৩১ জুল, ২০১০

ওরা চলে গেল

আজ খুব ভোর থেকে উঠে দেখছি রাস্তাঘাট জলে থৈ থৈ । গত রাতের বৃষ্টি সারা শহরকে যেমন আপাদমস্তক ভিজিয়েছে, আমার মনের ঈশানকোণের জমে থাকা একফালি কালো মেঘও অবিরত বর্ষণ করে চলেছে ।  দুচোখের পাতায় বন্যা নেমে এসেছে । এক চোখে স্বপ্নের আনন্দাশ্রু আর একচোখে বিদায়ের কান্না । ভোরে উঠেছি, বৃষ্টি থেমেছে তখন । একটা টানা রিকশা নিয়ে জলের মধ্যে দিয়ে চলেছি । কেন তা জানিনা তবে এইটাই আমার এই মূহুর্তে সবচেয়ে ভাল লাগছে । আকাশ আমার মত মন খারাপ করে রয়েছে । বাতাসও গত রাতের বৃষ্টিতে ভারী হয়ে গেছে আদ্রতায় । শহরের কারো ভাল লাগছে না এত বৃষ্টি । আর আমার তো ভাল লাগছিল না বলেই এই ভোরে বেরিয়ে পড়া  । রিকশাওয়ালাকে বললাম যত টাকা চাও তত দেব শুধু আমাকে পার করে নিয়ে চল অন্য কোথাও ।  জলের ওপর দিয়ে হাঁটলে তো অসুস্থ হয়ে পড়ব  আর রিকশাওয়ালার ও এই মূহুর্তে প্রয়োজন কিছু অর্থের । সেই ভেবে আমার এই সিদ্ধান্ত নেওয়া । আর জলের ওপর দিয়ে চললে জলের আওয়াজে আমার মনের  একলা হবার , আমার মনখারাপের ভার আর থাকবে না; জল আর তার আশপাশের দৃশ্যাবলী আমাকে বেশ পার করে দেবে এই সময়ের খেয়া । 

কিন্তু ওরা চলে গেল । ওরা গেল ওদের ভালর জন্য ।  ওদের সকলের উন্নতির জন্য । আমাদের মুখ উজ্জ্বল করার জন্য । দেশের কিছু কাজে লাগার জন্য । কাল বিকেলের রাজকীয় ট্রেনটি এসে যখন ইঞ্জিনটা লাগাল তার সামনে তখন আমরা পৌঁছে গেছি স্টেশনবাড়ি। মানের রেলগাড়ি থামে যেখানে,  রেলগাড়ি ছাড়ে যেখানে ।  যখন ইঞ্জিন এসে রেলের সামনে লাগে তখন একটা বিকট আওয়াজ হয় আর সেই আওয়াজে আমার ভেতর থেকে উঠে আসে না বলা কান্নার দলা পাকানো সব শব্দমালারা । আমার মত আবেগ প্রবণের না যাওয়াই ভাল স্টেশনে কারোকে সি অফ করতে কিন্তু  উপায়ও থাকেনা  না গিয়ে  । আমি কান পেতে র‌ই ; রবিঠাকুরের গান শুনতে পাই মনের ভেতরে "বিদায় করেছ যারে নয়নের জলে" ; ইঞ্জিনের ক্যাঁচকোঁচ, হকারদের ক্যাচরম্যাচর  আর ওদের কলকলানি । কিন্তু তবুও ওদের যেতে হবে এখুনি । ট্রেন ছেড়ে দিল কিছু পরেই । আবছা হয়ে গেল বাতানুকুল কোচের কাঁচের জানলা  । একটা একটা করে মুখ গুলো সরে যেতে লাগল দৃষ্টির অগোচরে । একরাশ মন খারাপ , আর সেই সাথে  ভার নিয়ে ফিরলাম বাড়ি ।
ওদের হাসি ওদের প্রাণ খুলে গল্প শুনে মনে হল ওরা ভাল ই আছে । ওরা ভাল থাক । ওরা আরো উন্নতি করুক । যাবার সময়ে ও বলল " মা তুমি কিন্তু কাঁদবে না, আমার জন্যে "  আমি ওখান থেকে তোমার ওয়েব সাইটের কাজ করে দেব । আর স্কাইপ, জি-টক তো র‌ইল । আর র‌ইল আমাদের ফেসবুক , ট্যুইটার । কারোর মা তো এমন কাঁদে না । তুমি কেন কাঁদো মা ? আমি শুধু একটাই কথা বললাম । "ঠিক আছে আর কাঁদব না রে " 

তখন সে বলল "না, না কেঁদো তুমি" । "আমার মা কাঁদে বলেই তো লিখতে পারে, আর কারো মা পারেনা "    
আবার মনে পড়ে গেল রবিঠাকুরকে " আমার ব্যথা যখন আনে আমায় তোমার দ্বারে, তখন আপনি এসে দ্বার খুলে দাও ডাকো তারে " 
আবার ওদের আসার সময় হবে । বর্ষা যাবে শরত আসবে , শরত যাবে শীত পড়বে । নতুন ধান কাটার সময় হবে । উত্তুরে হাওয়া দেবে। গাছের পাতা ঝরে যাবে । আবার ওরা চলে আসবে বাড়ি । 

২টি মন্তব্য:

tanusri বলেছেন...

ki likhbo ,kichu to balar nei temon ja tomar dighaswas ke choto kore debe .....sudhu bhebe nio ekdin tomake o jete hoyechilo ,aj oke o jete holo etai bodh hoy niyam ,anyarakam kichu hale jibaner chanda ta kete jeto ,tar theke ei bhalo ,ora bhalo thakuk samay thik tar kheya par kore debe ......bhalo thako ,bhalo thako bhalo thako

Indira Mukhopadhyay বলেছেন...

ei jonyoi mone hoi BLOOD IS THICKER THAN WATER! tomar ekhane lekhata pore aro ekbar mon ta kamon hoye gelo... abar sei BLOOD ....tai bodh hoi tomake ekhane pelam .... bhalo laglo...
tabe tai hok, tabe tai hok!
ora bhalo thakuk, tomra bhalo theko!