৬ সেপ, ২০২১

কৌশিকী অমাবস্যা

 পার্বতী তাঁর আগের জন্মে সতী রূপে দক্ষ যজ্ঞ স্থলেই আত্মাহুতি দেন। তাই পরের জন্মে ওঁর গায়ের রঙ কালো মেঘের মতো হয়ে যায়। মহাদেব তাই তাঁকে কালিকা নামে ডাকতেন। একদিন দৈত্য দ্বারা পীড়িত দেবতারা যখন কৈলাসে আশ্রয় নিলেন, মহাদেব সব দেবতাদের সামনেই পার্বতীকে বললেন, “কালিকা, এসো। তুমি ওদের উদ্ধার করো।”

আবার একদিন সবার সামনে বউকে আদর করে 'কালী' বলে ডাকায় পার্বতী অত্যন্ত ক্ষুব্ধ, অপমানিত ও ক্রোধিত হলেন।
এদিকে কৈলাসে পা দিয়ে দেবতারা নতুন বউয়ের গায়ের রঙ দেখে মুখ চাওয়াচাউয়ি করলেন।
মহাদেব জানতে পেরে বললেন, "তা বাপু, আমি দেখেশুনে ফর্সা না কালো বৌ আনবো তাতে তোমাদের এত মাথাব্যাথা কিসের?" দেবতারা মুচকি হাসলেন।
গায়ের রঙ নিয়ে বারেবারে এসব চাপানউতোর কালীর মোটেও পছন্দ হচ্ছিল না।
কৈলাসে পৌঁছে দেবতাদের বড় আনন্দ তখন। একে প্রাকৃতিক শোভা তায় নতুন বউয়ের সম্মানার্থে বেশ সাজো সাজো রব।
মহাদেবের মনোরঞ্জনের জন্য ইন্দ্র অপ্সরাকে এনেছেন নাচাগানার জন্য। মাঝখান থেকে এত সব অতিথি আপ্যায়নে কালিকার একেই নাভিশ্বাস ওঠে তায় আবার গায়ের রঙ নিয়ে সবার কানাঘুষো।
অপ্সরাদের সামনেই মহাদেব আবার আদরের সঙ্গে ডাক দেন বউকে,
-হে অঞ্জনসদৃশ শ্যামলী, আমার রূপসী কুচকুচে কালী, ওগো বধূ ব্ল্যাক-বিউটি ! ক‌ই ? এসো একটিবার সামনে, দ্যাখো কারা এসেচেন তোমার সঙ্গে আলাপ করতে, তোমাকে নাচগান শোনাতে!
ফর্সা অপ্সরাদের সামনে এরূপ কুরুচিকর সম্বোধনে কালিকা গেলেন ক্ষেপে। একে নতুন বৌ, তায় আবার রাসভারী, মেজাজী, দাপুটে এক মেয়ে। তাঁর মোটেও সহ্য হলনা।
তিনি মনে মনে বললেন, " কি এত বড় আস্পর্ধা! আবার আমাকে বাইরের নারীর সামনে কালো বলা! ধ্যুত্তোর গায়ের রঙ! আমিও দেখিয়ে দেব আমার প্রকৃত স্বরূপ। আমি ছাড়া তোরা সবাই অচল।"
মনের দুঃখে পাশের মানস সরোবরে গিয়ে তপস্যা শুরু করলেন। নিজের গায়ের কৃষ্ণকোষগুলি একে একে পরিত্যাগ করলেন। যেন খোলস ছাড়ছেন তিনি। দ্বিখণ্ডিত ব্যাক্তিত্ত্ব বা স্প্লিট পার্সোনালিটি হলেন বোধহয়। কালো রং অনায়াসে বদলে ফেলে কালিকা হলেন গৌরী ।
তপস্যান্তে শীতল মানস সরোবরের জলে স্নান করে দেখলেন নিজের দেহের রঙ হয়েছে পূর্ণিমার চাঁদের মতো। ইনিই দেবী কৌশিকী। পার্বতী বা কালিকার আরেক রূপ। তাইতো এই অমাবস্যার নাম কৌশিকী অমাবস্যা। আজ ভরা ভাদ্রের সেই তিথি, যে দিন এই দেবীর উৎপত্তি হয় এবং তিনিই পরে শুম্ভ ও নিশুম্ভকে বধ করেন। শুরুতেই বলেছি, যে কারণে দেবতাদের অত কাঠখড় পুড়িয়ে কৈলাসে আসা।

কোন মন্তব্য নেই: