দেবব্রত বিশ্বাসকে আরো জানতে দেখুন এই নাটক । পড়ুন ওনার লেখা এই বইখানি । অনেক না জানা কথা আছে বইটিতে অন্ত্ঃসলিলা ফল্গুনদীর মত বয়ে চলেছিলেন আপনমনে । শিল্পীর প্রতি আমার নীরব শ্রদ্ধা ।
"কালিন্দী ব্রাত্যজন" নাট্যগোষ্ঠীর পরিবেশনায় ব্রাত্য বসু পরিচালিত "রুদ্ধসংগীত" নাটকটি শেষমেশ দেখা হল । এটি তাদের ৮৫তম পরিবেশন ছিল । যখন বিগত কয়েকবছর ধরে সমগ্র বাঙালী এর রস আস্বাদন করে নিয়েছেন আমি অবশেষে সেই সুযোগের সদ্ব্যাবহার করলাম । আজ ৪ঠা নভেম্বর ক্যালকাটা ক্লাবে দেবব্রত বিশ্বাসের শততম জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে এই নাটক প্রদর্শন ছিল সঙ্গীতশিল্পীর উদ্দেশ্যে বিশেষ শ্রদ্ধার্ঘ্য । দেবব্রত বিশ্বাসের রচনায় " ব্রাত্যজনের রুদ্ধসংগীত" বইটি কিছুদিন আগেই পড়েছিলাম । তাই দেখবার ইচ্ছেটা প্রবল ছিল । বইটিতে দেবব্রত বিশ্বাসের সাবলীল স্মৃতিচারণা এবং ওনার সাঙ্গীতিক জীবনের টানাপোড়েন অত্যন্ত স্বতস্ফূর্ত । অনেক না জানা তথ্য এবং বিশেষত বিশ্বভারতী মিউজিক বোর্ডের কর্তৃত্ত এবং যারপরনাই ওনার মত প্রবাদপ্রতিম শিল্পীর প্রতি অযথা হম্বিতম্বি, ওনার রেকর্ডেড রবীন্দ্রসঙ্গীতের সমালোচনা এবং ওনার সুর এবং স্বরপ্রক্ষেপনের প্রতি কটুক্তি, যন্ত্রানুষঙ্গের ব্যাবহার ...এ সবকিছুই আছে বইটির মধ্যে । যে কঠোর সমালোচনায় দগ্ধে দগ্ধে শেষ হয়ে গিয়েও উনি হাল ছেড়ে দেননি এবং শেষজীবনে রুদ্ধ হয়েও কন্ঠ তাঁর রুদ্ধ হয়নি । রুদ্ধসঙ্গীত নাটকটি কিন্তু শুধুই এই বইটি নয় । এতে আছে কিছু নাট্যব্যক্তিত্ত্ব, নৃত্যশিল্পী, কবি, সঙ্গীতকার ও সুরকার এবং সর্বোপরি সঙ্গীত শিল্পীর সঙ্গে দেবব্রত বিশ্বাস ওরফে তাঁদের সকলের জর্জদার প্রতিনিয়ত ওঠাবসা এবং আলপাচারিতা । গণনাট্যকার হেমাঙ্গ বিশ্বাস্, সলিল চৌধুরী , ঋত্বিক ঘটক্, কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের মত ব্যাক্তিত্ত্বদের সাথে একদা বাম আন্দোলনের শরিক দেবব্রতের কেমন করে মুখ ঘুরিয়ে নেওয়া। উঠে আসে বেশ কিছু অজানা তথ্য এই সব ক্রিয়েটিভ মানুষদের জীবনে উঠে দাঁড়ানো নিয়ে । কেমন করে বামপন্থী আন্দোলনে সামিল হয়েও এই সব মানুষ গুলি মেনে নিতে পারেননি তাঁদের ওপর দলের ছড়ি ঘোরানো বা ডিক্টেটরশিপ বা দলের মতে না চললে আননেসেসরি তাকে অপবাদ দিয়ে কোণঠাসা করে দেওয়া ।
জর্জদার স্নেহধন্যা নৃত্যশিল্পী মঞ্জুশ্রী চাকীর সহিত কথোপকথন, সুচিত্রা মিত্রের জর্জ বিশ্বাসের গায়কীকে শেষ পর্যন্ত মেনে নেওয়া ইত্যাদি আরো অনেক কিছু ।
সব মিলিয়ে নো প্যানপ্যানানি, নো মেলোড্রামাটিক কচকচানি, নো প্রেমপ্রেম খেলা, নায়কের ঘাড়ে মাথা রেখে নায়িকার ফুঁতফুতানি । রিয়েলিস্টিক নাটক । সত্যি ঘটনা । নেই আলাদিনের প্রদীপের চমক কিন্তু আছে স্পষ্টভাষণ। রবীন্দ্রসঙ্গীতের পাশাপাশি হেমাঙ্গ বিশ্বাস এবং সলিল চৌধুরীর গান রচনার প্রেক্ষাপট এবং সর্বোপরি দেবব্রত বিশ্বাসের বহু বিতর্কিত গান গুলির গায়কী নিয়ে সমালোচনার পাশাপাশি শুনতে পাওয়া গেল সেই এইচএমভির সেই ৭৮ আরপিএম রেকর্ডের গানের অংশবিশেষ । তাই এই নাটক না দেখলে অনেক কিছুই না দেখা থেকে যাবে বলে আমার বিশ্বাস । আর দেবব্রত বিশ্বাসের ভূমিকায় দেবশঙ্কর হালদার আবার প্রমাণ করেছেন যে তিনি কত বড় মাপের একজন শিল্পী ।
http://www.youtube.com/watch?v=V7nJZjvfNA8
২টি মন্তব্য:
tor lekha ta pore natok ta dekhar ichhe shatogun bere gelo re........thanks indira....
Neena.
চমৎকার সাজানো লেখা। বইটি পড়া হয়েছে, তবে নাটকটি দেখা হয়নি। আপনার লেখনী ভালো লেগেছে। শুভ কামনা রইলো।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন