ্বশ্রুপিতা প্রবল পরাক্রমশালী জরাসন্ধের শত্রু হয়ে উঠেছে। যমুনার তীর থেকে বিতাড়িত যাদবরা, সমুদ্রতটে দ্বারকানগরীতে রাজ্য স্থাপন করেছে। যেখানে স্বয়ং দ্বারকাধীশ শ্রীকৃষ্ণ রাজত্ব করছেন। দ্রৌপদীর স্বয়ংবর সভায় ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বড় বড় রাজা রাজড়া উপস্থিত হয়েছেন। হাজির হয়েছেন দ্বারকারাজ শ্রীকৃষ্ণ এবং তাঁর দাদা বলরাম---- দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্বন্ধে অবগত হওয়ার তাগিদে। এদিকে সেখানে উপস্থিত হয়েছেন ব্রাহ্মণবেশী পঞ্চ পাণ্ডব। যদিও আত্মীয়তার সূত্রে কৃষ্ণ আবদ্ধ এদের সাথে,তবুও দরিদ্র ব্রাহ্মণের বেশভূষা দেখে এদের প্রথমে চিনতে পারেন নি তিনি। এবার তদানীন্তন ভারতবর্ষের সর্বশ্রেষ্ঠ বীর অর্জুনের শর নিক্ষেপের সাফল্যে উদ্বেলিত কৃষ্ণ পাণ্ডবদের পরিচিতি বুঝতে পারলেন। ঠিক এমনটি ই যেন চেয়েছিলেন তিনি। প্রাণাধিক পার্থ'র জন্য কৃষ্ণা দ্রৌপদী ই তো নির্ধারিত হয়ে রয়েছে। কিন্তু দ্রৌপদীর এত বিশাল সৌভাগ্য! না, পর্ণকুটিরে ফিরে এসে মাতৃ আজ্ঞাবহ পঞ্চপাণ্ডব একটি ফলের ন্যায় ভাগ করে নিলেন অর্জুনের পরম আকাঙ্খিত ,প্রিয়তমা নবোঢ়া কে। দ্বারকাধীশ, পিতৃস্বসা পৃথা কে শুভকামনা জানিয়ে পুনরায় ফিরে এসেছেন দ্বারকায়। শুধুমাত্র ক্ষণেকের উপস্থিতি, শুধু একটুকু ছোঁয়া দিয়ে দ্রুপদের রাজসভায় ক্ষণিকের অতিথি শ্রীকৃষ্ণ, সামান্য কৃপার দ্বারা বদলে দিলেন পাঁচ দরিদ্র ব্রাহ্মণভ্রাতার জীবন। পাঞ্চালী কে লাভ করে তাঁরা জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ করলেন। নির্মাণ হল ইন্দ্রপ্রস্থের রাজনগরী, রাজন্যবর্গের মধ্যে পঞ্চপাণ্ডব ,তাঁদের বীরত্ব, সততা, সাহস, সুকর্মের দ্বারা এবং সর্বোপরি রাজসূয় যজ্ঞের মাধ্যমে বিপুল খ্যাতি অর্জন করলেন। শ্রীকৃষ্ণ তাঁদের জোগালেন শুভবুদ্ধি,চালনা করলেন শুভপথে। কিন্তু পাণ্ডবদের প্রতি কৌরবপক্ষের আমরণ অসূয়া এবং শ্রীকৃষ্ণের পাণ্ডবদের জন্য সদা ব্যাকুলিত হৃদয়, কৌরবদের ঈর্ষাকে উত্তরোত্তর বাড়িয়ে দিয়েছিল। যার ফলস্বরূপ ভারতবর্ষের ইতিহাসে রচনা হয়ে গেল ভয়াবহ সেই ঘটনাবহুল যুদ্ধ, কুরুক্ষেত্রের প্রাঙ্গণে দীর্ঘ আঠারো দিন ব্যাপী বয়ে চলল শোণিতের স্রোত, আর শ্যেন-শকুনের সোরগোলে সরগরম রণক্ষেত্রে কেবল পড়ে রইল শৃগালের অট্টহাসি, স্বামীহারানো নারীদের ক্রন্দন, আর পুত্রহারা ময়েদের বিলাপবহুল আর্তনাদ। শ্রীকৃষ্ণ প্রথমে দূত রূপে অবতীর্ণ হয়ে পাণ্ডব ও কৌরবদের শুভবুদ্ধি উজ্জীবিত করে এই ভীষণ যুদ্ধকে এড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু উভয়পক্ষের সমঝোতা হ্'ল না। অবশ্যম্ভাবী যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছিল। কারণ সর্বশাস্ত্রজ্ঞ , ভবিষ্যতদ্রষ্টা কৃষ্ণ বুঝেছিলেন যে যুদ্ধ বিনা গতি নেই। তাই কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের অনুঘটক রূপে কাজ করে ছিলেন তিনি। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে সকলের উদ্দেশ্যে প্রক্ষিপ্ত "মা ফলেষু কদাচন" --এই বাণীর সত্যতা ব্যর্থ হয়ে যাবে । সেখানেই তাঁর সার্থকতা একজন কূটনৈতিক রাজনীতিবিদ হিসাবে।
কিন্তু কি লাভ হ'ল? যুদ্ধের পরিনামে শ্মশানের শ'য়ে শ'য়ে জ্বলন্ত চিতার লেলিহান শিখায় পুড়ে ভস্মীভূত হ'ল অধোগতি মানুষের কলঙ্কিত,পঙ্কিল,পরশ্রীকাতরতা,ঈর্ষাপরায়ণতা, কলহপ্রবণতা, নীচতা,মূর্খতা আর যা কিছু ঘৃণ্য সবকিছু। শাস্ত্রকারের ভাষায়, ধর্মগ্লানি হলে অধর্মকে বিনাশ করার জন্য,ধর্মকে পুনরায় স্থাপন করার উদ্দেশ্যে ভগবান, অবতারের রূপ ধরে এই পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়ে থাকেন | অবতার ভগবানের একটি অংশ মাত্র। বিশেষ বিশেষ যুগে বিশেষ বিশেষ ধর্মগ্লানি হয়। তাই যুগের প্রয়োজনে ,ভিন্ন ভিন্ন রূপে তিনি অবতীর্ণ হ'ন এবং তাঁর বিচিত্র রূপ ও শক্তির প্রকাশ ঘটানোর উদ্দেশ্যে।
মহাভারতের রচয়িতা বিশালবুদ্ধি ব্যাসদেব কিন্তু শ্রীকৃষ্ণকে কেবলমাত্র অবতার বলে অভিহিত করেন নি। শৌর্য,বীর্য,ত্যাগ,প্রেম,অনাসক্তি এবং অন্যান্য দিব্যগুণে বিভূষিত কৃষ্ণকে 'কৃষ্ণস্তু ভগবান স্বয়ং' [#] বলে চিহ্নিত করেছেন।
সাধারণ মানুষের কৃষ্ণচরিত্র সম্বন্ধে যে ধারণা আছে অর্থাত গোপিনীদের প্রেমিক কৃষ্ণ ,বংশীধারী,রাখালবালক রূপী কৃষ্ণ --এ সবের চেয়ে কৃষ্ণচরিত্র অনেকটাই ঊর্ধে। সকল অবতারত্বের সারটুকু দিয়ে তৈরী তিনি, বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ সার্বজনীন নেতা। জগতের মঙ্গলের জন্য নিবেদিত প্রাণ তাঁর। যাঁর জন্য ধৃতরাষ্ট্রের পরামর্শদাতা সঞ্জয় উজাড় করে দিয়েছিলেন একরাশ স্তবকুসুমাঞ্জলি। যার অনুরণনে ধৃতরাষ্ট্রের সভাগৃহ একদিন হয়ে উঠেছিল কৃষ্ণ-স্তবস্তুতির এক মন্দির।
তিনি জগতের শ্রেষ্ঠ বলে 'বসু'ও দেবের ও কারণ বলে 'দেব' অর্থাত বাসুদেব, তিনি বিশ্বের বিস্তার বলে বিষ্ণু, মায়াকে দূর করেন বলে মাধব, মধু নামক দৈত্যের হন্তারক বলে মধুসূদন, 'কৃষ্' মানে সত্তা আর 'ণ্' এর অর্থ হল আনন্দ-- এই দুয়ের সমারহে তিনি কৃষ্ণ । শ্বেতপদ্মের ন্যায় আঁখি বিশিষ্ট বলে তিনি হলেন পুণ্ডরীকাক্ষ, 'জন' নামক অসুরের দমনকর্তা বলে জনার্দন, সত্ত্বগুণ থেকে বিচ্যুত নয় বলে সাত্ত্বত। আবার যশোদা কর্ত্তৃক দাম অর্থাত রজ্জু দ্বারা উদরে আবদ্ধ হয়েছিলেন বলে তিনি দামোদর, নরগণের মুক্তির স্থান বলে নারায়ণ, পুরুষের শ্রেষ্ঠ বলে পুরুষোত্তম | তিনি ই সব বলে সর্ব,সত্যে প্রতিষ্ঠিত বলে 'সত্য' ।
যাঁর সহস্র কিরণের ছটায় একদা আলোকিত হয়েছিল সনাতন ভারতভূমি। যিনি ধর্মরাজ্য স্থাপনের বাণী প্রচার করেছিলেন সমগ্র ভারতবাসীর উদ্দেশ্যে। তাঁর পাঞ্চজন্যের বজ্রনিনাদে অনুরণিত কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধপ্রান্তর চতুর্দিকে অধর্মের বিনাশ আর ধর্মের উত্থানের কম্পন অনুভব করলেও তা ছিল সাময়িক। নতুন ধর্ম রাজ্যের নবজাগরিত মনুষ্যগণের রাজা হলেন জ্যেষ্ঠ পান্ডব যুধিষ্ঠির ,যিনি আজন্মকাল ধর্মরাজ্য স্থাপনের স্বপ্ন দেখেছিলেন , কিন্তু সত্যি ই কি ধর্মরাজ্য স্থাপিত হয়েছিল ভারতবর্ষে? যা হয়েছিল তা হল নিতান্ত ই এক শূন্যতায় পূর্ণ অলীক কল্পনামাত্র। যার নেপথ্যের নায়ক ছিলেন শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং | যুদ্ধের পরে পড়ে রইল কিছু ক্ষমতাহীন প্রতিবন্ধী মানুষ, কিছু ক্ষমতাশীল, ছদ্ম গাম্ভীর্যপূর্ণ মানুষ আর কিছু নপুংসক,মেরুদণ্ডহীন পুরুষ যারা রাজনীতির ভন্ডামিকে পাথেয় করে ,'মাত্সন্যায়' এর নীতিকে আঁকড়ে ধরে বুজরুকির ভেলকি দেখিয়ে সমগ্র জাতির কান্ডারী হল। ফলে সামাজিক অবক্ষয় হতে শুরু হল, মানুষ আরো অন্ধকারের পঙ্কে নিমজ্জিত হয়ে বেঁচে রইল। এইখানেই কলিযুগের সূচনা । এক মূহুর্ত কালবিলম্ব না করে কলিযুগ নির্দিষ্ট সময়েই হাজির হল। ভগবান কৃষ্ণও স্বয়ং পারলেন না সেই কালচক্রের অমোঘ গতিকে রুদ্ধ করতে। এখানেই তাঁর মতো রাজনৈতিক অবতারের ব্যার্থতা। কিন্তু তা সত্ত্বেও এখনো আমরা তাঁকে স্মরণ করি কেন? কারণ পৃথিবীতে কেউ কেউ সেই অলৌকিক শক্তি র অধিকারী হয়ে মাঝে মাঝে এসে ধরাধামে অবতীর্ণ হ'ন, সাধুদের পরিত্রাণ আর দুষ্কৃতদের বিনাশ ঘটিয়ে সাধারণ মানুষের ত্রাণকর্তা রূপে।
বাস্তবিক জীবনে আমরা শুনেছি দুটি বিশ্ব যুদ্ধের কথা,দেখেছি তার ফল, এখন তৃতীয়টির অপেক্ষায় দিন গুনছি। কিন্তু একদা অন্ধকারের মধ্যে আলো দেখিয়েছিলেন যিনি সেই প্রবাদপুরুষ পার্থসারথির বাণী কে পাথেয় করে এখনো আমরা সহস্র প্রতিকূলতার মধ্যে লড়াই করে এগিয়ে চলেছি । কারণ কর্ম ই জীবন।। ফলের আশা করবো না, সর্বতোভাবে আত্মনিয়োগ করবো কর্মযজ্ঞে। শ্রীমদ্ভাগবত্গীতার শাশ্বতবাণী কে মাথায় করে ,"আপন বুকের পাঁজর জ্বালিয়ে নিয়ে একলা চল রে"-এই মন্ত্রে দুর্গমগিরি,দুস্তর মরুপ্রান্তর লঙ্ঘন করবো।
(*) “The Date of the Mahabharata War”, K Srinivas Raghavan, 1969, Srinivas Gandhi Nilayam, Srigam Press, Madras 18. Available at Adyar Library Chennai.
[#] উদ্যোগপর্ব (৬৬/৪৭)
৬টি মন্তব্য:
very good analysis.
সুন্দর লিখেছেন। তথ্যবহুল লেখা। ভাল লাগল। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
Thanks for your lovely comment.
I have visited all your blogs.I liked it very much.You are a very good writer, very talented person.I appreciate for your beautiful post.
Apnar blog e eshe khub bhalo laglo. Amar blog e ashar jonno nemontonno korlam.
লেখাটা আমি আগে দেখেছি। পুরোনো পোস্ট বলে আর মন্তব্য করিনি তখন। একে কি আবার সামনে নিয়ে এসছেন? এখন অক্টোবরের তারিখ দেখাচ্ছে।
যাই হোক, প্রথমেতো এ লেখার জন্যে আপনার পুরস্কার প্রাপ্তীর জন্যে দেরীতে হলেও অভিনন্দন জানাচ্ছি। আপনি ভালো গদ্য লেখেন, এ লেখাও তার ব্যতিক্রম নয়। তার উপর এতে চিন্তা ও যুক্তির ছাপ আছে।
আমি অবিশ্বাসী লোক, কিন্তু কৃষ্ণের প্রতি আমার দীর্ঘদিনের এক দুর্বলতা আছে। মহাভারতকারই হোন আর পরবর্তী লিপিকারেরা, এই এক দুর্দান্ত চরিত্র তৈরি করেছিলেন , নিঃসন্দেহে। অবিশ্বাসী হয়েও কেন এই দুর্বলতা সে নিয়ে এক ছোট্ট ব্যাখ্যা দূর্গাপুজো নিয়ে এক ছোট্ট সাম্প্রতিক পোস্টে আমার ব্লগে আছে।
আপনি এ নিয়ে পরে আরো লিখুন, এই পরামর্শ রইল। বিশেষ করে বঙ্কিমের 'কৃষ্ণচরিত্রে' সমালোচনা করতে গিয়ে একটা কারণে রবীন্দ্রনাথ খুব চটেছিলেন। আর তা এই যে বঙ্কিম এক জায়গাতে শুধু বলেছিলেন, কৃষ্ণ অবতার পুরুষ সেটি তিনি বিশ্বাস করেন। রবীন্দ্রনাথের কাছে মনে হয়েছিল এটা নিতান্তই বিশ্বাসের কথা, যুক্তির নয়। কৃষ্ণের প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধা নিয়েও রবীন্দ্রনাথও কিন্তু আমার মতো তাঁর ঐতিহাসিকতাতে বিশ্বাস করতেন না।
দ্বিতীয়তঃ কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের অর্জনের কথা কিছু লিখলে ভালো হতো। আমি যতোটুকু জানি, মহাভারত প্রাচীন প্রাক-সামন্তীয় সমাজ থেকে সামন্তীয় সমাজে উত্তরণের গাঁথা। এর একটা বড় বৈপ্লবিক ভূমিকা ছিল ভারতের সমাজে। ঠিক যেমন ছিল মুহম্মদের নেতৃত্বে আরবে ইসলামের উত্থান, তাই আমার মুহম্মদের প্রতিও সমান ভক্তি। কৃষ্ণকেই একা সর্বশ্রেষ্ঠ বললে আমার একটু মেনে নিতে বেগ পেতে হয়। আর নিরস্ত্র উপায়ে সমাজ বদলের কাজে যিশু ও বুদ্ধেরও কিন্তু জবাব নেই! যদিও ইউরোপীয় অনেক পন্ডিতি যিশুর ঐতিহাসিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। কিন্তু খৃষ্ট আর ভাগবত ধর্ম ঐতিহাসিক-- এটা তো অবশ্যই স্বীকার করতে হবে। তবে তত প্রাচীন বোধহয় কোনোটাই নয়।
আমি কী বেছি বকে ফেললাম? এই আমার বদ দোষ! এর জন্যে প্রচুর বন্ধু হারাতে হয়!
সুন্দর ব্লোগ .. ভালো লাগলো
http://rituondnet.blogspot.com/
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন