sonartoree লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
sonartoree লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

২৮ সেপ, ২০১১

প্যাপিরাস, সোনারতরীর পুজোসংখ্যা প্রকাশিত


অর্কুট, ফেসবুক এবং ব্লগার বন্ধুদের অকৃত্রিম সাহায্যের হাত বাড়ানোর ফলে 
এবারের প্যাপিরাস সমৃদ্ধ হয়েছে প্রচুর কবিতায়, মুক্তগদ্যে, চারটি সুন্দর গল্পে, এক্গুচ্ছ রেসিপিতে, পুজোর গানের ভিডিও নিয়ে, ওয়েব দুনিয়ার নতুন পুজোসংখ্যার খবর নিয়ে, ভ্রমণকাহিনী, মজারকথা এবং হালফ্যাশনের টুকিটাকি নিয়ে । প্যাপিরাস পড়ুন ও পড়ে মন্তব্য করুন । সকল কবি, লেখক এবং কলাকুশলীদের শারদীয়া দুর্গাপুজোর প্রীতি এবং শুভেচ্ছা জানাই ।
পৃথ্বীশ ও ইন্দিরা


৬ সেপ, ২০১১

ছেলেবেলার উতসবের স্মৃতি - ই-বুক

 
আমরা গত বছর কফিহাউসের আড্ডাব্লগে দুর্গাপুজোর স্মৃতিচারণা করেছিলাম ধারাবাহিক ভাবে । আমাদের বন্ধু অভ্র পাল এবং মেঘের প্রচেষ্টায় সেই স্মৃতিকথা একটি ই-বুকে পরিণত হয়েছে । এর জন্য অভ্রকে আর বাংলাদেশের বন্ধু মেঘ অদিতিকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই ।  
ই-বুকটি ডাউনলোড করুন এইখানে । 

২১ জুল, ২০১১

হালফিল



ব্রিগেডে ২১শে জুলাইয়ের শহীদ তর্পণ হল মহা সমারোহে । একই মঞ্চে তৃণমূল কংগ্রেসের বিজয় উত্সব পালন হল । দিনটা ছিল শ্রাবণের কোলকাতার ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘের একটা বৃষ্টিদিন । তবুও ব্রিগেড ভেঙে পড়েছিল জনজোয়ারে । আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা বৃষ্টি উপেক্ষা করে পৌঁছে গেছিলেন সেই সমাবেশে । সমাজের সর্বস্তরের মানুষ উপস্থিত হয়েছিলেন । রাজ্যসভার এমপি থেকে বিধানসভার এমএলএ , চিত্রশিল্পী থেকে সঙ্গীতশিল্পী, সিনেমার কলাকুশলী থেকে কবি এবং সাহিত্যিক সকলেই হাজির হয়েছিলেন । সাড়া দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর ডাকে । নচি থেকে কচি, দেব থেকে দেবী কেউ বাদ ছিলেন না । দশভুজা দিদির মাহাত্ম্যকীর্ত্তনে সকলের হৃদয়ের অলিন্দ-নিলয়ে বিগলিত প্রবাহ চলছিল । কেউ দিদি, কেউ বেটি, কেউ রাণী সম্ভাষণে দিদির গুণগান করলেন । ব্রিগেড এ যাবতকাল এমনটি দেখতে অভ্যস্ত নয়; সেদিন যেন দিদি এবং তাঁর ব্যাটেলিয়নকে যারপরনাই ব্যাতিবস্ত করবার জন্যই শ্রাবণের আকাশ বামেদের আদেশ অমান্য করেনি । দু হাত ভরে ঝরো ঝরো বর্ষেছে তার অকৃপণ বর্ষণ । কিন্তু অতিরিক্ত বর্ষণে দূর্বাদলরাজি সবুজ থেকে সবুজতর হয়ে উঠেছে প্রাণের স্পন্দনে । ১৯৯৩ সালের ২১শে জুলাইয়ের শহীদরক্ত বৃষ্টি দিয়ে ধুইয়ে সেই মাহেন্দ্রক্ষণে দেবশ্রী ফুলে ফুলে ঢলে পড়েছেন তাঁর নৃত্যশৈলীতে । শতাব্দী মাদলের তালে তালে ধিতাং ধিতাং বোল দিয়েছেন পায়ে । নচিকেতা গাইলেন পৃথিবী শান্ত হবার গান । দিদির আদেশে সমবেত স্বরে শান্তি ফিরিয়ে দেবার অঙ্গীকার নিয়েছে সকলে । শান্তনু আনন্দের বাঁধ ভেঙে গাইলেন রবীন্দ্রসঙ্গীত । অনুপ ঘোষাল উদত্তকন্ঠে "দিনের আলোয় কাটে অন্ধকার"। চিরঞ্জিত "মাঝেমাঝে প্রাণে তোমার পরশখানি দিও' যেন দিদির ছোঁয়ায় তাঁর এই আজ্ঞাবহেরা রাতারাতি ম্যাজিক দেখাবেন বলে প্রস্তুত । প্রবীণ শিল্পী বিশ্বজিত ছুটে এসে গাইলেন বাংলামায়ের কোলে ফেরার গান । তাপস পাল উজাড় করে দিলেন গুরুদক্ষিণা । প্রণাম জানালেন গুরুকে ।
মহাশ্বেতা দেবী লাখ কথার এক কথা কয়ে দিলেন । বাংলার মানুষরাই সোনার বাংলা গড়ার আসল রূপকার । তাই কেবল মনে হতে লাগল যাদের নিয়ে দিদির কাজ কারবার , যারা দিদিকে বাংলার মসনদে বসিয়ে দিয়েছে তাদেরই তো নতুন করে বাংলা গড়ার জন্য অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে । দিদিতো তাঁর দু মাসের কর্মসূচীতে পাহাড় থেকে জঙ্গল, কৃষিজমি থেকে যুগপত্ভাবে শিল্প ও ফসল ফলানোয় পক্ষপাতী কিন্তু দিদি কি পারবেন পশ্চিমবাংলার ওয়ার্ক কালচারের আমূল পরিবর্তন ঘটাতে ? তবেই তো ভোল পালটাবে স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং উন্নয়নের পরিকাঠামো । বাংলার রাজনীতি প্রেমী মানুষ দিদি দিদি করে পাগলু হল । বদলের দিনে পালাবদলের গান গাইল । দিদির জন্য যাত্রাপালার স্ক্রিপ্ট হল । এতসবের পরে আবার দীর্ঘ তিনদশক ধরে বাংলার মানুষ শুধু দিদির পুজো নিয়েই ব্যস্ত থাকবে না তো ? নয়ত আবার সরকারি হাসপাতালে বেঘোরে মরবে শিশু । রোগীর খাদ্য চেখে দেখবে পাড়ার টমি । গাঁয়ের প্রাথমিক স্কুলে শিশু রোজ যাবে আসবে কিন্তু নিজের নাম লিখতে বললে বানানে ভুল করবে । আবার জয়েন্টে ভালো rank করে বাংলার ছেলেগুলো শিবপুর না গিয়ে অন্য রাজ্যে পাড়ি দেবে । ঘর পোড়া গোরুর মত সিঁদুরে মেঘ দেখলে ডরাই। তাই মনে মনে বলি " আবার আসিব ফিরে, ধান সিঁড়িটির তীরে , এই বাংলায় " যেদিন অন্যরাজ্যের মত উন্নয়নে বাংলায় বিনিয়োগ করতে এগিয়ে আসবে পাঁচটা ব্লু চিপ কোম্পানি । চন্ডীদাসের সেই কথা "সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই " মাথায় রেখে দিদি এগিয়ে চলুন তাতে ক্ষতি নেই । কিন্তু আবার সেই ভোটের রাজনীতি আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করছে না তো !!!

৩০ মে, ২০১১

জয় ইউনিকোডের জয়!


দেশ জুড়ে পরিবর্তনের হাওয়া । পালাবদলের দিনে গ্লোবালাইজেশনের ঝোড়ো হাওয়াও বাঙালীর তনুমন প্রাণ জুড়ে। একদিকে শপিংমল কালচার তো অন্যদিকে মাল্টিপ্লেক্স টেম্পটেশন । মোটাফ্রেমের চশমা থেকে স্লিক ফ্রেম , সৌখিন রিমলেশ থেকে রেসিলেন্স এবং অবশেষে কনট্যাক্টস । কে জানে থ্রিডি চশমাও বুঝি পরতে হতে পারে অদূর ভবিষ্যতে । শোনা যাচ্ছে থ্রিডি টেলিভিশনও আসবে ঘরে ঘরে । টুডি কম্পিউটার গেম ছিল বছর পনের আগে । এখন তো কচিকাঁচারাও থ্রিডি গেম দাপিয়ে খেলছে । নিজের অবতারের আইডেন্টিটিতে রীতিমত দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এ গেম সাইট থেকে ও গেম সাইট । ইন্টারনেটের কৃপায় শুধু গেমদুনিয়াই নয় বিশ্ব আজ হাতের মুঠোয় । পশ্চিমবাংলায় শুধু রাজনৈতিক পরিবর্তনই হয়নি এবছর । দেরীতে কম্পিউটার এরাজ্যে প্রবেশ করেছে বটে কিন্তু শিল্প-সাহিত্য-কলার সনাতন পীঠস্থান কলকাতা তথা সারা পশ্চিমবাংলা আজ সাহিত্যচর্চায়, বাঙালীর আড্ডায় হেসে খলখল গেয়ে কলকল তালে তাল দিয়ে চলেছে আন্তর্জালে । প্রিন্ট থেকে টেলিমিডিয়া ও সেখান থেকে ডিজিটাল মিডিয়াতেও বাঙালির এখন সদা বিচরণ । বঙ্গবধূদের দ্বিপ্রাহরিক আড্ডা একসময় ছিল গঙ্গার ঘাটে । সেখান থেকে গঙ্গাজল পাতানো, স‌ই পাতানো, তাসখেলারও পালাবদল হয়েছে বিস্তর । কিটিপার্টি হয়েছে অবসোলিট । বঙ্গবধূর উত্তরণ হয়েছে আন্তর্জালের ডিজিটাল আইডেনটিটিতে । ঢুকে পড়েছে তথাকথিত গেঁয়ো বঙ্গ বধূ কাম জননী আজ যন্ত্রজালের নেট-গন্ডী পেরিয়ে বিশ্বের দরবারে । এক ঘেয়েমির হেঁশেল তাত থেকে মেলাঙ্কলির দুপুরগুলো আছড়ে পড়েছে নেট-অবকাশে ।
খোলা হাওয়ায় মুক্তি হয়েছে তার আলোয় আলোয়, আন্তর্জালে । ব্লগঘরে সন্ধ্যেপ্রদীপ জ্বালে সে এখন । বাঙালী সাবালকেরা যেমন বেকারত্বের মুক্তি পেয়েছে বিপিওর বাতায়নে । ঠিক তেমনি চিরাচরিত রোয়াকের আড্ডাও এখন পূর্ণতা পেয়েছে অর্কুটের কমিউনিটিতে, ফেসবুকের সবুজ ফুটকি জানলায় । অর্কুট বারান্দা থেকে ফেসবুক অলিন্দ, ব্লগের উঠোন থেকে ট্যুইটারে ঘুলঘুলি সর্বত্র বঙ কানেকশান বিরাজমান । রবীন্দ্রচর্চা ইউটিউবে । নজরুল ও অতুলপ্রসাদ ও বাদ নন । কে জানে কোন দিন হয়ত বা ইউটিউব জলসা চলবে সারারাত ব্যাপী । ওপর থেকে বাঙলার ভাষাবিদ সাহিত্যিকরা আশীর্বাদ স্বরূপ চিতকার করে বলছেন "জয় ইউনিকোডের জয়!" "জয় বাংলাভাষার জয়"! 
 ভাষার মেলবন্ধনের যোগসূত্রে আন্তর্জালে দুই বাংলা মিলে মেশে একাকার হয়ে গেছে । দুইবাংলার ভৌগোলিক সীমারেখা উধাও হয়ে গেছে বন্ধুতার আবেশে । অবাধ প্রবেশ এর ওর ব্লগঘরে, আনলিমিটেড ব্লগবাজি ব্লগের ডেরায় । নেই কোনো ছাড়পত্রের মানামানি, আছে প্রবেশের অধিকার ব্লগবন্ধু হয়ে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং এর হাত ধরে । ইউনিকোডের আওতায় বাঙালীর ব্লগাড্ডা তর্ক, গপ্পো সবকিছু ছড়িয়ে পড়েছে দেশ থেকে দেশান্তরে । যৌথ পরিবার ভেঙে অণু পরিবার হয়ে যে বাঙালী একদিন একা হয়ে গেছিল আজ সোশ্যালনেটে সেই সামাজিকতা এখন তাকে পেয়ে বসেছে । একাকীত্ব ঘুচেছে । ব্লগঘর সাজিয়ে গুছিয়ে ব্লগ মিতেনীর জন্য বংকানেকশন ঝালিয়ে নিচ্ছে তারা আন্তর্জালে । ভাতের হাঁড়ি নামিয়ে স‌ইয়ের জন্য জিটকের সবুজ বাতিঘর জ্বেলে বসে আছে । নতুন প্রজন্ম বলছে :
আমপাতা জোড়াজোড়া ব্লগবাজিতে জাগবি তোরা । 
ওরে ব্লগার সরে দাঁড়া, মাতছে অর্কুট, ফেসবুক পাড়া । 
সারাদুপুর রকবাজি ভুলে ব্লগবাজিতে আর সারাপাড়া দলবাজিতে নয়, ব্লগবন্ধুদের টুইটুইটুইতে মেতে উঠেছে । ঝালেঝোলে অম্বলে বাঙালি সার্চ করছে হেল্থ-e ফুড। ব্লগকিচেন মাতছে সেই রসনায় । ব্লগার ডাক্তারবাবু ফেসবুকে স্টেট্যাস আপডেট করছেন হেলথ-e-টিপস্‌ এ । বং জ্যোতিষী জিটকে ক্লায়েন্টের e-কুষ্ঠির কাউনসেলিং করছেন । কালেকালে কতই হল বাঙালীব্লগার হল !!!

১ এপ্রি, ২০১১

টুসিরে..


রাজা আর রাণী ওদের বাবা আর মায়ের নাম । খুশির সংসার । ওরা দুই বোন । আমি নাম দিয়েছি টুসি আর টুনি । । সারাটাদিন বালির ওপর খেলে বেড়ায় ওরা । কখনো পড়ে যায় । আবার খুনসুটি করে । মা এসে দু'ঘা দিয়ে যায় । পালিয়ে আমার কাছে চলে আসে । ঝুল ঝুল করে চেয়ে থাকে ওরা আমার দিকে । মায়ের ওপর অনেক অভিযোগ নিয়ে .. যেমন আজ মা খাবার বন্ধ করে দিয়েছে কিম্বা পাশের বাড়ির টমির মাংসের হাড়ে ভাগ বসিয়েছিলুম তাই মা নখ দিয়ে আঁচড়ে দিয়েছে । যত নালিশ আমার কাছে । আর আমাকে ব্ল্যাকমেল করে আজ দুধ-ভাত কাল কলা, পরশু ডিমের ডানলা-ভাত আদায় করে । খেয়ে দেয়ে চৌবাচ্চার নীচের ফুটো দিয়ে গড়িয়ে আসা জলে মুখ পুঁচে কাঁঠালগাছের ছায়ায় বিশ্রাম করে । টুসি আর টুনির গায়ের রঙ কালো । বাবা মা কারোর মত হয়নি বলেই মা বাবার অত রাগ ওই দুটির ওপর । অন্ততঃ টুসির তাই বিশ্বাস । কিন্তু রঙ নিয়ে কি হবে ? টুসি আর টুনির চোখের ওপর দুটো ডিমের মত সাদা দাগ আছে । তাই আমার কেবলই গুলিয়ে যায় কে টুসি আর কে টুনি এই নিয়ে |একদিন দুটোকে কাছে দাঁড় করিয়ে ভালো করে পরীক্ষা করলুম । দুজনেরই তেল চকচকে কালো লেজ  । চোখের ওপর তেরচা করে সাদা ডিম । দৈর্ঘ্য আর প্রস্থ বিলকুল সমান । কিন্তু একজনের কালো লেজের আগাটা ধবধবে সাদা । ব্যস ! তাকে আমি  টুসি বলে মনে করে রাখলাম কারণ টুসির "স" ফর "সাদা" অথবা টুনির "ন" ফর "নেই" । কি জানি এই সাদা ল্যাজের আগার জন্য টুসিই বোধহয় আমার একটু বেশি এটেনশন পায় আজকাল ।  আমার সংসারে বাড়তি কলাটা, মূলোটা, পার্টির লেফটওভার, তরকারির ঝোল-আলু   আমি বেড়ার ফাঁক দিয়ে টুসিকে আসতে দেখলেই উঠোনে গিয়ে খাইয়ে আসি । টুনি সে কথা বুঝতেও পারেনা ।  আমি যে ইচ্ছে করে এমন পক্ষপাতিত্ব করি তা কিন্তু  টুসি বোঝে । আমি যখন পাশের দোকানে দুধ, পাঁউরুটি  কিনতে যাই সারাটা পথ ল্যাজ নাড়তে নাড়তে আমার সাথে যায় আর যেতে যেতে কুঁই কুঁই করে কি সব বকে চলে । আমি ভাবি, কি জানি  খিদে পেয়েছে বোধ হয় । কিন্তু একদিন দেখি পেট ভরে খাবার পরও এমন আওয়াজ করছে  । নাঃ ! বুঝলাম এটা আমাকে আদরের বহিঃপ্রকাশ ।   
তা মন্দ লাগেনা আমার । মানুষের চেয়ে এরা অনেক ভালো বন্ধু হয় ...সে কথা সর্বজনবিদিত । তাই আমিও খুব প্রশ্রয় দি ওকে । কেবল ভাত পরিষ্কার করে না খেলে আর জল দিয়ে মুখ না আঁচালে তাকে একেবারে কচুকাটা করে বকুনি দি । একদিন দেখি বিকেলে টুসি বাইরে খুব ডাকছে । গিয়ে দেখি ওদের অত্যাচার বন্ধ করতে হবে বলে সকলের বাগানের চারিদিক দিয়ে কাঁটাতারের বেড়া লাগানো হচ্ছে  । যাতে টুসি, টুনি রাজা রাণী কেউ আর বাগানে ঢুকতে না পারে । এখানে প্রত্যেকের কোয়ার্টারের সাথে লাগোয়া বাগান ও জমি আছে যেখানে টুসি-টুনিরা অহোরাত্র দাপিয়ে বেড়ায় মনের খুশিতে । সেদিন টুসিকে বললাম । তুই আর কোথাও যাস্‌না টুসি । আমার বাগানেই পড়ে থাক । টুসি ঘাড় ঘুরিয়ে টুনিকে দেখালো ।  আমি বললাম " এই বাজারে একটা টুসিই আমার থাক না " টুনি না হয় অন্য সংসারে যাক । তাতে দুজনেই ভাল থাকবি । ল্যাজ নাড়তে নাড়তে টুনি ওদিক দিয়ে পাশের বাড়ির বাগানের দিকে চলে গেল । বোধহয় মনে মনে বলে গেল " এ আর নতুন কথা কি! " আমি ঠিক জানতুম একদিন তুমি এমনটিই বলবে "  সেদিন আমার বিকেলের জলখাবারের এক প্লেট চাউমিন এনে টুসিকে দিলাম । টুসি  তো মহাখুশি । এখন বড় হচ্ছে, জিভের স্বাদ হয়েছে, মুখের তার বোঝে । ম্যাগি বোঝে, সস বোঝে, গোলমরিচের ঝাল বোঝে ।  


মাটনের হাড়ে সময় বেশী লাগে , চিকেনের হাড়ে সময় কম লাগে । খেলার তাড়া থাকলে মাংসটা কি পরখ করে দেখে নিয়ে চৌবাচ্চার আড়ালে রেখে চলে যায় । এসে আবার সময়মত খেয়ে নেয় । মাংস,মাছ যেমন খায় আমার উপোস, বারব্রতর  দিনে ফল , টকদৈয়ের ফলার দিব্যি খেয়ে নেয় চেটেপুঁটে । আমি মনে মনে বলি " সব কিছুর অভ্যেস  ছোট্ট থেকে করলে সব হয় " । যত বড় হচ্ছে টুসি  আমি তত‌ই অবাক হ‌ই ওকে দেখে আর বলি " ভগবান ! জল ঝড়, সাপ-খোপ, মৌমাছি-বোলতা সকলের হাত থেকে রক্ষা কোরো আমার টুসিকে"  বড্ড মায়া পড়ে গেছে আমার এই একরত্তি টুসির ওপর ! খুব বাধ্য টুসি আমার । আমার হাতে লাগানো সাতটা বেগুণ চারা, পাঁচটা লঙ্কাগাছ, একটা লাউ,  আর গোটা দশেক মোটে ভিন্ডি গাছ আছে । ওরাও টুসির মত ক্রমে ক্রমে বেড়ে উঠছে । প্রথম যখন চারা লাগাই দামাল টুসি-টুনি  একেবারে চেলে ফেলে দিয়েছিল বাগানটা। পরদিন ভোরে উঠে দেখি কোন চারাটা শুয়ে পড়েছে, কোনটা  বেঁকে গেছে আর ভিন্ডিতো অর্ধেকের ওপর  থেঁতলে গেছে । খুব বকুনি দিয়ে ছিলাম আর বলেছিলাম " একদম বের করে দেব্, আর কক্ষোনো খেতে দেব না ...কথা না শুনলে"  কি জানি তারপর থেকে টুসি-টুনিই কিন্তু আমার ঐ ছোট্ট রসুই-বাগানের পাহারাদার| ভুলেও ধারেকাছে যায় না ।  গা ঘেঁষে ধীরে ধীরে ঐটুকু বাগানের পাশ দিয়ে চলে যায় । বরং একটা দুষ্টু কাঠবেড়ালি  আছে তাকে পারলে দৌড়ে গিয়ে তাড়া করে সেখান থেকে বের করে দেয় ।  কাঠবেড়ালিটা সুযোগ পেলেই উপু হয়ে বসে তার বিশাল লেজটিকে শূন্যে  খাড়া করে দুহাত দিয়ে কুটুর কুটুর করে কচিপাতা আর বেগুণ গাছের গোড়ায় ছোটছোট পোকা খেতে যায় যে ! আর ঐ পোকা খাওয়ার নাম করে লাউগাছটার কচি ডগা, বেগুণ গাছের কচিপাতার মধ্যে ছোট্ট বেগুণি রঙের ফুলও খুঁটতে থাকে যে! ভারি রাগ ধরে টুসির তখন !  
 এখন অবিশ্যি শুধুই টুসিই আমার রসুই-বাগানের সর্বক্ষণের গ্রুপ ফোর সিকিউরিটি ।  আজ সকাল থেকেই কেমন গরম গরম লাগছিল । কাল বিকেলে একটু কালবোশেখি হয়ে গেল । তা সত্ত্বেও আজ রোদের তাপ জানান দিচ্ছে গরম পড়ে  গেল । ইতিমধ্যে টুসি আর টুনি খুব কায়দা করে কাঁটাতারের বেড়া ডিঙোতে শিখেছে । আশপাশের গ্রাম থেকে  কেউ ওদের ত্রিসীমানায় এসে পড়লে তাকে তাড়িয়ে বাইরে বার করে দেওয়া অবধি লড়ে যায় ।    ক'দিন ধরে দেখছি খুব হাঁচছিল টুসি । কি জানি সেদিন বৃষ্টিতে ভিজে বোধ হয় জ্বর এসেছিল । কিচ্ছু খাচ্ছিলও না । রাণী এসে একটু  আদর করে দিয়ে গেল । রাজা এসে ক'টা গাছের পাতা রেখে গেল চৌবাচ্চার ধারে । বোধহয় বাচ্ছার অসুখ করেছে তাই ওষুধ । আমি ভাবলাম  এই সময়  এপ্রিল মাসে, সিজন চেঞ্জে  আমাদের বাচ্ছাদেরও তো খাওয়াদাওয়ায় অরুচি হয় তেমনটিই হয়েছে ।   আমি ভাবলাম দাঁত উঠেছে তো দাঁত সুলোচ্ছে । একটু কড়মড়ে কিছু দি টুসিকে । টুসি তাহলে ঠিক খাবে ।  পরিষ্কার করে ধোয়া  চৌবাচ্চার পাশটা খুব ঠান্ডা থাকে ।আজ ও ও শুয়েছিল সকাল থেকে । মনটা যেন খারাপ খারাপ । গান করছে না । কুঁইকুঁই করছে না । আমাকে দেখে ল্যাজ নাড়ছে না । একখানা মুচমুচে বিস্কুট আর একটা গরম স্লাইস ব্রেড টোস্ট করে ওকে দিয়ে এলাম । যেই মাত্র দেওয়া অমনি কচমচ করে খেয়ে ল্যাজ নাড়তে নাড়তে চলে যাচ্ছে আমি বললাম "কিরে মুখ আঁচালিনা জল দিয়ে? রোজ যেমন ধুস " তার কোনো বিকার নেই ।  
সেদিন ছিল পয়লা এপ্রিল ; আর তারপরই আমার খেয়াল হল অরে এতো টুসি নয় এতো টুনি ! আমাকে এপ্রিল-ফুল করলি তুই???  পরদিন মর্নিং ওয়াকে গিয়ে শুনলাম টুসিকে  ধরে নিয়ে গেছে ওরা.. বড়গাড়িতে করে লোহার  সাঁড়াশি নিয়ে যারা আসে আর পাঁচটা টুসিদের ধরতে ।  তক্ষুণি বুঝলাম আমার টুসিটা টুনির মত চালাক ছিলনা  | নয়ত এপ্রিল-ফুলের দিন টুনি আমাকে বোকা বানায় !  

১৪ জানু, ২০১০

পুরুষের প্রকৃতি


যদি বলি আকাশ মাঝে কিসের এত আলো, কেন‌ই বা সেই আলোয় দেখি ঝলক,
তুমি বলবে সেই আলোর‌ই মাঝে আছে যেন নতুন প্রাণের চমক |
যদি বলি সবুজ ছোঁবে নীলের সীমা, সাদায় বাঁধা শুক্লাতিথির আলো,
আমার হাতে তোমার হাতের ছোঁয়া, সঙ্গে শুধু প্রেমের আগুন জ্বালো |
ভোরবেলাতে বালক আলোর তুমি, আমি তখন পাখির গানের সুরে,
তোমার আলোয় আমার ফুলের দেশে পাপড়ি মেলে কিম্বা ঝোরে পড়ে |
বেলার শেষে দুপুর নৌকাখানি ক্লান্ত স্রোতে ভাটিয়ালির সুরে,
আমার নদীর নরম ঠান্ডা হাওয়া তোমার ডিঙি আলগোছে পার করে |
বিকেলবেলায় কাজের খেয়া নদীর তীরের কাছে আসে,
দুজনাতে একটু দেখা, দুই প্রাণেরই সরলরেখায়, দুজনাতে বসে পাশে,
অস্তাচলে সন্ধ্যারাগের রাগরাগিনী বাজাও তুমি,
পূব আকাশে চাঁদের হাসি মাখিয়ে ক্লান্ত পায়ে চলি আমি |
তোমার আমার বাড়ি, মেঘেরা তার ওপর বাঁধে ঘর,
সেই ঘরের‌ই ছাদের পরে মেঘ ভেসে যায় কোন সুদূরে,
তোমার আমার চেনা সেই পথ |
যদি বলি একটু সবুজ করে ভেবো আমায়,
যা তুমি চাও দেবো তোমায় আমি,
কৃষ্ণচূড়ার আগুণ দেখে এসে ভুলোনা কো আমার সবুজ সে মন |


picture courtesy : Niren Sengupta

১২ ডিসে, ২০০৯

রেখোনা আঁখিজলে



মনোরম উদ্যান, ম্যাডক্স স্কোয়ার, লিচুপার্ক যাই বলো তোমরা ।
প্রতিদিনের মর্নিংওয়াকের আর কেতাদুরস্ত সান্ধ্যভ্রমণের,
কিম্বা নিরিবিলির কিশোরপ্রেমের অথবা একান্ত আপনজনের প্রতীক্ষার বেঞ্চিপাতা;
কিছুটা গোলাপের কেয়ারি করা, কিছুটা রেলিং দিয়ে ঘেরা মরশুমি ফুল।
ঘিরে দিলেই মনে হয় প্রোটেক্টিং ইন্ডিয়া ফ্রম ইন্ডিয়ানস!
দম আটকে আসে, আবার খোলা হাওয়ায় দম নেয় অনেকে।

আমি এক অর্বাচীন! বুড়ো হাবড়াদের দলে,
তোমাদের কলরব মুখরিত এই পার্কের একপাশে, মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ ;
আজ শোকস্তব্ধ আমি !
বুঝি আমি রাত পোহালো, বুঝি যে পূবের আলো,
আমাকে তোমরা দিলে শহরের নরম মাটি, আভিজাত্যের আস্তানা
আমি তোমাদের দিয়েছি সন্ধ্যাফুলের মিষ্টি মধু,
দুপুর পাতার ঠান্ডা ছায়া, আর নিশুতরাতের স্তব্ধ মায়া ;
আমি স্বজাত্যের অহমিকা আঁকড়ে ধরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে পার্কের এককোণে,
যেন দারিদ্রের অহঙ্কারে জর্জরিত ভিখিরী বুড়ির লোটা কম্বল সম্বল করে পড়ে থাকা ।
তবে এক লহমায় দেখে নিলে নজর কাড়ি সকলের ।
কিন্তু কথা ছিল ভেসে যাবো এই বাটে, তোমাদের কলকাকলিতে, হাসিতে,
পাখির গানেতে, পথের ধূলোতে, ধোঁয়াতে ;
আর তোমাদের খালি দিয়ে যাবো একরাশ প্রাণবায়ু,
আর হাত ভর্তি করে একমুঠো সবুজ ।

বিগত কত শতকের দোল-দুর্গোত্সব, কত মেলা, চড়ুইভাতি, সভা, মিটিং,
কত না বলা প্রেম, কত অপেক্ষার সাক্ষী হয়ে র‌ইল আমার মৌনতা !
আমি কাঁদলাম আর হাসলাম ;
জীবনপুরের পথিকের পসরা নিলাম ভাগ করে ।
আজ বৃষ্টি এসে মেশে আমার চোখের জলে, আজ শিশির এসে পড়ে আমার শুকনো ফলে,
একদিন নিষ্ঠুর নিয়তি এসে করাত চালাল আমার শরীরে, নবকিশলয় আজো আমার অঙ্গের ভূষণ ।
আমি পুরোটাই বাঁচতে চেয়েছিলাম তোমাদের মধ্যে,
আজ আমার একহাতে মুষ্ঠিবদ্ধ লোহার রেলিং আর এক হাতে আমার অঙ্গীকার !

ওগো তিলোত্তমা ! তোমার রূপের বড় অহংকার !
চেয়ে দেখ একটিবার !
আষ্টেপিষ্টে বেঁধেছি নিজেকে,
জড়িয়েছি ম্যাডক্সের মায়ায়, স্কোয়ারের কোণায়,
শুধু একটু বাঁচতে দাও আমায় !


২১ অক্টো, ২০০৯

মরুভ্রমণ যদিও অধরা তবুও মধুর!!!


আসলে সেই অর্থে মরুভ্রমণ হয়নি এবার। আমার ছেলে রাজস্থানের একটি কলেজে এই বছর ভর্ত্তি হয়েছে...তাই সে তো আসতে পারবে না ...তাই আমাদের যাওয়া..তবে কলকাতার ভীড় ছেড়ে পালিয়ে কিছু খারাপ লাগেনি..বরং একটু অন্যরকম দীপাবলী হল এবছর । ময়ূর, টিয়াপাখি, বকের সারি, নিম গাছের এভিনিউ, ঊটের সঙ্গে পথ হাঁটা, কাঠবেড়ালির পায়ে পায়ে লুকিয়ে পড়া, এই সব আর কি ...মাটি থেকে ২৫০ মিটার উঁচুতে সংকটমোচন মন্দির দেখতে গেলাম । বাজিপোড়ানো দেখলাম কলেজের ক্যাম্পাসে । প্রচুর আলো দিয়ে সাজানো কলেজের ঘড়ি-স্তম্ভ...আলো আলো আর শুধু আলোর রোশনাই ..কিন্তু সাথে নীরবতা..এক অপূর্ব নৈসর্গিক শান্ত প্রকৃতি। সকাল হলেই নতুন ঠান্ডা হাওয়ার ছোঁয়া আর কর্কশ কেকাধ্বনি যেন মনে করিয়ে দিচ্ছিল আলস-লালস পসরা সাজিয়ে শীতের আগমনবার্তা । আমার ছোটবেলায় বাবা মায়ের সাথে রাজস্থান ঘোরা কিন্তু এই বয়সে স্বামী-পুত্রের সাথে ছোট্ট এই গ্রামের মাঝে দিন কয়েক ঘুরে এসে ...কত পাখির কলরব শুনে, কত বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে মনে পড়ে গেল..আমি বিন্দুতে সিন্ধুদর্শন করলাম !

দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া, ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া,
একটি ধানের শীষের উপর একটি শিশির বিন্দু!!!!

২৭ সেপ, ২০০৯

আজ মহানবমী



নবমী নিশি যেন আর না পোহায়,
তোকে পাবার ইচ্ছা মাগো কভু না ফুরায়,
রাত পোহালেই জানি আবার হবে দশমীর ভোর,
আবার তোকে পাবো মোরা একটি বছর পর |
মহা মায়ের মহামায়া, সোনার আলোয় কত পাওয়া
চারটি দিনের কত চাওয়া, ঊমাশশীর উতল হওয়া
কাঁদিস নে মা, আবার তোরে আসবো নিয়ে বছর পরে

২৬ সেপ, ২০০৯

আজ মহাষ্টমী


অষ্টমীতিথি সাঁঝের বাতিতে,
আলোকিত হল তোমারি আলোতে,
আজ হলে তুমি আরো সুন্দরী, !
ঘামতেল মাখা মুখপানে চাই,
আলোর পথেতে যেন পা বাড়াই,
তুই যেন মাগো আমাদের সাথে,
থাকিস পাশেতে প্রতি দিনেরাতে,
এইটুকু চাওয়া আর কিছু পাওয়া,
অষ্টমী পুজো শেষের বেলায়,
ভালো আরো বাসি পূজোর হাওয়া ।

২৫ সেপ, ২০০৯

আজ মহাসপ্তমী

সূর্যস্নাত সপ্তমী তিথি, নবপত্রিকায় তোমার আরতি,
ধন-ধান্যে বিপুলা প্রকৃতি, সবুজ ধরার পুন জাগৃতি,
নন্দিত তব চরণ পরশে, শস্যশ্যামলা সারাটি বরষে,
পূজি মাগো তোরে মনেরি হরষে, শুক্লা সপ্তমী তিথিতে
|

২৪ সেপ, ২০০৯

আজ মহাষষ্ঠী


মহা ষষ্ঠীর বোধন লগনে, ঢাকের বাদ্যি শুনি ক্ষণে ক্ষণে,
উদ্ভাসিত মৃন্ময়ী রূপ সোনার প্রতিমা বরণে,
চিন্ময়ী মাগো আনন্দরূপীণী, স্থল-জল শোনে বোধনের ধ্বনি,
আকাশ-বাতাস মুখরিত আজি বন্দিত তব শুভ আগমনী |

২১ সেপ, ২০০৯

আবার নতুন করে পাবো তোকে...


মাগো এসে আদর করে, বল্‌ না আবার নতুন করে,
সোনার হাসি ঝরবে মুখে, আলোর বাঁশি বাজবে সুখে,
সুহৃদ- মিতে থাকবে পাশে, যেন আবার শরত্‌ আসে ।
পূজোর ডালি সাজিয়ে নিয়ে, ফুলের রেণু মেখে গায়ে,
সুগন্ধী ফুল-চন্দন-আবীর ঢালি মোরা তোর দুপায়ে।
তর সয়না আর যে আমার, ঢাকে কাঠি পড়বে আবার,
আনবো তোকে শাঁখ বাজিয়ে, বোধন হবে উলু দিয়ে,
তুই যে মোদের সদাই সহায়, পাঁচ দিনের এই মজার আশায়,
ঘুচিয়ে দে মা আঁধার-কালো, সারা বছর দেখব আলো,
হিংসা-দ্বন্দ দে ঘুচিয়ে, মিথ্যা-কালি দে মুছিয়ে,
আকুল মোরা ব্যাকুল সবাই, (যেন) রাত পোহালেই তোর দেখা পাই ।

২১ আগ, ২০০৯

বাড়ি বদল


আজ বড় কষ্ট হল । বুকের মধ্যে কেন জানি তোলপাড় হতে থাকল । গলার কাছে কিছু জমা কথা দলা পাকাতে লাগল ।কি জানি আজ কেন যেন চোখের কোণে জল এসে গেল । চোখের জল নিয়ে বিয়ের কনে হয়ে এসেছিলাম এই বাড়ি, আজ এই বাড়ির সাথে আমার কেন যে হল আড়ি! পুরোণো বাড়ির প্রতিটি ইঁট-কাঠ, শান বাঁধানো রোয়াক, গন্ধরাজ,করবী,কামিনী ফুলের মায়া, টুকটুকে লাল মেঝে, আমার ঘরের পাশে একফালি ছাদ, আমার তুলসীতলা, বটের বনসাইয়ের কোলে শিবলিঙ্গ, দক্ষিণের বারান্দা ....সবকিছুর জন্যে বড় কষ্ট হল আজ।
বাড়ির অনেক বয়স হল যেমন অনেক সুবিধে ছিল, অনেক অসুবিধে ও ছিল। আমাদের ছোট্ট গ্যারাজের ছোট্ট গাড়িটাও আর রাখা গেল না.. নিয়ম হয়েছে ..আমি মাঝখান থেকে বড় কষ্টে র‌ইলাম। লাল মেঝের চওড়া চওড়া দালান ,করিডোর, পেল্লায় বৈঠকখানা, লম্বা সিঁড়ি ...কিছুই রাখা যাবে না..কাজের বৌ মুছতে চায়না, বেশি পয়সা পেলেও না। তারাও সুখী আজকাল ।
অল্প কষ্ট করে বেশি রোজগারের অনেক পথ হয়েছে যে । তাই আমার বড় কষ্ট হত।
বিয়ের আগে দূর থেকে বাড়িটা দেখেছিলাম..বিয়ের বেনারসী কিনতে গিয়ে। বিয়ের পরদিন সকালে এসে পা দিয়েই মনে হয়েছিল "আমাকে এই বাড়ির যোগ্য বৌ হতে হবে " বাবা ও তাই বলেছিলেন । একতলা থেকে দুধে-আলতা পায়ে তিনতলা অবধি গুরুজনদের প্রণাম করতে করতে কোমর ব্যথা হয়ে গেছিল। ফুলশয্যার রাতে খড়খড়ির দরজায় আড়ি পেতেছিল সব জায়েরা, আজও লজ্জায় মুখ ফুটে জিগেস করতে পারিনি। ফিস্‌ফিস্‌ করে সেই রাতে ওকে বলেছিলাম, খড়খড়িতে চাদর জড়াতে ...অনেক ফাঁক থাকে যে...সকলে যে আমাদের কথবার্তা শুনতে পাবে ।
বাড়ি পুরোণো হতে লাগল। যে কোনো দিকে তাকালেই মনে হয় সারানো দরকার .. ওদিকে ছাদ ফেটে জল পড়া তো এদিকে কার্নিশ ফেটে যাওয়া । আমার তিনতলার ঘর প্রচন্ড গরম .. সব মিলিয়ে কিসের যেন তাড়নায় চলে এলাম বাড়িকে ছেড়ে।
ফ্ল্যাট বাড়ি, ভালো আবার খারাপ ও
কত পাওয়া, না পাওয়ার স্মৃতি,
কত শিখে নেওয়া রীতি ।
কত বেগ-আবেগের টানাপোড়েন,
কত হাসি-কান্নার লেনদেন ।
কত আলো-আঁধারের খেলা,
কত আনন্দ-উতসবের মেলা ।
কিছু দেনা-পাওনার হিসেব নিয়ে চললাম আমার নতুন বাড়ি,
পুরোণো ইঁট পুরোণো সেই ঘরের সাথে, আমার হল আড়ি ।
দুপুর বেলা পিওন এসে চিঠি দেবেনা আর,
তরতরিয়ে সিঁড়ি ভাঙার নেই কোনো দরকার ।
বাজবে নাকো কলিংবেল আমার দরজায়,
ক্লান্ত দুপুর বসে থাকবে আমার অপেক্ষায়।
আমার বাড়ি, আমার গরম কাল,
দখিনখোলা লেকের হাওয়া, সন্ধ্যেবেলায় হারিয়ে যাওয়া
শীতের দুপুর, রোদের মেলা, দেখবো নাকো আর,
আমি চলে এলাম বলে কি ই বা হল হাল !!

৩১ জুল, ২০০৯

কু ঝিক ঝিক রেলের গাড়ি


কু ঝিক ঝিক রেলের গাড়ি, চলল ছেড়ে আমার বাড়ি,
নিয়ে চলল সুরের কড়ি, কু ঝিক ঝিক রেলের গাড়ি।
কু ঝিক ঝিক রেলের গাড়ি, দূরের পথে দিল পাড়ি,
র‌ইল পড়ে আমার শহর স্কুলের পথ আর মায়ের আদর,
কু ঝিক ঝিক অনেক দূরে, পা বাড়িয়ে গানের সুরে,
চলল সাথে কান্না হাসি স্মৃতির পাতায় গানের বাঁশি,
তারার আলোয় চাঁদের হাটে, নয়নতারার গানের মাঠে,
সুরের স্রোতে ভেসে ভেসে, ছন্দে তালে হেসে হেসে,
কু ঝিক ঝিক বাজনা বাজাই, গান গেয়ে যাই, গান নিয়ে যাই,
র‌ইলো পড়ে ছেলেবেলা, শীতের রোদে ক্রিকেট খেলা,
গরম দুপুর সাঁতার কেটে, বিকেল হাওয়ায় লেকের মাঠে,
ছুটির ঘন্টা বাজতো যখন, লং ড্রাইভে যখন তখন,
বৃষ্টি আকাশ ফুলেল বাতাস, মাটির কোলে আমার প্রকাশ |
মায়ের পাশে পাশে থাকা, আজকে আমার মা যে একা,
একরাশ মন খরাপ নিয়ে, বৃষ্টি এল ইলশেগুঁড়ি,
অনেক দিন পরে আবার ফিরবো আমি আমার বাড়ি |
একমুঠো শিউলি নিয়ে শিশির ভেজা পায়,
বহুদিন ধরে আমি থাকবো অপেক্ষায়,
সারাদিন আর সারাবেলা, মনখারাপের দুপুর বেলা,
চাঁপার বনে দুষ্টুমি আর আবোলতাবোল কিছু খেলা |
মায়ের চোখে বাদল কালো, মা আমি আর সবাই ভালো,
মেঘের কোলে নভোনীলে, রোদের আলোয় বৃষ্টি ভুলে,
"সব পেয়েছির দেশে" এলাম মাকে আমি দূরে ফেলে |