গত সপ্তাহে আমাদের এক বন্ধুর আনুকুল্যে রাঁচি যাবার নিমন্ত্রণ পেয়েছিলাম । ভারত-ইংল্যান্ডের ODI ম্যাচ ঝাড়খন্ডে আয়োজিত প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ । খেলা দেখার সৌভাগ্য হল । ধোনির টিম জিতল বলে ঝাড়খন্ডবাসীর সাথে আমরাও বেজায় খুশী । উইকএন্ড ছিল বলে চট করে রাজরপ্পাও ঘুরে এলাম আমরা একটা গাড়ী নিয়ে । দামোদর ও ভেরা নদীর সঙ্গমে রাজরপ্পা জলপ্রপাতে মা ছিন্নমস্তার মন্দির দর্শন হল । খুব ভালো পুজো দেওয়া হল । শীতের আরামদায়ক জলবায়ু আর সেই সাথে ছোট্ট এমন উইকএন্ড ট্রিপ কার না ভালো লাগে! রাজরপ্পা থেকে ফেরার পথে বুটি (Booty) মোড়ে অবস্থিত ডিপাটলি আর্মি ক্যান্টনমেন্টের পাশ দিয়ে গাড়ি যাবার সময় বাইরে থেকে একটি স্ট্রাকচার দেখতে পেয়ে ড্রাইভারকে বললাম থামতে ।
রাঁচি-রাজরপ্পা-হাজারিবাগ হাইওয়ের ধারে ডিপাটলি ( Dipatoli) ক্যান্টনমেন্টে না থামলে অনেক কিছু মিস করতাম । আর্মি ক্যান্টনমেন্ট যেমনটি হবার কথা । ঝাঁ চকচকে সবুজ ম্যানিকিওর্ড লন আর অজস্র ফুলের সম্ভার । আর ইন্ডিয়ান আর্মির বাগান বা রাস্তা মেন্টেন্যান্সের ব্যাপারে নতুন কিছু বলাই বাহুল্য । কিন্তু সবচেয়ে ভালো লাগল সেই স্ট্রাকচারটি দেখে যেটি হল ভারতমাতার এক দল সেনাবাহিনীর উদ্দেশ্যে তৈরী করা ওয়ার মেমোরিয়াল । ঝাড়খন্ডের এই ওয়ার মেমোরিয়াল যুদ্ধের দেশনেতাদের সম্মান জানাতে সাজিয়ে রেখেছে এই বাগিচায় অনবরত রঙবেরঙের ফুল ফুটিয়ে রেখে । তাঁদের অমর জওয়ান জ্যোতি আজীবন জ্বলে থাকবে ঐ স্থানে ।
আমাদের দেশের সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে, ভারত-চীন যুদ্ধে, ইন্দো-পাক যুদ্ধে এবং অন্যান্য উগ্রপন্থী দমনের কাজে প্রতিনিয়ত বলিদানকে স্মরণ করে তাঁদের "পরম বীর চক্র" প্রদান করা হয় বিশেষ দিনে ।তাদের পরিবারের হাতে স্মারক তুলে দেওয়া হয় ...এ সব আমরা টেলিভিশনে দেখি, খবরের কাগজে পড়ে । প্রজাতন্ত্র দিবসের ঠিক আগে আগে এইখানে গিয়ে মনটা শ্রদ্ধায় ভারাক্রান্ত হয়ে গেল । পরমবীরচক্র বিজয়ী এলবার্ট এক্কা, কীর্তি চক্র বিজয়ী বিহার রেজিমেন্টের বিশ্ব কেরকাট্টা এঁদের কথা পড়তে পড়তে ভাবছিলাম আমাদের দেশটার কথা । কিছুদূরে মাঠের মাঝখানে ছিল ছোটনাগপুর অঞ্চলের কিংবদন্তী ট্রাইবাল নেতা বীরসা মুন্ডার স্ট্যাচু । "লাইট এন্ড সাউন্ড" এর মাধ্যমে ঐ প্রকান্ড মাঠে শো চলে নিয়মিত সন্ধ্যায় । প্রতিবছর প্রজাতন্ত্র দিবস আসে এবং চলে যায় । ছোটবেলায় স্কুলে কিছু নিয়ম পালনের মাধ্যমে ঐ দিনটিকে মনে রাখা ছিল বাধ্য-বাধকতার মধ্যে কিন্তু এতদিন পরে ডিপাটলি ক্যান্টনমেন্টের ঐ ওয়ার মেমোরিয়াল আমাকে এই পোড়া দেশটার জন্য সত্যি ভাবিয়ে তুলল ।
মনে মনে আজ সারাটাদিন সেই মানুষগুলির আত্মত্যাগের কথা চিন্তার ঢেউ তুলবে আমার মনে যাঁরা বারবার বহির্শত্রুর আক্রমণ থেকে এই এই সুন্দরী দেশমায়ের লাবণ্যটুকুনি বাঁচিয়ে রাখার লড়াইয়ে প্রাণ দিচ্ছেন অনায়াসে । কার্গিল থেকে কন্যাকুমারিকা, কচ্ছ থেকে কামাখ্যা বুক দিয়ে আগলে আছেন দেশটাকে । আমরা কতটুকুই বা তাঁদের দিতে পারি কেবলমাত্র বিশেষদিন গুলোতে স্মরণ করা ছাড়া ।
আজ তাই ২৬শে জানুয়ারির প্রাক্কালে তাঁদের জন্য আমার এই লেখাটি ডেডিকেট করলাম ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন