শীত
এখন যাই যাই । বসন্তে এখন খুশির
ভালোবাসাবাসির হাওয়া ।
সরস্বতী পুজোতেই সেই হাওয়া
বইতে শুরু করে দিয়েছে । আশি
নব্বুইয়ের দশকের হাওয়া ছিল
একরকম । আর এখনকার হাওয়ায় অন্য
মাদকতা । অর্কুট চৌকাঠ ডিঙিয়ে,
ফেসবুকের
উঠোন পেরিয়ে,
ট্যুইটারের
খুপরিতে সেই হাওয়া একটু অন্য
স্বাদের । ছেলেমেয়েগুলোর
ভাল্লাগেনা একটুতেই । বসন্তের
হাওয়া মাখতেও ভাল্লাগেনা
ওদের । সব সময়েই যেন ওঠ ছুঁড়ি
তোর বিয়ে ।গায়ে হাওয়া মাখবে
কি ! এক
তো সরস্বতীর পেন্নামের নেমকম্ম
সমাধা করেই লক্ষ্মীর ঝাঁপিতে
সঁপেছে মন । লক্ষ্য শুধুই
কেরিয়ার । আর ডাইভারশান বলতে
স্টেট্যাস আপডেট । খুব ডিজিটালি
একটিভ হলে ব্লগে উগরে দাও মনের
ব্যথা । ওদের বইপড়ার সময় নেই
। ওরা বইমেলা যায় বিরিয়ানি
খেতে আর শীতের মিঠে রোদে পিঠে
পিঠ দিয়ে বসতে । ওদের বেগুণভাজায়
আপত্তি । কি না ডিপ ফ্রায়েড
। কিন্তু ফ্রেঞ্চফ্রাইতে
ফ্যাশন ইন । ওদের পিত্জায়
নাড়িকাটা কিন্তু লুচি?
নৈব
নৈব চ । ওরা ভালবাসে ভ্যালেন্টাইনসডের
স্বীকার হয়ে কিউপিডের পায়ে
অর্ঘ্য নিবেদন করতে । তার জন্য
যা করতে হয় তাতে রাজী । কি আর
করে ! আগে
প্রেম একবার কি বড়জোর দুবার
আসত নীরবে । এখন আসে বারবার
এবং সরবে । আর শপিংমলের মার্কেটিং
কি বিফলে যাবে?
বিশাল
বিশাল রক্তাক্ত হৃদয়নন্দন
বনে নিভৃত এ নিকেতনে একাখানি
ন্যানো হৃদয় যদি নাই বা দিতে
পারে তাহলে কি আর রইল !
সে
হীরে হোক বা সেমিপ্রেসাস ।
নিদেন এক গেলাস সুশীতল গোলাপী
পানীয়ের মাঝে ভাসমান একটুকরো
বাসি ষ্ট্রবেরী । কিম্বা
একপাউন্ড হার্টশেপের চকোলেট
কেকের মাঝখানে প্রকান্ড এক
চেরী ! তাও
সই । সেই কবেই বাংলাব্যান্ডের
গানে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শিখে
রেখেছে "
ভালোবাসা
মানে আর্চিস গ্যালারি "
! ক্ষতি
কি ! ভালোই
বলেছিল তারা । কিন্তু ওরা তো
গাছেরো খেল তলারো কুড়লো ।
মধ্যিখান
থেকে একবার গাছের পাতা ঝরল
মানেই দেশের জিডিপি হৈ হৈ করে
বাড়ল কিছুটা । ইন্ডিয়া শাইনিং
মশাই । রোজ ডে তে গোলাপ বিকল
আগুণ দামে । প্রোপোজ ডে তো
গ্রীটিং কার্ডস। কিসিং ডে তে
চকোলেট । হাগ ডে তে ডিওডোরেন্ট
। আরো কত কি !
যত্তসব
! দিন
থাকলেই প্রেম,
না
থাকলে ঘোড়ার ডেম !
আর
সন্ত ভ্যালেন্টাইন ওপর থেকে
বলেন "
কেমন
দিন দিয়েছি বল্ "
মক্টেল
থেকে চকোলেট,
কফি
থেকে কেক,
সোনা
থেকে জাঙ্ক সর্বত্র এক কথা "
হিয়ার
মাঝে লুকোনো একটাই কথা "
ভালোবাসি,
ভালোবাসি,
এই
শপিং মলে,
মেট্রোরেলে,
সুইমিংপুলে,
তন্ত্রেমন্ত্রে
ভালোবাসি !
সেই
কবে কবি বলেছিলেন ফুল ফুটুক
না ফুটুক আজ বসন্ত !
তারা
পলাশ চিনুক না চিনুক আজ কিন্তু
ভালোবাসার দিন আগতপ্রায় ।
ভালোবাসায় মধু উবে যাওয়ার
আগেই না ফেসবুকে স্টেটাস আপডেট
করতে হবে মন্দারমণির বালুকাবেলায়
লিখিনু সে লিপিখানি প্রিয়তমারে
।
পাড়ার
গোপালবাবু বলছিলেন অশোকবাবুকে
"মশাই
নাতনিটা বিয়ে করতেই চায়না,
বলালম,
ঢের
হয়েছে পড়াশুনো ,
অনেক
রোজগার পাতি হল,
অনেক
ভালোবাসাবাসি তো হল,
এবার
আগে বিয়েটা সেরে ফেল"
তা
বলে কি জানেন ?
" নিজের
আখের আগে গুছোতে দাও,
বাজারে
নিজেকে আগে দাঁড় করাই তারপর
বিয়ে । তার আগে বাজিয়ে,
নাচিয়ে,
কুঁদিয়ে
বেড়িয়েচেড়িয়ে,
খসিয়ে
নাকি পরখ করে নিতে হবে মনের
মানুষটিকে"
অশোকবাবু
প্রত্ত্যুত্তরে বললেন "কি
আর করবে গোপাল,
ওকে
ওর মত থাকতে দাও;
যুগটাই
এমন, এ
কি ডি এল রায়ের যুগ যে এমনি
এসে ভেসে যাবে?
আলোর
মতন, হাসির
মতন, হাওয়ার
মতন? এ
তো নেশার যুগ এয়েচে । তোমার
নাতনি ডিজিটাল ঢেউ আলবাত
পেরুবে । গ্লোবালাইজেশানের
ঢেউ এয়েচে না দেশে"
!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন