এ
বি সি ডি গ্রুপ..... ইত্যাদি নানা
নামের স্বল্প আমানত প্রকল্পে
যোজনা করিবার আহ্বান আসিল । গ্রামে
গঞ্জে,
শহরে,
মফস্বলে
স্বাক্ষর মেয়েদের কাজে লাগানো
হইল ঘরদুয়ার হইতে মাসিক
কিস্তি আদায় করিবার উদ্দেশ্যে
। তাহারা আপিস খুলিয়াছে কলিকাতার
একপ্রান্তে আর এজেন্ট যাইতেছে
আরেকপ্রান্তে । কোম্পানির
হাবভাব,
বিনিয়োগের
পলিসি,
সুদের
হার, টাকা
লগ্নী করিবার নিয়ম ইত্যাদি
সম্বন্ধে পাখীপড়া করিয়া পাঠানো
হইতেছে । স্বল্প শিক্ষিত
শহুরে এজেন্ট ঘর গেরস্থালীর
সামাল দিয়া পান চিবাইতে চিবাইতে
ব্যাগ বগলে লইয়া বস্তিবাসীদিগের
উন্নয়নে তার কোম্পানির ভূমিকা
হইতে শুরু করিয়া কত টাকা কয়
বত্সরে দ্বিগুণ বা চতুর্গুণ
হইবে অবধি জ্ঞান দিয়া মগজ
ধোলাই করিতেছে ।
এ
বি সি ডি ইত্যাদি গ্রুপের
নামকরণের জন্য অভিধানের বিপুল
ভান্ডারে সর্বক্ষণ নানাবিধ
আর এন্ড ডি চলিতেছে । কোন্
নামেতে বাঙালীমন চট করিয়া
টুপি পরিবে কিম্বা কোন্ নামের
প্রলোভনে পড়িয়া এজেন্টের
কথার চিঁড়ে অচিরেই ভিজিবে
তাহাই গবেষণার বিষয় । আর করিবে
নাই বা কেন ?
উহাদের
নিজ নিজ ক্যাচ লাইনেও চমক
রহিয়াছে । কেহ আস্থার যোগান
দেয় । কেহ ভরসা দেবার প্রতিশ্রুতি
অথবা আজীবন সাথে থাকার অঙ্গীকার।
এতসব বিচার করিয়া কাহার সথিত
যাইবেন আমজনতা?
কাহার
উপর ভরসা করিয়া তাহার হার্ড
আর্নড মানি গচ্ছিত রাখিবেন
?
উহারা
কৃষিজ দ্রব্য হইতে শিক্ষা,
স্বাস্থ্য
পরিষেবা হইতে ভ্রমণ,
সংবাদপত্র
প্রকাশনা হইতে টেলিভিশন
চ্যানেল,
ফিশারি
হইতে জুয়েলারি,
বাতের
ওষুধ হইতে জন্মনিরোধন,
সিমেন্ট
হইতে ঝরণার জল সবকিছুই দশভুজার
মত মেলিয়া ধরিয়াছেন । যৌবনকে
ধরিয়া রাখিবার তথা হৃত যৌবন
পুনরুদ্ধার করিবার ক্ষমতা
রাখে তাহাদের ঔষধ । উহারা
পারে না এমন কিছুই নাই । ইকোপার্ক
হইতে হসপিটাল গড়িতে পারে
। সূর্যরশ্মিকে কাজে লাগাইতে
পারে । লাভ-লোকসান
পরের কথা । উহাদের বিজ্ঞাপনের
জৌলুসে টিভি চ্যানেলের কুশীলবের
চাকচিক্য নিষ্প্রভ হইয়া
পড়িতেছে ।
সাধারণ
মানুষ বলিতেছে হাওয়া পরিবর্তন
হইল বটে!
সকালবেলায়
পথপার্শ্বে কত সংবাদ!
কত
রঙীন সংবাদপত্রের বিকিকিনি!
দোকানে
বাজারে নূতন নূতন এগ্রো
কোম্পানির চাল,
ডাল,
আটা,
ময়দা,
সুজি,
বেসন
হইতে শুরু করিয়া মশলাপাতি,
পাঁপড়
এমন কি ইসবগুল পর্যন্ত থরে
থরে সাজানো !
টেলিভিশনে
বিজ্ঞাপন দিতেছেন । অতএব টাকা
লগ্নী করাটা গৃহস্থের পক্ষে
কতটাই নিরাপদ!
উহারা
ভ্রমণ পিপাসু বাঙালীর জন্য
বিলাসবহুল হোটেল খুলিয়াছেন
। পেলিং হইতে পুরী,
দীঘা
হইতে দার্জিলিং যাইবার জন্য
কত সুবন্দোবস্ত করিতেছেন !
ভ্রমণের
সাথী স্বরূপ খাঁটি ঝরণার
প্রাকৃতিক জল এবং প্রয়োজনীয়
ঔষুধপালাও সরবরাহ করিতেছেন
।
কে
বলিল বদলের বাঙ্গলায় শিল্প
নাই!
আবালবৃদ্ধবণিতার
কর্ম সংস্থান হইতেছে এই
"কালেকশানের"
কৃপায়
। যে মানুষগুলো প্রতিনিয়ত
খাটিয়া খান তাঁদের কষ্টের
অর্থ আলবাত বিনিয়োগ হইতেছে
ঐ এ বি সি ডি ইত্যাদি কোম্পানিতে
! আর
তাহারা ঘুরিয়া ঘুরিয়া ঘাম
ফেলিয়া আরো আরো এমন অর্থ আনিয়া
কোম্পানির ভান্ডারে ফেলিতেছেন
। দেশের মানুষের টাকা দেশের
অভ্যন্তরেই ঘুরপাক খাইতে
লাগিল । তাহার পর কোম্পানির
লাভের গুড় পিঁপড়ায় খাইল কি
চাটিয়াই ছাড়িয়া দিল তা জানিবার
প্রয়োজন নেই আমাদের ।
আমরা
বাঙলার তাঁতী,
তাঁত
বুনিয়া খাই । আমার আত্মীয়ের
মেধাবীছাত্র অন্যরাজে চাকরী
লইল। আমার বন্ধুর পুত্র
বিদেশে পাড়ি দিল । রিয়েল
এষ্টেট হইতে সুপার স্পেশালিটি
হসপিটাল সবই তো হইল কিন্তু
পরিষেবা কিনিবে কে?
যে
প্রজন্মের ভোগ করিবার কথা
তাহারাই পাততাড়ি গুটাইল বিদেশে
।
তাহা
হইলে এত সংবাদপত্র পড়িবেই
বা কে? এত
শত কৃষিজ সামগ্রী কিনিবেই বা
কে? বত্সরান্তে
ভ্রমণে আকুল হইয়া পেলিং
কিম্বা পুরী যাইয়া বিলাসবহুল
হোটেলে রাত্রিযাপন করিবেই
বা কে ?
পরিবর্তনের
হাওয়া গায়ে মাখিবার জন্য পড়িয়া
রহিলেন কেবলি বরিষ্ঠ নরনারী
। বঙ্গ আমার পরিণত হইল
জেরিয়াট্রিক মহানগরে ।
তাঁহাদের
চোখে ছানি । বাইফোকাল উঁচুনীচু
করিয়া সংবাদপত্র পড়িতে হয় ।
কাজেই উপরোক্ত সংবাদপত্রের
লেখক বেশী,
পাঠক
কম ।
তাঁহাদের
ক্ষুধামান্দ্য । তাঁহারা
স্বল্পাহারী । বাজারের অতসব
কৃষিজ দ্রব্য খাইবার শক্তি
নাই ।
তাঁহাদের
একাকী ভ্রমণ করিবার শক্তি
নাই অতএব বিলাসবহুল হোটেল
তাঁহাদের কাছে অধরা ।
সুপার-স্পেশালিটি
হসপিটাল তাঁদের কাজে আসিলেও
আসিতে পারে কিন্তু লইয়া যাইবে
কে ? দেখিবার
কেহ নাই । পুত্রকন্যা বিদেশে
। আর অত ব্যয়বহুল চিকিত্সার
ভার বহন করিবার ক্ষমতাও তাঁহাদের
নাই ।
উহাদের
টিভি চ্যানেলের বকবকম শোনেন
কেবল উহারাই । বৃদ্ধ মানুষগুলি
কানেও ভালো শোনেন না আজকাল ।
অতএব চ্যানেলের কূটকচালি,
নৃত্যগীতবাদ্যশৈলী
মুষ্টিমেয় দর্শকের মধ্যেই
সীমাবদ্ধ রহিল ।
তাহারা
একটা কাজ ভুলিয়াও করেন না ।
সেটি হইল সকল আমানতকারীর
মাথার উপর যে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক
বা সেবি আছেন এবং সর্বাগ্রে
তাহাদের পারমিশান লইতে হয়
সেটি এ বি সি ডি প্রভূত কোম্পানিরা
অনায়াসে এড়াইয়া যান । এর ফলে
সাধারণ মানুষ যে তাহাদের অর্থ
ফেরত পাইবেন সেরূপ কোনো আশ্বাস
দিবার সম্ভাবনাও নাই ।
তাহারা
জন্মাইল। জয় করিল । আর অচিরেই
পলাইল । আমরা ভাবিলাম উন্নয়নের
জোয়ার আসিল বুঝি । কিন্তু সে
জোয়ার তো সুনামির ন্যায় ভাসাইয়া
দিল কত মানুষের স্বপ্ন ।
তিন
দশক পূর্বে এমন ঘটনা ঘটিয়াছিল
। কিন্তু বাঙালী ভুলিয়া গেল
। সেই ট্র্যাডিশান ফিরিয়া
আসিল ।
বলিতে ইচ্ছা হয় :
ইহারা জাদু জানে ! কিন্তু শেষরক্ষা করিতে জানেনা ।
অথবা
টাকা লইতে পারি কথার মারপ্যাঁচে কিন্তু ফিরাইতে পারিনা ।
স্থান-কাল-পাত্র ভেদে, রাজনৈতিক দলাদলিকে দোষারোপ না করিয়াই বলি বাঙালী কি ঘুমাইয়াই থাকিবে ? কে বলিয়াছে তাহাদের এত দুঃখ সহিতে?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন