১০ জানু, ২০১১

সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং

 গত ২৩শে ডিসেম্বর ২০১০,  তারা নিউজ চ্যানেলে "আজকের সুবর্ণলতা" অনুষ্ঠানের অতিথি হয়ে  আমন্ত্রিত হয়েছিলাম সাধারণ হোমমেকার হয়ে "সোশ্যাল নেট ওয়ার্কিং" নিয়ে আলোচনা করার জন্য  :



সোশ্যাল নেট ওয়ার্কিং বা সামাজিক জটাজাল নিয়ে আলোচনা করতে গেলেই মনে পড়ে যায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই উদ্ধৃতি 
"কত অজানারে জানাইলে তুমি কতঘরে দিলে ঠাঁই, 
দূরকে করিলে নিকট বন্ধু পরকে করিলে ভাই"
আমরা আজ অনেক যান্ত্রিক অনেক বেশি আধুনিকতার স্বীকার হয়েছি । আমরা আজ হারিয়েছি যৌথ পরিবার । পরিবার পরিকল্পনার স্বার্থে আমরা আজ একটি কিম্বা দুটির প্রতিপালনে রত । অণু পরিবারের সদস্য হয়ে আজ আমরা বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছি কেরিয়ার, চাকরী আর প্রতিদিনের ইঁদুর দৌড়ে । ভুলতে বসেছিলাম বারান্দা থেকে দাঁড়িয়ে শীতের রোদে দুটি পাশের বাড়িতে ঘন্টার পর ঘন্টা উলবোনার আড্ডা, লুডো খেলা ; ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলাম ক্যারামের স্ট্রাইকার, ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছিলাম মেয়েদের বিন্তিখেলার তাসগুলোকে । ঠিক তখনই ঝোড়ো হাওয়ার মত যন্ত্রজালে পেয়েছিলাম ছোট ছোট আড্ডার ঠেক, সেই হারিয়ে যাওয়া ঘোষবাড়ি, বোস বাড়ির সান্ধ্য আড্ডা, সেই ফিরে পাওয়া পুরোণো বন্ধুত্ব ।

রবীন্দ্রনাথ সেই কবে বলেছিলেন " তুমি মোর পাও নাই পাও নাই পরিচয় " । কিন্তু পরিচয় বোধ হয় মানুষের বন্ধুত্বে কোনো বাধা নয় আর । বিশ্ব জোড়া যন্ত্রজালের ফাঁদে স্থান কাল পাত্র ভেদে মানুষ পরিচয় পায়নি অনেকের কিন্তু অপরিচিতকে বন্ধু করে অনেক ভাল সময় পেয়েছে । একটু চোখ কান খোলা রাখতে হবে । একটু যাচাই করে নিতে হবে সেই বন্ধুত্বকে আর মাঝে মধ্যে ঝালিয়ে নিতে হবে । সব কিছুরই যেমন পজিটিভ ও নেগেটিভ দিক আছে তেমনি সোশ্যালনেট ওয়ার্কিং এর মাধ্যমে বন্ধুত্ব করতে গেলে একটু সংযত হতে হবে আর সময়টি একটু মেপে দিতে হবে নয়ত বিপদ হতে পারে । সমাজে যেমন খারাপ বা ভালো দুরকমই আছে , খারাপ ভালো বন্ধু নির্বাচনও যেমন কিছুটা নিজের ওপর নির্ভর করে ডিজিটাল আড্ডার এই ঠেকেও সেই সম্ভাবনা থেকে যায় ।
প্রথমে আলোচনা করি সোশ্যাল নেট ওয়ার্কিং এর ভাল দিক গুলি । 
  • সারাদিনের ব্যস্ততায় সোশ্যাল নেট ওয়ার্ক মানুষকে দিতে পারে কিছু ভাল সময়। যে বোর্ড হোমমেকারটি দিনের পরদিন সংসারের টানাপোড়েনে নিজের আইডেন্টিটি হারিয়ে ফেলেন তার কাছে এর জুড়ি আর কিছু নেই। ছেলে মেয়ে বিদেশে বাস করছে যে বাবা মায়ের তাদের কাছে সোশ্যাল নেট ওয়ার্ক মরুভূমিতে ওয়েসিসের মত । হঠাত সংসারের সব কর্তব্য শেষ হয়েছে মনে হলে, মধ্য বয়সে সোশ্যাল নেট ওয়ার্কিং এর যজ্ঞে সামিল হ'লে এর থেকে ভাল আর কিছুই নেই । সর্বোপরি যে স্কুলের বা কলেজের বন্ধুটিকে এতদিনে চেয়েও পাইনি তার দেখা মিলে গেলে তার চাইতে ভালো কিছুও বুঝি আর হয়না । আবার মনে পড়ে যায় কবিগুরুর সেই গান " কাছে থেকে দূর রচিল " ছোটবেলা থেকে আমরা শিখেছিলাম "Birds of a same feather flock together" এই সোশ্যাল নেটের দুনিয়ায় এমন সমমনস্ক বন্ধু খুঁজে পাওয়া বোধ হয় আজকের দিনে অত্যন্ত সহজ হয়ে গেছে । আগে যে ভৌগোলিক বাধা ছিল আজ আন্তর্জালের কৃপায় তা আর বাধা নয় ।
  • অত্যন্ত কম খরচে ( কেবল সুস্থিত ইন্টারনেট কানেকশন এবং একটি কম্পিউটার যা বোধ করি টেলিভিশনের মত ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে আজকাল ) সোশ্যালনেটে বন্ধুবান্ধবের আড্ডায় নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করা ও অনেক কিছু শেখা যায় । নিজের ভালোলাগা অনেক জিনিষপত্র ( ব‌ই বা সিডি , ডিভিডি , অনুষ্ঠানের নিমন্ত্রণ পত্র ) প্রোমোশানের মাধ্যমে অনেকের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায় বিনাপয়সায় । সোশ্যাল নেটের বন্ধুর কমিউনিটি থেকে বন্ধু সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য উঠে আসতে পারে যা জানলে সেই বন্ধু সম্পর্কে মানুষ সচেতন হতে পারে ।
তবে সোশ্যাল নেট ওয়ার্কিং এর নেগেটিভ দিক ও আছে । 
স্টুডেন্ট যখন সোশ্যাল নেটের দুনিয়ায় হাজির হচ্বে তখন তার ব্যাবহার সম্পর্কে মা বাবাকেই সচেতন করে দিতে হবে । পারলে টিন এজ ছেলে বা মেয়েটির বন্ধু হয়ে যেতে হবে সোশ্যালনেটের সেই আড্ডার ঠেকে । তাহলে সে কার সঙ্গে বন্ধু পাতাচ্ছে বা সে কোন কমিউনিটির মেম্বার হচ্ছে সেটাও খেয়াল রাখতে হবে তাহলে বা মায়ের সাথে ছেলে মেয়ের তদানীন্তন জেনারেশন গ্যাপ ও হবে না আর উভয়ের বন্ধুতাতে স্বচ্ছতাও আসবে । তাকে শিখিয়ে দিতে হবে অনিয়ন্ত্রিত ব্যাবহার করলে তার পড়াশোনার ক্ষতি হতে পারে । অচেনা বন্ধুত্ব থেকে তার ভবিষ্যতে কি ক্ষতি হতে পারে । 
সবচেয়ে বড় সমস্যা হল privacy violation আর তারপরের সমস্যা হল false impersonation এবং identity theft । নিজের ছবি না দিয়ে অন্য কিছুর ছবি যখন প্রোফাইল পিকচার হিসেবে লাগায় তখন যাচাই করে নিতে হবে তার অন্য বন্ধু মারফত এবং সে কোন কোন কমিউনিটির মেম্বার তা দেখে । 

আর সবশেষে বলি,  
রেসিডেনশিয়াল এড্রেশ আর টেলিফোন নাম্বার সোশ্যাল নেট ওয়ার্কিং সাইটে না দেওয়াই বাঞ্ছনীয় ।