২১ অক্টো, ২০১০

আজ যে জন্মাষ্টমী


সকালে উঠে বারান্দায় দাঁড়িয়েছিলাম আমার সাথে কথা বলা সব ফুলেদের হাসিমুখ,
পাতাবাহারের বৃষ্টিফোঁটার ওপর আলোর প্রতিসরণ দেখব বলে ।
হঠাত কাছের বস্তি থেকে আওয়াজ ভেসে এল...
সাদা পদ্ম, রজনীগন্ধায় মোড়া, টুকটুকে লাল বেনারসীর চেলি জড়ানো,
মাথা ভর্তি সিঁদুরের আর ফর্সা টুকটুকে আলতা পরা দুটি পায়ের দিকে চোখ পড়ল
সস্তার ধূপের গন্ধে রাস্তাটা যেন ম ম করে উঠল ।
আর পেছন থেকে একটা ছোট্ট ছেলে ডুকরে কেঁদে উঠে বলল
"মা, তুমি কোথায় যাচ্ছো? মা আমার টিফিনের পয়সা? আমার লাটাই,
আমার গুলি ? আমি তোমায় আর জ্বালাবোনা দুপুরে মা"
তবু সকলে নিয়ে চলে গেল তাকে, পুরোণো গঙ্গার দিকে,
যেদিকে সকলে যায় এই সময়ে,
খোল-কর্ত্তাল বাজিয়ে, মহাধূম করে তাকে পার করে দিল তারা
আমি ততক্ষণে পৌঁছে গেছি সেই সমুখ-শান্তি-পারাবারে...
বস্তি থেকে ছুটে এসে কয়েকজন মেয়েছেলে বলে উঠল আজ বেস্পতিবার,
কি পুণ্যাত্মা বিল্টুর মা ! কেমন এয়োস্ত্রী চলে গেল । জম্ম এয়োতি !
বিল্টু খালি পায়ে দৌড়েছে এর মধ্যে...
আর বিল্টুর বাবাকে মুক্তি দিয়েছে সেই পুণ্যবতী!
কালকের রাতের বাসি-পান্তাগুলোর জল ফেলে দাঁড়িয়ে প্রণাম জানালো বুড়িগঙ্গাকে ।
একটা নিষ্কর্মা, শিরদাঁড়াহীন পুরুষের অবয়ব নিয়ে,
ওদের নেই সত্কার সমিতির বিলাস, ওদের নেই কনভয়,
নেই ওদের রাশি রাশি পুষ্পস্তবক, তাঁবেদার
তবুও ওকে চলে যেতে হল ।
বিল্টুর মায়ের একরত্তি ভরা সংসারে একমুঠোচাল বাড়তি হল
অলক্ষী এত দিনে বিদায় হল !
বলে উঠল "আমাকে তো আর কম জ্বালায়নি !"
হা গোবিন্দ আমার ! পুজো দিতে যাব কেমনে?
কতগুলো পয়সা জমিয়ে এই মাগ্গিগন্ডার বাজারে ফলমিষ্টি কিনলুম রে !
"তা মল্লি তো আজকেই মত্তে হয় ? আজ যে জন্মাষ্টমী!"
পড়ে র‌ইল কাঁসার ডাবর, পানের ডিবে, রান্নাঘরে পেতলের পরাত,
আটামাখার কাঁসি, কুয়োপাড়ের পেতলের বালতি,
ঠাকুরঘরের নারায়ণপুজোর পাঁচপো সিন্নিমাখার গামলি,
তামার পুষ্পপাত্তর, পিদিম-পিলসূচ
এ সব কিছু বিল্টুর বাবার দানের বাসন ।
"কিছুই চায়নি" বিল্টুদের বাড়ি থেকে,
তবুও দিয়েছিল তারা, দিতে হয় বলে
"আমার সন্তান যেন থাকে দুধেভাতে"... তাই
তবুও তাদের মেয়েটা চলে গেল আজ ।
যাবার সময় হাত থেকে খুলে নিয়েছিল সোনার রুলি দুগাছি তারা ।
ফেনা ওঠা মুখ পুঁছিয়ে ওরা চোখে দিয়েছিল দুটো তুলসিপাতা
আর কপালে এঁকে দিয়েছিল চন্দন ; ঠিক যেন বিয়ের কনে !
হাতের মুঠোয় তখনো ছিল তার সেই ডায়জিপামের ছেঁড়া স্ট্রিপ ।
আজ যে জন্মাষ্টমী ! বিল্টুর ইস্কুল ছুটি আর তার বাবারো ।
কোনো তাড়া নেই বিল্টুর মায়ের ।

৪টি মন্তব্য:

সুশান্ত কর বলেছেন...

বাহ! বেসতো !তবে ,"বিল্টুর ওদের নেই সত্কার সমিতির বিলাস ওদের নেই কনভয় নেই ওদের রাশি রাশি পুষ্পস্তবক, তাঁবেদার তবুও ওকে চলে যেতে হল । বিল্টুর মায়ের একরত্তি ভরা সংসারে একমুঠোচাল বাড়তি হল অলক্ষী এত দিনে বিদায় হওয়ায় বিল্টুর ঠাকমা হাফ ছেড়ে যেন বাঁচলে ! " এই কথাটার পুরাবৃত্তি হলো নাকি ?

Roshmi Sinha বলেছেন...

Wonderful poem.

P.S. Shubho Janmashtami!

SUBHENDU বলেছেন...

Osadharon Indiara Boudi,ami kolpona korchilam aapnader Beltalar flat barita, tar baranda... r durer talir barigulo.. echara ediker gangar diker raasta, ki sundar compose korechen... monta ektu vari hoye galo.. eta kobita bote kintu vison chobi aaka. dhonnobad

Indira Mukhopadhyay বলেছেন...

thank you all for reading my poem...aj sakale ei satyi ghatonati dekhe likhechhi ...

@ Sushanta, ami dekhechhi, amar typing error chhilo...correct kore dilam ...thank you again!