৬ মে, ২০২০

রবিঠাকুর তোমাকে.......

তোমার ভাবনাগুলো আজ আমার সুরে গাইছে । আমার ব্যাথা যখন হানে আমায় তোমার দ্বারে/ তখন তুমিই এসে পথ দেখাও, দ্বার খুলে দাও, ডাকো তারে। ঠিক তখনই ঠাকুর আবারো তোমায় মনে পড়ে।  যখন সেই ছোট্টটি ছিলেম তখন থেকে শুনেছি তোমার নাম । আমাদের পুরোণো বাড়ির সেই তাকের ওপর তোলা ঢাউস রেডিও থেকে, মায়ের কাছে আর স্কুলের রচনার  খাতায় । সেই থেকে হাতে খড়ি ।  তারপর হোঁচট খেয়েছি ব‌ইয়ের পাতায় তোমার সঙ্গে । সাহিত্যের ধারাপাত অধরা তখনো । তারপর বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে  মেঘের কোলে রোদ আর রোদের  উঠোনে কথা-কাহিনীর বৃষ্টি মেখেছি। তখন আমি মাধ্যমিক । জীবনস্মৃতি আমার ভালোলাগায়, মন্দলাগায়  আমার হয়ে উঠেছে । নতুন বছর আর বোশেখ মানেই তোমার পথ চাওয়া ।  কালবোশেখির বিকেল গড়িয়ে আমার গীতবিতানের পাতায় গানভাসি সাঁঝ  । আমারো সদ্য টিন-পেরোনো জীবনসিঁড়ি । ওঠানামা , স্কুলের নবীনবরণ, নতুন বর্ষার সবুজ উত্‌সব, আবার তোমার সঙ্গে  যেন মরুবিজয়ের আনন্দ বুকে, তোমার কবিতার বৃষ্টির ফোঁটা নতুন করে গায়ে মেখে। 

অমিত্রসূদন ভট্টাচার্য্যের সম্পাদনায় “দশজন নারীকে লেখা রবীন্দ্রনাথঠাকুরের শ্রেষ্ঠ পত্রগুচ্ছ এর এক চিঠিতে  পেলাম তাঁর নিজের জন্মদিনেরই  কথা। 

চিঠিটি লেখা কবি অনুরাগী হেমন্তবালা দেবীকে এবং তারিখ হল ২৩শে বৈশাখ :
জন্মদিনের প্রভাতে ঘুম থেকে উঠতেই নানা লোকের কাছ থেকে নানা উপহার এসে পৌঁছ্ত । তখন জীবনের প্রভাতের আকাশ ছিল উজ্জ্বল, স্নিগ্ধ, স্বচ্ছ; মন ছিল সুকুমার সরস , স্নেহের ছোঁয়া লাগলেই বেজে উঠত মনোযন্ত্রের তার ; তখন জন্মদিনগুলির সমস্ত দিনই গুঞ্জরিত হয়ে থাকত তার রেশ থামতে চাইত না। কারণ তখন পৃথিবী প্রায় ছিল আমার সমবয়সী, পরস্পর এক সমতলে ব‌ইত হৃদয়ের আদানপ্রদানের প্রবাহ; এখনকার জন্মদিন তো আর কাঁচা নয়, কচি নয় ,মন তার সকল প্রত্যাশার শেষসীমায় এসে পৌঁচেছে । সেই আমার অল্প বয়সের ২৫শে বৈশাখের স্নিগ্ধ ভোরবেলাটা মনে পড়ছে ….
শোবার ঘরে নিঃশব্দচরণে ফুল রেখে গিয়েছিল কারা প্রত্যুষের শেষ ঘুম ভরেগিয়েছিল তারি গন্ধে, তার পরে হেসেছি ভালবাসার এই সমস্ত সুমধুর কৌশলে, তারাও হেসেছে আমার মুখের দিকে চেয়ে,
সার্থক হয়েছে এই পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ । 
শোকাতাপা সেই মানুষটির জন্ম হয় বারেবারে আমাদের অন্তরে। তাঁর লেখায়, গানে। 

কোন মন্তব্য নেই: