১৩ জুল, ২০১৫

সুবর্ণলতার সেকাল ও একাল

(আশাপূর্ণা  দেবীর ছবিটি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত)

১৩ই জুলাই আশাপূর্ণাদেবীর মৃত্যু দিবস। আসুন তাঁকে বারেবারে স্মরণ করি। বরণ করি তাঁর চিন্তাধারাকে। পালটে ফেলি আজকের সুবর্ণলতাদেরো। 

আশাপূর্ণাদেবীর কলমে প্রথম-প্রতিশ্রুতির সত্যবতী এবং তারই ভাবমূর্তির মূর্ত প্রতীক তার কন্যা সুবর্ণলতা চরিত্রটি আজো আমার মনে চির সমাদৃতা । দুটি উপন্যাস পড়েছিলাম বারোক্লাসের পরীক্ষা দিয়ে । তখন নারীমুক্তি, নারী সংরক্ষণ নিয়ে এতটা মাতামাতি শুরু হয়নি কিন্তু ঘোমটা পরিবৃতা বঙ্গনারীর উত্তরণ ততদিনে হয়ে গেছে সালোয়ার-কুর্তায় এবং জিনস-টিশার্টে । ঘরের বন্দিনী নারী বাইরের জগতে পা রাখার প্রোমোশানও পেয়ে গেছে । কিন্তু পাল্টায়নি পারিবারিক বোঝাপড়া বা সম্পর্কের টানাপোড়েনের চিত্র, উড়ে যায়নি রক্ষণশীলতার ঘেরাটোপ । যে যুগে সত্যবতী সুবর্ণলতার মধ্যে সঞ্চার করেছিল স্ত্রী স্বাধীনতার ভ্রূণ, সেদিনের থেকে সমাজের চিত্র পাল্টে গেছে অনেকটাই কিন্তু বিবাহিতা নারীর লাঞ্ছনা, গঞ্জনা ও অপমানের বোঝা বোধ হয় এখনও হালকা হয়নি । সে সময় সুবর্নলতা পড়ে মনে হয়েছিল আমি সত্যবতী তথা সুবর্ণলতার সকলরসের ধারক ও বাহক হলাম । আমি আমার প্রাকবৈবাহিক জীবনে এইরূপ প্রতিবাদী মানসিকতা নিয়েই ঘর সংসার করব এবং "আমারে দাবায়ে রাখতে পারবা না" এই ভাবেই আন্দোলন চালিয়ে যাব । কিন্তু কার্যকালে অতটা অন্দোলন প্রবণ না হয়েও বরিষ্ঠনাগরিকজনের মুখনিঃসৃত বাক্যমালাকেও আপ্তবাক্য রূপে মেনে নিতে পারিনি ।

মেয়েদের মনকে বুঝতে পেরেছিলেন আশাপূর্ণা । বিভিন্ন বয়সে মেয়েদের বয়সের মনের গঠনকে খুব অন্তর দিয়ে লক্ষ্য করলে যা বোঝা যায় । নারীমনের বয়স এবং তার সঙ্গে নানাবিধ জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়া ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। যখন সে কন্যা তখন তাকে দিতে হবে অনেক কিছু, গড়তে হবে, শাসন করতে হবে, সোহাগও করতে হবে সেই সাথে । তাকে যোগ্য সম্মান দিতে হবে । তবেই তার কাছ থেকে সম্মান পাওয়া যাবে । সুবর্ণলতাকেও আশাপূর্ণার সত্যবতী এই ভাবেই গড়ে তুলছিল কিন্তু তার শাশুড়ি এলোকেশীর জেদের কাছে হার মানতে হয়েছিল আত্মসম্মানবোধ সম্পন্না সত্যবতীর । বেথুন স্কুলে পাঠরতা দশ অনুত্তীর্ণা সুবর্ণকে কেমন করে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তার ঠাকুমা নিয়ে চলে এলেন আর তার মায়ের অনিচ্ছায় বিয়ের পিঁড়িতে বসিয়ে দিলেন তা আমরা দেখেছি । এলোকেশী বামনির কাছে পুত্রবধূর মতামত অপ্রয়োজনীয় । তিনি সত্যবতীকে মানুষ বলেই মনে করেন নি তাই এত বড় একটি সিদ্ধান্ত নিজেই নিয়েছিলেন । নিজের ছেলেকে তিনি যারপরনাই বৌয়ের বশীভূত বলতেও কুন্ঠিত হন নি । সে যুগে একজন মেয়ে মানুষ কিরূপে আর একজন মেয়েমানুষকে পায়ের তলায় অর্থাত নিজের অধীনে রাখার চেষ্টা করত তা এহেন লজ্জাকর বিবাহ দেখে আমরা শিক্ষা লাভ করি । বৈধব্যের একাকীত্বে উপনীত এলোকেশীর এহেন নিন্দনীয় সিদ্ধান্তে তার পুত্রও মনে মনে অখুশী হলেও প্রতিবাদী হননি কারণ সেই মেরুদন্ডের কাঠিন্য তার ছিলনা । "মা রাখি না বৌ রাখি" তো সব বিবাহিত পুরুষেরই জীবন যুদ্ধের অন্যতম পর্যায় । কিন্তু যে পুরুষটি সেই কাজ বুদ্ধির বলে করতে পারে সে তো রাজা ।

সুবর্ণলতা শিক্ষালাভ করে যে অপমানের স্বীকার হয়েছিল তা বোধ হয় এখনকার সুবর্ণদের কল্পনাতীত । বরং সংসারের স্বাচ্ছল্যতার কারণে এই শিক্ষালাভ শাপে বর হয়ে দাঁড়িয়েছে । এখনকার স্বাধীন নারী সানন্দে চাকরীর দায় ভার গ্রহণ করে যারপরনাই খুশি; বৌমাটি রোজগেরে বলে শাশুড়িমা কিন্তু মনে মনে গর্বিতা কিন্তু অন্দরমহলে তার নিত্য অনুপস্থিতি সংসারে সূত্রপাত ঘটায় নিত্যি কলহের । ঠিক যেমনটি আমরা দেখেছি সুবর্ন পড়তে ও লিখতে পারত বলে তা মহা অপরাধ বলে গণ্য হত আবার বাড়িতে কোনো চিঠিপত্র এলে তাকে দিয়ে সেটি পড়িয়ে নেওয়াটি কোনো অপরাধ বলে মনে করা হত না ।

তখনকার পুরুষতান্ত্রিক সমাজে আমরা লক্ষ্য করেছি স্বৈরাচারীর ভূমিকায় এলোকেশী নামক বিধবা রমণীকে । আবার সেই একনায়কতন্ত্রের পুনরাবৃত্তি ঘটেছে সুবর্ণলতার সংসারে । সেখানে সুবর্ণলতার বিধবা শাশুড়ি মুক্তকেশী তার চারপুত্রের কারোকেই মানেন না । তাঁর সংসারে তিনিই সর্বময় কর্ত্রী এবং স্ত্রী নায়িকার ভূমিকা পালন করে চলেছেন। সত্যবতী এবং সুবর্ণলতা উভয়ের সংসারেই এই শ্ব্শ্রূমাতা স্বরূপিণী কর্তা ব্যাক্তিটির অত্যাচারের চরম মূহুর্তে ঘটেছে নিত্যি অশান্তি এবং গল্পদুটি পড়তে পড়তে কেবলই মনে হয়েছে ইতিহাসের মাত্‌সন্যায় যুগের কথা অর্থাত দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার । কি আনন্দই না পেয়েছেন এই দুই মহিলা দুটি কন্যাসমা অবলা পুত্রবধূর ওপরে মানসিক অত্যাচার করে ! এ যেন নবপরিণীতা বধূটির উপর ইচ্ছকৃত কর আরোপ করা । তাহলে প্রশ্ন জাগে পুত্রের বিবাহের প্রয়োজনীয়তা কি শুধুই দাসী আনার জন্যই? আর শাশুড়ি মা টি কি সব কাজকর্ম ফেলে ছোট সেই বালিকাবধূটিকে গালমন্দ করার জন্যই গৃহে এনেছিলেন বরণ করে?তিনি একথা ভুলে যান বারবার যে পুত্রবধূটিকে আপন করতে না পারলে তিনি ও তাঁর পুত্রের থেকে অনেক দূরে সরে গেলেন ।কিন্তু তাতে কি আসে যায় ! ভবি ভোলবার নয় ।

নারীশিক্ষার প্রসার হয়েছে আমাদের দেশে । বালিকা আর বধূ হয় না শিক্ষিত সমাজে । শাশুড়িমাও কিন্তু শিক্ষিতা আজকের যুগে, কিন্তু পারস্পরিক বোঝাপড়ায় উভয়ই হিমশিম খান আজকের যুগেও । অবশ্যি এর ব্যতিক্রমও থাকে । এক হাতে তালি না বাজিয়েই বলছি আজ দুইপক্ষের কেউই বিনা যুদ্ধে সূচাগ্র জায়গা ছাড়েন না এই সংসারে । "যে সহে সে রহে" এই অমোঘবাণীকে মাথায় করে যে বধূটি চলতে পারে সে আদর্শ গৃহবধূ আর "কারো দোষ দেখো না" এই নীতির অনুগামিনী হয়ে যে শাশুড়িমা কাল কাটাচ্ছেন বহাল তবিয়তে, তিনিই ভাল শাশুড়ির সংবর্ধনা পান প্রতিবেশী, আত্মীয় পরিজনের কাছ থেকে । কিন্তু তবুও এই শাশুড়ি-বৌ মানিয়ে চলার কারণে ভেঙে যাচ্ছে কত যৌথ পরিবার । সে যুগেও আমরা দেখেছি স্বাধীনচেতা সত্যবতীর স্বামীকে নিয়ে শ্বশুরভিটে পরিত্যাগ করে ভাড়াবাড়িতে এসে সংসার করতে । আর এযুগে শিক্ষিত, চাকুরীরতা নারীর তো কথাই নেই । সে তো আরো স্বাধীন, আরো বেশী সচেতন ;
শাশুড়িমায়েরও ভুলে গেলে চলবে না যে তিনিও একদা ছিলেন বধূ বেশে । তাঁরও অনেক শখ, অনেক স্বপ্ন পূরণ হয়নি বিয়ের পরে কিম্বা তাঁরও ইচ্ছা করত একান্তে স্বামীটিকে পাবার, স্বাধীন ভাবে চলাফেরা করার কিন্তু তাই বলে তাঁর পুত্রবধূটির ওপর তো তিনি সেই সব নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারেন না বা তিনি পাননি বলে পুত্রবধূটিও তা থেকে বঞ্চিত হোক এতো মেনে নেওয়াও যায় না । যেমন ধরা যাক তখন কার কালে ঘোমটা মাথায় দেওয়া ছিল ম্যান্ডেটরি । কিন্তু এখন তা সভ্য সমাজে লুপ্তপ্রায় । তখন বাড়িতে ম্যাক্সি বা হাউসকোটের চল ছিলনা কিন্তু এখন তা আমাদের ঘরে ঘরে চালু হয়ে গেছে । এবার যিনি নতুন বৌমাটিকে এখনও ঘোমটা দিতে বাধ্য করছেন তিনি কিন্তু তাঁর অন্দরমহলে নিজের সুবিধার্থে ম্যাক্সি বা হাউসকোট পরে আধুনিকা হয়ে ঘুরে বেড়চ্ছেন ।"আমাদের সময়ে এমন হত না, আমরা অনেক সংযত ও বাধ্য ছিলাম" "আমাদের কালে এমন দেখলে লোকে ছি ছি করত" কিন্তু একবারও কি তিনি ভাবেন না যে তেনাদের কালে তাকে এমন হাউসকোট বা ম্যাক্সি পরিহিতা দেখলে তাঁর শ্বশুরভিটার গুরুজনেরা ভিরমি খেতেন ! আবার ধরা যাক বাপের বাড়ি থাকা নিয়ে বৌমাটিকে শুনতে হয় প্রচুর কথা । কিন্তু শাশুড়িমা যখন বৌ ছিলেন তখন তিনিও থাকতেন বাপের বাড়ি গিয়ে আর তাঁর মেয়েটির বেলায় তো তিনি এ ব্যাপারে রা'টি কাড়েন না ।

তিনি বয়সে বড় বলে "do what I say, don't do what I do"অথবা "a king can do no wrong" এই আপ্তবাক্যটিকে মেনে নিতে বাধ্য করেন। বধূরাও আজকের দিনে শিক্ষিত সুশীল সমাজের কর্ণধার । সত্যবতী বা সুবর্নলতার ধারাপাতে কিছুটা পুষ্ট । তারা আজকালকার নিউক্লিয়ার পরিবারের সদস্যা এবং সর্বোপরি শিক্ষার আলোয় জ্বাজ্জল্যমান এক একটি তারকা ; তার মা-বাবার স্নেহের সুধারসে লালিত ওয়ান এন্ড ওনলি কন্যারত্ন । তাই চট করে কিছুকে মেনে নেওয়াও তার পক্ষে কঠিন হয় । আর শাশুড়িমাটি কিন্তু ভিতর-বাহিরে, অন্তরে অন্তরে সুপ্ত এলোকেশী, প্রচ্ছন্ন মুক্তকেশী স্বরূপিণী । তাই ছলে বলে কৌশলে বধূটিকে আঘাত করতে বা অন্তরটিপুনি দিতেও কুন্ঠিত হন না ।

তবে এও স্বীকার করে নিতে বাধ্য হই যে আশাপূর্ণার সত্যবতীর আমলে শ্বশুর ঘরে যাওয়ার পূর্বে কন্যাকে কিন্তু অনেক সতর্ক করে দেওয়া হত যাতে মেয়েটি সভ্যতা, শালীনতার সীমা লঙ্ঘন না করে, গুরুজনদের মান্যি করে, সকলকে যত্নআত্যি করে; এখনকার যুগে সেই কন্যাটি কে সেই মত কোনো সতর্কীকরণ করাও হয়না তার প্রধান কারণ সে এখন সত্যবতীর মত অবলা বালিকা নয় । সে রীতিমত উচ্চ শিক্ষিতা ও সাবালিকা । তার নিজস্ব মতামতকেই আজীবন কাল তার বাড়ির লোকেরা প্রাধান্য দিয়ে এসেছে অতএব সে তো সেই সতর্কীকরণ বার্তা শুনতেও চাইবে না । তবে এর ব্যাতিক্রমও আছে ।

সে যুগের সুবর্ণলতার তার ঠকুমার গুরুদেবের আদেশে হঠাত বিবাহ স্থির করা , সুবর্ণলতার সংসারে তার দুই দেবরের অমানবিক আচরণ এবং সুবর্ণলতার স্বামীর পুরুষ সিংহের কোনোরকম বিকাশ লক্ষ্য না করে ভেবেছিলাম পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পুরুষের ক্ষমতার এহেন অপব্যবহার যেন আমাদের যুগে না হয় কিন্তু হায় রে বিধাতা এখনো পুরুষ বোধ হয় পুরোপুরি পুরুষ হননি । এ যুগেও অনেক পুরুষদ্বারা আজকের সুবর্ণলতারা লাঞ্ছিত হন সামান্য কারণে যেমন ধরুণ পণপ্রথা মেনে নিয়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসে যান বরবেশে আর পণের অঙ্কটি মন:পুত না হলে কনের "দেবর" রূপী বন্ধুটি কিন্তু অমানবিক আচরণ করতে বিন্দুমাত্র কুন্ঠিত হন না । ঈশ্বরের স্বপ্নাদেশের মত মিথ্যের অজুহাতে সে যুগের শাশুড়িমাটি বন্ধুর প্ররোচনায় ছেলেকে নিজের কাছে শুতে বলে কারণ বৌয়ের সাথে এক সঙ্গে শুলে নাকি ছেলের অকল্যাণ হবে । এ যুগেও ধর্মের নামে ভুচুংভাচুং দিয়ে আধুনিকা শাশুড়িরা এরূপ মিথ্যার আশ্রয় নেন কিনা সে ঘটনা আমার জানা নেই তবে প্রাকবৈবাহিক ঘনিষ্ঠতাও কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে আপত্তিজনক হয় তার কারণ একটাই তারা একত্রে থাকলে তাদের বন্ধন যদি আরো সুদৃঢ় হয়ে যায় !

মনে হয় সমাজের পরিকাঠামো বদলানো প্রয়োজন । আমেরিকার অগ্রসর-সমাজ কত যুগ আগে যা অনুধাবন করেছিল তাদের সমাজচেতনার মাধ্যমে;আমাদের দেশে সেই গঠনের বোধ হয় একান্ত প্রয়োজন তাতে রক্ষা পাবে উভয় পক্ষ । ভাঙবে না সংসার । মা-বৌ এই টানাপোড়েনের হাত থেকে বাঁচবে অবলা সেই পুরুষপ্রাণীটি । যাকে সহ্য করতে হবে না বৌয়ের কাছ থেকে অহেতুক গালমন্দ, "কাপুরুষ", "মেরুদন্ডহীন" এই সব বিশেষণ আর মায়ের কাছ থেকেও শুনতে হবে না "বৌয়ের আঁচল ধরা", "ভেড়ো", "স্ত্রৈণ" এহেন কটুক্তি।

আমার কাছে মেয়েদের মনকে "গ্লাস ইনসাইড, হ্যান্ডল উইথ কেয়ার" এই রূপ ভাবে প্রতিপালন করা উচিত । মেয়েটি যখন স্কুল যাচ্ছে তখন থেকে শুরু করে সে যখন শাশুড়ি মা তে পদার্পণ করেছে, তখন পর্যন্ত এবং তারপর সেই মা'টি যখন একাকী কালাতিবাহিত করছেন অর্থাত বৈধব্যের স্বীকার হয়েছেন । আর প্রয়োজন ঘরোয়া কাউন্সেলিং অর্থাত সংসারের প্রতিটি সদস্যের সামনে বসে একটা মিমাংসা বা সমাধানের সূত্র খোঁজা । নয়ত "বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচাগ্র মেদিনীর" ন্যায় চলতে থাকবে উভয় পক্ষের কোঁদল আর কখনো কখনো যার পরিণতি ঘটবে ডিভোর্সের ডিসিশনে । মেয়েটি যখন সাবালিকা তখন তার নিজস্ব মতামত , তার চিন্তাধারাকে সম্মান জানাতে হবে আবার বেচাল কিছু দেখলে তার বাবা-মাকেই শাসনের শাণিত অস্ত্র হাতে তুলে নিতে হবে এবং তাও তাদের কন্যাটির ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আর বিবাহের পরে পুত্রটিকে মায়ের পাশে থেকে বুদ্ধি করে মাকে ও শাসন করতে হবে যাতে যে তিনি যাতে তার প্রিয়তমা স্ত্রীরত্নটিকেও আঘাত না দেন তাহলে সব থেকে বেশী দুঃখ ছেলেটিই পাবে । তাকে নিতে হবে বিচারকের ভূমিকা । সে পিঠ বাঁচিয়ে চলবে মায়ের সামনে আর রাতের আঁধারে প্রেয়সী স্ত্রীটির বিরহে কাতর হবার ভান করবে তা যেন না হয় ।

এখনকার মেয়েরা যখন বধূরূপে বরণ হয়ে পা দেন শ্বশুর গৃহে তখন তাদের মানিয়ে নেওয়া কঠিন হয় কারণ তারা তখন তো সেকালের সত্যবতী-সুবর্ণলতার মত কচি নন । আর তাই বলে নাবালিকা ঘরে আনাও তো শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আর সবশেষে এখনকার সুবর্ণলতাদের বলি অন্যায় মেনে নিতে হবে না কিন্তু নিজের মাটি শক্ত করে শাশুড়িমাটিকেও একটু বোঝার চেষ্টা করে দেখুন না যাতে সাপ ও মরে লাঠিও না ভাঙে। আপনিও তো একদিন শাশুড়ি হবেন ।

আর সর্বকালের সকল এলোকেশী বা মুক্তোকেশী রূপিণি শাশুড়ি মায়েদের উদ্দেশ্যে বলি আপনারাও একটু ভেবে দেখুন না । ছেলেটি তো আপনার; তার অর্ধাঙ্গিনীকে একটু ভালবাসতে চেষ্টা করুন না । সেই মেয়েটি তো আপনার পরিবারেরই একজন, সে আপনার "মেয়ের মত" কেন ? মেয়ে হয়েই থাক না সে আপনার কাছে, পাক না একটু পক্ষপাতিত্ব । আপনারও ভুলে গেলে চলবেনা যে "আপ ভি কভি বহু থি" !
আজকের দিনেও মিডিয়া সোচ্চার প্রতি পলে পলে, দন্ডে দন্ডে । তাই বুঝি সেলিব্রিটিদের দিয়েও অবগুন্ঠনা বিয়ের কনেকে শৌচালয়ের শিক্ষায় শিক্ষিত করতে দেখি আমরা। কিন্তু হায় আমার গ্রাম্যবধূ! তোমার শ্বশুরকুল তোমাকে ঘোমটা দিতেও বাধ্য করবে আবার খোলা স্থানে শৌচকর্ম‌ও করতে বলবে। আজকের সুবর্ণলতাদের কি সুদিন আসবেনা?  মদ্যা কথা তোমাকে অবদমিত করেই রাখবে তারা সেই মাত্সন্যায় যুগের মত অথবা কলেজের ragging period এর মত।  দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার চলছে ও চলবে। কিন্তু সুবর্ণলতারা যথেষ্ট সবলা আজ। তাই প্রতিবাদী মন নিয়ে এগিয়ে আসি আমরা। ঘরে ঘরে সব সুবর্ণরা স্বেচ্ছাচারিতা, স্বাধীনতার সীমারেখা আর IPC র 498Aর যথেচ্চাচার না করেই  সুবর্ণলতা হয়ে উঠুক.. আশাপূর্ণা দেবীর মৃত্যুদিনে আমাদের সমাজের কাছে এই হোক প্রথম প্রতিশ্রুতি। 




উত্তরবঙ্গ সংবাদ, শনিবার ১১ই জুলাই ২০১৫ 

কোন মন্তব্য নেই: